ইন্দ্রিয় সংযম অবশ্য কর্তব্য

প্রকাশ: ৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 17 বার দেখা হয়েছে

ইন্দ্রিয় সংযম অবশ্য কর্তব্য

শ্রীমৎ গোপালকৃষ্ণ গোস্বামী

ভক্তিমার্গে অগ্রসর হতে হলে ইন্দ্রিয় সংযমের প্রতি প্রথমে দৃষ্টি দিতে হবে। ইন্দ্রিয় সংযমের গুরুত্ব অসীম। ভগবদ্গীতাতেও ২/৬২ বলা হয়েছে যে, ইন্দ্রিয় উপভোগের বিষয়সমূহ নিয়ে চিন্তা করতে করতে মানুষের আসক্তি জন্মায়, আসক্তি থেকে কামনার উদয় হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উৎপন্ন হয়। বিষয় চিন্তা, আসক্তি, কামনা ও ক্রোধ, এই সমস্ত কিছুই ভক্তিজীবনে অগ্রসর হওয়ার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

আমাদের চোখ দিয়ে আমরা দেখছি ভাবছি, সুন্দর ঐ জিনিসটা আমার চাই, কারণ সেটি দেখতে ভালো। নাক দিয়ে কোনও কিছুর সুগন্ধ উপভোগ করছি, সুতরাং সেটিও চাই। কান দিয়ে মধুর ধ্বনি শুনছি, জিহ্বায় লোভনীয় কোনও স্বাদ আস্বাদন করছি– সে সবই চাই, তা ধর্মীয় হোক বা ধর্মবিরুদ্ধ হোক, শাস্ত্রসম্মত হোক বা অশাস্ত্রীয় হোক। সব আমার চাই। এই হল লোভ। এই রকম ইন্দ্রিয় তৃপ্তির প্রশ্রয় দিলে তা থেকে কামনা বাসনার আগুন জ্বলতে শুরু করে। সেই বাসনা পূরণ না হলে ক্রোধ জন্মে। আর ক্রমে সেই ক্রোধের আগুনে বুদ্ধিভ্রংশ হয়, স্মৃতিবিলোপ ঘটে। তখন শুরু হয়ে যায় অধঃপতন।

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই প্রসঙ্গে তাঁর শ্রীমদ্ভাগবত ভাষ্যের তাৎপর্য অংশে বর্ণনা করেছেন যে, স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হওয়ার ফলে সমাজে কত রকমের পাপকর্মে আমরা আজও লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছি। শ্রীমদ্ভাগবতের ৫ম স্কন্ধের ৫ম অধ্যায়ে ভগবান ঋষভদেবও তাঁর পুত্রদের প্রতি উপদেশ দান প্রসঙ্গে স্ত্রীসঙ্গ বিষয়ে মনসংযমের পরামর্শ দিয়েছিলেন। বিবাহিতা স্ত্রীর অন্য কোনও দিকে আসক্তি জন্মালে সে নিজ পতিকে দেহে-মনে বহুকণ্ঠ দিয়ে পরিণামে বিনষ্ট করেও সেই আসক্তি পূরণে উম্মত্তা হয়ে ওঠে। ঠিক সেভাবেই, মানুষ যদি পারমার্থিক জীবনের আদর্শ গ্রহণ করে থাকে অথচ নিজের মন ও ইন্দ্রিয় দমন করতে না পারে, তাহলে তাদেরও সর্বনাশ অনিবার্য। অতএব যে সকল ইন্দ্রিয়াসক্তি থেকে পারমার্থিক প্রগতির পথে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে থাকে, মন চঞ্চল হয়, সেই সমস্ত ইন্দ্রিয় উপভোগ বাঞ্ছনীয় নয়।

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ উপদেশ দিয়েছেন, ইন্দ্রিয় উপভোগের আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে পারলে তবেই ভগবদ্ভক্তির পথে অগ্রসর হওয়া সহজ হয়। ইন্দ্রিয়গুলি পারমার্থিক অভিনিবেশে বিষম বিঘ্ন সৃষ্টি করে থাকে। তাই ‘নারদ পঞ্চরাত্র’ গ্রন্থে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, আমরা যদি বিভিন্ন দেহাত্মবুদ্ধি থেকে মুক্ত হতে চাই, পরিবার পরিজন, ইন্দ্রিয় উপভোগ, সমাজ সেবা এবং পরিবেশ সম্পর্কে আগ্রহবোধ সংযত করতে চাই, তা হলে তার সর্বোত্তম পন্থা হল পরমেশ্বর ভগবানের উদ্দেশ্যে নিষ্ঠাভরে প্রেমভক্তি নিবেদনের মনোনিবেশে সচেষ্ট হওয়া।

ইসকনে চারটি বিধিবদ্ধ সংযম পালনের মাধ্যমে মনকে নিজ বশে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল– আমিষাহার বর্জন, নেশাভাং বর্জন, জুয়া- তাস-পাশা বর্জন এবং অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ বর্জন। এই চারটি সংযম পালনের মাধ্যমে মনকে বশে রাখা যায়।

আমাদের সব সময় মনে রাখা উচিত যে, ভগবানের প্রকৃত ভক্ত হওয়া সহজ নয়; কিন্তু এই যুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপায় তা অত্যন্ত সহজ হয়েছে। মহাপ্রভুর কৃষ্ণভাবনামৃতের শিক্ষাকে অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইস্কন) ভক্তদের কেবল চারটি নিয়ম পালন করে, প্রতিদিন ষোল মালা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আত্মোপলব্ধির জন্য ঋষি, তপস্বী ও মহান ভগবদ্ভক্তগণ নিষ্ঠাভরে যেভাবে কঠিন সাধনা করতেন, তেমন সাধন করা আমাদের পক্ষে আজ আর সম্ভব নয়। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপায় আমরা এই যুগের জন্য এক বিশেষ সুবিধা লাভ করেছি–শুধুমাত্র সুযোগ সুবিধা মতো হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ কীর্তন অনুশীলন করলেই ভক্তিমার্গে এগিয়ে যেতে পারব। অতএব, আমাদের মনে রাখতে হবে, আচার্যগণ যেভাবে যুগে যুগে ভগবদ্ভক্তির কর্তব্যকর্মগুলি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, সেইগুলি নিষ্টাভরে সম্পাদন করা না হলে, আমাদের জীবনের আসল উদ্দেশ্য কখনই সাধিত হবে না।

শ্রীচৈতন্যভাগবত গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘বল কৃষ্ণ ভজ কৃষ্ণ কর কৃষ্ণশিক্ষা।’ অর্থাৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আমাদের শিখিয়েছেন যে, ভগবানের আরাধনা করার জন্য এখন আর কষ্ট করে বনে যেতে হবে না। যে যেখানে আছেন– হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন প্রতিদিন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভজনা করুন ভক্তিভরে এবং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশবাণী হৃদয়ঙ্গম করার জন্য ঘরে বসেই নিয়মিত গীতা, ভাগবত ইত্যাদি কৃষ্ণভাবনামৃতের গ্রন্থ থেকে কৃষ্ণ-শিক্ষা আহরণ করতে থাকুন। সঙ্গে অবশ্যই ইতিপূর্বে বর্ণিত চারটি বিধিবদ্ধ ইন্দ্রিয় সংযম নিষ্টা সহকারে অনুশীলন করুন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষার ভাবধারা অবলম্বনে এই যে ইসকন প্রতিষ্ঠানটির গড়ে উঠেছে, এটি একটি বিশ্বব্যাপী কল্যাণকর শিক্ষা বিস্তারমূলক সংস্থা হয়ে উঠেছে। এই সংস্থার মাধ্যমেই শ্রীমন্মহাপ্রভুর বাণীর বিশ্বায়ন সম্ভব হয়েছে, যার ফলে পৃথিবীর সমস্ত দেশে আজ যুগান্তকারী শ্রীচৈতন্যবাণী ঘরে ঘরে সুবিদিত হয়েছে এবং হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের উপযোগিতা বহু দেশের রাষ্ট্রনায়কেরাও সর্বান্তকরণে স্বীকার করছেন। আজ এক পারমার্থিক সাংস্কৃতিক মহাবিপ্লবে জগদ্বাসী মেতে উঠেছে।
হরে কৃষ্ণ।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।