মাঝে মাঝে পৃথক বসবাস

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ | ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৩ | ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 92 বার দেখা হয়েছে

মাঝে মাঝে পৃথক বসবাস
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কেন্দ্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রীল প্রভুপাদের নানাবিধ কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষর রেখেছেন যাঁরা, তাদের অধিকাংশই গৃহস্থ ভক্ত-একথা শ্রীল প্রভুপাদ স্বয়ং স্বীকার করেছেন। এর কারণ হিসাবেও তিনি জানিয়েছেন যে, গৃহস্থ ভক্তদের মধ্যে একাধারে নানা সমস্যার মোকাবিলা করবার মতো স্বাভাবিক
প্রবণতা গড়ে ওঠে। এই কারণেই ইসকনে ব্রহ্মচারীদের মধ্যে কেউ গার্হস্থ্য আশ্রমে প্রবেশের আগ্রহ প্রকাশ করলে, শ্রীল প্রভুপাদ কতকগুলি কঠোর শর্তসাপেক্ষে সানন্দেই অনুমতি দিতেন। অনুমতি দেওয়ার হেতু এই যে, গৃহস্থ ভক্ত তাঁর বিবাহিতা পত্নীর সহায়তায় কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার কার্যে বিখন শক্তি নিয়োগ করতে সক্ষম হন এবং পতি-পত্নীর মিলিত উদ্যোগে এবং নিষ্ঠায় পরমেশ্বর ভগবানের সেবাকার্য অনেক সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
তবে একটা বিষয়ে প্রত্যেক গৃহস্থ ভক্তকে শ্রীল প্রভুপাদ সতর্ক করে দিতেন যে, গার্হস্থ্য জীবনে স্ত্রীকে সকল প্রকার প্রতিকূল অবস্থা থেকে সুরক্ষার পূর্ণ দায়িত্ব স্বীকার করতেই হবে, কারণ বিবাহ সূত্রের সামাজিক তথা পারমার্থিক উপযোগিতা সেইটাই। পতির অন্যতম দায়িত্ব হল পত্নীকে কৃষ্ণভাবনামৃত আস্বাদনে উদ্বুদ্ধ করা এবং সেই কারণে বিবাহ জীবনে বিচ্ছেদের যে কোনও প্রকার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকা তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুদায়িত্ব বটে।
অবশ্য, অনেক সময়ে গৃহস্থ ভক্ত লক্ষ্য করেন যে, তাঁর বিবাহিতা স্ত্রীর মানসিকতা ভাবাবেগ জর্জরিত এবং তার ফলে গৃহস্থের পক্ষে গার্হস্থ্য জীবনে নানা বিষয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তেমন ক্ষেত্রে গৃহস্থ ভক্তকে মনে রাখতে হবে যে, স্ত্রীর পারমার্থিক উন্নতি বিকাশের দায়িত্ব তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই গ্রহণ করেছেন, সুতরাং অতিশয় গুরুত্ব সহকারে স্ত্রীকে কৃষ্ণভাবনামৃত অনুশীলনের পথে পরিচালিত করার জন্য তাঁকে সহায়তা করতেই হবে- সেটাই গৃহস্থ জীবনে তাঁর প্রাথমিক কর্তব্য। যদি অবশ্য অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও এবং গুরুতর প্রয়াসের পরেও স্ত্রীকে কৃষ্ণভাবনামূখী করে তুলতে না পারা যায়, তা হলে তাঁকে সর্ব প্রকারে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়ত আর কার্যকরী না হতেও পারে এবং তখন তাঁকে নিয়ে পারমার্থিক উন্নতি বিকাশের আশা হয়ত সাময়িকভাবে পরিত্যাগ করতেও হয়। ভক্তকে বিচার করতে হবে যে, তাঁর নিজের পারমার্থিক বিকাশের পথে স্ত্রীর আচরণ বিঘ্ন সৃষ্টি করছে কিনা-ভক্তিমার্গে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী সকলের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা অবশ্যই বিধেয়।
কিন্তু তা সত্ত্বেও গৃহস্থ ভক্ত অবশ্যই মনে রাখবেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রীকে বিবাহ করে গৃহের গৃহিনী করেছেন এবং তাই কখনও বিবাহ বিচ্ছেদের কোনই প্রশ্ন ওঠে না। মাঝে মাঝে দু’জনে পৃথকভাবে বসবাস করে সামঞ্জস্য বিধানের প্রয়াসী হতে পারেন, কিন্তু সর্বপ্রকারে স্ত্রীকে তাঁর পারমার্থিক জীবনে শুদ্ধ হয়ে ওঠার জন্য সহায়তা করার ব্যাপারে গৃহস্থ ভক্তকে বিশেষভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বিচ্ছিন্নতাও শ্রীকৃষ্ণের কৃপাধন্য আনুকূল্য বিবাহিতা স্ত্রীকে অবশ্যই সর্বপ্রকার পরিস্থিতিতে পতির প্রতি বিশ্বস্ত এবং নিষ্টাবতী হতে হবে। বৈদিক সভ্যতা, যা ভারতীয় সমাজের ভিত্তি স্বরূপ, তাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, স্ত্রীকে অতি সাধ্বী হতে হয় এবং পতিকে প্রভুরূপে মান্য করতে হয়। বিশেষ করে, কৃষ্ণভাবনামৃত আস্বাদনে উন্নত পতি-পত্নির মধ্যে ঠিক এমনই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে ওঠা অপরিহার্য। পতি-পত্নীর মধ্যে যদিও কোন মতদ্বৈধতা কখনও কখনও প্রকাশ পায়, তবে তাতে অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে আমল না দেওয়াই মঙ্গল এবং উভয়কেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবানিষ্টায় আরও বেশি আত্মমগ্ন হয়ে থাকতে হয়। বাস্তবিকই, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা অভিলাষ পতি-পত্নীর অন্তরে সমানভাবে স্থান পেলে কোনও মতানৈক্যই গুরুত্ব লাভ করতে পারে না।
তাই গৃহস্থ ভক্তের উচিত কৃষ্ণভাবনামৃত অনুশীলনেই অধিকতর মনোনিবেশ করে তুচ্ছাতিতুচ্ছ মনোমালিন্যগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখা। দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক মাধুর্য অক্ষুন্ন রাখার অনুকূলে এই জীবনাদর্শ অতীব কার্যকরী নীতি, তা অনস্বীকার্য।
বিবাহযোগ্য ছেলে মেয়েরা আদর্শ বৈষ্ণব গৃহস্থ হয়ে বিবাহিত জীবন যাপন করবে, সেটাই সমাজে বাঞ্ছনীয়। তবে শ্রীকৃষ্ণের কৃপাধন্য হয়ে ছেলে আর মেয়ে উভয়েই যদি পৃথকভাবে বসবাস করতে পারে, তবে তো আরও মঙ্গলজনক। কিন্তু তা হবার নয়। ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষনে প্রবণতা থেকে যদি মনঃসংযোগ শ্রীকৃষ্ণের সেবাভিমুখী করে তোলা যায়, তাহলে সারা জীবনব্যাপী এককভাবে ব্রহ্মচারী শুদ্ধ সাত্ত্বিকতার আদর্শে অতিবাহিত করা সম্ভব। অবশ্য নানা কারণে অধিকাংশ ছেলে-মেয়ের পক্ষে সোটা প্রায় দুঃসাধ্য এবং এক প্রকার সামাজিক অপূর্ণতাও বটে । তা সত্ত্বেও দেখা গেছে, অনেক ছেলে এবং অনেক মেয়ে গার্হস্থ্য অধ্যায়ে প্রবেশ করতে পারেনি কিংবা প্রবেশ করবার পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। মনে করতে কোনই দ্বিধা নেই যে, সেই বিচ্ছিন্নতাও এক প্রকার পরম করুণাময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরই কৃপাধন্য আনুকূল্য বটে। তখন বিচ্ছিন্ন জীবনে ব্রহ্মচারী এবং ব্রহ্মচারিণীরা আরও অনেক ব্রহ্মচারী ও ব্রহ্মচারিণীদের জীবনাদর্শে পথপ্রদর্শন করতে অবশ্যই পারে। তারা সকলে একসঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে বসবাস করে মনকে কৃষ্ণভাবনামৃতের মধুময় আস্বাদনে সঞ্জীবিত করে তুলতে পারে বৈকী। কৃত্রিম বিচ্ছিন্নতা কখনই অনুমোদনযোগ্য নয়। আর যখন দেখা যাবে, ছেলে আর মেয়েরা কৃষ্ণসেবায় মগ্ন হয়ে একসঙ্গে বসবাস করা সত্ত্বেও কোন প্রকারে ইন্দ্রিয় উপভোগের লালসায় বশবর্তী হচ্ছে না, তখন সুনিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে যে, সেই জীবনাদর্শ শ্রেষ্ট আদর্শ। মানব সভ্যতা সেই উত্তুঙ্গ জীবনাদর্শ লাভের জন্য যুগযুগান্তর ধরে চেষ্টা করে আসছে কৃত্রিমভাবে তিক্ততার মাধ্যমে গার্হস্থ্য বিচ্ছিন্নতা অবশ্যই নির্বুদ্ধিতা! আমরা চাই স্বেচ্ছা প্রণোদিত বিচ্ছিন্ন ব্রহ্মচর্য। আর তা না হলে, পতি-পত্নীরূপে পূর্ণ সামাজিক পালন । কৃত্রিমভাবে গার্হস্থ্য জীবনাশ্রম বর্জন করাও অনভিপ্রেত: আমরা চাই কৃষ্ণভাবনামৃতের সঞ্জীবনীশক্তি সমন্বিত হয়ে গৃহস্থরা সমাজকে সুস্থ চিন্তা সমন্বিত করে তুলবে।
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।