জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণহীন প্রণয় বৃত্তি সমাচার

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২১ | ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২১ | ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 331 বার দেখা হয়েছে

জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণহীন প্রণয় বৃত্তি সমাচার

আগত শিশুকে অনাগত রাখতে যে অনাচার

ড. এডিথ ই. বেস্ট (উর্মিলা দেবী দাসী)

নির্মমতার সীমা ছাড়ানাে নির্যাতনেও যারা নির্বাক! দুঃখ বলতে পারে না, আসুন, তাদের জন্য সােচ্চার হই, বলি, “এমন হতে দেব না।

উর্মিলা দেবী দাসী

জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি গ্রহণের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনের কার্যক্রম ইতােমধ্যে প্রসার লাভ করেছে। কিন্তু এর যে মূল কারণ নিয়ন্ত্রণহীন প্রণয়বৃত্তি, তা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম গ্রহণে রয়েছে সকলের অগাধ অনীহা। ব্যাপারটা এমন যেন “যথেচ্ছ প্রণয়বৃত্তি চালিয়ে যাও, কিন্তু তার বাঞ্চিত ফল সহ্য করাে না।” যাই হােক এই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কতটুকু সফলতার মুখ দেখেছে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও, এটি যে বহু সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে তা নিয়ে কেউ দ্বিমত পােষণ করেন না। গর্ভনিরােধের পক্ষের প্রচারকারীরা দাবি করে, এই ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বহু সামাজিক সমস্যা সমাধান হবে। সত্যিই কি তাই?

তের বছরের বীণা তার নীরবতা ভাণ্ডল। “হেমত্তী, আমি ছিলাম একজন জন্ম-নিয়ন্ত্রণকৃত্ত শিশু। জন্ম-নিয়ন্ত্রণকৃত শিশু? আমি এই শব্দ কখনাে শুনিনি। আমার মা-বাবা গর্ভনিরােধে যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। গ্রহণ করেছিল। সেটি কাজ করেনি, ফলে আমার জন্ম। তার মানে তুমি তােমার পিতা-মাতার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলে ? বীণা, নিরুত্তর। হতাশ অবস্থায় সে কুঁজো হয়ে বসে পড়ল। হৈমন্তী বিছানা পার হয়ে তার কাঁধে হাত রাখল। আমি সত্যিই দুঃখিত, আমি জানি না, কেন আমি এসব আজে বাজে কথা বলছি। এরপর অনেকক্ষণ কেটে গেল। তার চিন্তাগুলাে পারিবারিক ঘটনাপ্রবাহের দিকে ধাবিত হতে লাগল….
বীণা নম্র সুরে বলল। হৈমন্তী তুমিই সঠিক ছিলে। কোন না কোনােভাবে আমি পরিবারের অনাকাঙ্ক্ষিত দৈব দুর্ঘটনা মাত্র। হৈমন্তী তখন ঘুমে। বীণা অনুভব করতে চেষ্টা করছিল, হৈমন্তী জেগে থাকলে কি বলত। উত্তর যেন তার জানা। সে এখন বুঝতে পারছে তার মায়ের সেই মমতাচ্ছন্ন চোখের গভীরে কি রকম ছলনা লুকিয়ে ছিল। যখন তার মা তার দিকে তাকাত…..। না, বীণা আর ভাবতে পারছিল না। অশ্রুসজল চোখের অসার পাতা দুটো ধীরে ধীরে এক হয়ে গেল। তন্দ্রার রাজ্যে হারিয়ে গেল বীণা।
(এটি নর্ম ফ্রক্স মেজারের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘A Figure of speech’-এর ৪৪পৃ: একটি অংশ)
ব্যবিচারিত শিশু, মমতাহীন শিশু, অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু, পরিত্যক্ত শিশু এই শিশুগুলাের ছবি একবার কল্পনা করুন। যেকোনাে হৃদয়বান ব্যক্তির হৃদয় কম্পিত হবে গভীর বেদনায়। তাহলে এর থেকে মুক্তির উপায় কি কি উত্তর দেবে বর্তমান প্রযুক্তি জন্ম নিয়ন্ত্রণ! রাজনৈতিক নেতা, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এমনকি তথাকথিত ধর্মীয় নেতারা পর্যন্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায় মেটানাের সমাধান হিসেবে গর্ভনিরােধক ব্যবস্থা অথবা ব্রণ হত্যার মত অপরিশীলিত ও অনৈতিক ক্রিয়াকে সমর্থন দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন আমরা নৈতিকতা বিবর্জিত হয়ে গর্ভনিরােধক বা ভ্রণহত্যার মত বিষয়কে সমস্যার সমাধান হিসেবে চিহ্নিত করি এবং উপকারী হিসেবে এই পদ্ধতিগুলােকে পর্যবেক্ষণ করি তখন আমরা বিস্ময়করভাবে আশাহত হই। কেননা পদ্ধতিগুলাে যদিও উপকারী ভাবা হয়েছিল সেগুলাে তার বিপরীত ফল দিতে শুরু করল।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে প্রহাদ মহারাজের একটি উদ্ধৃতি ছিল যে “এই জড় জগতের সমস্যা নিরসনে সমাধানটি সমস্যার চেয়েও বেশি বেদনাদায়ক।” বর্তমান জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি সেই নীতিই প্রতিফলক।
আসুন দেখি গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা ও দ্রুণহত্যার গত জনানিয়ন্ত্রণ কৌশল গ্রহণের পক্ষে যে প্রচলিত অজুহাতগুলাে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়!
* আর নয় কোনাে অনাকাঙিক্ষিত শিশু।
* সব শিশুরা বেড়ে উঠুক নির্জঞ্জাট ও স্নেহময় পরিবেশে
* নারী সম্মান ও স্বাধীনতা
* নারী স্বাস্থ্য
* অতিরিক্ত অর্থব্যয় হ্রাস
* গ্রহের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ

আর নয় কোনাে অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু

জন্মনিয়ন্ত্রণ ও দ্রুণহত্যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল অনাকাঙ্ক্ষিত অনাগত শিশুকে এই পৃথিবী হতে অপসারণ করা। কিন্তু বিশ্বব্যাপী জন্মনিয়ন্ত্রণ ও দ্রুণ হত্যার মত কর্মকাণ্ডের ব্যাপক বিস্তৃতি সত্ত্বেও প্রমাণ বলছে অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু সমস্যা সমাজকে এখনাে আগের চেয়েও বেশি পীড়িত করে।

নির্মমতার সীমা ছাড়ানো নির্যাতনেও যারা নির্বাক! দুঃখ বলতে পারে না, আসুন, তাদের জন্য সোচ্চার হই, বলি, “এমন হতে দেব না।”

Essay Right Reason g Willian F. Buckly.jr.. লিখেছেন “জন্মনিয়ন্ত্রণ কৌশল সম্পর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি প্রায়ােগিক ব্যবহারের সুলভ্যতাই অবৈধ সন্তান বৃদ্ধির প্রধান কারণ”। উদাহরণ স্বরূপ সুইডেনে বিবাহ বহির্ভূতভাবে সন্তান উৎপাদনের হার দ্রুত ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে এই হার প্রায় ৫২ শতাংশ এবং আমেরিকায় ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে অবৈধ সন্তান উৎপাদনের হার প্রায় ৪৫০ গুণ বেড়েছে। অনেকেই হয়তাে ভাবতে পারে জন্ম নিয়ন্ত্রণও ভ্রণ হত্যার সরঞ্জাম, এমনকি কিশাের-কিশােরীসহ সবার কাছে অনেকটা সুলভ হওয়ায় বিবাহিত দম্পতি চাইলেই তারা সন্তান গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সেটি প্রকৃত দৃশ্য নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু জন্ম তারপরও ক্রমবর্ধমান। তার প্রধান কারণ তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা এবং ৮১ শতাংশ ফিজিশিয়ান তাদের জরিপে এই বিষয়ে সহমত পােষণ করেছে যে, শুধুমাত্র গর্ভনিরোধক প্রযুক্তির সুলভ্যতাই তরুণ তরুণীদের অনৈতিক প্রণয়বৃত্তি পরিবর্ধনের প্রধান কারণ। (A Pietrointo, “A Survey on contraceptive analysis” Medical Aspect of Human Sexuality, May 1987 pg 147)
এই জরিপে বলা হয়েছে, যে সকল তরুণ তরুণী জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানে তারা যারা জানে না তাদের থেকে ৫০ শতাংশ বেশি প্রণয়বৃত্তিজনিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। (Louis Harris and Associates, ‘American teens speak : sex Myths, TV and Birth Control’ Harris and Associates for planned parenthood of America, Inc, 1986, p 53)
The Respect Curriculum এর লেখক কোলিন মাস্ট বিষয়টিকে কীভাবে আগুন লাগানাে যায় এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়ার সাথে তুলনা করেছেন। এই ধরনের শিক্ষা নিঃসন্দেহে বিভিন্ন বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানাের প্রবৃত্তিকে উৎসাহিত করবে।
তাই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া বা গর্ভনিরােধ ব্যবস্থার মত কিছু সীমাবদ্ধ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কখনাে স্থায়ী সমাধান নয় বরং এটি অবৈধ প্রণয়বৃত্তিকে উৎসাহিত করে। গর্ভ নিরােধক ব্যবস্থা কখনােই দারিদ্র সমস্যা, অজ্ঞতা, নেশাসক্তি এবং নিয়ন্ত্রণহীন প্রণয়বৃত্তি চরিতার্থ করার দরুন যে অবৈধ সন্তান উৎপাদনের হার বৃদ্ধি এই বিষয়ের সমাধান দিতে পারেনা। প্রকৃতপক্ষে লােকেরা ভাবতে শুরু করছে জন্মনিরােধক ঔষধ বা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে তারা সামাজিক দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে অবাধ প্রণয়বৃত্তি অব্যাহত রাখতে পারবে। আবার কেউ কেউ এটিকে নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করছে।

সব শিশুরা বেড়ে উঠুক এক নিষ্কন্টক ও  স্নেহময় পরিবেশে

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ও গ্রহণযােগ্যতা পরিবর্ধনের সাথে সাথে বর্ধিত হয়েছে বিবাহ-বিচ্ছেদ পরিত্যক্ত শিশু বৃদ্ধি, অবৈধ শিশু বৃদ্ধি, শিশু ব্যভিচার। কমপক্ষে আমেরিকার অর্ধেকেরও বেশি শিশু বেড়ে ওঠে পিতৃ-মাতৃহীনভাবে অর্থাৎ তাদের ক্ষেত্রে হয় পিতা থাকে না অথবা মাতা থাকে না। কমপক্ষে ১০ লক্ষ শিশুপ্রতিবছর পিতামাতার বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে অনাথ হয়। আবার আমেরিকায় ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শিশুর প্রতি ব্যভিচার ও শিশুকে পরিত্যাগ করার হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। শিশুকে ব্যভিচারিত করে শরীর ও মনকে মারাত্মকভাবে আহত করা ও তাদের জীবনকে বিপন্ন করার মত ঘটনা বেড়েছে প্রায় চারগুণ।

জাতিসংঘ (UNO) বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থ্যা (WHO) যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা (RCOG) আমেরিকান গবেষণা সংস্থা (ACOG) এর মত বড় বড় গবেষণা সংস্থাগুলো এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে যে, গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা নারীদের হতাশা বৃদ্ধি করে।

এই ধরনের প্রকৃতি বিরুদ্ধ ‘পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে শিশুর বেড়ে ওঠা মানে পারিবারিক অস্থিতিশীলতা এবং শিশু ব্যভিচার। তাই এই সমস্যার জন্য এই ধরনের পরিকল্পনা কোনাে সহজ সমাধান নয়।
যদি আমরা জিজ্ঞাসা করি “কেন শিশুরা আজকের দিনে একটি স্থিতিশীল পরিবারে স্নেহ ও ভালবাসার সাথে বেড়ে ওঠে না? এবং কেন পিতা-মাতারা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে? তার উত্তর সবক্ষেত্রে প্রায় এক। পিতা-মাতারা মনে করছে প্রণয়বৃত্তি প্রজননের বা সন্তান উৎপাদনের মাধ্যম নয় বরং বিনােদনের মাধ্যম। তাহলে কেন তারা তাদের প্রমােদ ক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটানাে দুর্ঘটনার দ্বারা প্রাপ্ত সন্তানকে এত বেশি স্নেহ প্রদর্শন করে? কেন “শিশু নামক দুর্ঘটনা” তাদের সামনে উপস্থিত হয়? কেননা গর্ভনিরােধক ব্যবস্থা গ্রহণের পরেও শতকরা ১০-১৩% নারীর ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা হবার আশংকা থেকে যায়।

(Family Planning perspective. Oct. 1980 P236)

গর্ভনিরােধ ব্যবস্থা স্বার্থপর মনােভাবের বহিঃপ্রকাশ

তারা আনন্দ চায় কিন্তু দায়িত্ব নিতে চায় না। তারা চায় না সেই আনন্দকে স্নেহের রূপ দিতে। অনেকেই বিতর্ক তুলতে পারে যে, পিতামাতারা দায়িত্ববান বলেই গর্ভরােধক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কেননা তারা নির্ধারিত সময়ে, নির্দিষ্ট সংখ্যক সন্তান প্রতিপালনের পরিকল্পনা করে রেখেছেন। কিন্তু এটি কি প্রতিষ্ঠানে চৌর্যবৃত্তিতে জড়িত কর্মকর্তার নিজেকে সবচেয়ে সৎ কর্মচারী বলে দাবি করার সামিল নয়? সম্ভবত তারা “নির্ধারিত ভালবাসার চর্চা করছেন, কিন্তু তাদের এহেন কর্ম আমাকে প্রকৃতির একটি অস্বাভাবিক সৃষ্টি কাঁকড়া-বিছা খাদক ইঁদুরের কথা মনে করিয়ে দেয়। এরা কাকড়া বিছা মেরে খায়। এই ধরনের ইঁদুর বিষধর কীট খাওয়ায় তাদের বিষ প্রতিরােধ ক্ষমতা খুব বেশি। কখনাে কখনাে তারা অন্য ইদুরদেরও খেয়ে ফেলে এমনকি নিজের ইদুর ছানা কে। আবার এই প্রজাতিটিই পৃথিবীর প্রাণিরাজ্যের সবচেয়ে বেশি কালে প্রাণি যে দিন-রাত কান্না করে যদি সেটা এলে ভাল ছানা খেয়ে ফেলে। এই ধরনের ক্রিয়া (মায়াকান্না) অন্যের কল্যাণার্থে স্বার্থপরতাহীন কোনাে কর্মকাণ্ড নয় বরং উচ্চমাত্রার স্বার্থপরতারই বহিঃপ্রকাশ।
স্বার্থপরতা যদি আমাদের ভালবাসার ভাব হয়। তখন আমার পূর্ববর্তী প্রিয়তম ব্যক্তিকে পরিত্যাগ বা অগ্রাহ্য করে সর্বোচ্চ কামনা বাসনা পূরণ করতে পারে এমন ব্যক্তিকে নিয়ে প্রমােদ ক্রিয়ায় উন্মত হয়ে ওঠি।

যারা জানেন, এই সন্তানগুলো কৃষ্ণেরই সন্তান তাদের কাছে সন্তান প্রতিপালন বোঝা নয়, বরং কৃষ্ণের প্রতি অপ্রাকৃত সেবা। তাই তাদের সন্তানেরা বেড়ে ওঠে অগাধ স্নেহে, অপরিসীম আনন্দে।

যারা অন্তঃসত্ত্বা হওয়া রােধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা যেমন সার্জারি, যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন, তারা তাদের মানসিকতাকে এই পর্যায়ে উত্তীর্ণ করেছেন যে, তাদের শরীর ও তাদের শরীর আরেকটি রক্তমাংসের শরীরকে তারা পলমেখ্বরের উপহার মনে করেন না, এমনকি সন্তান প্রতিপালন যে পরমেশ্বরের প্রতি সেবা সেটাও তারা মানতে চান না বরং তারা মনে করেন তাদের শরীর তাদের প্রমােদক্রীড়া প্রতিবিধানের নিমিতেই প্রতিষ্ঠিত।
এই গর্ভনিরােধক ব্যবস্থা গ্রহণকারীরা মনুষ্য সম্পর্কিত পরমেশ্বরের পরিকল্পনাকে এতটায় অবজ্ঞা করে যে, তাদের কর্মটি প্রকৃতির স্বাভাবিকতারও বিপরীত। ভাদের শরীরের সাথে যুক্ত অখণ্ড দায়িত্বটিকে তারা খুন করে। কিন্তু যখন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সেই দায়িত্বটি শিশু সন্তানের কাঠামাে লাভ করে তখন সেই শিশুর প্রতিও তাদের একই প্রকার বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং তাকে অপসারণের জন্য জঘন্য পদক্ষেপ গ্রহণেও তারা পিছপা হন না। গর্ভনিরােধক ব্যবস্থা মানে পরমেশ্বরের সাথে প্রতারণার সামিল। এটি করতে গিয়ে তারা তাদের বাঞ্চিত পন্থায় অন্তর্ঘাতি পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এটি একটি চৌর্যবৃত্তির মত। শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়ই বলতেন, কৃষ্ণই সবচেয়ে বড় চোর। কৃষ্ণকে কেউ প্রতারিত করতে চাইলে সে নিজেই পারমার্থিক জীবন ও আনন্দ হতে প্রতারিত হয়ে যায়। যেমন করে প্রতারক ব্যক্তিকে তার সহকর্মীরা বিশ্বাস করে না এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে তাড়িয়ে দেয়।
অনেকেই হয়তাে পুনরায় এই বিতর্ক তুলতে পারেন যে, ব্যভিচার, বিবাহ বিচ্ছেদ, অস্থিতিশীল এবং আরাে অনেক সমস্যাগুলাে যদি বেড়ে যায় তবে কেন তারা কৃত্রিমভাবে অতিরিক্ত সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন না? পরিষ্কারভাবে বললে, বেশি বেশি সন্তান গ্রহণ করা মানেতাে তাদের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ নয়। হ্যাঁ, সত্যিকার পারমার্থিক উপলব্ধি ব্যতীত সকল সম্পর্কের মধ্যেই কম বা বেশি স্বার্থপরতা থাকে। কিন্তু গর্ভনিরােধক ব্যবস্থা বা ভ্রুণ হত্যা পরমেশ্বরের পরিকল্পনা, পারমার্থিক জীবন, সত্যিকার ভালবাসা, স্বার্থপরতাহীনতা ইত্যাদির প্রতি এতটায় পরিপন্থি যে সেটি উন্নয়নের কোনাে সুযােগ নেই। যে জীবনে বা দম্পতিরা প্রণয়বৃত্তিকে প্রজনন বা সন্তান উৎপাদনের ভিত (প্রমােদ নয়) হিসেবে গ্রহণ করেন, কেবলমাত্র তাদের মধ্যেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ ও সত্যিকার ভালবাসা বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

নারীর জন্য আরাে স্বাধীনতা ও শ্রদ্ধাবােধ ?

বিশ্বব্যাপী গর্ভনিরােধক ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণেই নারীরা দিনদিন ক্রমবর্ধমান হারে দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন প্রণয়বিকৃত পুরুষদের লাঞ্চনার শিকার ক্রীতদাসীতে পরিণত হচ্ছে। পূর্বে যদি কোনাে নারী বিবাহ বহির্ভূতভাবে অন্তঃসত্ত্বা হতাে তবে তার হাতে কতগুলো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযােগ থাকত। সে চাইলে তার অন্তঃস্থ শিশুর পিতাকে বিবাহ করতে পারত। অথবা শিশুটিকে একা প্রতিপালন করতে পারত। অথবা নিঃসন্তান দম্পতিকে সে তার সন্তান দত্তক দিতে পারত। যদি সেই নারী সন্তানের পিতাকে বিবাহ করতে চাইত তবে তার পিতা-মাতা, সম্প্রদায়, তাকে নৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রেষিত করত। কিন্তু বর্তমানে বয়ফ্রেন্ড, পিতা-মাতা এমনকি স্বামী পর্যন্ত সেই নারীকে চাপ প্রয়ােগ করে তার গর্ভস্থ সন্তানদের হত্যা করতে। ধারণাটি এমন যেন “তারা অলিখিতভাবে একটি চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করেছে যে নারীটি তাদের প্রণয়ের ফল হিসেবে কোনাে সন্তানকে অনুমােদন করবে না। তাহলে কেন তাদের প্রণয় প্রমােদের প্রতিবন্ধক (শিশু) দৈব দুর্ঘটনার দায় তারা নেবে?


গর্ভনিরোধক (COC) গভর্নিরোধক ঔষধের উপর পরিচালিত কিছু সাম্প্রতিক গবেষণা

• ১৯৯২ সালে ফ্রান্সে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৫০% নতুন ব্যবহারকারী Break through bleeding এবং amenorrhea রোগের কারণে গর্ভনিরোধক ঔষধ গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছেন।
২০১২ সালে U.S. ফুড এন্ড ড্রাগ এমিনেস্ট্রশন কর্তৃক প্রায় ৮,০০,০০০ নারীর উপর পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা ব্যবহারকারীদের, অব্যবহারিকারীদের তুলনায় রক্তজমাট বাধা রোগ venous thromboembolism হওয়ার আশংকা প্রায় ৬০০% বেশি। এই রোগ এতটা ভয়ংকর যে, রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সেই সাথে তারা উপহার হিসেবে পাবেন Cardio-Vasculas রোগ। যেটি অতিরিক্ত ধুমপায়ী ও মদ্যপায়ীদের হয়ে থাকে। তাই গবেষকগণ উপসংহারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন ৩মাস ধরে যারা গর্ভনিরোধক গ্রহণ করছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ৯৩% যারা ৭-১২ মাস ধরে ব্যবহার করছেন তাদের ২৯০%।
• ২০০৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সী ফর রিসার্চ (IARC) সতর্ক করে বলেছে COC ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার গলদেশে ও লিভারের ক্যান্সারের ঝুকি আশংকাজনক।
বিশ্বের বড় বড় খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেমন WHO (World Health Organization) American ACOG, United Kingdom’s RCOG সকল তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই বিষয়টি শর্তহীনভাবে স্বীকার করেছে যে COC গ্রহণ নারীদের মধ্যে বেদনাদায়ক হতাশ ও বিপর্যস্ততা নিয়ে আসে। তাই গর্ভনিরোধক ব্যবস্থার বিপক্ষে আপত্তি জানিয়ে বহু ডাক্তার আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। বিখ্যাত সাংবাদিক বারবারা সীম্যানের সংকলিত গ্রন্থ “The Doctors case against the pill” এ সন্নিবেশিত আছে।
• ২০০৬ সালে ১২৪ জন নারীর উপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সমস্ত মহিলারা গর্ভনিরোধক পিল গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে Sex hormone binding globuin (SHBG) যারা ব্যবহার করেনা তাদের চেয়ে চার গুণ বেশি বৃদ্ধি পায়। সাধারণত তাত্ত্বিকভাবে এই বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হয়তো মানসিক একটি সমর্থন রয়েছে। তারপরও এই অযাচিত বৃদ্ধি অন্যান্য হরমোনগুলোর বৃদ্ধির পথে অনাবশ্যক বাধা সৃষ্টি করে।
পরিবেশে প্রভাব : গর্ভনিরোধ ব্যবস্থাগ্রহণকারী নারীর বর্জ্য অবস্থিত estrogens, estore (EI) এবং estradiol (E2) এবং Synthetic estrogen ethiny restradiol (EE2) এই হরমোনগুলো যখন নালা, খাল হয়ে নদীর জলে মিশে সেগুলো আরেক ধরনের গর্ভনিরোধক ব্যবস্থার সৃষ্টি করে যার প্রভাব পড়ে জলজ প্রাণী, মাছ, জলজ উদ্ভিদ সমূহের উপর। যেটি endorine disruption এর কারণ। সেটি জল প্রাণীসমূহের জৈবিক উন্নয়ন ও প্রজননকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বৃটেনের নদীগুলোতে হরমোনের মারাত্মক প্রবৃদ্ধির দরুন সেখানকার মাছে আন্তঃপ্রজনন ব্যাহত হয়ে বহু বুনো মাছের প্রজাতি প্রায় বিলুপ্তির পথে। অনেক
ক্ষেত্রে স্ত্রী মাছগুলো প্রায় পুরুষ মাছে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।


মেরি প্রাইড, যিনি পারিবারিক মূল্যবােধ ফিরিয়ে আনতে বহু বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি তার একটি প্রবন্ধে লিখেছেন “গত তিন দশক ধরে আমাদের সমাজ দায়িত্ববােধ এবং সন্তান প্রতিপালনের যে আনন্দ সেটি থেকে প্রণয়বৃত্তিকে আলাদা করে দিয়েছে। :..একজন নারী যে প্রাথমিকভাবে গৃহিত হত মা হিসেবে এবং সে কারণে সে সমাজের কাছে পবিত্র ছিল। কিন্তু এখন আমরা কি দেখছি তাদেরই ব্যবহার করা হচ্ছে প্রণয়বিকৃত পুরুষদের প্রণয় আকাঙ্ক্ষা প্রশমনের যন্ত্র হিসেবে। আপনি বিভিন্ন ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপনের বিলবাের্ড, টিভি, দোকান, সব জায়গায় দেখুন সেখানে জিন্স থেকে শুরু করে টুথপেস্টের বিক্রি বাড়াতে চলছে নির্বিচারে নারীর শরীর প্রদর্শনী। এটি নারীদের কোনো ধরনের স্বাধীনতা ও শ্রদ্ধাবােধের জায়গায় উত্তীর্ণ করছে?

(The way home, P. 30)
যে নারীরা গর্ভনিরােধ ও ভ্রুণণহত্যার মত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তারা মনে করেন এর মাধ্যমে তারা স্বাধীনভাবে তাদের ক্যারিয়ার অন্বেষন করতে পারবেন। কিন্তু এটি কি সত্যিকারের স্বাধীনতা? সত্যিকার স্বাধীনতা আসে ভগবানকে ভালবাসা ও সেবার মাধ্যমে। একটা সন্তান বা বহু সন্তান থাকা এই প্রেমময় স্বাধীনতার প্রতিবন্ধক হয় না। পাশাপাশি একজন নারী গর্ভনিরােধ ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং প্রণয় বাসনার উপর নিয়ন্ত্রণ আরােপ করে তার সত্যিকার স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে। কিন্তু গর্ভনিরােধক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভ্রুণ হত্যার মাধ্যমে তারা নিজেদের স্বার্থপর ও মনােদৈহিক কামদাসী হিসেবে প্রতিপন্ন করছে।

নারী স্বাস্থ্যের উন্নয়ন

আমরা বলি, ‘অতিরিক্ত সন্তান, দেরীতে সন্তান গ্রহণ, জীবনে বেশির ভাগ সময় গর্ভধারণ কালীন সময়ের মধ্যে থাকা ইত্যাদি নারী স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর। কিন্তু সত্য ঘটনা হল সন্তান থাকলে ও প্রতিপালন করলে নারীরা অনেক স্ত্রীরােগ হতে মুক্তি পেতে পারেন। যেমন-একজন নারী যদি সাত বছর ধরে সন্তানকে স্তনদান করেন তবে তার স্তন ক্যান্সারের ঝুকি শূন্যতে নেমে আসে। বেশির ভাগ নারী যারা প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন ক্যান্সারে ভােগেন, তাদের বেশির ভাগই সন্তান ধারণ না করা বা কম সন্তান গ্রহণের কারণে এই সকল রােগে আক্রান্ত হন। বহু স্ত্রীরােগ সংঘটিত হয় গর্ভনিরােধক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে। এছাড়া ভ্রুণ হত্যা শুধু শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয় সেটি অনেক মাকে সারাজীবন ধরে মানসিক সমস্যাতে ভােগায়। অবশ্যই, পৃথিবীর অন্যান্য বহু ঘটনার মত গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু এই ঝুঁকি আমাদের সর্বোত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরমেশ্বরের আনন্দ বিধানে কর্ম থেকে নিবৃত্ত করতে পারে না। যারা অবৈধ প্রণয় প্রমােদ ক্রীড়া অবাধ রাখতে চায় তারা অর্থ, স্বাস্থ্য, সম্মান, প্রপত্তি পর্যন্ত জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠাবােধ করে না। এমনকি দুরারােগ্য ব্যাধি এইডস্ পর্যন্ত প্রবল কামবাসনা হতে তাদের নিবৃত্ত করতে পারে না। তাহলে আমরা কেন ভগবানের জন্য এই সামান্য আত্মত্যাগ করতে আগ্রহী হবাে না?

পরিবারের আর্থিক চাপ?

এটি একটি সাধারণ ধারণা যে, বর্তমান সমাজে সন্তানকে আশীর্বাদ ভাবার চেয়ে বরং পরিবারের সমস্যা মনে করে থাকেন। পরিবারের বােঝা মনে করা হয় তাকে। মনে করা হয়, সে পরিবারের সম্পদ ভােক্তা। অনেক অপচয়কারী অন্যদিকে, পিতা-মাতা তাদের সন্তানকে পরমেশ্বরের আশীর্বাদ বহুক্ষেত্রে, সমৃদ্ধি এমনকি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ধারক বাহক মনে করে থাকেন। সন্তান গ্রহণে অনিচ্ছুক পিতা-মাতা সন্তানের বােঝা হতে পরিত্রাণ পেলেও তাদের অনিয়ন্ত্রিত উচ্চাভিলাষ ও কামনা বাসনার দরুন কঠোর পরিশ্রমের বােঝা কাঁধে নিতে হয়।
সন্তানকে প্রতিপালনে তাদের অর্থ ব্যয় হওয়ার পরিবর্তে তাদের অর্থ অপ্রয়ােজনীয় গাড়ি, ছুটি কাটানো, বড় পর্দার টিভি ক্রয় ইত্যাদিতে ব্যয় হয়ে যায়। এই ধরনের আনন্দ সন্ধানে অর্থ যােগান দিতে যে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তা কি সন্তান প্রতিপালনের কষ্ট হতে কম কষ্টসাধ্য? এই জীবন কি তাদের ভাল মানুষে পরিণত করতে উৎসাহিত করবে? 
হ্যাঁ, একটি শিশু প্রতিপালনে অর্থ, সময়, সামর্থ্য ইত্যাদি ব্যয় হয়। কিন্তু এ জীবনতাে স্বার্থপরভাবে শুধু নিজের জন্য নয় এতে কিছু দায়িত্ব রয়েছে, রয়েছে কিছু আত্মত্যাগও। যে ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রম করেন তিনি তার পুত্রকে প্রতিপালন করেন কৃষ্ণের কৃপা ও সন্তুষ্টির সাথে।

পৃথিবীর জনসংখ্যার বােঝা হ্রাস ?

অনেকেই প্রশ্ন তােলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ না করলে প্রত্যেক পরিবারে ডজন ডজন সন্তান হবে। কিন্তু এখনাে পর্যন্ত যে সমস্ত সমাজে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার প্রচলিত নয় তাদের পরিবারে সন্তানের গড় ৬ জন। প্রত্যেক পরিবারে ছয়জন সন্তান পৃথিবীতে হয়তাে অনেক বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে যে জনসংখ্যা আছে তাদের প্রতি ১৫০০ বর্গফুটে ১ জন এই সমতায় ফ্রান্স কিংবা টেক্সাসেই জায়গা দেয়া সম্ভব। এছাড়া আমেরিকানদের খাদ্য গ্রহণ প্রণালী অনুযায়ী পৃথিবীতে উৎপাদিত খাদ্যশস্য দিয়ে এই জনসংখ্যাকে দিনে দশবার করে খাওয়ানাে সম্ভব এবং জাপানের খাদ্যতালিকা অনুযায়ী একই জনসংখ্যাকে ৩০ বার খাওয়ানাে সম্ভব। (Colin Clack, Oxford University) বিশ্বের সকল শাস্ত্র আমাদের বলছে বেশি সন্তান রাখতে এবং এই শিশুরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। শুধুমাত্র বৈদিক শাস্ত্রে পৃথিবী ভারাক্রান্ত হবার কথা উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হচ্ছে, পৃথিবী কখনাে অপরাধী ও প্রতারক পাপী লােকদের দ্বারা ভারাক্রান্ত হয়। এই পৃথিবীর ভারাক্রান্ত হওয়াটি কিন্তু জনসংখ্যার দ্বারা নয় বরং অপরাধ, অব্যবস্থাপনা, অন্যায় এর দ্বারা। আবার জনসংখ্যার ভার বা অতিরিক্ত জনসংখ্যার যে কথা বলা হচ্ছে তা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি অসীম সম্পদের অধিকারী তার বাধ্যগত সন্তানের জন্য প্রয়ােজনীয় রসদ তিনি সহজেই যােগান দিতে পারেন।

বিশ্বখ্যাত অ্যাপল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ছিলেন একজন অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু ভাবুন তো… যদি স্টিভ জবস পৃথিবীর মুখ না দেখত, তবে কি আমরা পেতাম বিস্ময়কর ম্যঅক কম্পিউটারের যাদু? কিংবা সাড়া জাগানো আইপড, আইফোনের স্পর্শ।

ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :

যদিও বিভিন্ন সমস্যার মহৌষধি হিসেবে জন্মনিয়ন্ত্রণকে দাবি করা হচ্ছিল। তার কিন্তু ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
সমকামিতা : গর্ভনিরােধক ব্যবস্থা সমাজকে সমকামি হতে ও কামাতুর হতে প্ররােচিত করবে। যদি প্রণয়বৃত্তির উদ্দেশ্য সন্তান উৎপাদন না হয় তাহলে সেই প্রণয়প্রবৃত্তি কেন নারী-পুরুষে হবে? কেন পুরুষে পুরুষে বা নারীতে-নারীতে হবে না? কেন এই ধরনের অস্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে না?
ভ্রুণহত্যা : জন্ম নিয়ন্ত্রণের গ্রহণযােগ্যতা বৃদ্ধি মানে ভ্রণহত্যারও গ্রহণযােগ্যতা বৃদ্ধি। ৫০ শতাংশের বেশি নারী যারা তাদের গর্ভে উৎপাদিত ভ্রুণ অপসারণ (হত্যা) করেছেন তারা বলেছেন, তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু সেটি কাজ করেনি। ভ্রুণহত্যাও শিশু ব্যভিচারের (অত্যাচার বা হত্যার) একটি রূপ। ভ্রুণ হত্যা স্বাভাবিকভাবে শিশু ব্যভিচারের প্রবৃত্তি জন্ম দেয়। কেন শিশুকে অত্যাচার বা হত্যা করব যে আমার ব্যক্তিগত জীবন বিষময় করে তুলছে। অনেকে দাবি করে অনাগত শিশু কোনাে মানুষ নয় । কিন্তু একটি ওক গাছের ভ্রুণ কি অপরিপক্ক ওক গাছ নয়। দ্রুণটির বৃদ্ধি কেন ঘটছে কেননা তাতে আত্মার উপস্থিতি রয়েছে। যেকোনাে ভাবেই সকল প্রাণ পবিত্র সেটি মাতৃগর্ভে ভিতরেরটি হােক বা বাইরে হােক।

ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা হারিয়ে ফেলা

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি পারমার্থিকভাবে যে ক্ষতিটি করে তা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গর্ভনিরােধ ব্যবস্থা গ্রহণকারী কৃষ্ণের ডিজাইন ও পরিকল্পনাকে অশ্রদ্ধা করেন। আমি কীভাবে ঈশ্বরকে ভালবাসব, যদি তাকে শ্রদ্ধাই না করি? বরং তখন আমি ভাবি আমি আরাে বড় ঈশ্বর এবং আমিই এই পৃথিবীকে আমার মত সাজাব। কৃষ্ণের প্রতি ঈর্ষার এবং নিয়ন্ত্রণহীন বাসনাও জড় মনােভাবের প্রকাশ।

পারমার্থিক সমাধান

গর্ভনিরােধ প্রক্রিয়ার উপকারিতা প্রসঙ্গে সকল তর্ক বিতর্ক এটি প্রতীয়মান করে যে, মানুষ তার প্রণয়ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে অসমর্থ। আমরা আশা করি, বয়ষ্করা তাদের খাদ্যের প্রতি যে ক্ষুধা তা নিয়ন্ত্রণ করবে। তাহলে প্রণয়বৃত্তির নিয়ন্ত্রণে এত অনীহা কেন? অবশ্যই বর্তমান সমাজ খাবারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আত্মনিয়ন্ত্রণ পছন্দ করে না। কিন্তু কৃত্রিমভাবে প্রণয়বৃত্তি চালিয়ে যাওয়া আর কৃত্রিম খাদ্য খাওয়া একই রকম। এই খাবার সুস্বাদু হতে পারে কিন্তু তাতে কোনাে পুষ্টি বা ক্যালরি নেই। বরং এই অতিরিক্ত খাবার পাকস্থলির জীবাণু ধ্বংস প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
যারা কৃষ্ণসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছেন তারা জানেন যে, কৃষ্ণের প্রীতিবিধান ও তার পরিকল্পনায় সেবা করার মধ্যে আনন্দ আছে। তারা জানে মনুষ্য শরীরের জন্যও নির্ধারিত পরিকল্পনা রয়েছে। তাই তারা কখনাে সন্তান উৎপাদন ও প্রণয়বৃত্তির মধ্যে কোনাে পার্থক্য করেন না। কখনাে কখনাে তারা তাদের পারমার্থিক পরিপূর্ণতার জন্য এতটায় দৃঢ় যে অনেকেই ঈশ্বরের প্রীতি বিধানের নিমিত্তে ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করেন এবং বিবাহিতরাও শুধুমাত্র তখনি অপ্রাকৃত মিলনে যুক্ত হন যখন তাদের স্ত্রী কৃষ্ণের জন্য সন্তান ধারণের ইচ্ছে পােষণ করেন। সেক্ষেত্রে অপ্রাকৃত মিলনে যুক্ত হবার পূর্বে স্বামী এবং স্ত্রী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম জপ করার মাধ্যমে সকল স্বার্থপরতা ও কামনা হতে বিশুদ্ধ হন এবং এই সন্তান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত সকল ফল শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিবেদন করেন।
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, তিনি নিজে এই ধরনের অপ্রাকৃত মিলনে উপস্থিত থাকেন। ফলে এই অপ্রাকৃত মিলনে জড়িত দম্পতি শুধুমাত্র দৈহিক আনন্দ উপভোগ করেন না বরং তারা লাভ করেন এক অপ্রাকৃত পারমার্থিক আনন্দ। তাই কৃষ্ণের এই প্রিয় সন্তানটাকে প্রতিপালন করা তখন তাদের কাছে বােঝা মনে হয় না বরং মনে হয় এক অপ্রাকৃত আনন্দময় সেবা।
সাধারণ লােকেদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পারিবারিক জীবনে পুত্র প্রাপ্তবয়স্ক হলে পিতা-মাতাকে গৃহস্থালী ও জীবিকা উপার্জনের ক্ষেত্রে সাহায্য করে প্রমাণ করে যে, সন্তান তাদের জন্য আশীর্বাদ, বােঝা নয়। আর পারমার্থিকভাবে প্রতিপালিত শিশু যে স্নেহ ও শ্রদ্ধাবােধের মধ্যে বড় হয়েছে তার কথাতাে বলা বাহুল্য। এই সমস্ত শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়ােজনীয় রসদতো অসীম ঐশ্বর্যবান পরমেশ্বরই প্রদান করেন।
সমাজেরও অবশ্যই এই লক্ষ্যে কিছু প্রতিদান দেয়া উচিত যে, সকল সৃষ্টি যার মধ্যে আমাদের নিজের শরীর ও পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালনা করা উচিত। আমরা শুধুমাত্র দুঃখকেই বিকশিত করব যদি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরিকল্পনায় বাধা প্রদান করি। এটি আমাদের শরীরের বেলায়ও সত্য। সত্যিকারভাবে, এই শরীরটিকে আমরা নিজের বলে দাবি করতে পারি না। 


লেখক পরিচিতি: ড. এডিথ ই. বেস্ট (উর্মিলা দেবী দাসী) আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটি থেকে এডুকেশনাল লিডারশীপ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্যা তিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক ব্যাক টু গডহেড ম্যাগাজিনের সহ সম্পাদক রূপে সেবা করছেন। এছাড়াও তিনি ইস্কন শিক্ষা বিভাগের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছেন।

সূত্র : Please add first missing authors to populate metadata.>(1996). “Breast cancer and hormonal contraceptives: Collaborative reanalysis of indibidual data on 53297 women with breast cancer and 100 239 women without breast cancer from 54 epidemiological studies”. The Lancet 347 (9017): 1713-27.
Trussell, James; Robert Anthony Hatcher, Felicia Stewart (2007). “Contraceptive Efficacy”. In Hatcher, Robert A., et al. Contraceptive Technology (19th rev. ed.). New York: Ardent Media. ISBN 0-9664902-0-7 Plu-Bureau, G; Le, MG (1997). “Oral contraception and the risk of breast cancer”. Contraception, fertilite, sexualite (1992) 25 (4): 301-5.PMID 9229520.-pooled re-analysis of original data from 54 studies representing about 90% of the published epidemiological studies, prior to introduction of third generation pills.
Gupta, S. (2000). “Weight gain on the combined pill– is it real?” Human Reproduction Update 6(5): 427 31. soi:10.1093/humupd/6.5.427. PMID 11045873.


 

ত্রৈমাসিক ব্যাক টু গডহেড, জুলাই -সেপ্টেম্বর ২০১৩

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।