এই পোস্টটি 21 বার দেখা হয়েছে
পারমার্থিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভূভারহরণ ও আনন্দময়ী লীলাবিলাসের মাধ্যমে ভক্তদের অপ্রাকৃত প্রীতিবিধানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মন্বন্তরে বিভিন্ন ব্রহ্মাণ্ডে আবির্ভূত হয়ে থাকেন। চতুর্মুখ ব্রহ্মার এই ব্রহ্মাণ্ডের পৃথিবী নামক গ্রহে শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হয়েছেন আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে অপ্রাকৃত ধাম মথুরায়। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পবিত্র রোহিনী নক্ষত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে আবির্ভূত হন। দিনটি ছিল বুধবার এবং আকাশে তখন বিজলী গর্জন হচ্ছিল। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বরণ করে নেয়ার জন্য প্রকৃতি তখন এক অপূর্ব সাজে সেজেছিল।
দ্বাপর যুগের সেই অপ্রাকৃত লীলাবিলাস এখনও দর্শনীয়। শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমির ভিতরে এক বিশাল শ্রীমদ্ভাগবত ভবন বিরাজিত। ভবনে শ্রীরাধাকৃষ্ণ, শ্রীরাম লক্ষণ-সীতাদেবী, শ্রীজগন্নাথজী ও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অপূর্ব বিগ্রহ দর্শনীয়। কংস যেস্থানে দেবকীকে আবদ্ধ করেছিলেন সেই কারাগারটি এখনও দর্শন করা যায়। যেস্থানে কংস দেবকীর ছয়জন পুত্রকে নিহত করেছিলেন সেই স্থানটিও দর্শন করা যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব স্থান মথুরা নাম সম্পর্কে একটি লীলা রয়েছে।
ত্রেতাযুগে ভগবান রামচন্দ্রের ভাই শত্রুঘ্ন এই স্থানে-লাবণ নামক এক দৈত্য সংহার করেন এবং মাধুরা শহর প্রতিষ্ঠিত করেন। মাধুরা থেকে কালক্রমে মথুরা শব্দের উৎপত্তি ঘটে। পৌরাণিক কাহিনী মতে এই স্থানে সর্বপ্রথম মন্দির নির্মাণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণের প্রপৌত্র শ্রীবজ্রনাভ। পাথরে খোদিত ব্রাহ্মীলিপি থেকেও এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। বর্তমান মন্দিরের রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহটি ঠিক দেখতে মানুষের মত তথা ৬ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এবং জগন্নাথ-বলদেব-সুভদ্রা বিগ্রহত্রয় পুরীধাম থেকে মথুরায় এই মন্দিরে অবস্থান করে অপ্রাকৃত সেবা গ্রহণ করছেন। এখনও মন্দিরে প্রবেশ করলেই অপ্রাকৃত আনন্দ, সুখ অনুভব হয় অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে এখনও এই স্থানে লীলাবিলাস করছেন তা শুদ্ধ ভক্তগণ অনুভব করতে পারেন।
যখন ভগবানের আবির্ভাবের সময় হল, তখন কাল সর্বগুণ সমন্বিত হয়ে পরম সুন্দর হয়ে উঠল। তিথি, যোগ এবং নক্ষত্র তখন সর্বমঙ্গলময় এবং সর্বসুলক্ষণযুক্তা হয়ে উঠল। বনভূমি নানা রকম সুন্দর সুন্দর পাখি ও ময়ূরপূর্ণ হয়ে উঠল। পাখিরা সুমধুর স্বরে গান গাইতে লাগল এবং সেই গানের ছন্দে ময়ূরেরা ময়ূরীদের সঙ্গে নাচতে শুরু করল। গন্ধর্ব এবং কিন্নরেরা সুমধুর সুরে গান গাইতে লাগল এবং সিদ্ধ ও চারণেরা ভগবানের গুণকীর্তন করে তাঁর স্তব করতে লাগল। স্বর্গলোকে দেবতারা তাঁদের সহচরী এবং অপ্সরাদের সঙ্গে সুললিত ছন্দে নৃত্য করতে লাগলেন। দেবতারা এবং মুনিঋষিরা পুস্পবর্ষণ করতে লাগলেন। সমুদ্রের উপকূলে তরঙ্গের মৃদু মৃদু শব্দ হতে লাগল এবং সমুদ্রের উপরে সুমধুর মেঘগর্জন হতে লাগল।
তখন ভগবান বিষ্ণু, যিনি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করেন, তিনি রাতের গভীর অন্ধকারে পরমেশ্বর ভগবানরূপে দেবকীর সম্মুখে কংসের কারাগারে আবির্ভূত হলেন। পূর্ণচন্দ্র যেভাবে পূর্বদিগন্তে উদিত হয়, ঠিক তেমন ভাবেই পরমেশ্বর ভগবান আবির্ভূত হলেন। কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অষ্টমী তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল তা হলে পূর্ণচন্দ্রের উদয় হল কি করে? এর উত্তরে বলা হয়েছে যে, শ্রীকৃষ্ণ চন্দ্রবংশে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাই চন্দ্র সেই রাত্রে অপূর্ণ থাকলেও সেই বংশে ভগবানের আবির্ভাবের জন্য আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে সেদিন পূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন।
খমাণিক্য নামক জ্যোতিষ শাস্ত্রগ্রন্থে ভগবানের আবির্ভাব সময়কালীন গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান খুব সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে প্রমাণ করা হয়েছে যে, এই শুভ মুহূর্তে যে শিশুটির জন্ম হল, তিনি হচ্ছেন পরমব্রহ্ম।
হরেকৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , সেপ্টেম্বর – ২০১০ ইং