এই পোস্টটি 861 বার দেখা হয়েছে
যুগবতার দাস: একসময় আমি আমার কম্পিউটার ট্রেনিং ক্লাসে প্র্যাকটিস করছিলাম। সেসময় আমি লক্ষ্য করলাম একজন জুনিয়র শিক্ষক ইনটারনেটের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সাইটগুলো পরিদর্শন করছিল। সে ব্যক্তিগতভাবে এগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। যখন সে একা থাকতো বা সুপারভাইজার বাইরে চলে যেতো তখন সঙ্গে সঙ্গে অশ্লীল ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করা শুরু করে দিত। যদিও সেই বয়সে জুনিয়র কিন্তু তবুও সে আমার শিক্ষক ছিল। কিন্তু তার ঐ বদ্অভ্যাসের জন্য আমার পক্ষে তাকে গুরু বা শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করাটা কঠিন হয়ে পড়েছিল। একদিন আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন সময় যদি সিনিয়র শিক্ষকরা কম্পিউটারের হিস্ট্রি অপশনে গিয়ে দেখে যে আপনি এসব ভিজিট করেছিলেন তখন কি সমস্যা হবে ভাবতে পারছেন?” সে তখন শান্তভাবে উত্তর দিল, “আমি আমার ব্রাউজিং হিস্ট্রি মুছে ফেলার কৌশল জানি। এই বাটনটি চাপ দেয়ার পর কেউই আর বের করতে পারবে না আমি কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করেছি,”।
দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব
ক্লাস থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম ও বলল যে কম্পিউটার থেকে ব্রাউজিং হিস্ট্রি ডিলিট করা খুবই সহজ। কিন্তু তার মন থেকে ঐসব অশ্লীল দৃশ্যপটের হিস্ট্রি বা ইতিহাসকে ডিলিট করা অত সহজ নয়। ব্যাপারটা অনেক কঠিন। আমি কৃষ্ণভাবনার সংস্পর্শে এসে আমার হৃদয় থেকে পূর্বের অবাঞ্চিত জিনিসগুলো ডিলিট করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। কিন্তু বিভিন্ন অবাঞ্চিত ধ্যান ধারণা হৃদয়ে এমনভাবে গেঁথে থাকে যেগুলো দুর্দমনীয়। শ্রীল প্রভুপাদ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, এই প্রকার চিন্তাভাবনা শুধু এ জন্মের নয় পূর্বজন্মেরও। রাতে অনেক সময় খারাপ স্বপ্ন দেখার এটি অন্যতম একটি কারণ। মাঝে মাঝে স্বপ্নে এমন সব ঘটনা দৃশ্যমান হয় যে আমরা জেগে উঠার পর হতভম্ব হয়ে পড়ি। “না! না! আমি এরকম খারাপ ব্যক্তি নয় আমি কখনোই এসব করতে পারি না।” এই প্রকার অভিজ্ঞতা আমাদের পূর্বজীবনের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের প্রতিক্রিয়া। এখন প্রশ্ন হল যদি পূর্ব জন্মের এসব অবাঞ্চিত কর্মের প্রতিক্রিয়া এত মারাত্মক হয় তাহলে নতুন অবাঞ্চিত দৃশ্য দ্বারা আর কি কি সমস্যা হবে? পূর্ব জন্ম ও এ জন্মের কর্মের ফলাফল তো চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি করবে।
হিস্ট্রি রেকর্ডার
কেউ হয়ত ভাবতে পারে, আমি যেসব অপরাধমূলক দৃশ্য দেখছি তা কেউই দেখছে না। আমি তো হিস্ট্রি থেকে সব ডিলিট করে দিচ্ছি। এর কোন সাক্ষী নেই। কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতে (৬.১.৪২) যমদূত ব্যাখ্যা করছেন যে, আমাদের চারপাশে রয়েছে অনেক সাক্ষী, যারা প্রতিনিয়ত আমাদের সকল কর্মের রেকর্ড করছেন। তারা হলেন সূর্য, অগ্নি, বায়ু, দেবদেবী, চন্দ্র, সন্ধ্যা, দিন, রাত্রি, দিকসমূহ, জল, ভূমি এবং সর্বোপরি পরমাত্মা স্বয়ং প্রতিটা জীবের সাক্ষী রূপে সবকিছু পর্যবেক্ষন করছেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় (১৮/৬১) বলা হয়েছে, ঈশ্বর: সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্টতি: পরমেশ্বর ভগবান সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থান করছেন।” আবার ভগবদ্গীতায় ৯/১৮ তে ব্যক্ত করেছেন, “আমি সকলের গতি, ভর্তা, প্রভু ও সাক্ষী”। সুতরাং সকল কর্মের সাক্ষী রয়েছে।
পাপপূর্ণ ইতিহাস ডিলিট করা
প্রকৃতপক্ষে আমাদের বহু জন্মের পাপময় কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়া স্থায়ীভাবে ডিলিট করার পন্থা ভগবান দিয়েছেন। পবিত্র হরিনামের মাধ্যমে এর স্থায়ী ডিলিট সম্ভব। কিন্তু ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে জগাই মাধাইকে বলেছিলেন।“ আমি তোমাদের পাপ ক্ষমা করতে প্রস্তুত কিন্তু আমার কাছে প্রতিজ্ঞা কর যে তোমরা আবার কখনো পাপময় কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়বে না।” যে মুহুর্তে মহাপ্রভু তাদের পাপ গ্রহন করেন তখন তার সোনার অঙ্গ কালো হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি সমস্ত ভক্তদের বলেছিলেন হরিনাম জপ করতে। যাতে করে যে সমস্ত পাপ তিনি গ্রহণ করেছিলেন সেগুলো স্থানান্তরিত হবে বৈষ্ণব অপরাধীর মধ্যে। এভাবে ভগবান হরিনামের মাধ্যমে সমস্ত পাপ ধ্বংস হয়ে যায় এ শিক্ষা দিয়েছিলেন।
ভাইরাস ঝুঁকি
আপত্তিকর সাইটগুলো ভিজিট করার ফলে কম্পিউটার অনেক সময় ভাইরাস ঢোকার সুযোগ থাকে। আমি এটিকে তুলনা করতে পারি, যদি কেউ কোন বেশ্যার সঙ্গ করে তখন তার ফলে তার এইচ, আই, ভি ভাইরাস, সিফিলিস, গনোরিয়া এবং বিভিন্ন ভয়াবহ চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সমূহ আশংকা থাকে। এ ভাইরাস তখন সমগ্র শরীরকেই ধ্বংস করে দেয়। তেমনি সমস্ত ওয়েবসাইট থেকে ভাইরাস প্রবেশ করে কম্পিউটারের সমস্ত ডাটাকে ধ্বংস করতে পারে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ডাটা হারানোর সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এ কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর ভাইরাসের চেয়ে ঐ ওয়েবসাইটসমূহ ভিজিট করার ফলে আপনার মনে যেসব অবৈধ কামনাবাসনারূপ ভাইরাস ঢুকছে তা আরো অধিক বিপদজনক। যেটি আত্মা এবং শরীর দুটোকেই ধ্বংস করতে সক্ষম কেননা এটি মন, বুদ্ধি এবং অহংকারকে প্রভাব বিস্তার করে। ইন্দ্রিয়তৃপ্তির বাসনাকে জাগিয়ে তোলে।
মনকে ফরম্যাট করা
কৃষ্ণভাবনার সংস্পর্শে আসা মানে মনকে ফরম্যাট করা বা চিরতরে সব পাপকর্মের ফলাফল মুছে ফেলা। এটি আমাদের জীবনকালের সমস্ত জাগতিক কামনাবাসনার ভাইরাস্্গুলো ধ্বংস করে দেয়। শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ অধ্যয়ন, শ্রীমদ্ভাগবত শ্রবণ এমনই শক্তিশালী এন্টিভাইরাস যেটি আমাদের মানসিক পি.সি কে বা মনকে যে কোন ভাইরাসের আক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। ভগবানের পবিত্র নাম জপ একটি ফিল্টার সৃষ্টি করে যার মাধ্যমে সমস্ত দূষনের হাত থেকে রক্ষা করে এবং কৃষ্ণ প্রসাদ আমাদেরকে জড়জাগতিক কামনাবাসনাগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য শক্তি দেয়। যদি আমরা পারমার্থিক এসব কার্যকলাপ অনুসরণ করি তবে গোলকধামের পথ সুগম হবে এবং আমরা তখন নিত্য লীলাবিলাসের সঙ্গী হতে পারব। [ যুগবতার দাস, মুম্বাইয়ের একটি মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিষয়ের একজন লেকচারার] হরে কৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ ফেব্র-২০১১ সালে প্রকাশিত