সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালন (শেষ পর্ব)

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২১ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২১ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 165 বার দেখা হয়েছে

সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালন (শেষ পর্ব)
যথার্থ পন্থায় কিভাবে সন্তান জন্মদান করতে হয় সে বিষয়ে অনেকেরই অজানা। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে সন্তান জন্মদান এবং তৎসূত্রে মাতার পরিচর্যা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে, যা প্রতিটি বিবাহিত নারী-পুরুষের জন্য জীবনের পাথেয় স্বরূপ।

পদ্মনাভ দাস

শিশু জন্মের পর ঘাড় ও মস্তকের পেছন দিকে তিলতৈল দিয়ে মর্দন করুন এবং শিশুর মুখে জলের ছিট্‌কা দিন। এক্ষেত্রে চরণামৃত সর্বোত্তম। যদি তাপমাত্রা উষ্ণ হয়, তবে শীতল জল ব্যবহার করুন। যদি তাপমাত্রা শীতল থাকে তবে উষ্ণ জল ব্যবহার করুন। অধিকাংশ হাসপাতালগুলোই উষ্ণ থাকে। যদি শিশুর কানের নিকট কিছু পাথর দিয়ে একত্রে শব্দ করা হয় তবে সেগুলোও তাকে শক্তি জোগাবে।
শিশুর প্রথম খাবার হিসেবে তার জিহ্বার ওপর চামচ দিয়ে ঘি রাখতে পারেন। ঘি এর শারীরিক ও মানসিক শক্তি রয়েছে। অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যের মতো এটি দেহকে শক্তি জোগায় এবং বুদ্ধি ও স্মৃতি বর্ধন করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলো আরো বর্ধিত হতে পারে যদি ঘি প্রদানের সাথে সাথে মন্ত্র জপ করা হয়। পিতার কর্তব্য হলো শিশু জন্মের পূর্বে আচমন সম্পন্ন করা এবং ঘি এর মধ্যে আঙ্গুল রাখা, এক্ষেত্রে মধ্য আঙ্গুল রাখা উত্তম হয় এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ৭০০টি শ্লোক জপ করা। তখন সেই ঘিতে আলাদা শক্তির সঞ্চার ঘটে। এক চামচের বেশি বা যৎসামান্য পরিমাণ ঘি প্রয়োজন, কিন্তু এর শক্তি এ প্রক্রিয়ায় অপরিমেয় হতে পারে।
অধিকাংশ হাসপাতাল আজকাল বেশ খোলামেলা। শিশুর জন্মের সময় পিতাকে ঐস্থানে থাকার অনুমতি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে জন্মের পর কয়েক মিনিটের মধ্যে শিশুকে পরিস্কার করে, পিতা এই সরল কার্যপ্রণালী সম্পাদন করতে পারে।
দেহের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন শক্তি রয়েছে যাদেরকে বলা হয় চক্র যা আমাদের জীবনে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা পরিচালনা করে থাকে। এই শক্তিসমূহকে শিশুর প্রথম জীবনেই যথাযথভাবে ভারসাম্যে রাখা উচিত।
নিরাপত্তার অনুভূতি প্রথম চক্রের মধ্য দিয়ে শক্তির যথাযথ প্রবাহের সঙ্গে সম্বন্ধীয়। শিশু এবং তার পিতা-মাতার মধ্যকার দেহগত সংস্পর্শের মাধ্যমে এই চক্র যথাযথভাবে উদ্দীপিত করতে পারে। এমনকি নাভিরজ্জু কর্তনের পূর্বে শিশুটিকে মাতার দেহের ওপর রাখা উচিত। শিশু ও তার পিতার মধ্যকার প্রারম্ভিক দেহ সংস্পর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ । যদি শিশুটি জন্মের ঠিক পর থেকে স্নেহ অনুভূতির অভিজ্ঞতা লাভ করে, তবে সে নিজেকে সুরক্ষিত অনুভব করবে এবং এভাবে যখন একসময় সে বৃদ্ধ অবস্থায় উপনীত হবে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবেলা করতে অধিক সমর্থ হবে।
প্রথম চক্রের সঙ্গে আরো একটি বিষয় সম্বন্ধীয় তা হল বেঁচে থাকার সংগ্রাম এবং তাই খাদ্যের সঙ্গে তা সম্বন্ধীয়। গত দশকে সারাবিশ্বে বিভিন্ন কোম্পানি বুকের দুধ খাওয়ানোকে নিরুৎসাহিত করে বিভিন্ন প্লাস্টিক ফর্মূলা প্রচলন করার অপচেষ্টা করেছে। এখন যা হোক অবশেষে এটি সবার বোধগম্য হয় যে, প্লাস্টিক দুধ শিশুর জন্য ভালো নয়।
ইন্দ্রিয় সম্বন্ধীয় অভিজ্ঞতা, দ্বিতীয় চক্রের সঙ্গে সম্বন্ধীয়। শিশুর জীবনের শুরু থেকেই যদি পিতামাতার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সংস্পর্শ ও স্নেহময় সম্পর্ক প্রদর্শিত হয় তখন শিশুটি তার জীবনের পরবর্তী সময়ে ইন্দ্রিয়জাত শক্তির সঙ্গে মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে। এমন সন্তান এ ধরনের মনোভাব অর্জন করবে না যে, এ ধরনের অন্তরঙ্গতা ও স্নেহ নেতিবাচক আবেগ যেগুলো কৃত্রিমভাবে দমন করতে প্রচেষ্টা করা হয়, কিংবা শিশুটি জীবনের পরবর্তী সময়ে ইন্দ্রিয়জাত কার্যকলাপের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করবে না।
সন্তানের অনুভূতির যথাযথ গড়ে উঠার জন্য অন্যান্য বিষয়াবলীও গুরুত্বপূর্ণ। তাকে বিভিন্ন ধরনের খেলনা সামগ্রী প্রদান করা উচিত। তবে সেগুলো যেন সহিংসতা সম্বন্ধীয় না হয়। সেগুলো যাতে ধারালো জাতীয় বা ক্ষতিকারক না হয় ।
সন্তানকে ভূতের গল্প বলে ভয় দেখানো উচিত নয় কিংবা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এমন কিছু করা উচিত নয়। বৈদিক আদর্শ হল সন্তানকে পাঁচ বছর বয়স অবধি আদর যত্নে লালন পালন করবে। এরপর দশ বছর বয়স পর্যন্ত শাসন করতে হবে। ষোল বছর বয়স হলে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে।
আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ আদর্শটি সতর্কতার সহিত উপলব্ধি করা উচিত। সন্তানের প্রথম পাঁচ বছর হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঐ সময়ে পিতামাতা ও সন্তানের মধ্যে ভালোবাসা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যদি তার কিছুর প্রয়োজন হয়, তখন পিতামাতাই শুধুমাত্র তাকে তা প্রদান করতে পারে। অতএব, আদর্শটি হল যে, প্রথম পাঁচ বছরের সময় ভালোবাসার স্তরের ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়।
পনের বছর বয়সে, যখন সন্তানের বুদ্ধি গড়ে উঠে এবং আত্ম শৃঙ্খলময় হয়ে উঠে। তখন আর শাস্তির প্রয়োজন হয় না। ঐ সময় ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের জন্য আর কোনো প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যকরী হয় না। সে সময় পিতা-মাতার উচিত সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে।
সন্তানের জীবনের শুরুতে কোনোরূপ শাস্তি প্রদান না করা কেননা ঐ সময় তার বুদ্ধি যথাযথভাবে কোনো কিছু উপলব্ধি করার মতো পর্যাপ্ত ভাবে বেড়ে উঠে না। সন্তানকে ঐসময় শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে, কোনোরূপ শাস্তি নয়। যখন সন্তান পরিপক্ক হয় তখন শাস্তি প্রদান কার্যকরী হয়, কারণ সন্তান বিষয়টি এভাবে দেখে যে, এখানে এমন একজন রয়েছে যিনি আমাকে ভালোবাসেন আবার সময়ে সময়ে আমাকে সংশোধন করেন। অতএব, সন্তান সেই শাস্তিগুলোকে ইতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে, যদি সে দেখে যে পিতামাতা তাকে ভালোবাসে।
যদি প্রেমময়ী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা না হয় এবং সন্তানকে শাস্তি প্রদান করা হয়, তখন সে ভাববে যে পিতা-মাতা তার প্রতি ক্রোধস্বরূপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করছে এবং তখন সেটি সে কোনো শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করবে না।
পনের বছর বয়সে, যখন সন্তানের বুদ্ধি গড়ে উঠে এবং আত্ম শৃঙ্খলময় হয়ে উঠে তখন আর শাস্তির প্রয়োজন হয় না। ঐ সময় ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের জন্য আর কোনো প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যকরী হয় না। সে সময় পিতা-মাতার উচিত সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। এভাবে সন্তানের স্বতন্ত্রতা যথাযথভাবে গড়ে উঠতে পারে এবং যথাযথ সময়ে তার নিজের জীবনের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করতে সুযোগ প্রদান করা হয়।
এমনকি বৈদিক জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে, ১৪-১৫ বছর বয়সটি হল একটি সংকটপূর্ণ সময়, কেননা ঐ সময়কালটি শনি গ্রহের গতির সঙ্গে সম্বন্ধীয়। এই সময় বুদ্ধিদীপ্তভাবে সে দেখবে যে, কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব চ্যালেঞ্জসূচক। তাই এক্ষেত্রে সম্পর্কের ভিত্তিটি যদি গভীর না হয়, তবে কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যাত হবে।
সন্তানের প্রথম দিকের বছরগুলোও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত দুই ও তিন বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়টাতে, আমেরিকাতে এ দু’টি বছরকে বলা হয়। ভীতিময় দুবছর। এই সময়টি সন্তানের তৃতীয় চক্র ইচ্ছা গড়ে উঠার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
সন্তানের তৃতীয় চক্রটির যথাযথ গড়ে উঠার ব্যাপারটি দমিত হয়ে যা বা থমকে যায় যদি সে বছরগুলোতে তাকে স্বাধীনতা দেওয়া না হয় এবং যদি সে ভাবে যে, ‘না বলার তার কোনো অধিকার নেই অথবা তার নিজস্ব পছন্দ করার অধিকার নেই।
এ কারণবশত তার জীবন সম্ভবত কাপুরুষতায় পর্যবসিত হয় বা সবকিছু নিয়ন্ত্রন করার বাসনা জন্মায়। নির্দিষ্ট চক্রের সাথে সম্বন্ধজাত এই মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলো দেহের নির্দিষ্ট অংশগুলোতে প্রভাব বিস্তার করে। তৃতীয় চক্রের গোলযোগের দরুন লিভার, কিডনি ও পাকস্থলীতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। যদি দ্বিতীয় চক্রের গোলযোগ ঘটে তবে উপরোল্লিখিত সমস্যার সাথে নিম্ন হজমী অঙ্গ বা উৎপায়ী অঙ্গপ্রত্যঙ্গে (generative organs) সমস্যা দেখা দেয়।
মাঝে মাঝে ভক্ত পরিবারেরা স্নেহপূর্ণ সুস্থিত পারিবারিক পরিবেশ এড়িয়ে চলে কারণ তারা মনে করে যে, এ প্রকার স্নেহ ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি জড়জাগতিক। কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদের জীবন ও যেভাবে তিনি সন্তানদের সাথে আচরণ করেছিলেন তা ভিন্ন চিত্র প্রদর্শন করে। প্রভুপাদের পিতা গৌর মোহনের চিন্তা চেতনা ছিল যে, শ্রীল প্রভুপাদের যা যা প্রয়োজন সবকিছু থাকতে হবে এবং অতঃপর আমরা দেখলাম কিভাবে পরবর্তীতে শ্রীল প্রভুপাদ সমগ্র বিশ্বকে যা যা প্রয়োজন সব কিছু প্রদান করেছেন।
নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ মনে রাখতে হবে। শরীরের যে কোনো উদ্বেগ বিচার্যের বিষয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের শারীরিক লক্ষণের চেয়ে শিশু সন্তানের শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর যে কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যাজাত লক্ষণ বড় সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
শৈশবে রোগব্যাধি হয়ে থাকে সাধারণত কফ বা ভাট দোষসমূহের ভারসাম্যহীনতার কারণে। যারা কফের ভারসাম্যহীনতায় ভুগে তাদের ক্রমাগত সর্দি লেগে থাকে। সেগুলো ভালো হয় না। পরবর্তীতে তারা আরো সর্দি কার্শি সমস্যার সংক্রমণ সহজেই উত্তরোত্তর বর্ধিত করে। মিউকাস বা শ্লেস্মাতে ব্যাকটেরিয়া বাস করে। কফের ভারসাম্যহীনতা এবং শ্লেষ্মাতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি শরীরে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে সহায়তা করে এবং ফলশ্রুতিতে সংক্রমণ ঘটে। একটি শিশু শ্লেস্মা গিলে ফেলে কেননা সে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারে না। এ কারণে অতিরিক্ত কফ ও শ্লেষ্মা নিয়ন্ত্রন বয়স্কদের চেয়ে শিশু সন্তানদের জন্য অধিক কঠিন হয়ে পড়ে।
এক্ষেত্রে যেটি করা যেতে পারে তা হলো সুষম খাবারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। দুধ মাঝে মাঝে শ্লেম্মা বর্ধনের জন্য সুপরিচিত। যদি তা যথাযথভাবে গ্রহণ করা না হয় তবে শরীরে শ্লেস্মা বৃদ্ধি পায় । কফ বৃদ্ধির প্রকোপ বাড়ে যদি ঠাণ্ডা দ্রব্য গ্রহণ করা হয় যেমন সরাসরি রেফ্রিজারেটর থেকে কোনো কিছু গ্রহণ করা।
দুধকে জাল দিয়ে এক কাপ থেকে অন্য কাপে পুনঃ পুনঃ ঢালার মাধ্যমে বায়ু মিশ্রিত করুন। যদিও ঠাণ্ডা দুধ স্বভাবতই কফ বৃদ্ধি করে। দুধ জাল দেওয়ার মাধ্যমে পিত্ত বর্ধিত হয় এবং এক কাপ থেকে অন্য কাপে কয়েকবার ঢালার মাধ্যমে বায়ু মিশ্রিত হয় ও ভাট বৃদ্ধি করে এবং এভাবে সেটি হালকা হয়ে যায় ও হজম করতে সহজতর হয়। এই দুটি জিনিস দেহে শ্লেস্মা তৈরির ক্ষেত্রে দুধের প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে। এক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ তিনটি দোষের যথাযথ ভারসাম্য প্রদান করে থাকে।
শরীরে কফ কমানোর জন্য এবং সর্দি কাশি নিয়ন্ত্রনের জন্য সুষম খাবারের মধ্যে চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি দেহে তাপমাত্রার অভাবের কারণে শ্লেষ্মা পুঞ্জিভূত হয়, হালকা মসলা যেমন মৌরি বা ক্যামোমিল নামে এক ধরনের দ্রব্য খাবারের সঙ্গে যুক্ত করা যেতে পারে। তদ্রুপ যদি শ্লেম্মা পাতলা ও বর্ণহীন হয়। তবে মধু ব্যবহার করা উচিত।
শিশুদের যকৃৎ অধোরাষ্ট বেড়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে বাত দোষের অসামঞ্জস্যতা এবং যখন এই অধোরাষ্ট, মাংসপেশী এবং স্নায়ুর মধ্যে বেদনা সৃষ্টি করে তখন তা শিশুদের জন্য দুর্ভোগের সৃষ্টি করে। বাতের এই গোলযোগ আর্দ্রতা ও উষ্ণতা এই দু’ভাবে চেনা যায়। এই সমস্যাটি উপশমের জন্য শিশুদের তৈল মর্দন করা উচিত, যা সব শিশুদের জন্য উপকারী, তবে বিশেষ করে যাদের বাতের দোষ রয়েছে তাদের জন্য বেশি উপকারী। তৈলটি এমনভাবে চর্মের মধ্যে মর্দন করতে হবে সম্পূর্ণ দেহ এটিকে শুষে নেয়। এভাবে তৈল শিশুদের হাঁড় ও স্নায়ুর মধ্যে বন্টিত হবে যা বাতদোষের শিশুদের গভীর এবং অধিক শান্তিপূর্ণ নিদ্রায় সাহায্য করবে। বাতের অসামঞ্জস্যতা প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্য ঘটায়। যদি এরকম ঘটে তবে নিম্নলিখিত ঔষধ পরামর্শ দেওয়া হল : ঘি ও মেথির বীজের চুয়ান করে শিশুর পেটে মলম হিসেবে মর্দন করতে হবে ও শিশুটি এটি খেতে পারে তবে খুব অল্প পরিমানে যে মা শিশুকে দুধ খাওয়ায় তিনিও এই ঔষধটি খেতে পারেন সেটা তার দুধের ধারাবাহিকতার পরিবর্তন আনতে পারে এবং এটি তার শিশুর জন্য সহায়কপূর্ণ।
তৃতীয় দোষটি হলো পিত্ত দোষ কিন্তু এটি সচরাচর দেখা যায় না। যে শিশুটির পিত্তের খুব বেশি দোষ থাকে তার শরীরে চর্মরোগ, চর্মের মধ্যে ছোট ছোট লালদাগ, শরীর জ্বালাপোড়ার প্রবণতা থাকে। এই উপসর্গগুলো বাহ্যিকভাবে চর্মের মধ্যে দেখা যায় বিশেষ করে চেহারা যেটি খুব লালচে হয়ে যায়। এ ধরনের শিশুর মায়েদের খাওয়া দাওয়ায় অবশ্যই সব ধরনের মরিচ, মসলা, টক জাতীয় খাদ্য এবং লবণ বর্জন করতে হবে।
যেসব দম্পতিদের সন্তান হয়না তাদের পত্নীদের তুলসীদেবীর পূজা করার নির্দেশনা রয়েছে। পূজা শেষে তিনি তুলসীদেবী বৃক্ষটি ঝাঁকিয়ে বা যা কিছু পরে তা নিয়ে কলার একটি ছোট টুকরো ঢুকিয়ে নিতে পারেন। এরপর সেই কলার ক্যাপসুলটি না চিবিয়ে গিলতে হবে। তুলসী দেবীর কৃপায় এই ধারণাটি বাস্তবে রূপ নিতে পারে। আশাবশত যদি আমাদের শিশুদের পিতামাতারা এই অনুচ্ছেদের কিছু পরামর্শ প্রয়োগ করেন, তবে তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য একটি অধিক অনুকূলপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হবে এবং পরবর্তীতে তারা সন্তানদের কৃষ্ণভাবনাময় পথে অগ্রসর হতে চালনা করতে পারেন।

পদ্মনাভ দাস হলেন শ্রীল প্রভুপাদ এর শিষ্য যিনি জার্মানির নবনৃসিংহ ক্ষেত্রে বাস করেন। তিনি কিছু উপশম বিদ্যা ও জ্যোতিবিদ্যা শিখেছেন। 


 

অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৫ ব্যাক টু গডহেড

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।