সাময়িক বিলাসিতার চরম মূল্য

প্রকাশ: ৩ নভেম্বর ২০২১ | ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৩ নভেম্বর ২০২১ | ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 216 বার দেখা হয়েছে

সাময়িক বিলাসিতার চরম মূল্য
শ্রীমৎ জয়াদ্বৈত স্বামী ।
অনুবাদক: প্রশান্ত গোপীনাথ দাস

বহুদিন আগে একটি প্রাচীন দেশে (নাম উল্লেখ করছি না) অনেক বছর ধরে একটি ঠেলাগাড়ি করে হরেকৃষ্ণ মন্দিরের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একজন লোক কলা, কমলা, আপেল, আনারস ও পেঁপে ইত্যাদি বিক্রি করতেন। এখন ঠেলাগড়ি ও ফল এদুটিই চলে গেছে। কিন্তু লোকটি এখনো আছে। সেই লোকটি তার পেশা পরিবর্তন করেছে। সে এখন একজন ডলার এক্সচেইঞ্জার।

আপনার গাড়ির জানালা নিচে নামালেই আপনি রাস্তায় সর্বশেষ বাজার বিনিময় হার জানতে পারবেন। আর ঘটনাস্থলেই আপনি আমেরিকান ডলার কিংবা অন্য যে কোন দেশের মুদ্রা বিনিময় করতে পারবেন। আজকাল ফুটপাতেও ডলার পরিবর্তন করতে পারবেন। এটি শুধুমাত্র এখানকার চিত্র নয় বরং পুরো শহরের চিত্র। এদের যত চিন্তা ডলারের বিনিময় হার নিয়ে। কারণ কখনো এ হার কমছে আবার কখনো বাড়ছে। একজন স্থানীয় ভক্ত ব্যাখ্যা করেন-এর সূত্রপাত হচ্ছে কোকেন উৎপাদন ও বিক্রয়ের মাধ্যমে। পাহাড়ের জঙ্গলে এখন সবাই ফল কিংবা জীবনের জন্য উপকারী অন্য কোন ফসল বা উদ্ভিদ উৎপাদনে ব্যস্ত নয়। তারা এখন জীবন ধ্বংসকারী গাঁজা, আফিম, মাদক উৎপাদন ও বিক্রয়ে ব্যস্ত। অর্থাৎ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী আজ শুধুমাত্র অর্থের পিছনে ছুটঁছে। তারা লক্ষ্মীকে (অর্থ) আগলে ধরতে চাচ্ছে। কিন্তু তারা যে উপায়ে অর্থোপার্জন করছে তাতে করে সে নিজে, তার পরিবার, সমাজ ও দেশকে সর্বনাশের অতল গহ্বরের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা জানি, লক্ষ্মীদেবী চঞ্চলা। তবুও তিনি কখনোই নারায়ণের বক্ষস্থল ছেড়ে যান না। তিনি সর্বদাই নারায়ণের সেবায় ব্যস্ত থাকেন। কেউ যদি সেই নারায়ণের সেবা করেন তাহলে অনায়াসেই লক্ষ্মী দেবীকেও প্রাপ্ত হবেন। অর্থাৎ, নারায়ণ সন্তুষ্ট হলে লক্ষ্মীদেবী অনায়াসে সন্তুষ্ট হন।

কিন্তু আজকাল হচ্ছে তার ঠিক বিপরীত। সবাই যেন-তেন প্রকারের লক্ষ্মীদেবীকে (অর্থ) পেতে চাচ্ছে। ফলে লক্ষ্মীকেতো পাচ্ছেন না আবার পেলেও তা ক্ষণস্থায়ী। যেকোন প্রকারের মাদক বা আসব পান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কিন্ত বর্তমান সময় যেহেতু কলিযুগ, তাই কলিযুগের মূখ্য অস্ত্র হলো প্রতারণ করা। যে কোন ধরণের মাদক নিষিদ্ধ হলেও অর্থ লাভের লালসায় নিজেও প্রতারিত হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যদেরও প্রতারিত করছে। বৈদিক শাস্ত্রে আমিষাহার, অবৈধ যৌনসঙ্গ, যে কোন প্রকার মাদক সেবন ও দ্যূতক্রীড়াকে নিষিদ্ধ কর্ম বলে এগুলো হতে বিরত থাকত কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর মানুষ যাতে পারমার্থিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে আত্মতত্ত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় তার জন্য সর্বদা সচেষ্ট হয়ে উচ্চতর লোক তথা ভগবদ্ধামে গমনের জন্য উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। যারা এই পৃথিবীতে সাময়িক বিলাসিতা চায়, তাদের নিকট প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য-জমি, শস্য, ফল, গুগ্ধজাত পণ্য, স্বর্ণ এসব খুবই চমকপ্রদ বলে মনে হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো এগুলো ছেড়ে আমাদের চলে যেতে হয়। অর্থাৎ, যে দেহ এসব বস্তুর ভোগের জন্য লালায়িত সেটি অনিত্য। যেহেতু আমাদের এই জড় দেহ অনিত্য, তাহলে ঐ সব জড় ঐশ্বর্যের মূল্য কি? কিন্তু এই জড় দেহ যাকে আশ্রয় করে উপভোগ করছে সেই আত্ম হলো নিত্য।
গীতায় ভগবান ২/১৬ শ্লোকে বলেছেন, “যাঁরা তত্ত্বদ্রষ্টা তাঁরা সিদ্ধান্ত করেছেন যে অনিত্য জড় বস্তুর স্থায়িত্ব নেই এবং নিত্য বস্তু আত্মার কখনো বিনাশ হয় না।” প্রকৃতপক্ষে, আমরা যদি আত্মতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারি তাহলে অচিরেই জড় বন্ধন ছিন্ন করে গোলক ধামে প্রবেশ করতে সক্ষম হবো। আত্মার আসল উদ্দেশ্যই হলো পরমাত্মার সান্নিধ্য লাভ। এই পরমাত্মার (ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) প্রতি ঐকান্তিকভাবে শরণাগত হলেই জীবের জড় বন্ধন হতে মুক্তি লাভ সম্ভব।


 

চৈতন্য সন্দেশ নভেম্বর-২০২১ প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।