চাঁদ ও মঙ্গল প্রতারণা

প্রকাশ: ৭ মে ২০২১ | ৮:০২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৭ মে ২০২১ | ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 340 বার দেখা হয়েছে

চাঁদ ও মঙ্গল প্রতারণা

প্রকৃত সত্যটি গ্রহণ করা হয়তো কষ্টকর হবে । কিন্তু বৈদিক শাস্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে এটিই বাস্তব যে, ‘মানুষ চাঁদে যায়নি’ বা ‘মঙ্গলেও অভিযান হয়নি’।

বৈদিক শাস্ত্র, শ্রীল প্রভুপাদের শিক্ষা ও বিশ্বগণমাধ্যমের তথ্য অবলম্বনে

১৯৬৯ সালে মানবের প্রথম চন্দ্রে অবতরণের ঘটনাটি ছিল সবার জন্য বিস্ময়কর। বিজ্ঞানের এই অভূতপূর্ব সাফল্যে চারদিকে ধ্বনিত হচ্ছিল বিজ্ঞানের জয় জয়কার। কিন্তু ঘটনাটি প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষনের পর শ্রীল প্রভুপাদ দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা করলেন, “না, ওরা চাঁদে যায়নি।” যেখানে সারাবিশ্বের মানুষের কাছে ঘটনাটি অবিশ্বাসের কোনো প্রশ্নই ছিল না, ঠিক সে সময় শ্রীল প্রভুপাদ বলছেন অন্য কথা। তৎকালীন সাংবাদিক, বিজ্ঞানীদের কাছেও শ্রীল প্রভুপাদের এ উক্তিটি নিয়ে সন্দেহ ছিল, অবশ্য তখন বেশ কয়েকটা দৈনিক পত্রিকায় শ্রীল প্রভুপাদের যুক্তিগুলো তুলে ধরা হয়েছিল। এই প্রতিবেদনে তাদের সাথে সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে আরেকটি আলোচিত ঘটনা হল মঙ্গল গ্রহে মানবের তৈরি যন্ত্র প্রেরণের ঘটনা । শ্রীল প্রভুপাদ শাস্ত্র থেকে সংগৃহীত বর্ণনার উপর ভিত্তি করে এটিও অস্বীকার করলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীল প্রভুপাদের সাথে সামিল হলেন একদল বিজ্ঞানী। তারাও ঘোষণা করলেন মানুষ চাঁদে যেতে পারেনি বা মঙ্গলেও যন্ত্র প্রেরণ করতে পারেনি। তাঁরা বিজ্ঞান সম্বলিত অনেক যুক্তি ও প্রমাণ দাঁড় করান। এ নিয়ে হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের একটি মাসিক পত্রিকা চৈতন্য সন্দেশে কয়েকবার সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছিল। তবুও মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি রয়েই যায়। কেননা মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহ নিয়ে বিভিন্ন সাম্প্রতিক গবেষণার খবর। তবে শাস্ত্রের অব্যক্ত বাণী সাক্ষ্য দেয় অন্য কিছু। শ্রীল প্রভুপাদ নিম্নের প্রতিবেদনে তা তুলে ধরেছেন এবং সে সাথে বিজ্ঞানীদের যৌক্তিক অভিব্যক্তিও তুলে ধরা হল ।

বৈদিক শাস্ত্র থেকে নেয়া

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা ৮ম অধ্যায়ের ২৫নং শ্লোক :-

ধূমো রাত্রিস্তথা কৃষ্ণঃ ষণ্মাষা দক্ষিণায়নম্।
তত্র চান্দ্ৰমসং জ্যোতির্যোগী প্রাপ্য নিবর্ততে ৷৷

অনুবাদ: ধূম, রাত্রি, কৃষ্ণপক্ষ অথবা দক্ষিণায়নের ছয় মাস কালে দেহত্যাগ করে যোগী চন্দ্রলোক গমনপূর্বক সুখভোগ করার পর পুনরায় মর্ত্যলোকে প্রত্যাবর্তন করেন।
শ্রীল প্রভুপাদ উক্ত শ্লোকের তাৎপর্য করেছেন এভাবে :- শ্রীমদ্ভাগবতের তৃতীয় স্কন্ধে কপিল মুনি উল্লেখ করেছেন যে, পৃথিবীতে যারা সকাম কর্ম ও যজ্ঞ অনুষ্ঠানে দক্ষ, তাঁরা দেহত্যাগ করার পর চন্দ্রলোকে গমন করেন। এই সমস্ত উন্নত আত্মারা সেখানে দেবতাদের গণনা অনুসারে ১০,০০০ বছর বাস করেন এবং সোমরস পান করে জীবন উপভোগ করেন। কিন্তু শেষকালে এক সময় তাঁদের আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসতে হয়। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, চন্দ্রলোক অনেক উন্নত স্তরের জীব আছেন, যদিও তাঁরা স্থুল ইন্দ্রিয়গোচর নন ।

শ্রীমদ্ভাগবতের ৫/২২/৮নং শ্লোক :-
এবং চন্দ্রমা অর্কগভস্তিভ্য উপরিষ্টাল্লক্ষযোজনত
উপলভ্যমানোহর্কস সংবৎসরভুক্তিং পক্ষাভ্যাং মাসভুক্তিং
সপাদক্ষাভ্যাং দিনেনৈব পক্ষভুক্তিমগ্রচারী দ্রুততরগমনো ভুঙতে ॥

অনুবাদ : সূর্য কিরণের ১,০০,০০০ যোজন ঊর্ধ্বে রয়েছেন চন্দ্র, যিনি সূর্যের থেকেও দ্রুততর গতিতে ভ্রমণ করেন। চন্দ্র দুই পক্ষে সূর্যের সংবৎসরের সমান দূরত্ব অতিক্রম করেন, সোয়া দুই দিনে সূর্যের এক মাসের পথ অতিক্রম করেন এবং এক দিনে সূর্যের এক পক্ষের সমান দূরত্ব অতিক্রম করেন।
শ্রীল প্রভুপাদ তাৎপর্য : আমরা যখন বিচার করি যে, চন্দ্র সূর্যকিরণ থেকে ৮,০০,০০০ মাইল দূরে, তখন চন্দ্র অভিযানের কথা ভেবে আমরা অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হই। চন্দ্র যেহেতু এত দূরে অবস্থিত, তা হলে অন্তরীক্ষ যান যে কীভাবে সেখানে গেছে তা আমাদের কাছে সন্দেহজনক। আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের গণনায় একের পর এক পরিবর্তন হয়, এবং তাই তারা এত অনিশ্চিত। বৈদিক শাস্ত্রের গণনা কিন্তু নির্ভুল এবং তাই আমাদের তা গ্রহণ করা কর্তব্য। বৈদিক জ্যোতিষ গণনা বহুকাল পূর্বে করা হয়েছিল এবং তা বৈদিক শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং তা আজও নির্ভুল। বৈদিক গণনা এবং আধুনিক যুগের গণনার মধ্যে কোন্‌টি শ্রেষ্ঠ সে সম্বন্ধে অন্যদের মনে সন্দেহ থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের মনে বৈদিক গণনার অভ্রান্ততা সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই।

“আমি এত বোকা নই”

প্রভুপাদ বললেন, “চাঁদে শীতল প্রভাব রয়েছে। মরুভূমি কি এরকম শীতল প্রভাব তৈরি করবে!” সবাই হেসে উঠল। “দেখ, অন্তত আমি বিশ্বাস করব না যে, এটি মরুভূমি আর পাথরে পূর্ণ, আমি এত বোকা নই। মরুভূমি আর পাথর এত সুন্দর আলো প্রদান করে ও সবার মধ্যে সুখদায়ক অনুভূতি সঞ্চার করে এবং আমাদেরকে তা বিশ্বাস করতে হবে।”

[সূত্র : A transcendental diary Vol-4, ৭ জুলাই ১৯৭৮ (তেহরান) পৃষ্টা: ৩৩]

“বোকা আর গর্দভরাই ওদের বিশ্বাস করে”

মঙ্গল গ্রহে অনুসন্ধান বিষয়ে আমাদের
কথোপকথন হচ্ছিল । দৈনিক পত্রিকাগুলো থেকে বিস্তারিত প্রভুপাদকে অবগত করছিলাম। শ্রীল প্রভুপাদ বলছিলেন, এটি একটি শিশুসুলভ (Childish) উদ্যোগ এবং একটি সম্পূর্ণ অর্থের অপচয়। যেটি তিনি দশ বছর আগে তথাকথিত চাঁদে অবতরণ বিষয়ে বলেছিলেন। তিনি বলেন, অনেক অর্থ ব্যয়ের পর এখন আর চাঁদ নিয়ে মাতামাতি নেই। তাঁর বিবেচনায় তারা কখনো যায় নি। তিনি শুধু আশ্চর্য হচ্ছেন যে, লোকেরা বিজ্ঞানীদের জল্পনা কল্পনা গ্রহণ করতে এতটাই প্রস্তুত। তিনি হাসলেন এবং বললেন, “ওদের বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে আমরা হলাম বোকা ও গর্দভ ৷”

তোমাদের কাছে যেটি খেলা, সেটি আমাদের জন্য মৃত্যু

অবশ্যই, বিজ্ঞানীরাও প্রভুপাদের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণে ছিলেন। এখন তাদের সাম্প্রতিক বিষয় হল মঙ্গল গ্রহ নিয়ে গবেষণা। ফলাফলবিহীন এতবার যাত্রার পর চাঁদ নিয়ে আর তেমন কৌতূহল নেই। শ্রীল প্রভুপাদ বললেন, কেন ট্যাক্স প্রদানকারীদের খরচে এমন বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি অনুমোদন হচ্ছে?
রাধাবল্লভ বললেন, “কারণ তারা এটিকে জ্ঞান বর্ধনের একটি মহৎ কারণ হিসেবে বিবেচনা করছে।”
প্রভুপাদ তখন এ বিষয়ে একটি কাহিনি তুলে ধরেন। “জলে কিছু ব্যাঙকে উদ্দেশ্যে করে ছেলেমেয়েরা পাথর ছুড়ছিল। ব্যাঙগুলো তখন বলল, ‘জনাব আপনারা কেন আমাদের ওপর পাথর ছুড়ছেন?’ ওরা বলল, “না, আমরা খেলছি’ ব্যাঙগুলো বলল-“তোমাদের কাছে যেটি খেলা, সেটি আমাদের জন্ম-মৃত্যু,’ এই গর্দভগুলো তদ্রুপ খেলছে আর আমাদেরকে তার জন্য প্রচুর ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। এটিই চলছে,..
রাধাবল্লভ প্রভুপাদকে বললেন তাঁর সাথে সাক্ষাতের পর লস্ এঞ্জেলসে্র দৈনিক সংবাদপত্রগুলো উক্তিটি প্রকাশ করেছে যে, ‘তারা চাঁদে যায় নি।’ তারা সানডে, মানডে যুক্তিটিও তুলে ধরে। শ্রীল প্রভুপাদ এটি শুনে খুশি হন। তিনি বললেন, “কেউই এর উত্তর দিতে পারে না, কমন সেন্সের ব্যাপার। তোমাদের মধ্যে কেউ কি বলতে পার, কেন সানডে প্রথমে এবং তারপর মানডে? এমনকি স্বরূপ দামোদরও এর উত্তর দিতে পারে না। এখানে তোমরা যারা বিজ্ঞানী রয়েছ এর উত্তর দিতে পার?”জনলদা দাস অনুমান করে বললেন, “আমি বিজ্ঞানী নই, তবে আমি এটি নিয়ে ভাবি যে, প্রাচীন মতবাদ অনুসারে সূর্য প্রথমে, কারণ টেলিস্কোপ বা কোনো আলো পরিমাপক যন্ত্র ছাড়াও এটিকে বৃহত্তর এবং সন্নিকটে দেখায়।”
প্রভুপাদ, “হ্যাঁ” সূচক সাড়া দিয়ে বললেন ব্যাপারটি শুধু তাই নয়। “চাঁদ (Moon) সূর্যের ঊর্ধ্বে তাই সানডে প্রথমে, এরপর মানডে। যদি তারা বলে যে, কেউই সূর্যে পৌঁছতে পারে না, তবে কীভাবে তারা চাঁদে যেতে পারে?
ক্যালকুলেশন অনুসারে, প্রতি ঘণ্টায় তারা ১৮ হাজার মাইল বেগে গিয়েছে। যদি চাঁদ পঁচানব্বই মিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থিত হয়, তবে তারা চার দিনে কীভাবে সেখানে পৌঁছতে পারে? এটিই আমার প্রশ্ন। তারা এর উত্তর দেয়নি। সেই হিসেবে চাঁদে পৌঁছতে অন্তত ৭ মাস লাগত। অথচ তারা চার দিনেই পৌঁছে গেছে!

[সূত্র : A transcendental diary, Vol -3, ২৮ জুন ১৯৭৬ (নিউ বৃন্দাবন) পৃষ্টা ৯১]

সাহারা মরুভূমি

শ্রীল প্রভুপাদের বিজ্ঞানী শিষ্য স্বরূপ দামোদর বললেন যে, বিজ্ঞানীরা চাঁদের পাথরগুলো নিয়ে গবেষণা করছে।
শ্রীল প্রভুপাদ আমাদের মনে করিয়ে দিলেন যে, পৃথিবীতে যে পাথরগুলো দেখতে পাওয়া যায় ঠিক তার মতই এ সমস্ত পাথরগুলো। তিনি বললেন, চাঁদ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে আলোকিত করছে। পৃথিবীর মতোই যদি পাথর আর বালিগুলো হয়ে থাকে তবে সাহারা মরুভূমি কেন চাঁদের মত আলো বিকিরণ করে না।

[সূত্র: A Transcendental Diary, vol. 3 ৬ জুলাই ১৯৭৬, (ওয়াশিংটন, ডিসি) পৃ: ১৮৩]

কিং কং

মন মোহিনী দাসী : মধ্য ৬০ এর দশক, তখন চাঁদে অবতরণের সময়টি ছিল। প্রভুপাদ আমার স্বামী শ্রীধামকে বললেন, যখন তিনি ছোট ছিলেন তখন তাঁর পিতা তাঁকে একটি মুভি দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন সিনেমা হলে। মুভিটি একটি বিশাল গরিলাকে নিয়ে। শ্রীধাম বললেন “প্রভুপাদ, কিং কং?” প্রভুপাদ বড় বড় চোখ করে বললেন, “তুমি সেটি দেখেছ?” শ্রীধাম বললেন, “হ্যাঁ, অনেকেই কিং কং মুভিটি সম্পর্কে জানে” তিনি বললেন, “মুভিটিতে একসময় কিং কং কে অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এর ওপরে উঠতে দেখা যায়। সে এয়ারপ্লেনগুলোকে আঁচড়ে ফেলছিল। কিন্তু পুরো ব্যাপারটি সত্যি নয় । যে মেঘগুলোর মধ্য দিয়ে উড়োজাহাজগুলো যাচ্ছিল যেগুলো সম্ভবত তুলা। আর উড়োজাহাজ ও বিল্ডিংগুলো খেলনার ছিল,
এমনকি গরিলাটিও সত্যিকারের ছিল না। অতএব, এভাবে আমরা চাঁদে অবতরণ বিষয়ে খুব সহজেই বলতে পারি এটি সত্যিকারের ছিল না।”
তারপর এই ঘটনাটির পেছনে কি উদ্দেশ্যে ছিল সেটি বলতে শুরু করলেন, সরকার জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম ও গর্ব সঞ্চার করতে চাইছিল। যাতে শীঘ্রই তারা আমেরিকান জনগণের ওপর প্রচুরভাবে ট্যাক্স বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই তাই হল। তখন প্রভুপাদ বললেন, “হ্যাঁ, এই কারণেই তারা বলছে, তারা চাঁদে অবতরণ করেছে।”

(সূত্র : Memories of Srila Prabhupada-DVD #47)।

অগ্নি প্রজ্বলনের চারপাশ বরফ দ্বারা বেষ্ঠিত

হরি সৌরি দাস : আবারও তিনি বিজ্ঞানীদের আক্রমণ করলেন। তাদের চাঁদে অবতরণ বিষয়ে প্রভুপাদ সমালোচনা করছিলেন। বেদ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গঠন সম্পর্কে যে তথ্য দেয়, তা বিজ্ঞানীদের মতবাদের বিপরীতে অনেকটাই ভিন্ন কাহিনি। “তারা শুধু মিথ্যা অপপ্রচার করছে। তারা সেখানে যেতে পারে না। কেননা চাঁদের আবহাওয়া ভিন্ন… সেখানে অগ্নি প্রজ্বলনের চারপাশ বরফ দ্বারা বেষ্ঠিত।
এই হল বর্ণনা, আমি বেদের বর্ণনা থেকেই বলছি। আর তাই রাতে চাঁদ এত সুখদায়ক অনুভূত হয়। অতএব, ভগবানের ব্যবস্থাপনা এত সুন্দর যে, সবকিছই সুন্দরভাবে চলছে। এর পেছনে একটি উন্নততর মস্তিষ্ক রয়েছে। কেন সূর্যের আলো, চাঁদের আলো রয়েছে তার সবকিছুরই বর্ণনা রয়েছে।
শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যয়ন কর। চাঁদ হল সমস্ত গ্রহের উদ্ভিদ জগতের বেড়ে উঠার (Vegetation) কারণ। অথচ, তারা বলছে চাঁদে কোনো উদ্ভিদই নেই, শুধু ধূলাবালি রয়েছে। এটি কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে? যখন তুমি প্রকৃত ব্যাপারটি তুলে ধরবে তখন সেটি তাদের জন্য পৌরাণিক (mythology) হয়ে যায়। যা হোক আমরা তাদের উক্তিগুলো বিবেচনায় আনছি না। আমাদের পদ্ধতিটি হল কোনো কিছু জানার জন্য শাস্ত্রকে অবলম্বন করা, সাধু গুরু বাক্য চিত্তেতে করিয়া ঐক্য। আমাদের পদ্ধতি অবরোহ (deductive), আরোহ (inductive) নয়। আমরা জ্ঞান আহরণ করি বৈদিক শাস্ত্র থেকে যেমন ব্যাসদেব রচিত শ্রীমদ্ভাগবত, আর ব্যাসদেব তা রচনা করেছিলেন তাঁর গুরুদেব নারদ মুনির নির্দেশাবলির অধীনে।

(সূত্র : A transcendental diary, vol -2 ১ জুন ১৯৭৬, হনুলুলো, পৃষ্টা ২২৫-৬)

ছবি তুমি যেখান-সেখান থেকে নিতে পার

সংবাদপত্রগুলোর এরকম অপপ্রচার সত্ত্বেও প্রভুপাদ এ সম্পর্কে তাঁর সিদ্ধান্তে স্বচ্ছ ছিলেন। “আমাদের বিচার হল তারা ব্যর্থ। তারা সেখানে যায় নি। যদি একটি যান অবতরণ করে এবং কয়েকটি ছবি তুলে সেটিকে মঙ্গল গ্রহ বলে, তবে সেটিকে তারা সফলতা হিসেবে আখ্যায়িত করে। ছবি তুমি যেখান সেখান থেকে তুলতে পার।”
আমি তাতে সম্মতি প্রকাশ করি। তবে তখনও কিছুটা বিভ্রান্ত মনে হচ্ছিল। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম, “সত্যিকার অর্থে এগুলো কি হচ্ছে?” তারা কি সত্যিই অন্য গ্রহে এই মহাকাশযানগুলো পাঠাচ্ছে, নাকি….?”
প্রভুপাদ বললেন, “সেটি তারা জানে” এটি নিয়ে জল্পনা কল্পনা করতে চাই না। “আমাদের ক্যালকুলেশন অনুসারে, তারা সেখানে যায় নি। অতএব এগুলো মিথ্যা অপপ্রচার। তারা সেখানে যেতে পারে না।

[সূত্র : A transcendental diary Vol – 3, ২৮ জুন ১৯৭৬ (নিউ বৃন্দাবন) পৃষ্টা:১০১]

তারা চাঁদে যায়নি

মালতি দেবী দাসী : এক সকালে (৭, বারি প্লেস, লন্ডন) আমি প্রভুপাদের কক্ষে গিয়েছিলাম। দরাজাটি খানিকটা খোলা ছিল। প্রভুপাদ আমাকে ডাকলেন, “মালতী ভিতরে এস, আমরা টিভি দেখছি।” আমি ভিতরে ঢুকে দেখি সবাই চাঁদে অবতরনের দৃশ্যটি দেখছিল। আমিও সেটি দেখার জন্য বসে পড়লাম, কিছুক্ষণ পর প্রভুপাদ টেলিভিশনটি বন্ধ করে ঘোষণা করলেন, “এটি একটি ইডিয়ট বক্স এবং আমাদের সবাইকে ইডিয়ট বানাচ্ছে ।”
প্রভুপাদের উক্তিটি বেশ বিতর্কিত হয়ে ওঠেছিল । কয়েকজন কৃষ্ণসেবা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিছু শিষ্য প্রভুপাদের উক্তিটি গ্রহণ করতে পারেন নি। দুই বছর পর আমি একটি সংবাদপত্রে হেডলাইন দেখি, “তারা চাঁদে যায় নি।” দু’জন নাসার বিজ্ঞানী প্রতিবেদনটি লিখেছিল। সেখানে তারা কিছু ছবি সম্বলিত প্রমাণ তুলে ধরে যে, একজন সাধারণ মানুষ তা খুব সহজেই বুঝতে পারবে, তারা এর মাধ্যমে ঘোষণা করল যে, পৃথিবীর যে স্থানে এই ঘটনাটি সাজানো হল সেটি আরিজোনা অথবা নেভেডা হতে পারে। …যারা শ্রীল প্রভুপাদের উক্তিতে একসময় সন্দেহ প্রকাশ করেছিল তারা তখন আবার ফিরে এসেছিল। ব্যাপারটি আমাকে অবাক করেছিল ।

(সূত্র: Memories of Srila Prabhupada DVD # 47)


৭ জুলাই, ২০০৯ এ CNN চন্দ্র অভিযান সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে তুলে ধরা হয় একদল গবেষকদের মতে চন্দ্র অভিযান প্রতারণাপূর্ণ। অপরদিকে নাসাও এ বিষয়ে পাল্টা যুক্তি দাঁড় করায়। প্রতিবেদনটির কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল ।
……১৯৯৯ সালে এক জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৬% আমেরিকান অ্যাপোলো-১১ এর চন্দ্র অভিযানটি নিয়ে সন্দিহান.……
ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলোজির এক জরিপে দেখা গেছে শতকরা ২৫ ভাগ লোক মানুষের চাঁদে অবতরনের বিষয়টি বিশ্বাসই করে না। নাসার এই চন্দ্র অভিযান প্রতারণা বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে অনেক ওয়েবসাইট ও ব্লগ রয়েছে। সাম্প্রতিক গুগল সার্চে APOLLO Moon landing hoax ১.৫ বিলিয়নেরও বেশি ফলাফল দেয় ৷
ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল এয়ার এন্ড স্পেস মিউজিয়ামের একজন সিনিয়র কিউরেটর রজার লনিয়াস বলেন, “আমরা ষড়যন্ত্র (conspiracies) ভালোবাসি । চাঁদে যাওয়ার ব্যাপারটি বোঝা কষ্টকর এবং সে সাথে কিছু লোকের কাছে এ উত্তরটি গ্রহণ করা অনেক সহজসাধ্য হবে যে, “বেশ, হয়তো আমরা চাঁদে যায়নি। অনেক সরলতা (naivete)।”
চাঁদে প্রেরিত অ্যাপোলো মিশনগুলো নিয়ে মতবিরোধ শুরু হয় ১৯৭২ সালে শেষ নভোচারি ফিরে আসার পর থেকে। রকেটডাইনের ওপর প্রকৌশলী লেখক বিল কেইসিং নাসার অ্যাপোলো প্রোগ্রামের রকেট ইঞ্জিন তৈরি করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত তার এক গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা কখনোই চাঁদে যাইনি : আমেরিকার ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রতারণা।”
কেইসিং উল্লেখ করেন, নাসা অ্যাপোলো-১১ এর নভোচারীদেরকে একটি রকেটে করে প্রেরণ করে। এরপর এটি একসময় দৃষ্টিশক্তির বাইরে চলে গেলে লুনার ক্যাপসুল ও তিন নভোচারীকে একটি মিলিটারি কার্গো উড়োজাহাজে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে ৮ দিন পরে সেই উড়োজাহাজটি ক্যাপসুলটিকে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে দেয়। তিনি বিশ্বাস করেন, নাসা কর্মকর্তারা উচ্চ মিলিটারি নিরাপত্তার মাধ্যমে অভিযানটি চলচ্চিত্রায়িত করে নেভেডা মরুভূমির ‘এরিয়া ৫১’ নামক স্থানে। সেসাথে নভোচারীরা যাতে পুরো ব্যাপারটি সহযোগিতা করে তার জন্য তাদেরকে ব্রেইনওয়াশ করা হয়। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, কেইসিং এর থিউরিসমূহ ১৯৭৮ এর ‘capicorn one’ মুভিটি তৈরিতে অনুপ্রাণিত করে, যেখানে নাসা মিলিটারি নিরাপত্তায় মঙ্গলে অবতরনের ব্যাপারটি প্রতারণা করে। উল্লেখ্য, এই ব্রিটিশ থ্রিলার মুভিটি মূলত মঙ্গলে অবতরনের প্রতারণা বিষয়ক মুভি। অনেকে বলেন নাসা, ফিল্ম পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিককে নিয়োজিত করে চন্দ্র অভিযানকে চিত্রায়িত করার জন্য।
আহ্, চাঁদের সেই পাথরগুলো? এন্টার্কটিকা থেকে চাঁদের উল্কাপিণ্ড (Lunar meteorites)। অনেক দশক পরে, কেইসিং এর বিশ্বাস “Conspiracy theory : Did we land on the moon?” এ পরিণত হয়।
২০০১ এ বিখ্যাত Fox TV চন্দ্র অভিযান সংক্রান্ত একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে, যেখানে নাসার অ্যাপোলো ছবি ও টিভি ফুটেজগুলোতে অনেক বিতর্ক খুঁজে পাওয়া যায় । যাদের মধ্যে রয়েছে : চাঁদে অবতরনের পর যানটির নিচে কোনো বিস্ফোরনের চিহ্ন নেই, সমান্তরালভাবে নভোচারীরা হাঁটার পরও তাদের একে অপরের ছায়াসমূহ ছেদ করে, যেটি নির্দেশ করে যে, ওখানে কৃত্রিম আলো রয়েছে, পুতে দেওয়া আমেরিকান পতাকাটি চাঁদে বায়ু না থাকার পরও নড়াচড়া করা। CNN এ প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনে নাসা কর্তৃক পাল্টা যুক্তিও তুলে ধরা হয়। তবে ঐ যুক্তিগুলো ঠিক ততটা শক্তিশালী ছিল না। বিপক্ষের বিজ্ঞানীরা বরং পাল্টা যুক্তি ছাড়াও আরো বিবিধ বিষয় তুলে ধরে।
একটি যুক্তি ওখানে তুলে ধরা হয়েছিল যে, নাসার দশ হাজার কর্মচারী এবং অ্যাপোলো চুক্তিকারীদের পক্ষে। গোপন বিষয়গুলো ৪ দশক ধরে গোপন | রাখাটা অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু গবেষক সাইব্রেল বিশ্বাস করেন যে, অ্যাপোলো প্রোগ্রাম এতটাই সাজানো যে, শুধুমাত্র এর নভোচারীরা ও হাতে গোনা কিছু উচ্চ পদস্থ নাসা কর্মকর্তারাই পুরো গল্পটি জানে। সাইব্রেল বছরের পর বছর ধরে অ্যাপোলো নভোচারীদের পেছনে ওৎ পেতে থাকত যেন তার ক্যামেরার সামনে তাদের কেউ বাইবেল ছুঁয়ে বলুক যে, তারা চাঁদে গেছে।
ওৎ পাতার বিষয়টি অনেকের কাছে, আপত্তিকর মনে হতে পারে। তবে সাইব্রেল এ সম্পর্কে বলেন, “যখন কেউ অপরাধী হয়, আমার মতে তাকে ওৎ পাতা উচিত। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি সত্য উদ্ঘাটনের প্রচেষ্টা করছি।”
আলড্রিনকে এজন্যে কাপুরুষ, মিথ্যাবাদী, চোর বলতেও দ্বিধাবোধ করেননি। অলড্রিন অবশ্য এগুলোকে পাত্তা দিতে নারাজ।
শেষ অ্যাপোলো চন্দ্র অভিযান হয়েছে আজ থেকে ৩৭ বছর আগে (ঐ প্রতিবেদন অনুযায়ী) এবং দশ মিলিয়নেরও বেশি আমেরিকান যুবগোষ্ঠীর সরাসরি চন্দ্র অবতরণ সম্পর্কিত কোনো স্মৃতি নেই। হাউস্টনের স্পেস কন্সালটেন্ট ম্যারি লিনে ডিটমার কর্তৃক ২০০৫-২০০৬ সালের এক জরিপে দেখা যায় চার ভাগের এক ভাগ ১৮-২৫ বছর বয়সী আমেরিকান চাঁদে মানুষের অবতরণের বিষয়টি সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
এভাবে প্রতিবেদনটিতে পক্ষে বিপক্ষের অনেক যুক্তি প্রদর্শন করা হয়।


সানডে, মানডে

সাংবাদিক : পাঁচ- ছয় বছর আগে আমি সম্ভবত আপনার কাছ থেকে একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তখন নভোচারীদের চন্দ্রে অবতরণের সময়টি ছিল। আমি এই সম্পর্কে আপনার ভাবনা কি তা জিজ্ঞেস করেছিলাম। আপনি তখন বলেছিলেন, তারা সেখানে অবতরণ করতে সক্ষম নয়। কেননা চন্দ্রে অবস্থিত আত্মা বা জীবরা তাদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দিবে না, যদিও তখন অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল যে, তারা চাঁদে অবতরণ করেছে এবং নিরাপদে ফিরে এসেছে। আমার মনে হয় এ সম্পর্কে আপনার আরো ভাবনা রয়েছে এবং ইতোমধ্যে এ সম্পর্কে আপনি অনেক লেখালেখি করেছেন। আপনি যা বিশ্বাস করেন তা যদি আমাকে সংক্ষেপে বলতেন।
প্রভুপাদ : হ্যাঁ, আরেকদিন আমি এই প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, সারা বিশ্বে সপ্তাহের দিনগুলোর পর্যায়গুলোকে এভাবে গ্রহণ করা হয়েছে: রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, সর্বশেষ শনিবার। অতএব কেন এই ব্যবস্থাপনা? কেন রবিবার প্রথমে অথচ সোমবার দ্বিতীয় এর উত্তর কেউ দিতে পারে না। অথচ সাধারণভাবে আমি বলতে পারি এর কারণ সূর্য প্রথমে এবং চন্দ্র তার পরে। তাই যে গ্রহটি (সূর্য) তিরানব্বই মিলিয়ন মাইল দূরে রয়েছে, সেখানেই যেতে পার না, তবে কীভাবে তুমি চার দিনে চন্দ্র গ্রহে যেতে পার, এর উত্তর কেউ দিতে পারে?
সাংবাদিক : বেশ, আমি তা বলতে পারি না, তবে আপনার উত্তরটি শুনে অবাক হচ্ছি।
প্রভুপাদ : সারা বিশ্বে সপ্তাহের দিনগুলোকে এভাবে সাজানো হয়েছে। প্রথমে রবি, তারপর সোম ও মঙ্গলবার। তদ্রুপ সান, মুন, মার্স, জুপিটার, সর্বশেষ স্যাটার্ন। এই হল গ্রহগুলোর ব্যবস্থাপনা, চন্দ্র সূর্যের পরে। যদি তুমি সূর্যেই যেতে না পার তবে চাঁদে কীভাবে যাবে?
সাংবাদিক : আপনি কি মনে করেন, নভোচারীরা অন্য কোথাও নেমেছে?
প্রভুপাদ : এটি হল পরবর্তী প্রশ্ন। প্রথম প্রশ্ন হল তারা সত্যিই চাঁদে গিয়েছে কিনা? আপনাকে এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে তারা যায়নি। কারণ সূর্য গ্রহ প্রথমে, এরপর চাঁদ। তিরানব্বই মিলিয়ন মাইল দূরে সূর্য গ্রহেই যেতে পার না তবে কীভাবে চাঁদে যাবে?
সাংবাদিক : বেশ, এটি ছাড়া…..
প্রভুপাদ : শাস্ত্র মতে, চন্দ্র গ্রহ সূর্য গ্রহের ওপরে এবং দূরত্ব হল ১,৬০০,০০০ মাইল। অতএব, সূর্য পৃথিবী থেকে ৯৩,০০০,০০০ মাইল দূরে। এভাবে এর সাথে যোগ কর আরও ১,৬০০,০০০, প্রায় ২,০০০,০০০। তখন এটি হয় ১৫,০০০,০০০ মাইল দূরে। তাই তুমি যদি ঘণ্টায় ১৮ হাজার মাইল গতিতে যাও তবে ৬ মাসেরও বেশি সময় লাগবে। অতএব ৪ দিনে কীভাবে তুমি সেখানে যাবে? অথচ তুমি সংবাদপত্রে প্রচার করছ : “এখন তারা পৌঁছেছে” । তাও ৪ দিনে পরে।
রামেশ্বর : চাঁদ যে অনেক দূরে সেটি তারা গ্রহণ করে না।
প্রভুপাদ : তারা গ্রহণ করে না, সেটি অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমরা এই তথ্যই পেয়েছি। আমরা কীভাবে সেটি গ্রহণ করব?
সাংবাদিক : আমি শেষটা বুঝি নি।
রামেশ্বর : আমি প্রভুপাদকে বললাম, আধুনিক লোকেরা বিশ্বাস করে যে, চাঁদ খুব কাছে। কিন্তু প্রভুপাদ বললেন, “আমাদের প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্র শিক্ষা দেয় যে, চাঁদ আরো অনেক দূরে”। তাই যেহেতু আমাদের এই তথ্য রয়েছে তবে কীভাবে আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতামত আমরা গ্রহণ করব?
সাংবাদিক : হু, হু।
রামেশ্বর : আমরা পেয়েছি….
প্রভুপাদ : শুধু তাই নয়। রবিবার প্রথমে, সোমবার দ্বিতীয়, কেন এই ব্যবস্থাপনা?
সাংবাদিক : বেশ, সেটি তো দূরত্বের কথা বলছে না।
প্রভুপাদ : হু
সাংবাদিক : সেটি তো দূরত্বের কথা বলছে না।
প্রভুপাদ : যে …..দূরত্ব না হতে পারে, কিন্তু তোমাকে এটি গ্রহণ করতে হবে যে সূর্য প্রথমে এরপর চাঁদ। দূরত্ব কোনো প্রশ্ন নয়।
সাংবাদিক : আচ্ছা ।
প্রভুপাদ : কেন এই ব্যবস্থাপনা : সানডে, মানডে, টুইসডে বা ওয়েডনেডে? এখানে কিছু বৈদিক পদ্ধতি রয়েছে, পদ্ধতিটি ঠিক এমন প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ অতএব স্বাভাবিকভাবেই সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া যায় চাঁদ হল সূর্যের পরে।
সাংবাদিক : আপনি হয়তো এর উত্তরটি দিয়েছেন, কিন্তু আমি তা বুঝতে পারি নি। আপনি কি মনে করেন যে নভোচারীরা অন্য কোথাও অবতরণ করেছে, বা সেটি অন্য কোনো গ্রহে ছিল?
প্রভুপাদ : সেটি হতে পারে আবার নাও হতে পারে।

যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্ভব নয়

লন্ডন, সেপ্টেম্বর ১১,১৯৬৯

নভেম্বরের মাঝামাঝিতে আমেরিকান নভোচারীরা দ্বিতীয় বারের মত চাঁদে অবতরণের সময়টি নির্ধারণ করলেন। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। এদিকে পুরো মাস জুড়েই এ বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রেস কাভারেজ ছিল। সে সময় প্রভুপাদ সাংবাদিকদের সাথে প্রায়ই কথা বলতেন। প্রায় এক বছর আগে লস্ এঞ্জেলসে্ তিনি এক রিপোর্টারের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন: “এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য আমরা মোটর গাড়ি বা উড়োজাহাজ ব্যবহার করি। এরকম যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চাঁদে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করবে না। ওখানে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি কঠিন যেটি বৈদিক শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। সেখানে যেতে হলে তাকে যোগ্য হতে হবে। শাস্ত্রের তথ্য অনুসারে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এটি সম্ভব নয়। এই শরীর নিয়ে আমরা সেখানে যেতে পারিনা।
টিটেনহার্স্টে প্রভুপাদ শিষ্যদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় চন্দ্রে অবতরণের বিষয়টি নিয়ে আসতেন। তাঁর কক্ষে এক সন্ধ্যায় তিনি বলছিলেন, “চাঁদে অবতরণের বিষয়টি প্রতারণা। তারা সেখানে যেতে পারবে না। চন্দ্রলোক হল দেবদেবীদের একটি আবাসস্থল। তাঁরা এই মদ্যপায়ী ও গো-খাদক কসাইদের চেয়েও অনেক উন্নত জীব অথচ এরাই সেখানে বসবাস করার চেষ্টা করছে। আমি যেমন ভারত থেকে আমেরিকায় এসেছি ব্যাপারটি সে ধরণের ভ্রমণ না। চন্দ্র গ্রহে এত দ্রুত তুমি যেতে পারবে না। এটি সম্ভব নয় ।”
শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্যগণ তাঁর উক্তিসমূহ গ্রহণ করেছিলেন। কেননা তিনি শুধু তাঁর মতামত তুলে ধরছেন না বরং শাস্ত্র সিদ্ধান্ত প্রদান করছেন।

মঙ্গল গ্রহে কথিত অবতরণ

একজন ভক্ত সকালের পত্রিকা নিয়ে আসল। সামনের পৃষ্ঠায় একটি ছবি ছিল যেটি মঙ্গল গ্রহ থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রেরিত। ছবিটিতে দেখাচ্ছিল এক খুব বিশাল আগ্নেয়গিরির মুখ ও বৃহদায়তন গিরিখাত, প্রতিবেদনটিতে সেগুলোকে অ্যারিজোনাতে বিশাল গভীর খাদের আকারের দশ গুণ বড় একটি শুষ্ক নদীর তল হিসেবে আখ্যায়িত করে। প্রভুপাদ মঙ্গল গ্রহে যে এগুলো আছে তা বিশ্বাস করেন নি।
মৃদু হেসে রূপানুগা বললেন, “আমার মনে হয় এ সবকিছুই একটি মুভি সেটের মত।” “এতটুকুই”, প্রভুপাদ বললেন। “তারা যায় নি, কেন তারা অ্যারিজোনাকে টেনে আনছে? তার মানে তারা অ্যারিজোনাতে। এটি ঠিক এরকম যে, একজন ব্যক্তি কক্ষে চুরি করছে। তখন শব্দ হচ্ছিল। ঘরের মালিক বলে উঠল, “ওখানে কে? শব্দ কিসের?” লোকটি বলল, “না না আমি চুরি করছি না।” ব্যাপারটি সেরকমই।
গল্পটি শুনে ভক্তরা সবাই হেসে উঠল। রূপানুগা বললেন, প্রতিবেদনটিতে তারা স্থানটিকে পৃথিবীর সঙ্গে তুলনা করছে।
শ্রীল প্রভুপাদ বললেন, “তাদেরকে কে বলেছে অ্যারিজোনা সম্পর্কে বলতে? কে বলেছে, তোমরা চুরি করছ? তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল শব্দটা কিসের। কিন্তু সে বলল ‘না, না, আমি চুরি করছি না।’ এটা ঠিক সেরকম, কেন তারা অ্যারিজোনাকে নিয়ে আসছে? তারা তো অন্য কোনো স্থান সম্পর্কে বলতে পারত।”

[সূত্র : A transcendental diary Vol – 3, ৭ জুলাই ১৯৭৬ (ওয়াশিংটন, ডিসি) পৃষ্টা:২০১]

“অ্যারিজোনাতেই সব কিছু হচ্ছে”

বিজ্ঞানীরা প্রদর্শন করছে যে তারা অজ্ঞ। শুধু ধাপ্পা দেওয়া। প্রভুপাদ তাদেরকে বলেছিলেন, “মঙ্গল অভিযান এটি আরেকটা ধাপ্পাবাজি। সবকিছুই হচ্ছে অ্যারিজোনাতে।” এরপর কিছু বছর পর তারা কিছু পাথর প্রদর্শন করবে, “আমরা মঙ্গলে গিয়েছি। সেখানে জীবনের কোনো সম্ভাবনায় নেই। এই পাথর আর বালি নিন এবং মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয়ের জন্য সন্তুষ্ট হোন।” তখন তারা বলবে, “আমরা বৈজ্ঞানিক প্রগতি সাধন করেছি। আমি এই পাথরটি পেয়েছি।”
তিনি একটি উদাহরণ দেন, “একটি বাংলা গান রয়েছে, ইউরোপিয়ান যে কোনো কিছুই ভাল, এক ব্যক্তি কুকুরের মাংস বিক্রি করছিল, অন্তত ভারতে কুকুরের মাংস কেউই খায় না। তাই বিক্রেতা বলল, ‘এটি সাধারণ কোনো কুকুর নয়। এই কুকুরটি রাজ প্রতিনিধি (Viceroy) মেরেছে। যেহেতু রাজ প্রতিনিধি মেরেছে অতএব এটি সুন্দর কুকুর। তবে আপনি খেতে পারেন।’ এভাবে তথাকথিত বিজ্ঞানীরা যা-ই বলেন তা কমনসেন্স ছাড়াই গ্রহণ করতে হবে এটিই হল জনসাধারণের প্রচলিত ধারণা। এই হল আপনাদের বুদ্ধিমত্তা। তিনি হাসতে লাগলেন, “কিন্তু আমি বোকা ইন্ডিয়ান, তাই এটি আমি বিশ্বাস করি না। আমি তাদের ভুলটি ধরে ফেলি, কেন এই গদৰ্ভ অ্যারিজোনাকে নিয়ে আসছে? এর মানে সবকিছুই ওখানেই হচ্ছে।”

বলি-মর্দন অ্যারিজোনা ঘুরে আসল। সেখানে তিনি দেখলেন, ওখানের অনেক স্থানই সরক । নিয়ন্ত্রিত । তিনি বলেন, “অতএব গোপনীয়তা রক্ষার ভাল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।”
শ্রীল প্রভুপাদ বললেন, “হ্যাঁ, চাঁদে অবতরনের ব্যাপারটি ওখানেই হয়েছিল।” তমাল কৃষ্ণের বিশ্লেষণাত্মক মন তাড়াতাড়ি বিষয়টি আয়ত্ত করল। “এর মানে সুনির্দিষ্টভাবে জনতাকে প্রতারণা করার একটি সুপরিকল্পিত প্লট।”
প্রভুপাদ এতে নিশ্চিত ছিল। তিনি বললেন, “এটাই, জনগণকে বোঝানো যে, আমাদের গর্দভ সভ্যতা অগ্রসরমান।”
রামেশ্বর এবং তমাল উভয়ই ভাবছিলেন, এটি অবশ্যই একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হবে। তমাল কৃষ্ণ বললেন,“এর মানে সব রাষ্ট্রই এই প্রোজেক্টটিতে সহায়তা করছে।”
প্রভুপাদ সেটি নিশ্চিত করলেন, “সব তথাকথিত বিজ্ঞানীরা”।
তমাল জিজ্ঞাসা করলেন, “তারা কি জানে তারা কি করছে? তারা কি
একে অপরের সাথে কথা বলছে নাকি তারা শুধুমাত্র….?
প্রভুপাদ তাঁকে নিশ্চিত করলেন, “না তারা জানছে, তারা কথা বলে। চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। আমারটা প্রকাশ করো না, আমি তোমারটা প্রকাশ করব না। চল শান্তি বজায় রাখি ৷”

[সূত্র : A transcendental diary Vol-3, ১২জুলাই ১৯৭৬ (নিউইয়র্ক) পৃষ্টা:২৬৩]

পরিশেষে ১৯৭৭ সালে সৎস্বরূপ দাস গোস্বামী কর্তৃক প্রকাশিত ব্যাক টু গডহেড ম্যাগাজিনে ‘Man on the Moon-A case of Mass brainwashing’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সমাপ্তি অংশটুকু নিম্নে তুলে ধরা হল। যা এ প্রতিবেদনের সাপেক্ষে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
অতএব, আপনিই সিদ্ধান্ত নিন যে, কে আসলে প্রতারণা করছে, জড়বাদীরা যারা ক্ষণস্থায়ী অগ্রগতি ও উপভোগের নামে সুখ প্রদানের প্রতিজ্ঞা করছে এবং এর মাধ্যমে শাশ্বত আত্মাকে অজ্ঞানতায় নিপতিত করছে, নাকি কৃষ্ণভাবনাময় পারমার্থিক ব্যক্তিরা-যারা বলেন, “সর্বদা কৃষ্ণকে স্মরণ করুন এবং তার ভক্ত হোন। তার পূজা করুন তাকে প্রণতি নিবেদন করুন। যদি আপনি এভাবে অনুশীলন করেন, তবে অন্তিমে আপনি সেই নিত্য, শাশ্বত, দুঃখ দুর্দশামুক্ত চিন্ময় জগতে নিশ্চিত প্রত্যাবর্তন করবেন। কেননা আপনি ভগবানের চিন্তায় ও ভক্তিতে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত।”


 

 

ত্রৈমাসিক ব্যাক টু গডহেড, অক্টোবর – ডিসেম্বর ২০১৩

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।