গোপাষ্টমী

প্রকাশ: ১ নভেম্বর ২০২১ | ৭:২০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১ নভেম্বর ২০২১ | ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 289 বার দেখা হয়েছে

গোপাষ্টমী
–প্রাণনাথ গোবিন্দ দাস

ভারতবর্ষের প্রায় সব উৎসব ধর্মীয় নানা আচার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। শ্রীকৃষ্ণের গোচারণের দায়িত্ব পাওয়াকে কেন্দ্র করে উৎসবও এমনই একটা উৎসব। সেটি হল উৎসব, তাদের প্রাণনাথের উৎসব।
শ্রীকৃষ্ণের প্রতিটি কর্ম কর্তব্য সাধনের পথে কঠোর সংগ্রামের মধ্যে কর্মের প্রয়োজন। কঠিন পথের কঠোর সংগ্রামের মধ্যে কর্মের প্রয়োজন। কঠিন পথের চড়াই উৎরাই ভেঙ্গে সকলে জন্য, সকলকে আনন্দ উৎসবে, মিলন মেলায় যোগ দেওয়ার জন্য। কঠিন জীবন সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে কঠিন লড়াই করেছেন একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে। কারগারে জন্মগ্রহণ করলেন অন্যায় অবিচার থেকে সকলকে মুক্তি দেওয়া জন্য। নন্দের বাড়িতে শিশুটি বড় হয়ে উঠল তার কত না কীর্তি কলাপ-যে কৃষ্ণ দধি, মাখন, ক্ষীর চুরি করছে আবার সেই কৃষ্ণ কখনও বা চুরি করছে গোপাঙ্গনাদের বস্ত্র, কালীয় দমন, পুতনা রাক্ষসী বধ, অঘাসুর বধ আবার গিরিগোবর্ধন উত্তোলন। দ্বারকায় ক্ষত্রিয় বেশে রাজকার্য, আবার বৃন্দাবনে মাধুর্যলীলা। আবার তিনিই কুরু-পাণ্ডবদের যুদ্ধ পরিচালনা করেন, কূটবুদ্ধি শোনান, যুদ্ধের প্রস্তুতিতে অর্জুনকে তত্ত্বকথা শোনালেন, সকলের জন্য গীতার উপদেশ দিলেন। সেই কৃষ্ণ গোচারণে যান। সেই কৃষ্ণকে মা যশোদা দড়ি দিয়ে বাঁধার চেষ্টা করেন-বাঁধা আর হয়ে ওঠে না। দড়ি আর ফুরাচ্ছে না। তিনি গোচারণের রাখাল আবার সেই কৃষ্ণ মাধুর্য রসের শ্রেষ্ঠ লীলা করেন। মিলন বিরহের শ্রেষ্ঠ কীর্তি গোপীদের সাথে। তাঁকে কি অত সহজে পাওয়া যায়। তাকে চাওয়ার মতো চাইতে হবে, ডাকার মতো ডাকতে হবে। নইলে তাকে কি পাওয়া যায়? প্রেমের মধ্যেও অনেক স্বার্থের গন্ধ থাকে। নিষ্কাম পর্যায়ে উন্নীত না হলে ঐকান্তিক প্রেমের নিদর্শন পাওয়া সম্ভব নয়। ভগবানের শ্রেষ্ঠ লীলা নরলীলা, ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে তার সাথে খেলা করা।
এই তো আমাদের ঘরের ছেলে, আমাদের আপনজন, অতি প্রিয় শ্রীকৃষ্ণ গোচারণভূমিতে। ঐ দেখ মাথায় পাগড়ী আর হাতে রাখালেন লাঠি, রাখালের বেশ, গাভীরা চড়ে বেড়াচ্ছে। আবার ঐ দেখ শ্রীশ্রীরাধারাণী সাথে সখীবৃন্দ ওরে বাবা কত না কীর্তিকলাপ তাদেরও গোপবেশ, এ কি আজ কি চরণকমল কাজড় দিয়ে ঢাকতে ভুলে গেছেন !! হতে পারে তাড়াতাড়ি নতুন খেলায়, নতুন দায়িত্ব পাওয়ার কর্তব্য-র পথে চরণকমল দর্শন দান করেছেন ব্রজভূমির, ব্রজধূলি মাখামাখি তাতে, কি রেণু রেণু ঝরে পড়ছে আজও আমরা সেই ধূলিকণা মাথায় দিয়ে সেই লীলা আস্বাদন করে বিভোর।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত কর্তব্য কর্ম করেছেন জাগতিক মানুষদের জন্য কেননা যদি তিনি বিধি-নিষেধের আচরণ না করেন, তবে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সকলেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবে।
ঋতুচক্রের আবর্তনে ধরায় হেমন্তের আগমন। হেমন্ত ঋতুর এই প্রথম মাসটিকে নবান্নের আবাহন-এর প্রতীক ভাবা হয়। শীত বুড়ির জড়তার আগে কৃষকের মনে আনে নব উদ্যম। ধরায় প্রথম হিমেল বাতাসের স্পর্শে পুলকিত হয়ে ওঠে প্রকৃতি। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথি এই বিশেষ দিনটিতে গ্রহ নক্ষত্রের শুভ যোগে এক মাহেন্দ্র ক্ষণে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কর্তব্যকর্ম শুরু করেছিলেন। এই দিনটিই পবিত্র “গোপাষ্টমী” তিথি রূপে পরিচিত। তখনকার দিনে ৬ বৎসরের আগে পর্যন্ত সময়কে কৌমার বলা হয় ৬-১০ বছর বয়স পর্যন্তকে পৌগণ্ড বলা হত। সেই সময় নন্দ মহারাজ-এর সন্নিধানে সমস্ত গোপেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করলেন যে, যে সমস্ত বালকের বয়স ৫ বৎসর অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের উপর গোচারণে গোরু চরাবার ভার দেওয়া হোক।

এই সময় শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা কৌমার লীলাবিলাস করে পৌগণ্ডে পদার্পন করলেন। এই সময়ে কৃষ্ণ ও বলরাম গাভীসমূহের দায়িত্ব ভার লাভ করে বৃন্দাবনের সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে লাগলেন এবং তাঁদের পাদস্পর্শে বৃন্দাবনের ধূলিকণা পবিত্র হল।
শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম মহা আনন্দ যমুনার কূলে গাভী এবং তাদের গোবৎস সহ অধিবাসীদের সঙ্গ সুখ উপভোগ করছিলেন। তাঁরা যে সমস্ত গাভীদের তত্ত্বাবধান করতেন, তাদের বিভিন্ন নাম ছিল এবং কৃষ্ণ বলরাম স্নেহভরে তাদের সেই নাম ধরে ডাকতেন। কৃষ্ণের ডাক শুনে গাভীরা পুলকিত হত, তারা ‘হাম্বা’ রবে সেই ডাকের সাড়া দিয়ে তাদের ভাব বিনিময় করতে এবং গোপ বালকরা হৃদয়ভরে পুলকিত নয়নে তাদের ভাব বিনিময় আস্বাদন করত। এইরকম ঘুরতে ঘুরতে তার ক্লান্ত হয়ে পড়ত। তখন তারা প্রচণ্ড রোদে বা বর্ষায়, বা শীতে আবহাওয়ার অনুকূল জায়গা খুঁজে সেখানে বসে বিশ্রাম করত। বলরাম খুব পরিশ্রান্ত হয়ে বসে পড়লেন, কোন গোপ বালকের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। কৃষ্ণ কাছেই বসে আছেন যতই হোক তাঁর দাদার পা টিপে দিতেন। আবার বনের মধ্যে ঐতো তালপাতা, ঐ তালপাতা দিয়ে হাওয়া করছেন। আবার কৃষ্ণ যখন ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, অবসন্ন হয়ে পড়েছেন কি আর করা যায়-গাছের গুঁড়িতে মাথা রেখে শুয়ে বিশ্রাম করতেন। আবার গোপবালকদের কোলে মাথা রেখে বিশ্রাম করতেন। আরে যতই হোক দলের নেতা, দেখতে শুনতে বেশ ভালো, ওর রূপের দিকে তাকিয়েই ওর সেবা করতে ইচ্ছা করে, কি সুন্দর মুখটা ও গায়ের রং। একটু শরীর স্পর্শ করতে ইচ্ছা করে। তখন কয়েকজন বালক এসে তার পা টিপে দিত। আর কয়েকজন তাড়াতাড়ি কয়েকটা গাছের বড় পাতা ছিঁড়ে নিয়ে পাতা দিয়ে তাকে হাওয়া করত। অনেক গোপ দাঁড়িয়ে আছে হওয়া দেওয়ার তো আর জায়গা নেই। কি করা যায়। তখন গোপ বালকরা মধুর স্বরে গান গাইত, কেউ খেলা করত। নাচ করতে, লম্ফ দিত। এইভাবে কৃষ্ণের ক্লান্তি দূর হত, তখন কৃষ্ণ তাদের হাত ধরে সঙ্গসুখ উপভোগ করতেন। হাসতে হাসতে তাদের কার্যকলাপের প্রশংসা করতেন। কৃষ্ণ একজন সাধারণ গোপবালকের মতো লীলাবিলাস করলেও তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তির প্রভাবে তাঁর পরমেশ্বরতা প্রদর্শন করেছেন।

গোচারণের সময় কৃষ্ণ ও বলরাম বাঁশি বাজিয়ে গোপসখাদের, বনের ফূল, লতা, পাতা, ময়ূর, হরিণ সকলকে সঙ্গসুখ দিতেন ও তাদের কার্যকলাপ বাঁকিয়ে ফলভারে নত হয়ে মাটি স্পর্শ করে, তাঁদের শ্রীপাদপদ্মে প্রণাম জানাত। ভ্রমররা নেচে নেচে তাঁরা যতদূর যেতেন তাঁদের সাথে যেতে যেতে গুঞ্জন করত। ভীরু হরিণগুলি স্নেহভরে লাজুক নয়নে তাঁদের সাথে সাথে যেত। বনের পাখিরা, কোকিলেরা মহানন্দে ডেকে ডেকে তাঁদের যেন বরণ করছে। ব্রজগোপিকারা কত সৌভাগ্যবতী, তাঁরা কৃষ্ণের রূপ দর্শন করতে পারছেন। কৃষ্ণ গোচারণে যাবেন রাধারাণীর সঙ্গে দেখা হবে না। তাহলে কি করা যায়।

রাধারাণী ও গোপীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে মাথায় পাপড়, হাতে লাঠি, ধূতি পরিহিত গোপ বালকের ছদ্মবেশ নিলেন। কৃষ্ণসখা সুবলের সঙ্গে রাধারাণীর চেহারার মিল ছিল বলে রাধারাণী সুবলের মতো বেশ ধারণ করে ছদ্মবেশে গোচারণে কৃষসান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। কৃষ্ণ তাঁর বাঁশী বাজাতে বাজাতে সেই গোপিকাদের দেহকান্তি ও হাস্যোজ্জ্বল সুন্দর মুখ দর্শন করে পরম আনন্দ উপভোগ করতে লাগলেন। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথি। এই বিশেষ দিনটিতেই গোচারণে গোপবেশে রাধারাণী, কৃষ্ণসান্নিধ্য লাভ করেছিলেন বলে, ভক্তগণ শ্রীরাধারাণী ও অন্যান্য গোপীগণের শ্রীপাদপদ্ম দর্শনের সুযোগ লাভ করেন।

গাভীদের পদবিক্ষিপ্ত ধুলিরাশিতে ময়ূর, কোকিল, তৃণ, গুল্ম, লতাদের সুরম বাস, মনোহর কটাক্ষপাত, ব্রজ যুবতীদের উৎফূল্লতা, গোপবালকদের আনন্দোচ্ছ্বাস, বেনু ধ্বনিতে, গো-বৎসদের গোচারণে বৃন্দাবনের গোচারভূমি পরিপূর্ণ, পবিত্র। গোচারণ থেকে পরিশ্রান্ত হয়ে কৃষ্ণ, বলরাম ফিরে এলে মা যশোদা ও রোহিনীদেবী কোলে তুলে নিলেন এবং তাঁদের বাসনা চরিতার্থ করলেন। তাঁদের পুত্রদের স্নেহ করলেন এবং সেইসঙ্গে তাঁদের আশীর্বাদ করলেন। এইভাবে গাভীসমূহের দায়িত্বভার লাভ করে কৃষ্ণ ও বলরাম বৃন্দাবন ঘুরে বেড়াতে লাগলেন এবং তাঁদের পদধূলির দ্বারা ব্রজভূমি পবিত্র হলো।

কৃষ্ণের বহুমূখী চরিত্রের কর্মধারা আমাদের সমাজজীবনে সকলের জন্য-আমাদের ওপর প্রভাব ফেলার জন্য। কর্তব্য কর্ম না করে, কেউই থাকতে পারে না। আত্মা- সেও সব সময় কর্মরত থাকে। আত্মার উপস্তিতি না থাকলে আমাদের এই জড়দেহ চলাফেরা করতে পারে না। আত্মাও কর্তব্যকর্ম থেকে এক মূহুর্তের জন্যও বিরত হতে পারে না। সাধুর বেশ ধরে কর্তব্য কর্ম না করে উপর তলায় বিশ্রাম বৈভবের উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন ও ভোগ তৃপ্তির জন্য লোক ঠকানোর চাইতে কর্তব্য কর্র্মে, স্বকর্মে নিয্ক্তু থেকে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন কারা শত সহস্র গুণে ভাল। আর এই স্বকর্মটি হল কৃষ্ণসেবা ও কৃষ্ণচিন্তা। কৃষ্ণ আমাদের জন্য যেসব নির্দেশ প্রদান করে গিয়েছেন তা হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্ঠা করা।

শ্রীকৃষ্ণ এই পৃথিবীতে অবস্থান করার সময়ে ঘরে বাইরে সর্বত্র গৃহস্থোচিত সমস্ত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করেছিলেন। যে সমস্ত মানুষ শাস্ত্রের নির্দেশ অনুসারে কর্তব্য কর্ম অনুষ্ঠান করেন-তাঁরা কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হন। অতএব কর্মবন্ধনের প্রতি আসক্ত রহিত হয়ে কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করার ফলেই পরতত্ত্বকে লাভ করতে পারা যায়। যিনি সকল রসের আধার, সকল অগতির গতি সেই রসরাজ শ্রীকৃষ্ণ কর্তব্য কর্ম করেছেন জাগতিক মানুষদের জন্য, তাঁর গোচারণের দায়িত্বভার গ্রহণ করার ঘটনাটিও আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য। পারমার্থিক উন্নতি লাভের জন্য সুশৃঙ্গল সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয় এবং কর্তব্যকর্ম সম্পাদনের জন্য প্রতিটি মানুষকে নিয়ম ও শৃঙ্খলা অনুসরণ করে সুসংহত জীবন যাপন করতে হয়। প্রতিটি মানুষ তার প্রতিদিনের কর্তব্যগুলি না করলে জীবের কোন বৃত্তি বা অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটতে পারে না।

আগেকার মানুষ ছিলেন ধর্মপ্রাণ। বিশেষ করে তারা ভগবানের সান্নিধ্য ভগবানের কৃপায়, প্রেম মাধুর্য লীলায়, ভক্তিমার্গে চরম পর্যায়ে উন্নততর ভক্ত ছিলেন। তখন সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে মার্জিত রুচিবোধ ও শালীনতা বোধ বজায় থাকত। আজকের শতাব্দীতে পরিস্থিতি জাগতিক নিয়মে তার থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। পশ্চিমী জড় ভোগ সুখের পশ্চিমী কু-বাতাসের স্পর্শে একটা কৃত্রিম বিজাতীয় উচ্ছৃঙ্খল কার্যকর, ভোগসর্বস্ব সমাজ সংস্কৃতির জন্ম দিচ্ছে। সমাজ সংস্কৃতির কু-প্রভাবে আজ নব্য যৌবন সম্প্রদায় বিভ্রান্ত, হতোদ্যম।

অনাদিকাল থেকে ভারত বর্ষে গো-মাতাকে সেবা ও পূজা করার মধ্যে দিয়ে বিশেষ ভাবে গো-জাতির উন্নতিকল্পে সুরক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা ছিল। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেরই অবস্থানুযায়ী সুব্যবস্থা করা। গ্রামে গ্রামে গোচারণ ক্ষেত্র, গোজাতি সংরক্ষণ ও তাদের উন্নতিকল্পের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্তমান পৃথিবীতে অনেক কসাইখানা দেখা যায়। আগেকার অসুরের চেয়ে ভয়ংকর অসুরেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা গোহত্যা করতে চায়। তাদের মনে রাখা উচিত যে গোহত্যা করে তার মাংসে যা প্রোটিন ভিটামিন হবে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ভিটামিন, প্রোটিন আছে গোজাত উৎপন্ন সমূহে। আমাদের গোজাতি সংরক্ষণ ও তাদের উন্নতিকল্পের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সকল সম্প্রদায়ের মানুষ গো-মাতার দুগ্ধ খেয়ে তার পুষ্টির যোগান মেটায়। গোজাত উৎপন্ন সমূহ আমাদের অনেক প্রয়োজন। গোদুগ্ধ খেয়ে শিশুদের বল বৃদ্ধি পায়। সেই গোমাতাকে কিভাবে কসাইখানায় হত্যা করা হয়। তুমি তোমার মা’কে হত্যা করতে পারবে? গরুর দুধ খেয়ে বড় হয়েছ। গোমাতাও তোমার মায়ের মতো। গোহত্যার অনিষ্টকারীতা সম্পর্কে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে বোঝাতে হবে, বুঝতে হবে। গোমূত্র এবং গোবরেরও অনেক ঔষধি গুণ আছে, যা আমাদের অনেক রোগের পক্ষে ভাল। গোসেবা করলে আমরা জাগাতিক, অর্থনৈতিক, দৈহিক, পারমার্থিকভাবে লাভবান হতে পারি। আসুন আমরাও তেত্রিশ কোটি দেব-দেবতাদের সান্নিধ্য লাভ করি এবং তাঁদের রাজ, ব্রজভূমির গোচারণের রাজা, সকলের রাজার প্রেমময় কৃপা লাভ করি। আসুন সকলে প্রণাম করি-

নমো ব্রহ্মণ্য দেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥

ভক্ত ভগবানকে নানভাবে পেতে চান-পুত্র হিসেবে, সখা হিসেবে, প্রভু হিসেবে, ভক্ত তাঁকে কাছে পেয়ে নানা নানারূপে সাজাবে। শ্রীকৃষ্ণ সর্বকারণের কারণ। তাঁর এই বিরাট জগৎ সংসার, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড। তাঁর বিরাট লীলা যুগ যুগান্তর ধরে চলেই আসছে এবং। ভবিষ্যতেও চলবে। শ্রীকৃষ্ণের লীলা, তাঁর বংশীধ্বনি, তাঁর পদচারণার ধ্বনি আজও চলছে। ব্রজভূমিতে আজও সেই বংশীধ্বনি শোনা যায়। বৃন্দাবনের ব্রজভূমির ধূলিকনায় পাহাড়ে, নদীতে, জলে, স্থলে, লতায় পতায়, ফুলে ফলে অবিরাম লীলা খেলা চলছে। ব্রজধামের ধূলিকণায় যগ মঞ্ছিত গোপীদের প্রেম মাধুর্য্য লীলা আজও রেণু রেণু হয়ে ঝরে পড়ছে আমরা সেইসব লীলা আস্বাদন করে আজও বিভোর।


চৈতন্য সন্দেশ নভেম্বর-২০২১ প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।