বকাঝকা বা শাস্তি নয় শিশুর বন্ধু হন

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২২ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২২ | ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 161 বার দেখা হয়েছে

বকাঝকা বা শাস্তি নয় শিশুর বন্ধু হন

শিশুরাই দেশ, সমাজ, জাতির ভবিষ্যতের কর্ণধার। বাবা-মার কাছে সন্তানের চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না। তাদের ঘিরেই তো সমস্ত পরিকল্পনা, সব স্বপ্ন। কিন্তু সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলা যে চাট্টিখানি কথা নয়!
এই ‘মানুষ’ করতে গিয়েই সমস্যার শুরু। শুরু বকাবকির, শুরু চর-থাপ্পর, খুন্তির খোঁচা, স্কেলের বাড়িÑএমন হাজারো রকম শাস্তির। আমাদের সমাজে হাজারো কাজের চাপ, টাকা-পয়সার টানাটানি, আবার অনেক সময় নেহায়েত অভ্যাসের বশেও বাবা-মা ছেলে-মেয়ের ওপর এমন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। আমি, আপনি বা আমাদের চেনাশোনা অনেকের জীবনেই এমন ঘটনা ঘটেছে, ঘটে চলেছে এখনো। প্রশ্ন হলো, এমন শাস্তি কি সত্যিই কাজ দেয়? বাচ্চাকে গায়ের জোরে কি সত্যিই কিছু শেখানো যায়? জোর করে খাওয়ানো, পড়তে বসানো, খেলতে বারণ করা-এ সব আদতে কোনো কাজে আসে কিনা, সে কথা কখনও ভেবে দেখেছেন? আমার তো মনে হয়, এতে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে, বাড়ে উভয়পক্ষের মানসিক যন্ত্রণা, দ্বন্দ্ব, এমনকি অনেক সময় বিপথগামীও হয়ে যায় ছেলে বা মেয়েটি।
বাচ্চাদের যত্ন প্রয়োজন। তাদের আদর করে, নিয়ম করে হাঁটতে দৌঁড়াতে খেতে-পড়াশোনা করতে শেখাতে হয়। বন্ধুর মতো কাছে বসে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো তুলে ধরতে হয়। আসলে প্রকৃত শিক্ষা বলতে যা বোঝায় সেটা তো শুধু স্কুল-কলেজের লেখাপড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চারিত্রিক ও আত্মিক উন্নয়নের বিষয়গুলোও যে এ শিক্ষার সঙ্গে জড়িত! আর সেই শিক্ষা বোধ হয় শুরু হয় জন্মের পরপরই।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন-সকলকেই প্রায়ই দেখা যায় বাচ্চার সঙ্গে, এমনকি শিশুর বয়স তিন-চার-পাঁচ-ছয়-সাত বছর পর্যন্তও, ‘ওলে বাবালে’, ‘আমার সোনাটা’-এ সব আদুরে অর্থহীন ভাষায় কথা বলতে। এভাবে কথা বলা মানেই কি ভালোবাসা প্রকাশ পায়? না, কখনো না। আমার তো মনে হয়, এতে শিশুরা ঠিকমতো কথা বলতে শেখে না, শেখে না নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে।
আবার দু-তিন বছরের বহু শিশুকেই দেখা যায় খেলনা, জিনিসপত্র নষ্ট করতে, যা খাচ্ছে তার অর্ধেক ফেলে দিতে, খাওয়ার বা অন্য কোনো কাজের সময় অহেতুক লাফালাফি করতে। আচ্ছা, এর জন্যও আমরা, মানে অভিভাবকরাই কি দায়ী নই? আমরা কি বলি না-‘ও তো বাচ্চা, বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে’ অথবা ‘আমার ছেলে/মেয়েটি ভীষণ দুরন্ত, কী করি বলুন তো?’ আর তারপর বাচ্চা আরো একটু বড় হয়ে যখন ঐ একই কাজ করে, আমরা কি তখন তার পিঠে এক ঘা অথবা কান ম’লে দেই না?
নিজেকে একবার জিজ্ঞাসা করুন তো…। আপনি কি আপনার সন্তানকে নিয়ম করে একটি জায়গায় বসিয়ে খাইয়েছেন? হাতে মোবাইল ফোন, আইপ্যাড অথবা টেলিভিশন ছেড়ে নয়, বসিয়ে প্রতিদিন গল্পের বই পড়ে শুনিয়েছেন? আপনি নিজে কি সময়মতো খান? বই পড়েন? বা সব জিনিস গুছিয়ে রাখেন? ভুলেও আপনি কখনও তাদের সামনেই ঝগড়াঝাটি করেন না তো? দেন না তো গালাগাল? বাচ্চারা কিন্তু ছ’মাস বয়স থেকেই শিখতে শুরু করে। তখন থেকেই তারা যেমন আদর বোঝে, বোঝে ধমকও। বয়স দুই পেরোতে না পেরোতেই বাচ্চাদের নিয়ম-শৃঙ্খলা, সৌন্দর্যবোধ, গুছিয়ে রাখা, নষ্ট না করা, কোনটা করা উচিত এবং উচিত নয়-সেসব বোঝার ক্ষমতা আসে। এরপর ছয় বছরের মধ্যে তাদের মস্তিষ্ক পূর্ণতা পায়। এই বয়সের মধ্যে সে যা কিছু দেখে, শোনে এবং বোঝে, পরবর্তী জীবনে তার প্রতিফলন ঘটে। স্বার্থপরতা অথবা উদারতা, মায়া মমতা-এগুলো কিন্তু সে আমাদের দেখেই শেখে, অথবা শেখে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে।
ধরুন, আপনার বাচ্চাটা প্রতিদিন টিফিন ফেরত আনে। আপনি তখন তাকে যদি বলেন, ‘তুমি টিফিন খাও না কেন? তোমার বন্ধুরা খায় কেন? তুমি বোকা, না গাধা? আজ থেকে তোমার টিফিন বন্ধুরা যেন না খায়।’ এমনটা বলে তাকে কি আপনি আত্মকেন্দ্রিকতাই শেখালেন না? কেন বললেন না মিলেমিশে খাওয়ার কথা? আবার আপনার বাচ্চাটি খারাপ রেজাল্ট করার পর তাকে আপনি হয়ত বললেন, ‘তোমার মামাতো ভাই কত বুদ্ধিমান! খেলাধূলাতেও ভালো।’ অথবা ‘রানা কত ভালো রেজাল্ট করেছে দেখেছো? তুমি তো কিছুই পারো না।’ আচ্ছা, এতে করে আপনি আপনার সন্তানটিকে উৎসাহিত না নিরুৎসাহিত করলেন? এখানেই শেষ না। ঘরে যদি ছেলে থাকে, মেয়েও থাকে, তাহলে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় বাবা-মা ছেলেটিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। তার পাতে বড় খাবার, দুধের গ্লাসটা তুলে দিচ্ছি। ছেলেটিকে খেলতে পাঠাচ্ছি অনায়াসে, অথচ মেয়েটিকে, সে যদি ছেলেটির চেয়ে বয়সে ছোটও হয়, তাকে বলছি ঘরের কাজে হাত লাগাতে। কেন? এটা কি বৈষম্য নয়? এতে করে আপনার ছেলেটি কি কোনোদিন মেয়েদের সম্মান দিতে শিখবে? বড় হয়ে ওরাই কি মেয়েদের উত্যক্ত করবে না, বলুন?
অথচ আমরা যদি ছোট থেকে ছেলে-মেয়েকে এক চোখে দেখতাম, যদি সান্নিধ্য, সাহচর্য দিয়ে, তাদের সাথে প্রাণখুলে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতাম, গল্প করতাম, বয়ঃসন্ধিতে বন্ধু হতাম-তাহলে হয়ত তাদের প্রতি আমাদের কঠোর হতে হতো না। প্রয়োজন হতো না গায়ে হাত তোলার, বকাঝকা করার। আর আমাদের কারো কারো সন্তানও হয়ে উঠতো না নিষ্ঠুর, সহিংস এবং পিতৃতন্ত্রের প্রতিভূ।


 

চৈতন্য সন্দেশ এপ্রিল-২০২২ প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।