এই পোস্টটি 27 বার দেখা হয়েছে
মহাবিষ্ণু স্বামী মহারাজ
কিছুদিন আগে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের অভিযানে প্রথম বাংলাদেশী অভিযাত্রিক হিসেবে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন এক তরুণ। পৃথিবীতে এরকম অনেক অভিযান সম্পন্ন হযেছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে ইস্কন ভক্তদের নদীপথে একটি ব্যতিক্রমী অভিযান গণমাধ্যমেও একটি ভিন্ন মাত্রা এনেছিল। হিন্দুস্থান টাইমসের মত ভারতের নামিদামী পত্র-পত্রিকাগুলোর সামনের পাতায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন টেলিভিশন মিডিয়াগুলোও এই ব্যতিক্রমী অভিযানের সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরে। কেননা কোন সাধু ব্যক্তিদের এটা ছিল প্রথম কোন ব্যতিক্রমী অভিযান। তবে এ অভিযানের পেছনে একটি মহৎ উদ্দেশ্য ছিল। সেটি হল গঙ্গা নদীকে রক্ষার জন্য আশেপাশের গ্রামগুলোর লোকজনদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি। এরই সঙ্গে মিডিয়ার বদৌলতে যখন তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয় তখন তারা গঙ্গা নদীর বর্তমান দুরাবস্থা সম্পর্কে লোকজনদের অভিহিত করে। উপরের যে তথ্যগুলো সেগুলোর সবই এই বছরের জলযাত্রা খবরাখবর। এটি ছিল চতুর্থ জলযাত্রা। মূলত এ ব্যতিক্রমী অভিযানটি শুরু ২০০৭ থেকে। এবারে জলযাত্রায় অংশ গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক একটি দল। যাতে ছিল একজন ইংরেজ, দু’জন ফরাসী, একজন রাশিয়ান, একজন ইউক্রেনিয়ান, একজন এস্টোনিয়ান, একজন জার্মান এবং একজন বসনিয়ান। এই দলটির অভিযাত্রা শুরু হয় নেপাল বর্ডারের – নিকটে গোপালগঞ্জ থেকে। এই অভিযাত্রা বিহার রাজ্যের পবিত্র গণ্ডকী নদী হয়ে গঙ্গার মিলিত স্থান হয়ে পতনাতে শেষ হয়। একটি বোটে করে তারা এই অভিযান সম্পন্ন করে। ঐ বোটের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব কিছু যেমন – কাপড়-চোপড়, তাবু, রান্না করার জিনিসপত্র, মেডিকেল জিনিসপত্র সহ ছোট গৌর নিতাই বিগ্রহ। অভিযানের সময় তারা বোটের একটি ছোট কুকারে প্রতিদিনকার রান্না যেমন খিচুরী, চাপাটি ইত্যাদি রান্না করত। সেগুলো রান্না করে গৌর নিতাইকে নিবেদন করে প্রসাদ পেতেন। খাবার পানীয় হিসেবে গঙ্গার জলকে একটি ছোট ফিল্টারে পরিশোধন করে পান করতেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল এই অভিযাত্রায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েনি। তবে আতঙ্ক ছিল চোর-ডাকাত নিয়ে। এমনিতেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আমল থেকেই বিহারে চুরির উপদ্রব ছিল। এখনো এই বিহার রাজ্যটি ডাকাতির জন্য কুখ্যাত। যখন মহাবিষ্ণু স্বামী মহারাজ এ অভিযাত্রীকদের সঙ্গে যোগ দিতে আসছিলেন তখন ছিনতাইয়ের সম্মুখীন হন।
অনেক সময় বোট চলতে চলতে দেখা যেত অনেক লাশ জলে ভেসে আসছে। ভক্তদের বেশির ভাগ সময় চলে যেত হরিনাম কীর্তনের মাধ্যমে এবং প্রভুপাদের গ্রন্থ অধ্যয়নের মাধ্যমে। নদীর তীরে কীর্তনের সময় দল বেঁধে গ্রামবাসীরাও যোগ দেয়। তাদেরকে জপমালা দেওয়া হয় হরিনাম জপের জন্য। রাতে শোয়ার জন্য তাবু গেড়ে তীরে বিশ্রাম নেওয়ার সময় পোকামাকড়ের উপদ্রব হত। বিশেষ বিশেষ এলাকায় ইস্কনের লাইফ মেম্বারদের সহায়তায় সম্মেলনের আয়োজন করা হত যেখানে গঙ্গাকে রক্ষার সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সবাইকে উৎসাহিত করা হত। সম্মেলনে গঙ্গার মহিমা সম্পর্কে অবগত করানো হত। অনেক সময় বিশেষ কারণবশত বোট না চললে পরশুরাম প্রভু তীরে বোটের দড়ি ধরে দৌড়াত। তখন অনেক সময় তীরে স্নানরত ষাড়গুলোর শিংয়ে দড়ি লেগে যায়। এদিকে ষাঁড় দৌড়ে পালাতে উদ্যত হলে ষাড়ের সঙ্গে সঙ্গে বোটও অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে থাকে। এরকম কিছু রম্য রসাত্মক ঘটনাও ঘটে। আরেকবার একজন অভিযাত্রী ভক্ত তীরে হাটতে হাটতে চোরাবালীতে পা পড়ে যায়। তলিয়ে যেতে যেতে চটজলদি অন্য এক অভিযাত্রী দড়ি এগিয়ে দিলে ঐ যাত্রায় ব্যক্তিটি প্রাণে বেঁচে যায়। এরকম আনন্দ বেদনার মুহূর্তের মধ্য দিয়ে অভিযান শেষ হয় পতনাতে। পতনাতে পৌছা মাত্রই সাংবাদিকরা এবং মিডিয়ার লোকজন সাক্ষাতকার নিতে ছুটে আসে। প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার ভ্রমণের সব লোমহর্ষক অভিযান পত্র-পত্রিকায় ছাপানো হয় আর সে সঙ্গে ভক্তরা অনতিবিলম্বে গঙ্গাকে রক্ষার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান। ভিন্ন স্বাধের এই এ্যাডভেঞ্চারের মাধ্যমে গঙ্গা নদীকে রক্ষারব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি একেবারে বিরল।
হরে কৃষ্ণ ,
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , আগস্ট ২০১০ ইং