এই পোস্টটি 289 বার দেখা হয়েছে
২০০৮ সালের ১৮ মার্চ। লন্ডনের জনসমাবেশ মন্ত্রণালয়ের সদস্য শ্রী মহেশ দোখিয়া হঠাৎ মায়াপুরে ইস্কন চন্দ্রোদয় মন্দিরের পূজারী শ্রীমান নন্দ কিশোর প্রভুকে ফোন করলেন। অত্যন্ত কাতরস্বরে তিনি তাকে জানালেন যে, তার স্ত্রী শ্রীমতি জয়শ্রী দোখিয়া একুয়েট ইউটারিন নামক ক্যান্সারে ভুগছেন এবং এখন তাঁর জীবনের অন্তিম সময়। লন্ডনের ডাক্তাররা সম্পূর্ণরূপে আশা ছেড়ে বলছেন যে, যেহেতু তাঁর নিম্নাঙ্গে ক্যান্সার মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সেহেতু তিনি আর মাত্র ৩ মাস বেঁচে থাকবেন। শ্রী মহেশ প্রভু তাঁর স্ত্রীর জন্য, মায়াপুরের পূজারীদের ভগবানের নিকট প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ জানালেন। ঐদিন সকালে নন্দ কিশোর প্রভু পূজারী শ্রীপাদ পঞ্চজাঙ্খী প্রভুকে সমস্ত ঘটনা বললেন। ঠিক সেই মুহূর্তে তারা উভয়েই পূজারী রুমে ছিলেন। তখন পঞ্চজাঘী প্রভু ভগবান নৃসিংহদেবের অভিষেকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি নন্দকিশোর প্রভুে জিজ্ঞাসা করলেন “মাতাজীর নাম কি? তখন এক টুকরো কাগজে নন্দকিশোর প্রভু ‘জয়শ্রী’ নামটি লিখে দিলেন। ঠিক একই মুহূর্তে জার্মানীতে শ্রীমতি জয়শ্র মাতাজীর অস্ত্রোপচার চলছিল। এদিকে পঞ্চজাঙ্খী প্রভু নৃসিংহদেবের কাছে প্রার্থনা করলেন মাতাজী সুস্থতা কামনায় যখন মাতাজী চেতনা ফিরে পেলেন তখন তিনি তাঁর স্বামীকে বললেন যে, তিনি স্বপ্নে মায়াপুরের ভগবান নৃসিংহদেবকে দর্শন করেছেন নিকটে ভক্ত প্রহ্লাদ মহারাজ তাঁকে নৃসিংহদেবের মহিমা বর্ণনা করেছেন।
এর পরবর্তী ঘটনা খুবই আশ্চর্যজনক মাতাজী অনুভব করছেন যে, তিনি যেন এক নতুন মানুষ এবং খারাপ কিছু একটা তার দেহ থেকে নির্গত হয়েছে। এরপর চেক আপের জন্য মাতাজীকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে বিশেষজ্ঞরা অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হলেন যে তার দেহে ক্যান্সারের আর কোনো চিহ্ন নেই। তারা সেই মুহূর্তে জার্মানীতে হাসপাতালের ডাক্তারদের ফোন করলেন রোগীর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য। | জার্মান সার্জনগণ কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে এই অসম্ভব কার্য কিভাবে সম্ভব হল? ডাক্তারদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, মাতাজীর দেহে ক্যান্সারের কোন লক্ষণ আর নেই। জার্মান মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ এই সমগ্র বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও এই রহস্যের কুলকিনারা পেলেন না। কিন্তু ডাক্তারগণ জানতেন না যে, ভগবান নৃসিংহদেব নামক কেউ এই ঘটনার নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন। যিনি তার ভক্তদের বিপদ থেকে রক্ষা করেন। পরবর্তীতে মহেশ প্রভু এবং জয়শ্রী মাতাজী যখন সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় মায়াপুরে ভগবান নৃসিংহদেবের সম্মুখে এসে দর্শন করলেন তখন তারা নৃসিংহদেবের কৃপার মর্মার্থ বুঝতে সক্ষম হলেন। নৃসিংহদেবকে দর্শন করা মাত্রই জয়শ্রী মাতাজীর চোখে অজস্র অশ্রু বর্ষিত হতে লাগল। শ্রীপাদ জননীবাস তখন উপস্থিত ভক্তদের এই অপ্রাকৃত লীলার কথা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন যে, নৃসিংহদেব তার অপ্রাকৃত নখ দ্বারা তার ভক্তের দুর্দশা দূর করেন এবং ভক্তগণ অপ্রাকৃত কৃপা লাভ করেন।বর্তমানে জয়শ্রী মাতাজী প্রতিদিন ১৬ মালা হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করছেন এবং কৃষ্ণভাবনায় জীবনযাপন করছেন। তিনি সকল ইস্কন গৌরভক্তদের ধন্যবাদ জানান এবং শ্রীল প্রভুপাদের প্রকৃত পারমার্থিক পরিবারে যুক্ত হতে পেরে গর্ব অনুভব করেন। এছাড়া তিনি বিশেষভাবে শ্রীপাদ জননীবাস প্রভু এবং শ্রীপাদ পঞ্চজাঙ্খী প্রভুকে ধন্যবাদ জানান ভগবান নৃসিংহদেবের নিকট প্রার্থনা করে তার জীবন বাঁচানোর জন্য ।
অনেকেই এই ধরনের ঘটনাসমূহকে অদ্ভুদ চোখে দেখতে পারেন, কিন্তু এটি মোটেই অদ্ভুদ ঘটনা নয়। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, ভক্ত এবং ভগবানের মধ্যে একটি স্বাভাবিক মধুর সম্পর্ক রয়েছে। ভগবান তাঁর প্রতি শরণাগত ভক্তের দুর্দশা লাঘব করেন। সাধারণত বদ্ধ অবস্থায় প্রতিটি জীব প্রকৃতির কঠোর নিয়মে নিয়ন্ত্রিত থাকেন। ভগবান প্রকৃতির নিয়মে কোন বাধা প্রদান করেন না। প্রকৃতির নিয়মে ও কর্মফল অনুসারে জীবকে জন্ম মৃত্যু, জড়া, ব্যাধিগ্রস্থ হতে হয়। কিন্তু কেউ যখন ভগবানের ভক্ত হন তখন ভগবান সেই শরণাগত ভক্তের সকল কর্মফল ধ্বংস করেন এবং তাকে মহাবিপদ থেকে রক্ষা করেন। কিন্তু অভক্ত হলে সেটি সম্ভব হয় না। তাই ভগবানের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রেখে শরণাগতি প্রকাশ করা উচিত। সকলেরই। জয় জয় নৃসিংহদেব ভগবান কি জয়!!! হরে কৃষ্ণ ।
চৈতন্য সন্দেশ আগস্ট- ২০০৯ইং প্রকাশিত