জনপ্রিয়দের জনপ্রিয়তা কেন?

প্রকাশ: ১১ জুন ২০১৮ | ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ | ৭:৫৭ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 941 বার দেখা হয়েছে

জনপ্রিয়দের জনপ্রিয়তা কেন?

হলিউডের টম ক্রুজ, লিওনার্দো, ব্রিটনি, ম্যাডোনা থেকে শুরু করে বলিউডের শাহরুখ, সালমান, আমির, অমিতাভ, ঐশ্বরিয়াদের জনপ্রিয়তা পৃথিবীখ্যাত। শুধু হলিউড, বলিউড নয় ক্রীড়াজগতের তারকাদের জনপ্রিয়তাও কোন অংশে কম নয়। এখনও সেরেনা, হিঙ্গিস, মেসি, রোনালদো, শচীন, ধোনিদের এক মুহুর্ত দেখার জন্য মানুষ তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করে। প্রশ্ন হচ্ছে এসব ব্যক্তিদের জনপ্রিয়তা এত বেশি কেন? এসব তারকাদের এক নজর দেখার জন্য যত বেশী আকুল ভগবানের প্রতি সেরকম নয় কেন? এ নিয়ে লিখেছেন গৌরাঙ্গ দাস। তার প্রতিবেদন থেকে নিম্নে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হল। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া এমন একটি জনপ্রিয় ছবি দেখার জন্য ভারতের প্রায় পরিবার সিনেমা হলে যায়। সবাই সিনেমা হলগুলোতে এমনভাবে ভীড় করছে মনে হয় তারা কোন তীর্থস্থান ভ্রমন করতে এসেছে। দক্ষিণ ভারতে রজনীকান্ত হলেন সেরকম একজন প্রিয় ব্যক্তি। যখন তিনি পর্দায় আসেন তখন লোকেরা তাকে ভগবানের মতো আরতি করে। তারা সুন্দর এবং বিখ্যাত বলেই লোকেরা তাদের প্রতি মানুষ আকর্ষিত হয় এবং তাদের পূজা করে।

এমনকি ভারতে অমিতাভ বচ্চনের উদ্দেশ্যে একটি মন্দির রয়েছে যেখানে তাকে পূজা করা হয়।

যদি কোন মন্দিরে ক্রিকেটের কিংবদন্তী খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার আসেন তখন সবার দৃষ্টি তার দিকেই চলে যাবে। ঐ সময় প্রার্থনারত থাকলেও। এটা অপ্রিয় হলেও সত্য। এক্ষেত্রে কোন মানুষ যদি আমেরিকান হয় তবে ক্রিকেটের এই তারকাকে না চেনাটাই স্বাভাবিক।কেননা তাদের হৃদয় অর্পিত হতে পারে বেস্বলের কোন তারকার মাঝে। কেননা তারা বেসবল দেখেই অভ্যস্ত এবং ওখানে যারা খেলে সেসব তারকাদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে অবগত। তারা জানে না যে,শচীন ক্রিকেটে কতটা জনপ্রিয়? তার কতটা রেকর্ড ও কি কি গুণ রয়েছে। অতএব ব্যাপারটা দাঁড়াল এই যে, কারো সম্পর্কে ভালো করে জানাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এরপরই তাদেরকে আমরা ভালোবাসতে শুরু করি। অতএব, তাদের মধ্যে যে গুণ রয়েছে সেগুলোই শুধুমাত্র আমাদেরকে তারকাদের প্রতি আকর্ষিত করে। এক্ষেত্রে তখন শ্রবণের ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায়। ধরুন, পৃথিবীর এক কোণে একটি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেখানে নেই কোন টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র ইত্যাদি কোন প্রচারমাধ্যম। হয়তো লোকমুখে শুনে হাতেগোনা কিছু লোক উপস্থিত থাকতে পারে। কিন্তু বিশাল কোন জনস্রেত আশা করা যাবে না। কেননা সেখানে কোন প্রচারনাই হয়নি। ঠিক তেমনি আমরা যেসব খেলাধুলার তারকা, চলচিত্র তারকাদের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছি তার একমাত্র কারণ মিডিয়াগুলোর জোড়েসোরে প্রচারণা। যখন আমরা তাদের সম্পর্কে মিডিয়া থেকে শুনি তখন আমরা তাদের প্রতি আকর্ষিত হই। এ সমস্ত কিছুর শুরুটা হয় কিন্তু শ্রবণের মাধ্যমে। শ্রবণ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম তা উপলব্ধি করা যায়। উপরোক্ত বর্ণনা থেকে দুটো বিষয় উঠে এসেছে। যাদের একটি হল, কোন ব্যক্তির গুণ বা শক্তি জেনে তার প্রতি আকর্ষিত হওয়া এবং দ্বিতীয়টি হল তার গুণ শ্রবণ করেই তার প্রতি আকর্ষিত হওয়া। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, এ দুটি ব্যাপারই পারমার্থিক দর্শন চর্চার একটি মূল ভিত্তিস্বরূপ। যদি আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শক্তি বা গুনাবলীসমূহ শ্রবণ করি তখন আমরা তার প্রতি আকর্ষিত হব। নতুবা আমাদের কাছে তিনি একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে মনে হবে। অনেকেই বলে থাকেন অন্য দেব-দেবীদের পূজা করা আর কৃষ্ণকে পূজা করাতে তেমন কোন পার্থক্য নেই। কারণ সবাই ভগবানের অংশ। প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটা তা নয়।

আপনি যদি বিল গেটস্ সহ মাইক্রোসফট কর্মীদের একটি সম্মিলিত ছবি নিয়ে গেটস্ সম্পর্কে অজ্ঞাত কাউকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলতে পারবে না বিল গেটস এবং তার কর্মীদের পার্থক্য কোথায়? ঠিক তেমন দেবদেবীসহ একটি ছবি নিয়ে তার মধ্যে কৃষ্ণকে রেখে পরমেশ্বর ভগবান সম্পর্কে অজ্ঞাত কাউকে জিজ্ঞাসা করলে সেও বলতে পারবে না কৃষ্ণের মাহাত্ম্য বা ক্ষমতা কি? সুতরাং কৃষ্ণ সম্বন্ধে জানতে হলে সাধুসঙ্গে থেকে পারমার্থিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। শ্রীমদ্ভগবদগীতা  সহ বৈদিক শাস্ত্র থেকে শ্রবনের মাধ্যমে কে যথার্থ পূজনীয় ভগবান তা উপলব্ধি করা যায়। আরেকটি ব্যাপার হল আমরা এখন যেসব জড়জাগতিক তারকাদের জন্য পাগলপ্রায়, তাদের জনপ্রিয়তা বেশিদিন স্থায়ী থাকে না। সুতরাং এসব ক্ষণস্থায়ী কারো গুনগুলোর প্রতি আকর্ষিত হয়ে আমাদের কিই বা লাভ হচ্ছে? বরং তা আমাদের ক্ষতিই করছে। যখন আমরা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গুণাবলী শ্রবণ করব তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা তার প্রতি আকর্ষিত হব এবং সেই আকর্ষন আমাদের অনেক দুঃখের চিরনিবৃত্তি ঘটাবে। এক্ষেত্রে মিডিয়া হল সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রসমূহ। শুধু একটি মাসও যদি ধৈর্য ধওে ১৬ মালা হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করেন তাহলে আপনার জীবনের পরিবর্তনটা নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। এটি আপনার জন্য একটা চ্যালেঞ্জই ধরে নিন। পাশাপাশি সাধু সঙ্গ, প্রসাদ আস্বাদন এবং সর্বোপরি কিছু ধর্মীয় গ্রন্থ অধ্যয়ন করাও আবশ্যক। এর মাধ্যমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আপনি আকর্ষিত হবেন কৃষ্ণও আপনার প্রতি আকর্ষিত হবেন। হরে কৃষ্ণ।

[ সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ গৌরাঙ্গ দাস-আই.আই.টি মুম্বাই থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একজন বিখ্যাত বক্তা। বিভিন্ন টিভি শোতে তার কৃষ্ণ কথা পরিবেশিত হয়।]

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।