জীবন: বাস্তবতা বনাম কৃত্রিমতা

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২১ | ১২:৩৬ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ | ১২:৩৬ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 174 বার দেখা হয়েছে

জীবন: বাস্তবতা বনাম কৃত্রিমতা

সদাপূত দাস : লস্ আলমাস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরী হতে আগত নিউ মেক্সিকোতে একদল বিজ্ঞানী ‘কৃত্রিম জীবন’ এর উপর একটি কনফারেন্সের আয়োজন করেন। ঐ কনফারেন্সের মূল উপজীব্য বিষয় ছিল-‘জীবনের তথা প্রাণের সারকথা জৈবিক পদার্থের মধ্যে নয় বরং প্যাটার্নযুক্ত অর্গানাইজেশনের মাঝে নিহিত।’ অর্থাৎ-জীবন, জীবন থেকেই নয় বরং জড় থেকেই উদ্ভূত হবে। যদি এ ধারণাটি সঠিক হয় তাহলে জীবন সম্পর্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তিত ধারণার সৃষ্টি হবে। এর ফলে জড় উপাদানের মাধ্যমে জীবন সৃষ্টি করতে আমরা সক্ষম হবো। বিশেষ করে, একটি কম্পিউটারের যান্ত্রিক কার্যপ্রণালীর মাধ্যমে আমরা জীবন বের করতে সক্ষম হবো। কনফারেন্সের আয়োজকরা, যারা ত্রিশের দশক ও চল্লিশের দশকে প্রথম দিকে আকস্মিকভাবে বলেন যে, কৃত্রিম কম্পিউটার ভিত্তিক জীবন বিকশিত হবে এবং পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।
এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, মানব সভ্যতায় জীবনের এমন একটি বির্তনের সূত্রপাত হবে, যার মাধ্যমে আমাদের পূর্বপুরুষদের সমস্ত ধ্যান-ধারণার আমূল পরিবর্তন সূচিত হবে। তারা পরামর্শ দেন যে, এই ধরনের বিবর্তনের অগ্রগতির মাধ্যমে প্যারাকিয়াল অ্যানথ্রোপোসেন্ট্রিজমকে অতিক্রম করা উচিত এবং উন্নত জীবনকে স্বাগত জানানো উচিত।
তবে উপস্থিত কিছু কিছু বিজ্ঞানী সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে, কম্পিউটারের চলমান প্রোগ্রামকে সঠিকভাবে জীবিত বলে মনে করা আদৌ সমীচিন হবে কিনা। তাদের মধ্যে একজন দার্শনিক এলিয়েট সোবার যুক্তি দিয়েছিলেন যে, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা যখন একটি প্রোগ্রাম তৈরি করবে তার মাধ্যমে কৃত্রিমতা ব্যতীত কোনো জীবন্ত কিছুর অস্তিত্ব ঘটতে পারে তেমনটি অনুমান করা যুক্তিযুক্ত নয়। ম্যাসাচুসেটস্ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কম্পিউটার বিজ্ঞানী টমাসো টকোলি এই যুক্তির প্রতি সমর্থ দিয়ে বলেন যে, কৃত্রিম মানুষ একটি কৃত্রিম ব্রীজের উপর দিয়ে কৃত্রিম গাড়ি চালাচ্ছেন, যদি ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ে তাহলে ঐ কৃত্রিম মানুষও মারা যাবে।
নীতিগতভাবে কম্পিউটার একটি বাস্তব বস্তুগত দৃশ্যের জীবন প্রদর্শন করতে সক্ষম হলেও সেটি শুধুমাত্র সিমুলেশন। অবশ্যই কম্পিটারগুলি একটি একক প্রসেসরের সাথে কাজ করে, কিন্তু বাস্তবতার সাথে মেলে না। কিন্তু টকোলি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে শক্তিশালী কম্পিউটার মাইক্রোমিনিচার প্রসেসরগুলি অসংখ্য তীরের স্ফটিক সমৃদ্ধ অ্যারো নিয়ে গঠিত হবে, যা আকারে প্রায় পারমাণবিক। তিনি ঐ ধরণের কম্পিউটারগুলোকে ‘প্রোগ্রামযোগ্য বিষয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
যদি জীবন কম্পিউটার সিমুলেশন, কম্পিউটেশনাল স্টেটের একটি সিরিজ হয় তাহলে জীবনও অবশ্যই অবাস্তব হবে। কতগুলো শব্দ যেমন-ফুল, ফল, কুকুর, শুকর এবং মানুষ। কেবলমাত্র নাম ও প্রতীক যা আমরা পদার্থের সাথে সংযুক্ত করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি বৈদিক ব্যাখ্যা নয়। শ্রীমদ্ভাগবতের একাদশ স্কন্ধে শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে বলেছেন, বস্তুগত দেহের স্থ’ল ও সূক্ষ্মরূপগুলির নিজস্ব কোন অস্তিত্ব নেই; এগুলি পরম সত্য দ্বারা প্রকাশিত অস্থায়ী নিদর্শন। শ্রীকৃষ্ণ এই ধারণাকে একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন-“স্বর্ণ-নির্মিত বস্তু নির্মাণের পূর্বে স্বর্ণই থাকে, সেই নির্মিত বস্তুগুলি নষ্ট হয়ে গেলেও স্বর্ণ থেকে যায়; আবার বিভিন্ন নামের মাধ্যমে ব্যবহৃত হওয়ার সময়েও সেগুলি মূলত স্বর্ণই থাকে। তেমনই, ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টির পূর্বে, তার ধ্বংসের পরে এবং স্থিতিকালেও একমাত্র আমি বর্তমান থাকি।” ভা-১১/২৮/১৯ “যার অস্তিত্ব পূর্বে ছিল না, ভবিষ্যতেও থাকবে না এবং এই দুটির মধ্যবর্তী সময়েও যার অস্তিত্ব থাকে না, তবে তার শুধুমাত্র বাহ্যিক উপাধিমাত্র বর্তমান থাকে। আমার মতে অন্য কিছুর দ্বারা যা-কিছুই সৃষ্ট এবং প্রকাশিত হয়, বাস্তবে সেটি হচ্ছে অন্য কিছুমাত্র।” ভা-১১/২৮/২১ চলমান…


 

চৈতন্য সন্দেশ নভেম্বর-২০২১ প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।