বিবাহ বন্ধন

প্রকাশ: ২ জুন ২০২১ | ১২:০৭ অপরাহ্ণ আপডেট: ২ জুন ২০২১ | ১২:১০ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 414 বার দেখা হয়েছে

বিবাহ বন্ধন

বিবাহ নারী পুরুষের একত্রিত হওয়ার চেয়েও বেশি কিছু। এর পেছনে রয়েছে একটি পবিত্র উদ্দেশ্য এবং দম্পতিদের উদ্দেশ্য হলো একত্রে এই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য দায়িত্ববান হওয়া।

কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য
কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ

বিবাহের উদ্দেশ্য

“মানুষকে পরমার্থের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপযোগী অনেক প্রক্রিয়া আছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, বিবাহ অনুষ্ঠানকেও এই রকম একটি পবিত্র কর্ম বলে গণ্য করা হয়। তাকে বলা হয় ‘বিবাহ-যজ্ঞ’।
ভগবান বলেছেন, “মানব-সমাজের মঙ্গলের জন্য যে যজ্ঞ, তা কখনই ত্যাগ করা উচিত নয়। বিবাহ যজ্ঞের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মনকে সংযত করে শান্ত করা, যাতে সে পরমার্থ সাধনের পথে এগিয়ে যেতে পারে।” (ভ.গী. ১৮/৫ তাৎপর্য)
“প্রতিটি সভ্য সমাজেই ধর্মীয় জীবনের ভিত্তিতে বিবাহের প্রচলন দেখা যায়, কারণ সংযত যৌন জীবন যাপনের সেটিই সঠিক পথ। এই ধরনের সংযত, আসক্তি রহিত কামও এক প্রকার যজ্ঞ, কারণ এর মাধ্যমে সংযমী গৃহস্থ তাঁর বিষয়-ভোগোন্মুখ প্রবৃত্তিকে তাঁর পারমার্থিক জীবনের মহৎ উদ্দেশ্যের কাছে উৎসর্গ করেন।” (ভ.গী ৪/২৬ তাৎপর্য)
“বেদে নিয়ন্ত্রিতভাবে ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির জন্য বিবাহ- যজ্ঞের বিধান বর্ণিত হয়েছে। এভাবেই ধীরে ধীরে জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হবার দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। মুক্ত জীবনের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে ভগবানের সঙ্গ লাভ করা।” (ভ.গী. ৪/৩১ তাৎপর্য)
“সন্তান-সন্ততি উৎপাদনের জন্য বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রী এবং পুরুষের মিলনের পন্থা রয়েছে, কিন্তু ইন্দ্রিয়-সুখভোগের জন্য তা নির্দিষ্ট হয়নি। আজকের সমাজে সংযমের অভাব বলেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের এত পরিকল্পনা করতে হচ্ছে, কিন্তু মূর্খ লোকেরা জানে না যে, পরম সত্যের অনুসন্ধান যখন শুরু হয়, তখন জন্ম-নিয়ন্ত্রণ আপনা থেকেই সাধিত হয়। যাঁরা পরম সত্যের অনুসন্ধানী, তাঁরা কখনই ইন্দ্রিয়-সুখভোগের অর্থহীন কার্যকলাপে আকৃষ্ট হন না। কেননা তাঁরা পরম সত্যের অনুসন্ধানে সর্বদাই মগ্ন ।” (ভা. ১/২/১০ তাৎপর্য)
“বিবাহের অর্থ হচ্ছে স্ত্রীর সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে, লাম্পট্য পরিত্যাগ করে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করা। কিন্তু বর্তমান সময়ে লাম্পট্য অনিয়ন্ত্রিত।” (ভা, ৪/২৬/৬ তাৎপর্য)

বৈদিক বিবাহ

“বৈদিক বিবাহের প্রথায় সাধারণত পিতা তাঁর কন্যাকে উপযুক্ত পাত্রের কাছে দান করেন। এইটি অত্যন্ত সম্মানজনক বিবাহ। পাত্রপক্ষ বিবাহ করার জন্য কন্যার পিতার কাছে গিয়ে কন্যাকে প্রার্থনা করা উচিত নয়। তাতে তার সম্মান ক্ষুণ্ণ হয় বলে মনে করা হয়।” (ভা ৩/২২/১৩ তাৎপর্য)
“বিভিন্ন প্রকার বিবাহ রয়েছে, তার মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে উপযুক্ত পাত্রকে নিমন্ত্রণ করে এনে, তাঁর হস্তে বস্ত্র এবং অলঙ্কারে বিভূষিতা কন্যাকে পিতার সামর্থ্য অনুসারে যৌতুক সহ দান করা।” (ভা. ৩/২২/১৫ তাৎপর্য)
“মনুস্মৃতিতে আট প্রকার বিবাহের উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে কেবল ব্রাহ্ম বা রাজসিক-এই একটি বিবাহই বর্তমানে প্রচলিত। অন্যান্য বিবাহ-ভালবেসে, মালা বদল করে অথবা বলপূর্বক কন্যাকে হরণ করে বিবাহ-এই কলিযুগে নিষিদ্ধ।” (ভা. ৩/২২/১৬ তাৎপর্য)

গোত্র ও জ্যোতিষ শাস্ত্রের গুরুত্ব

“ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য-এই উচ্চবর্ণের পুরুষেরা নিম্নবর্ণের স্ত্রীর গর্ভে সন্তান উৎপাদন করেন না। তাই বৈদিক সমাজে ছেলে এবং মেয়ের কুষ্ঠি বিচার করে তাদের বিবাহ-যোটক কেমন হবে, তা বিচার করার প্রথা প্রচলিত রয়েছে। বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্রে প্রকৃতির তিন গুণ অনুসারে কোনো মানুষের ব্রাহ্মণবর্ণে, ক্ষত্রিয়বর্ণে, বৈশ্যবর্ণে, কিংবা শূদ্রবর্ণে জন্ম হয়েছে কি না তা বোঝা যায়। তা বিচার করে দেখা অবশ্য কর্তব্য, কারণ বিপ্রবর্ণের ছেলের সঙ্গে যদি শূদ্রবর্ণের মেয়ের বিবাহ হয়, তা হলে উভয়েরই জীবন দুর্দশায় পূর্ণ হয়ে উঠবে। তাই সমবর্ণের কন্যার সঙ্গে বিবাহ হওয়া উচিত। অবশ্য এটি ত্রৈগুণ্য, বা বেদের জাগতিক বিচার, কিন্তু ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই যদি ভগবদ্ভুক্ত হয়, তা হলে আর এই ধরনের বিবেচনার কোনো প্রয়োজন থাকে না। ভক্ত গুণাতীত স্তরে অবস্থিত এবং তাই পাত্র ও পাত্রী উভয়েই যদি ভক্ত হয়, তা হলে তাদের মিলন অত্যন্ত সুখময় হয়ে উঠে।” (ভা. ৬/২/২৬ তাৎপর্য) “
জ্যোতির্গণনায় পাত্র এবং পাত্রী যদি সর্বতোভাবে সুসঙ্গত হয়, তা হলে সেই সংযোগকে বলা হয় যোটক এবং তখন তাদের বিবাহ হয়। এমন কি পঞ্চাশ বছর আগেও হিন্দুসমাজে এই প্রথা প্রচলিত ছিল। পাত্র যতই ধনী হোক না কেন অথবা কন্যা যতই সুন্দরী হোক না কেন, জ্যোতির্গণনায় মিল না হলে বিবাহ হতো না।” (ভা. ৯/১৮/২৩ তাৎপর্য)

ধর্মপত্নী কে?

“প্রকৃত পত্নী হচ্ছে ধর্মপত্নী। অর্থাৎ, ধর্ম অনুসারে বিবাহ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যখন স্ত্রীকে অঙ্গীকার করা হয়, তখন তাঁকে বলা হয় ধর্মপত্নী। কারণ ধর্মীয় অনুশাসন অনুসারে তাঁকে গ্রহণ করা হয়েছে। ধর্মপত্নী থেকে উৎপন্ন সন্তান পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়, কিন্তু অবিবাহিতা পত্নী থেকে উৎপন্ন সন্তানের পিতার সম্পত্তির ওপর কোনো অধিকার থাকে না। ধর্মপত্নী শব্দটি পতিব্রতা পত্নীকেও বোঝায়। পতিব্রতা পত্নী হচ্ছেন তিনি, যাঁর বিবাহের পূর্বে কোনো পুরুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না।” (ভা ৪/২৬/১৬ তাৎপর্য)

পিতামাতার কর্তব্য

“পিতামাতার কর্তব্য হচ্ছে তাঁদের পুত্র ও কন্যাদের বিবাহের আয়োজন করা। বৈদিক সমাজে এটি পিতামাতার একটি দায়িত্ব। বিবাহের পূর্বে পুত্র ও কন্যাদের স্বাধীনভাবে অন্য পুরুষ ও মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করতে দেওয়া উচিত নয়। এই বৈদিক সামাজিক রীতিটি অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ অথবা বর্ণসংকর, যা বর্তমান সময়ে বিভিন্ন নামে প্রবলভাবে প্রচলিত হচ্ছে, তা রোধ করার ব্যাপারে খুব সুন্দরভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে।” (ভা. ৪/২৭/৮ তাৎপর্য)

বিবাহ বিচ্ছেদ

“এই যুগটিতে অবৈধ নারী সংসর্গের ফলে বহু নারী ও শিশু অযত্নে থাকবে। পরিস্থিতির চাপে, স্ত্রীলোকেরা পুরুষদের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে স্বাধীন হয়ে উঠবার চেষ্টা করবে, এবং বিবাহ ব্যবস্থাটি পুরুষ এবং নারীর মাঝে একটা গতানুগতিক চুক্তির মতোই উদ্‌যাপিত হতে থাকবে।” (ভা ১/১৬/২১ তাৎপর্য)
“দিব্য গুণসম্পন্না কন্যাকে দিব্য গুণসম্পন্ন পাত্রের কাছে সম্প্রদান করা উচিত। আসুরিক গুণসম্পন্ন কন্যাকে আসুরিক গুণসম্পন্ন পাত্রের কাছে সম্প্রদান করা উচিত। তা হলে তারা সুখী হবে। কিন্তু কন্যা যদি আসুরিক হয় এবং পাত্র যদি দিব্য হয়, তা হলে সেই যোটক বেমানান হবে এবং সেই বিবাহ কখনও সুখের হতে পারে না। বর্তমানে, যেহেতু ছেলে-মেয়েদের গুণ এবং স্বভাব অনুসারে বিবাহ হচ্ছে না, তাই অধিকাংশ বিবাহই দুঃখময়, এবং সেই জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।” (ভা. ৩/২৪/১৫ তাৎপর্য)

স্বয়ংবর – এক রাজসিক বিবাহ পদ্ধতি

“পরাক্রমশালী রাজাদের অত্যন্ত গুণবতী কন্যাদের এক মুক্ত প্রতিযোগিতায় তাদের পতি মনোনয়ন করার স্বীকৃতি দেওয়া হতো এবং সেই অনুষ্ঠানকে বলা হতো স্বয়ংবর সভা। যেহেতু স্বয়ংবর অনুষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী বীর রাজকুমারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতো, তাই রাজকুমারীর পিতা সেই সমস্ত রাজকুমারদের নিমন্ত্রণ করতেন এবং তাদের মধ্যে খেলোয়াড়ী মনোবৃত্তি নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ হতো। এই প্রকার যুদ্ধে কখনও কখনও যুদ্ধরত প্রতিদ্বন্দ্বীর মৃত্যু হতো এবং বিজয়ী রাজকুমার পুরস্কারস্বরূপ সেই রাজকন্যাকে লাভ করতেন, যার জন্য বহু রাজকুমার মৃত্যুবরণ করতেন।” (ভা. ১/১০/২৯ তাৎপর্য)

শ্রীকৃষ্ণের বিবাহ

“ভগবান বিবাহ করে একজন গৃহস্থের মতো জীবন-যাপন করেছিলেন। এটি অবশ্য একটি জড়জাগতিক কার্যের মতো, কিন্তু যখন আমরা জানতে পারি যে তিনি ষোল হাজার একশ’ আটজন পত্নীকে বিবাহ করেছিলেন, এবং তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা আলাদা প্রাসাদে স্বতন্ত্রভাবে বাস করেছিলেন, তখন অবশ্যই বোঝা যায় যে তাঁর সেই কার্য জড়জাগতিক ছিল না। তাই তাঁর যোগ্য পত্নীদের সঙ্গে গৃহস্থের মতো বসবাস কখনেই জড়জাগতিক ছিল না, এবং তাঁদের সঙ্গে তাঁর আচরণ জড়জাগতিক যৌন সম্পর্ক বলে কখনও মনে করা উচিত নয়। যে সমস্ত রমণীরা ভগবানের পত্নী হয়েছিলেন তাঁরা অবশ্যই কোনো সাধারণ রমণী ছিলেন না, কেননা কোটি কোটি জন্মের তপস্যার ফলেই কেবল পরমেশ্বর ভগবানকে পতিরূপে লাভ করা যায়।” (ভা ১/১১/৩৫ তাৎপর্য)
“ক্ষত্রিয় তেজস্বিতার অভিপ্রকাশ হতে দেখা যায়, বিবাহ উৎসবাদির মধ্যে এবং ঐ ধরনের সংগ্রামের মধ্যে খারাপ কিছুই নেই। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঐ ধরনের কর্তব্যভার পালন করেছিলেন সম্যকভাবে। তাঁর বিভিন্ন অপ্রাকৃত লীলার প্রতিটি কাজের মধ্যেই তিনি এভাবেই দায়িত্ব সচেতনতার স্বাক্ষর কু রেখেছেন।” (ভা, ১/১৬/২৬-৩০ তাৎপর্য)

আদর্শ বিবাহ

শ্রীল প্রভুপাদ যখন নিউইয়র্কে ছিলেন তখন নিউইয়র্কে প্রথম শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রী জগন্নাথ বলদেব সুভদ্রা মহারাণীর শ্রীবিগ্রহের প্রতিষ্ঠা ও অভিষেক সম্পন্ন করেন এবং একই সাথে অনেক ভক্তকে দীক্ষাদান ও বৈদিক বিবাহ সম্পন্ন করান। শ্রীল প্রভুপাদ আমার সাথে অদ্বৈতের বিবাহ দেন। সেই বিবাহ অনুষ্ঠানে আমার মা সর্বপ্রথম শ্রীল প্রভুপাদের দর্শন পান। শ্রীল প্রভুপাদ আমার মাকে শিখিয়ে দিলেন কি বলতে হবে? আমার মা অদ্বৈতকে বললেন, “আমার মেয়ে বহুদিন আমার তত্ত্বাবধানে ছিল। আজ হতে আমি তাকে আপনার তত্ত্বাবধানে দিলাম।”
অদ্বৈত তখন বললেন, “আমি আপনার মেয়েকে সারা জীবনের জন্য গ্রহণ করলাম। আজ হতে আপনার মেয়ের সকল দায়িত্ব আমার”।
আমি বললাম, “আমি আপনাকে আমার স্বামীরূপে গ্রহণ করলাম এবং সারা জীবন আমি আপনাকে স্বামীরূপে সেবা করব।”
তখন শ্রীল প্রভুপাদ বললেন, “তোমরা শ্রীশ্রী রাধামাধবের সামনে প্রতিজ্ঞা করেছো। তাই তোমাদের এই প্রতিজ্ঞা সারা জীবন রক্ষা করতে হবে।” শ্রীল প্রভুপাদ আরো বললেন,

পিতা রক্ষতি কৌমারে, ভর্ত্তা রক্ষতি যৌবনে
রক্ষন্তি স্থবিরে পুত্রা, ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হতি

মনুসংহিতা-৯:৩

“নারীকে কুমারীকালে পিতা, যৌবনে স্বামী ও বার্ধক্যে পুত্ররা রক্ষা করবে। নারী কখনোই স্বাধীন। থাকার যোগ্য নয়।”
নারী স্বাধীনতার যোগ্য নয় মানে ওরা ক্রীতদাস নয়। নারীরা শিশুর মতো, তাদের স্বতন্ত্রতা নেই। যদি তুমি কোনো শিশুকে স্বাধীনতা দাও তবে সে যে কোনো বিপদ ঘটাতে পারে। তারা খুব দুর্বল ও ক্ষীণচিত্তের অধিকারী। দুষ্ট লোকেরা তাদের ক্ষতি করতে পারে। পূর্বে ভারতীয় নারীরা পর পুরুষের সাথে সেরকম মিশত না, বা সেরকম প্রয়োজনও ছিল না। কিন্তু বর্তমানে আকাশসংস্কৃতির কুপ্রভাবে সেই ঐতিহ্যবাহী সংস্কারটি বিলুপ্ত প্রায়। যার কুফল আজ সবাই ভোগ করছে। বৈদিক সংস্কৃতিতে বিবাহ বিচ্ছেদের কোনো প্রশ্নই উঠে না। এ প্রসঙ্গে চাণক্য নীতি শাস্ত্রে রয়েছে-

দাম্পত্যে কলহে চৈব বহ্বারম্ভে লঘু-ক্রিয়া ।
অজাযুদ্ধে মুনি-শ্রাদ্ধে প্রভাতে মেঘদম্ভকে ৷৷

স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়, কিন্তু দ্রুতই তারা তা ভুলে যায়। খুব হালকাভাবেই এদের গ্রহণ করা উচিত ঠিক ছাগলের সাথে ছাগলের যুদ্ধের মতো, বনবাসী সাধুর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কিংবা সূর্যোদয়ে মেঘের গর্জনের মতো।
তোমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সামনে প্রতিজ্ঞা করেছো অবশ্যই তোমাদের তা রক্ষা করতে হবে। প্রতিজ্ঞা যদি ভঙ্গ কর, তবে তার জন্য তোমার যথেষ্ট কুফল ভোগ করতে হবে। আমি একজন সন্ন্যাসী হিসেবে বিবাহ সম্পাদনের কোনো অধিকার নেই, কিন্তু আমি তা করছি শুধুমাত্র আমার শিষ্যদের মঙ্গলার্থে। তাই তোমরা তোমাদের দায়িত্ব ও প্রতিজ্ঞার কথা সবসময় স্মরণ রাখবে। সবসময় হরিনাম কর এবং সুখে থাকো। তোমরা কখনও গর্ভপাত করো না, তবে আবার কুকুর বেড়ালের মতো সন্তানও জন্ম দিও না। একজন লোক যখন কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করে তখন তাকে তার অবস্থানে খুব সুদৃঢ় থাকতে হয়। যদি তুমি তোমার সন্তানদের কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত করতে পার তবে তুমি শত পুত্রের জন্ম দিতে পার। যদি তা না পার তবে কোনো সন্তান নয়।”
“পুরুষ এবং নারী উভয়েই যৌন সুখ উপভোগের অন্বেষণ করে এবং তারা যখন বিবাহ অনুষ্ঠানের দ্বারা যুক্ত হয়, তখন কিছু কালের জন্য তারা সুখী হয়, কিন্তু অবশেষে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় এবং অনেক সময় বিবাহ-


বৈদিক ব্যবস্থা অনুসারে পত্নীকে পতির অর্ধাঙ্গিনী বলে বিবেচনা করা হয়, কেননা পতির কর্তব্যের অর্ধাংশ সম্পাদন করার জন্য তিনি দায়ী। গৃহস্থের পঞ্চসূনা নামক পাঁচ প্রকার যজ্ঞ সম্পাদন করার দায়িত্ব রযেছে, যার ফলে তিনি তাঁর দৈনন্দিন কার্যকলাপে অনিবার্যরূপে সংঘটিত সমস্ত প্রকার পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত হতে পারেন।


বিচ্ছেদ হয়। যদিও প্রতিটি নারী এবং পুরুষ মৈথুনের মাধ্যমে সুখ উপভোগ করতে চায়, কিন্তু পরিণামে কলহ এবং ক্লেশই কেবল প্রাপ্তি হয়। বিবাহের প্রথা পুরুষ এবং স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রিত যৌনজীবনের অনুমতি প্রদান করে, যা ভগবদ্‌গীতাতেও ভগবানের দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। ধর্মাবিরুদ্ধো ভূতেষু কামোহস্মি—যে যৌন জীবন ধর্মবিরুদ্ধ নয়, তা শ্রীকৃষ্ণ।” (ভা. ৭/১৩/২৬ তাৎপর্য)
“বৈদিক ব্যবস্থা অনুসারে পত্নীকে পতির অর্ধাঙ্গিনী বলে বিবেচনা করা হয়, কেননা পতির কর্তব্যের অর্ধাংশ সম্পাদন করার জন্য তিনি দায়ী গৃহস্থের পঞ্চসূনা নামক পাঁচ প্রকার যজ্ঞ সম্পাদন করার দায়িত্ব রয়েছে, যার ফলে তিনি তাঁর দৈনন্দিন কার্যকলাপে অনিবার্যরূপে সংঘটিত সমস্ত প্রকার পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত হতে পারেন। মানুষ যখন গুণগতভাবে কুকুর-বিড়ালের মতো হয়ে যায়, তখন সে পারমার্থিক উন্নতি সাধনের কর্তব্যসমূহ সম্পাদনের কথা ভুলে যায়, এবং তার ফলে সে তার পত্নীকে তার ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধনের উপলক্ষ্য বলে মনে করে। পত্নীকে যখন ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধনের যন্ত্র বলে গ্রহণ করা হয়, তখন তার দৈহিক সৌন্দর্যই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচনা করা হয় এবং যখনই ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধনে বাধা পড়ে, তখন তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয় বা বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু যৌথ সহযোগিতার মাধ্যমে পতি ও পত্নী যখন পারমার্থিক উন্নতি সাধনকে তাঁদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বলে গ্রহণ করেন, তখন দেহের সৌন্দর্যের গুরুত্ব দেওয়া হয় না অথবা তথাকথিত প্রেমের বিচ্ছেদ হয় না। জড় জগতে প্রেম বলে কোনো বস্তু নেই। বিবাহ প্রকৃতপক্ষে শাস্ত্র-নির্দেশিত পারমার্থিক উন্নতি সাধনের জন্য পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পন্ন একটি কর্তব্য। তাই পারমার্থিক জ্ঞানরহিত কুকুর-বিড়ালের মতো জীবনযাপন না করার জন্য বিবাহের প্রথা অপরিহার্য।” (ভা ৩/১৪/১৯ তাৎপর্য)

সমবর্ণ ও গোত্রে বিবাহ

“কর্দম মুনি ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ, কিন্তু স্বায়ম্ভুব মনু ছিলেন ক্ষত্রিয়। অতএব, ভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিবাহের প্রচলন তখনও ছিল। সেই প্রথায় ক্ষত্রিয়ের কন্যাকে ব্রাহ্মণ বিবাহ করতে পারতো, কিন্তু ব্রাহ্মণের কন্যাকে ক্ষত্রিয় বিবাহ করতে পারতো না। বৈদিক ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই যে, শুক্রাচার্য মহারাজ যযাতিকে তাঁর কন্যা দান করেছিলেন, কিন্তু রাজা ব্রাহ্মণের কন্যাকে বিবাহ করতে অস্বীকার করেন; ব্রাহ্মণের বিশেষ অনুমতির ফলেই কেবল তাঁরা বিবাহ করতে পেরেছিলেন। তাই পুরাকালে, লক্ষ লক্ষ বছর আগে, ভিন্ন বর্ণের মধ্যে বিবাহের প্রথা বর্জিত ছিল না, তবে সামাজিক প্রথার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো।” (ভা, ৩/২১/২৮ তাৎপর্য)
বৈদিক শাস্ত্র মতে, যৌতুক প্রথা “যৌতুক দেওয়ার প্রথা অবৈধ নয়, যা অনেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। যৌতুক হচ্ছে পিতার সদিচ্ছার প্রতীক-স্বরূপ কন্যাকে প্রদত্ত দান, যা অনিবার্য। পিতা যদি যৌতুক দানে সম্পূর্ণ অক্ষমও হয়, তা হলেও অন্তত কিছু ফল এবং ফুল দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। ভগবদ্‌গীতায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফল এবং ফুল দান করলে ভগবানও প্রসন্ন হন। আর্থিক অক্ষমতার জন্য যৌতুক না দিতে পারলে, অন্য কোনো উপায়ে যৌতুক সংগ্রহ করার প্রশ্ন উঠে না, তখন জামাতার প্রসন্নতার জন্য তাঁকে ফল এবং ফুল দেওয়া যেতে পারে।” (ভা. ৩/২২/২৩ তাৎপর্য)
“বৈদিক সভ্যতায় কন্যাকে যৌতুক প্রদান করার প্রথা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। আজও সেই প্রথা অনুসরণ করে ধনবান পিতা তাঁর কন্যাকে প্রচুর যৌতুক প্রদান করেন। কন্যা উত্তরাধিকার সূত্রে পিতার সম্পত্তি প্রাপ্ত হন না এবং তাই স্নেহশীল পিতা কন্যার বিবাহের সময় তাঁকে যথাসম্ভব যৌতুক প্রদান করেন।” (ভা ১০/১/৩১ ৩২ তাৎপর্য)

বিবাহের নিমন্ত্রণ পত্রে ব্রহ্মার ছবি

“ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা চান যাতে সুসন্তানের জন্ম হয়। তাই ব্রহ্মা প্রসন্ন না হলে, উপযুক্ত পত্নী লাভ করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে বিবাহের সময়ে ব্রহ্মার পূজা করা হয়। ভারতবর্ষে আজও বিবাহের নিমন্ত্রণ পত্রে ব্রহ্মার ছবি থাকে।” (ভা. ৫/২/১৫ তাৎপর্য)


 

ত্রৈমাসিক ব্যাক টু গডহেড, অক্টোবর – ডিসেম্বর ২০১৪

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।