স্বপ্ন কি সত্যি?

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ | ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ | ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 1069 বার দেখা হয়েছে

স্বপ্ন কি সত্যি?

অচুত্যত প্রিয় দাস: স্বপ্ন বা ড্রিম হচ্ছে এমন একটি বিষয় যার উপলব্ধির কোন সমিা নেই। কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও এই স্বপ্নে বিভোর এবং এই স্বপ্ন নিয়ে প্রতিনিয়ত কত তথ্য, বিচার বিশ্লেষণ, কাব্য, গল্প তৈরি হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। বিজ্ঞানীরা বলেন যে, স্বপ্ন হল মানব মস্তিস্কের বিশেষ কার্যাবলী বা হরমানের প্রতিক্রিয়া, অনেক বলেন, স্বপ্ন হল দেবতাদের কোন সন্দেশ অন্যরা নিছক মনের সাময়িক প্রক্রিয়া হিসেবে মেনে নেন স্বপ্নকে। তবে স্বপ্ন বিষয়ে নানা মুনির নানা মত থাকলেও এর রহস্যের কোন কূল কিনারা দিতে পারেন না কেউই।

এখন আমরা দেখব যে, স্বপ্ন বিষয়ে বৈদিক শাস্ত্র কি বলছে আমাদের… বৃহদারণ্যক উপনিষদে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, স্বপ্ন সত্যি এবং তা ভগবান কর্তৃক সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন হয়ত আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে কিভাবে আমরা বিশ্বাস করব, স্বপ্ন ভগবানই সৃষ্টি করতে পারে না? এর উত্তর হল জীবাত্মার কোন কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই। অপর একটি দিক হচ্ছে যে, যদি জীবাত্মা নিজে নিজেই স্বপ্ন সৃষ্টি করতে পারত তবে সে কখনো নিরানন্দময় স্বপ্ন সৃষ্টি করত না। অনেক সময আমরা স্বপ্নে দেখি যে, বাঘ, আগুন, বন্যার শিকার হচ্ছি আমরা। নিশ্চয়ই কেউই এই ধরনের আত্ম ধ্বংসাত্মক, কষ্টকর অভিজ্ঞতার স্বপ্ন সৃষ্টি করতে চাইবেন না।

স্বপ্ন শব্দটি এসেছে ‘স্বপতি’ শব্দ থেকে যার অর্থ হল, নিজেদেরকে এমন এক ভাবনায় নিয়ে যাওয়া যেখানে সকল কর্মকাণ্ডের অধিকারী হবেন কেবলমাত্র ভগবান। তাই স্বপ্ন মুহূর্তে আমরা যে অবস্থানে থাকি বা গভীর ঘুমে কল্পলোকে আমরা ভগবান বা পরমাত্মার নিয়ন্ত্রণে থাকি। স্বপ্ন ঠিক কতটা সত্যি হবে তা নির্ভর করে সেই ব্যক্তি কি স্বপ্ন দেখছে এবং সেই স্বপ্নের স্থায়িত্বকাল কতক্ষণ তার উপর। যখন মানুষ ঘুম থেকে জেগে উঠে তখন সেই স্বপ্নে দেখা বিষয়গুলো হারিয়ে গেলেও সেই অভিজ্ঞতা কিন্তু মিথ্যা না কেননা আমরা স্বপ্নের মুহূর্তে আনন্দ, ভয়, রামঞ্চিত হই যা এরপরও বহু সময়ের জন্য আমরা স্বরণ রাখতে পারি এবং সেই বিষয়ে সাথে বিভিন্ন বাস্তবিক বিষয়ের সম্পর্ক মিলিয়ে দেখতে পারি।
এখন প্রশ্ন হল ঈশ্বর কেন স্বপ্ন সৃষ্টি করলেন? উত্তর হল, জীবাত্মা কিছু ভাল ও মন্দ কাজ করতে পারে। সেই কাজগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুবই ক্ষুদ্র যার ফল কোন পুরস্কার বা শাস্তির পর্যায়ে পড়ে না। সেই ক্ষুদ্র ভাল কর্মের ফলস্বরূপ ভগবান স্বপ্নের মাধ্যমে অনেক সময় জীবাত্মাকে আনন্দময় অভিজ্ঞতা প্রদান করে যাতে সেই জীবাত্মা কিছু সময়ের জন্য সুখী হয়। আবার অন্যদিকে জীবাত্মার ক্ষুদ্র মন্দ কাজের ফলস্বরূপ ভগবান স্বপ্নে শাস্তি দেওয়ার অভিজ্ঞতা প্রদান করেন যাতে জীবাত্মা কিছু সময়ের জন্য সেই কষ্টকর অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হয়।

গৌড়িয় পরস্পরাধারায় স্বপ্ন:


শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর তার জীবনীতে লিখেছে যে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তার স্বপ্নে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং শ্রীল বিপিন বিহারী গোস্বামীর কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়ার জন্য আদেশ করেছিলেন। এছাড়াও ভক্তিবিনোদ ঠাকুর উল্লেখ করেছিলেন। যে, তিনি স্বপ্নে আদেশ প্রাপ্ত হয়েছিলেন মায়াপুরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান পুনঃআবিষ্কার এর ব্যাপারে। শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুুপাদের জীবনেও ভগবদ স্বপ্নের বহু নিদর্শন রয়েছে। শ্রীল প্রভুপাদ ১৯১৬ সালে কলকাতা বিখ্যাত স্কটিশ চাচ স্কুলে ভর্তি হন।

তার একজন স্কুল সহপাঠি রুপেন্দ্রনাথ মিত্র বলেন, “শ্রীল প্রভুপাদ কখনই পাশ্চাত্য ভাবধারায় আকর্ষিত ছিলেন না বরং তিনি সবসময় ধর্ম, দার্শনিকতা এবং ভগবানের ভক্তিকেন্দ্রিক বিষয়ে চিন্তা করতেন।” একবার কলেজে পড়ার সময় এক রাত্রিতে তার সেবিত বিগ্রহসমূহ তার স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে বলেছেন, “কেন তুমি আমাকে তোমার বক্ষে রেখেছে। তোমার উচিৎ আমাকে সেখান থেকে বের করে সেবা করা।” শ্রীল প্রভুপাদ বিগ্রহের কথা মত তাদের সেবা করা শুরু করলেন যদিও তার পড়াশোনার কারণে অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতে হত। প্রভুপাদের সন্ন্যাস গ্রহণও ছিল স্বপ্নে আদেশ কেন্দ্রিক।

একবার শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তার স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে তাকে সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য আদেশ করেন। ১৯৬৮ সালে অক্টোবরে সিয়াটলে এক প্রবচনে এই কথাটি উদ্ধৃত করেন শ্রীল প্রভুপাদ। এর কয়েক বছর পর যখন প্রভুপাদ জলদূত জাহাজে উদ্দেশ্যে গমন করেছিলেন তখন সামুদ্রিক ঝড়ে আক্রান্ত হয়ে সমুদ্রপীড়ায় শ্রীল প্রভুপাদ দু’বার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু ভ্রমনের তৃতীয় রাত্রিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে সম্পপূর্ণ সুরক্ষার ব্যাপারে আশ্বস্থ করলেন। এরপর শ্রীল প্রভুপাদ অবিশ্বাস্যভাবে সুস্থ অবস্থায় আমেরিকার ভূমিতে পদার্পন করেছিলেন।

১৯৭১ সালে যখন শ্রীধাম মায়াপুরে ইস্‌কনের প্রধান কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রচেষ্টা চলছিল তখন শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজকে বলেছিলেন, “আমি তোমাকে ভগবানের ধাম দিলাম, তুমি এর উন্নতি বিধান কর।” এছাড়াও শ্রীল প্রভুপাদ জয়পতাকা মহারাজকে বলেছিলেন যে, তিনি সেই রাধামাধব বিগ্রহকে চিনতে পেরেছেন কেননা কয়েক বছর পূর্বে সেই মায়াপুরের বিগ্রহদ্বয় তার স্বপ্নে আবির্ভূত হয়েছিল। সেই বছরের ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে শ্রীল প্রভুপাদ এবং কয়েকজন ভক্ত মন্দিরে ছিলেন। হঠাৎ শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের বললেন যে, তিনি পূর্বরাত্রিতে স্বপ্ন দেখেছেন, তার সকল শিষ্যরা হাজার হাজার মানুষের মাঝে টমকিনস্ স্কয়ার পার্কে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করছে আর নৃত্য করছে। প্রভুপাদ সেই স্বপ্নীল দৃশ্যের ছবি আঁকতে বললেন তার এক শিষ্যকে।

কিন্তু সেই শিষ্য স্বপ্নের ছবিটি আঁকার আগেই তার সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হল। টমকিনস্ স্বয়ার পার্কের ম্যানেজার সেই রবিবার সেখানে একটি উৎসবের আয়োজন করে এবং তারা ভক্তদের সেখানে আমন্ত্রণ জানায়। তারা ভক্তদের সেই মঞ্চে উঠে কীর্তন কার জন্য অনুরোধ জানায়। এছাড়াও মাধবেন্দ্র পুরীর স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে ভগবান গোপাল তাকে তার বিগ্রহের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলেন । এছাড়াও বহু আচার্যদের জীবনচরিতে স্বপ্ন বিষয়ক বহু ঘটনার বর্ণনা দেখা যায়। (চলবে…)
 

(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ অক্টোবর ২০১২ প্রকাশিত)

এরকম চমৎকার ও শিক্ষণীয় প্রবন্ধ পড়তে চোখ রাখুন ‘চৈতন্য সন্দেশ’‘ব্যাক টু গডহেড’

যোগাযোগ: ০১৮৩৮-১৪৪৬৯৯

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।