এই পোস্টটি 27 বার দেখা হয়েছে

গত বছর মে-জুনের দিকে এক ভারতীয় সাধু ৬০ বছর কোন খাদ্য গ্রহণ করেনি এ দাবী তুললে সারা বিশ্বে আলোচনার ঝড় তুলে। তখন বিভিন্ন গবেষক তাকে নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এর সত্যতা স্বীকার করেন। যার ফলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও পত্র-পত্রিকায় তাকে নিয়ে প্রচুর লেখালেখিও হয়। ইস্কনের ব্যাক-টু-গডহেড ম্যাগাজিনের সাংবাদিকরা গিয়েছিলেন এর সরেজমিন তদন্ত করতে পরে ঐ ম্যাগাজিনে (জুলাই-২০১০) মুরারী গুপ্ত দাসের লিখিত একটি প্রতিবেদনে সাধুটির সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেই আলোচিত প্রতিবেদনটির বঙ্গানুবাদ নিম্নে তুলে ধরা হল।
ব্যাক-টু-গডহেড (BTG): আপনার এই অলৌকিক শক্তি ও ভক্তি দেখে অনেক লোক ধর্মের প্রতি বিশ্বাস অর্জনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। [তিনি তখন মৃদু হেসে উপরের দিকে তার হাত তুলে বোঝাতে চাইলেন ‘এ তারই শক্তি’]
BTG: সাধারণ মানুষদের জন্য আপনি কি বার্তা দিতে চান?
প্রহ্লাদ যানি (প্র: যা:): কিছুই না। আমি শুধুমাত্র তাদেরকে আশীর্বাদ করি
তাদের কর্ম অনুসারে তাদের অভিষ্ট সিদ্ধি পাবে।
BTG: আপনাকে নিয়ে গবেষকগণ যে গবেষনা করলেন তাতে আপনার সম্মত ছিল। এ গবেষনা করতে দেয়ার পেছনে কি আপনার কোন উদ্দেশ্য ছিল?
প্র: যা:: আমরা বিশ্বকে বলতে চাই যে মানুষ খাবার বা পানীয় কিছু ছাড়াই দিব্যি তো থাকতে পারে। মানুষ এমনকি খরার মধ্যেও জল ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে এটি নতুন কিছু নয়। যদি আপনি আপনার শরীরকে সেরকম উপযুক্ত করে তুলতে পারেন তবে তা ১ব পৃঃ পর স্বাভাবিক হবে। অতীতে বহু সাধু এবং ঋষি তাদের সমস্ত রোগ-শোককে চিরতরে নির্মূল করতে পারতেন। সবকিছুই এ শরীরের মধ্যেই রয়েছে কিন্তু লোকেরা বাইরের দিকেই বেশি মনোযোগী। বিজ্ঞানীরা এমন কিছুর অনুসন্ধান করছে যাতে করে যুদ্ধের সময় সৈন্যরা খাবার এবং পানীয় ছাড়াই অনেক দিন থাকতে পারে। কিন্তু তাদের এ প্রচেষ্টা বাহ্যিকভাবে।
BTG: বৈদিক শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে, বেঁচে থাকার জন্য খেতে হবে, তবে আপনি কিভাবে কোন খাবার বেঁচে থাকতে পারেন?
প্র: যা:: আসলে এ দেহের মধ্যেই সবকিছু আছে। আমি প্রায় ৮০ বছর বনের মধ্যে খুব সরল জীবন যাপন করেছি।
BTG: আপনার বয়স কত?
প্র: যাঃঃ ৮৩
BTG: আপনি কি এ তপস্যা করে সুখী?
প্র: যা:: আমি এখন সিদ্ধি অর্জন করেছি। আমি এই বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই, পাথরও কথা বলতে পারে, গলতে পারে। মানুষ যে কোন কিছুই করতে পারে। মানুষের দেহের মধ্যেই শক্তি রয়েছে। কিন্তু মানুষ তো বাহিরেই অনুসন্ধান করছে। আমি ১ বছর বাঁচি কিংবা ৫০০০ বছর বাঁচি আমার জীবনে কোন বাসনা নেই। আমি জড় কোন বিষয় পেতে চাই না। আমার শুধুমাত্র একটি বাসনা ছিল। একটি আশ্রম তৈরি করা, তাও পূর্ণ হয়েছে। এলাহাবাদ কুম্ভ এবং নাসিক কুম্ভ মেলায় অনেক ধরনের সাধুরা আসে। অনেক সাধুই এই সিদ্ধি অর্জন করতে চায়, কিন্তু তারা এটি অর্জন করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করে। আমিই শুধুমাত্র এই সিদ্ধি অর্জন করেছিলাম।
BTG: আপনাকে এর পেছনে কি উৎসাহিত করেছিল?
প্র: যা:: দৈবী শক্তি। আমি শৈশবে দেবী অম্বার কৃপা পেয়েছিলাম।
BTG: এটি কি অর্জন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব?
প্র: যা:: তাদের অনেক বছর সময় লাগবে। এটি আসলে খুবই বিরল। অল্প জ্ঞান দিয়ে অল্পই অগ্রসর হওয়া যায়। অনেকেই পুরোপুরিই জ্ঞান শূন্য হওয়ায় পিছপা হয়।
BTG: আপনার এ শরীরটি কিভাবে কাজ করে?
প্র: যা:: অমিরস (অমৃত), এটি অমৃতের মাধ্যমেই চলে। যখন পাণ্ডবরা হিমালয়ে গিয়েছিল সেসময় তারা এ অমিরসের মাধ্যমেই নিজেদের টিকিয়ে রেখেছিলেন…… সূর্য একইভাবে উঠে ও অস্ত যায়। যদি সেটি না হত তবে এই বিশ্ব বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। কুম্ভমেলায় হাজার হাজার সাধুরা নেমে আসে এরপর তারা কোথায় যায়? ক’জনই বা এই সম্পর্কে জানে?
আমরা সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলাম গব্বারে অবস্থিত একটি বিশাল পাহাড়ের উপরে অবস্থিত তারই আশ্রমে। গব্বার স্থানটি দেবী দুর্গার সঙ্গে সম্পর্কিত। এখানেই প্রহ্লাদ যানি বছরের পর বছর ধ্যান এবং তপস্যা করেছিলেন। সে সময় তাপমাত্রা ছিল ৪৮° সেলসিয়াস। সাক্ষাৎকারটি নেয়ার পর আমরা ২০০ কি: মি: দূরে অবস্থিত আহমেদাবাদে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলাম এ বিষয়ে জানতে। যিনি সাধুটিকে নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা করেছিলেন।
বিজ্ঞান সাধুটিকে গবেষণা করে
ডা: সুধির সাহ একজন নিউরোফিজিসিয়ান। তিনি প্রহ্লাদ যানিকে সাত বছরের মধ্যে দু’বার গবেষণা করেছিলেন। তিনি বর্ণনা করেছিলেন, ২০০৩ ও ২০১০ সালে তাকে পরীক্ষা করা হয়। DIPAS এর সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে আয়না বেস্টিত একটি বদ্ধ ঘরে রাখা হয়। সেখানে ২৪ ঘন্টা সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণসহ আলাদাভাবে একজন ব্যক্তিকে রাখা হয়েছিল পর্যবেক্ষণের জন্য। ব্যক্তিটি প্রহ্লাদ যানিকে ১০০ মি. লি. জল দিত তার মুখ ধৌত করার জন্য। কিন্তু সেগুলো আগে ও পরে ওজন করে দেখা হত। প্রথম সাতদিন উনি স্নান করেননি। সাত দিন পর তাকে জল দেয়া হয় স্নানের জন্য। তিনি মূত্র ত্যাগও করতেন না। তার শরীরে ১০০ মি. লি প্রস্রাব তৈরি হত কিন্তু পরে সেসব মূত্রথলীতেই রেখে দিতেন।
আমাদের এ পর্যবেক্ষনের পর দেখা যায় ইনি একজন অলৌকিক পুরুষ। ঘটনাটি পরে বিবেচনার জন্য DIPAS এর পক্ষ থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. আবদুল কালামকে অনুরোধ করা হয়। DIPAS রিপোর্টে যেসব বৈশিষ্ট্য দেখা যায় সেগুলো হল (১) তার শরীরে বিশ্বজাগতিক উৎস থেকে কোন শক্তি উত্থিত হয়েছে। (২) শরীরের মধ্যে শক্তি পুনঃচক্র সম্পন্ন হচ্ছে। (৩) জেনেটিক্যাল অথবা গঠনগত পরিবর্তন (৪) Chronic adaptation. তিনি এ বিষয়টি আরো বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট www.sudhirneuro.org এ। BTG এর সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে এ বিষয়ে বৈদিক দর্শন প্রসঙ্গেও।
BTG: আমরা দেখি যে বৈদিক সাহিত্যে আধ্যাত্মিক শক্তি অধিকার করেছেন এমন অনেক সাধুর কাহিনী। উদাহরণস্বরূপ: অষ্টাঙ্গ যোগে ‘খেচুরীমুদ্রা’ নামে একটি ক্রিয়ার কথা বর্ণিত আছে। যার মাধ্যমে অনুশীলনকারী তার জিহ্বাকে দীর্ঘায়িত করে পেছনের দিকে ঘোরায় এবং মুখের ভেতরে অবস্থিত আলজিভকে (uvula) স্পর্শ করে। যদি কোন যোগী তা করতে পারেন তখন তিনি অমৃত পেতে পারে, যেটি মস্তক থেকে নেমে আসে।
সু. শা: হ্যাঁ কুণ্ডলীনি (একটি সূক্ষ্ম শক্তি) মস্তিস্কের উচ্চ স্তরে উত্তোলনের মাধ্যমেও কেউ অমৃতের স্বাদ পেতে পারে। এই অমৃতের এমন শক্তি যে সমস্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। এখনও কিছু যোগী রয়েছে যাদের সেই শক্তি রয়েছে এবং একজন যোগীর জীবনীতেও এরকম দুটি ঘটনা রয়েছে যারাও এরকম না খেয়ে থাকতে পারত।
BTG: হ্যাঁ, এটি স্বতসিদ্ধ যে, ব্রেইনের নিম্নভাগের একটি অংশ medulla oblongata (মজ্জা) এর মধ্য দিয়ে সোলার শক্তি পেতে পারে। এটি স্পাইনাল কর্ডের একটু উপরে থাকে। বাবা রামদেবের মত যোগীরাও উল্লেখ করেছেন যে, এখানে (শরীরের মজ্জা) কিছু সূক্ষ্ম পুস্টিকারক দ্রব্য রয়েছে যেটি শরীরকে পুষ্টি দিতে সক্ষম।
সু. শা. (হাসি): হতে পারে এই কারণেই কিছু লোক তাদের ওজন কমাতে অক্ষম হয়, এমনকি যখন তারা খাবার দাবারও কম খায়।
BTG: হ্যাঁ, কিন্তু বিজ্ঞান কি এসব পারমার্থিক তত্ত্বগুলো বিশ্বাস করে?
সু. শা. : বিজ্ঞান এখানেই ব্যর্থ হয়। মানুষের তৈরি সমস্ত গবেষণালব্দ তত্ত্ব এক্ষেত্রে হার মানতে বাধ্য। একটা লোকের কিডনী যদি ৪ দিন পর্যন্ত মূত্র তৈরি না করে তবে সেই ব্যক্তির ডায়ালিসিস করার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে এই লোকটি ১৫ দিন পর্যন্ত একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে থেকেও কোন মূত্র ত্যাগ করেনি। ভুখা থেকেও তার শরীর উপযুক্ত অবস্থায় ছিল। তার পালস্ ছিল ৪৫। শুধুমাত্র অতি বড়মাপের এথলেটদেরই এরকম নিম্নহার্ট বিট থাকে। ভারতবর্ষের এ যোগীগুলো আমাদের জাতির জন্য একটি সম্পদস্বরূপ। বিজ্ঞানকে হার মানিয়ে তারা যে আমাদের বিশাল সংস্কৃতিকে ঐতিহ্যকে মহিমান্বিত করছে এটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
পারমার্থিক বিজ্ঞান
বৈদিক শাস্ত্র মতে এসব যোগীদের আট প্রকার সিদ্ধি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হল-
অনিমা : একট কনার মত ক্ষুদ্র হয়ে যাওয়া।
লঘিমা : এত হাল্কা হয়ে যাওয়া যায় যে, বায়ুতে বা জলে ভেসে থাকা যায়।
প্রাপ্তি: যোগী আঙ্গুল দিয়ে চাঁদকে স্পর্শ করতে পারেন অন্তরীক্ষ যাত্রীরা যদিও অন্তরীক্ষ যানে করে চাঁদে যাচ্ছে, তাতে তাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। কিন্তু একজন যোগী অনায়াসে তা পারে, একে বলা হয় প্রাপ্তি।
মহিমাঃ ভারি থেকে প্রবল ভারী হওয়া।
ঈশিতা : বিজ্ঞানিরা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করেছে, যার প্রভাবে এই গ্রহের একটি নগণ্য অংশকে ধ্বংস করা যায়, কিন্তু ‘ঈশিতা’ নামক যোগসিদ্ধির প্রভাবে কেবল ইচ্ছার দ্বারা একটি সম্পূর্ণ গ্রহ সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায়।
বশিতা: এই সিদ্ধির প্রভাবে যে কোনও মানুষকে বশীভূত করা যায়। এটি এক ধরনের সম্মোহনী শক্তি, যা প্রতিহত করা এক রকম অসম্ভব।
প্রাকাম্য: এর দ্বারা মনের যে কোন বাসনাপূর্ন করা যায়। যেমন চোখে জল প্রবেশ করিয়ে তার পরে তা আবার চোখের ভিতর থেকে বার করে আনা যায়। কেবলমাত্র ইচ্ছার মাধ্যমে তা করা যায়।
কামবশিতা : এটি যোগের সর্বোচ্চ সিদ্ধি, যা এক রকমের যাদুবিদ্যা। এর প্রভাবে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুর্ভাগ্যবশত এসব বিষয়গুলো বিজ্ঞানের প্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই অবিশ্বাস করে। তারা বৈদিক শাস্ত্রের এসব বিষয়কে নিতান্তই অসম্ভব এবং নিছক মনগড়া হিসেবে দাবি করে। তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ এসব বিষয় অগ্রাহ্য করে। কিন্তু এই একটি সাধুই আমাদের পরিস্কারভাবে দেখিয়ে দিল যে, এই বিশ্ব জগতে এমন উচ্চতর শক্তি রয়েছে যা অকল্পনীয় এবং বিজ্ঞান এ বিষয়ে সম্পূর্ন অজ্ঞ। তাই আমাদের কখনো উচিত নয় বৈদিক জ্ঞানভাণ্ডারকে অস্বীকার করা কিংবা মানুষের তৈরি বলে মনে করা। পক্ষান্তরে খোলা মন নিয়ে বৈদিক দর্শনকে জানার পথে অগ্রসর হওয়া উচিত। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে কনিষ্ট আঙ্গুলে গোবর্ধন পর্বত ধারণ করেছিলেন কিংবা লঙ্কার পথে ভগবান রামচন্দ্র ভাসমান পাথর দিয়ে সেতু তৈরি করেছিলেন তা আর মনগড়া কিছু কাহিনী বলে প্রতীয়মান হবে না।
তখন উপলব্ধি হবে যে, এসবের পেছনে রয়েছে এক নিগুঢ় বাস্তবতা। এর মাধ্যমে শাস্ত্রসমূহের সমস্ত শব্দের প্রতি আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত।
সর্বোচ্চ যোগসিদ্ধি
প্রহ্লাদি যানি যে অলৌকিক এবং যোগ শক্তি লাভ করেছেন তা সত্য। কিন্তু এর উপরেও আরও উচ্চতর সত্য রয়েছে যে বিষয়ে শ্রীল প্রভুপাদ শ্রী চৈ. চরিতামৃতের আদি পর্বের তাৎপর্যে (১.৯১) ব্যাখ্যা করেন-
“যোগশক্তি একজন যোগীকে জাগতিকভাবে শক্তিমান করে তুলতে পারে এবং এর মাধ্যমে জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি ইত্যাদি দুঃখগুলো অস্থায়ী মুক্তি দিতে পারে, যা অন্যান্য জড় বিজ্ঞানও করে থাকে। কিন্তু এ প্রকার যোগশক্তি কখনোই এসব দুঃখের চিরস্থায়ী সমাধান করতে পারে না…… তাই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ৬.৪৭নং শ্লোকে ভগবান ব্যক্ত করেছেন, যিনি শ্রদ্ধা সহকারে মদ্গত চিত্তে আমার ভজনা করেন, তিনিই সবচেয়ে অন্তরঙ্গভাবে আমার সঙ্গে যুক্ত এবং তিনিই সমস্ত যোগীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। সেটিই আমার অভিমত।” তাই এসব দুঃখের চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ভগবানের কৃপাশক্তির প্রয়োজন হয়। যেটি ভগবানের প্রতি ভক্তিমূলক সেবার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার কপিলদেব শ্রীমদ্ভাগবতের ৩/২৭/৩০ এ ব্যাখ্যা করেন।
যদা ন যোগোপচিতাসু চেতো মায়াসু সিদ্ধস্য বিষজ্জতেহঙ্গ অনন্যহেতুম্বথ মে গতি স্যাদ্ আত্যন্তিকী যত্র ন মৃত্যুহাসঃ ॥
অনুবাদ : ‘সিদ্ধ যোগীর চিত্ত যখন বহিরঙ্গা শক্তির দ্বারা প্রকাশিত যোগ সিদ্ধির প্রতি আর আকৃষ্ট হয় না, তখন তিনি আমার প্রতি আত্যন্তিক গতি প্রাপ্ত হন এবং তখন মৃত্যু আর তাকে পরাভূত করতে পারে না।’
শ্রীমদ্ভাগবতে (২/১/৬) শ্রীল শূকদেব গোস্বামী ব্যক্ত করেন, “জড় এবং চেতন সম্বন্ধীয় যথাযথ জ্ঞান লাভের পন্থা বা সাংখ্য জ্ঞান। যোগ অনুশীলন অথবা যথাযথভাবে বর্ণাশ্রম – অনুশীলন এই সব কটি পন্থারই পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্তিম সময়ে পরমেশ্বর ভগবানকে স্মরণ করা।” ভগবান কৃষ্ণ নিজেকে যোগেশ্বর বা যোগীদের ঈশ্বর হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি ঘোষণা দেন, “মৃত্যুর সময়ে যিনি আমাকে স্মরণ করে দেহত্যাগ করেন, তিনি তৎক্ষণাৎ আমার ভাবই প্রাপ্ত হন। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।” (ভ. গী.-৮/৫) প্রহ্লাদ যানির মত এরকম কঠোর তপস্যায় ব্রতী হওয়া আমাদের অধিকাংশের পক্ষে অসম্ভব। এমনকি আমাদের অনেকের জন্য খাবার পানীয় ছাড়া বেঁচে থাকাটাই রীতিমত অকল্পনীয়। কিন্তু ভক্তিযোগ আমাদেরকে অত্যন্ত সহজ পন্থা প্রদর্শন করে। শুধুমাত্র ভগবানের পবিত্র নাম জপ কীর্তন, কৃষ্ণপ্রসাদ আস্বাদন এবং আনুসঙ্গিক বিভিন্ন ভক্তিমূলক সেবাসহ নিয়ম-নীতি অনুরণ করলে সিদ্ধি সুনিশ্চিত। ভ. গী ১৮/৭৮ এ বিষয়ে বর্ণনা হয়েছে, “যেখানে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এবং যেখানে ধনুর্ধর পার্থ, সেখানেই নিশ্চিতভাবে শ্রী, বিজয়, অসাধারণ শক্তি ও নীতি বর্তমান থাকে।” তাই আমাদেরকে খোলা মনের অধিকারী হতে হবে যার মাধ্যমে বৈদিক এই বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার অর্জন করা সহজ হয়। যার মাধ্যমে আমরা প্রকৃত সুখ-শান্তি অর্জন করতে পারি।
হরেকৃষ্ণ।
রেফারেন্স: autobiography of a yogich. 46
classical Hatha yoga by swami
RajrashiMuni. Ch.11
www.sudhirneuro.org