চা যদি খান তবে আয়ুর্বেদিক চা খান

প্রকাশ: ১৭ মে ২০১৮ | ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ | ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 2016 বার দেখা হয়েছে

চা যদি খান তবে আয়ুর্বেদিক চা খান

জকাল মারাত্মক ক্যাফিন বিষযুক্ত যে নেশাকারক বস্তুটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে সেটি ম্লেচ্ছ জাতির উর্বর মস্তিস্কপ্রসূত একটি আবিষ্কার। বিশ্বজুড়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ম্লেচ্ছরাই এর প্রবর্তন এবং প্রচার করেন। বিদেশ থেকে আগত, ব্যবসায়ীরা প্রথমদিকে ভারতবর্ষে বিনামূল্যে চা বিতরণ করতেন। সরলপ্রাণ ভারতীয়রা বিনা প্রতিবাদে এই বিষ গ্রহণ করতে শুরু করে। বর্তমানে তাঁদেরই বংশধরেরা চা-পানের সমর্থনে অসংখ্য যুক্তি উত্থাপন করেন। এতেই প্রমাণিত হয়, বিনামূল্যে চা বিতরণের পরিকল্পনাটি কতই না নিখুঁত ছিল। কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়িক ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য এই উদার দানের নিতান্তই প্রয়োজন ছিল। চায়ের এই মারাত্মক নেশা এমনকি ডাক্তার অধ্যাপকের মতো বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধিকেও বিভ্রান্ত করেছে। কেউ বলেন, চা পানে বিন্দুমাত্রও অপকার হয় না, বরং অসীম উপকার হয়। কলকাতায় চায়ের অসংখ্য ব্যবসাকেন্দ্রগুলিতে চা পানের এই অসীম উপকারিতার লম্বা ফর্দ দেখা যায়। যাঁরা ঐ সমস্ত ফর্দগুলিকে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন, তাঁরাই চায়ের উত্তম ভক্ত। চা সেসব বুদ্ধিজীবীদের সমস্ত বুদ্ধিটুকুই ভক্ষণ করেছে। আশা করি, তাঁদের কাছে আমাদের এই প্রবন্ধ পৌঁছাবে না। আর এক ধরনের বুদ্ধিজীবী আছেন, যাঁরা বলেন, চা-পানে সামান্য ক্ষতি হয় বটে, তবে সেটা কোন মারাত্মক নয়। এছাড়া যেহেতু চা খেলে মাথাধরা সেরে যায়, অলসতা কাটে, পায়খানা পরিস্কার হয়,  স্নায়ু সতেজ হয় সেহেতু এতগুলি উপকারের বিনিময়ে লিভারের সামান্য ক্ষতিকে গণ্য করাই উচিত নয়। তাঁদের জানা উচিত, আমাদের মাথাধরা, আলস্য,  স্নায়ুদৌর্বল্য, কোষ্ঠকাঠিন্য-এই সমস্ত রোগের প্রধান কারণ হল অতিরিক্ত বীর্যক্ষয়। যিনি উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করেন, সমস্ত কাজে অনিয়ম করেন, তার এগুলি হবেই। এই সব সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে লিভার ধ্বংস করার কোনও প্রয়োজন নেই। বরং এক কাপ গরম দুধ খেলে লিভার নষ্ট না করেও দেহকে চাঙ্গা করা যায়। গরম দুধই হল জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে বেশি পুষ্টিকর পানীয়। বলতে পারেন, গরম দুধে চায়ের নেশাকারক গন্ধটিও নেই, আর ক্যাফিন বিষের স্বাদটিও নেই। শূকর কখনও রসগোল্লা খেতে ভালবাসে না, সে মলমূত্রের স্বাদ এবং গন্ধ ভালবাসে। তাদের জন্য আমাদের এই প্রবন্ধ নয়। চায়ের মধ্যে যে মারাত্মক ক্যাফিন বিষ রয়েছে, তার মধ্যে যে তা মদের থেকেও বেশি ক্ষতিকারক। বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ‘চা-পান না বিষপান’ নামক গ্রন্থের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে-চা পান মদ্যপানের থেকেও বেশি ক্ষতিকারক। চা-খোরেরা চা পানের সমর্থনে যত সব আজগুবি যুক্তি উত্থাপন করেন, সেগুলি চায়ের নেশারই গোর মাত্র-যুক্তি নয়।

যাই হোক, যাতে মাথাধরা, স্নায়ুদৌর্বল্য, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগ না হয়, সেজন্য আমাদের সমস্ত ব্যাপারে সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে হবে। অনেকে বলেন, চায়ের সঙ্গে একটু বেশি দুধ মেশালে চায়ের ক্ষতি হয় না। আ-হা, আসক্তি কতই না নাছোড়বান্দা! একথা সত্যি যে পায়খানার সঙ্গে খুব বেশি করে চিনি এবং সুগন্ধি মেশালে পায়খানার পঁচা দুর্গন্ধ কিছুটা কমে-কিন্তু শূকরের হৃদয় তাতে পূর্ণরূপে তৃপ্ত হবে কি? সে যে বিশুদ্ধ পায়খানায় আসক্ত। কেউ কেউ বলতে পারেন, গরম দুধের দাম চায়ের থেকে অনেক বেশি। আমরা সস্তা খাবার চাই। এর উত্তরে বলা যায়, চা না খেলে গরীব মানুষ মরবে না।তবে হ্যাঁ, যারা কোনও সুগন্ধিযুক্ত, পুষ্টিকর এবং রোগনাশক গরম পানীয়ের প্রয়োজন বোধ করেন, আমি তাদের নিরুৎসাহিত করছি না। নীচে তিনটি প্রধান আয়ুর্বেদিক চায়ের ফর্মূলা দেওয়া হয়। এগুলি উড়িষ্যার প্রখ্যাত করিরাজ দামোদর স্বরূপ দাস প্রদত্ত।

আয়ুর্বেদিক চা


এই আয়ুর্বেদিক চা অমৃতের মতো সুস্বাদু, সুগন্ধময় আর পুস্টিরক। হামান দিস্তায় গুঁড়ো করে দুধ এবং চিনিসহ ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। গরম গরম শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করুন এবং প্রসাদ আস্বাদন করুন।
কফনাশক চা : সুণ্ঠি চূর্ণ ১ চামচ; পিপলি চূর্ণ সিকি চামচ; গোলমরিচ সিকি চামচ; যষ্টিমধু চূর্ণ ১ চামচ; এলাচ ১ চামচ; দারুচিনি ১ চামচ।

পিত্তনাশক চা : কর্পূর ১ চিমটি; মদনমস্তক চূর্ণ ১ চামচ; জায়ফল চূর্ণ ১ চামচ; নাগেশ্বর ফুল ১টা; পটলপাতা (পলতা) ১টা; কাবাবচিনি চূর্ণ আধ চামচ; জায়েত্রী ১টা; বেনাচের (বেনামূল) ২ চামচ; চন্দন ১ চামচ।

বায়ুনাশক চা : মঞ্জিষ্ঠা ১ চামচ; পটলপাতা (পলতা) ১টা; বেনাচের ২ চামচ; সুণ্ঠি ১ চামচ; থানকুনি পাতা ২টা; পিপলি সিকি চামচ; গোলমরিচ সিকি চামচ; কাবাব চিনি আধা চামচ; শালপর্ণি (পাতা) ১টি।

এসব চায়ের সঙ্গে যদি একটু খাঁটি কেশর মেশাতে পারেন, তাহলে তা রাজকীয় চায়ে পরিণত হবে। সাত্ত্বিক জিহ্বা এবং সাত্ত্বিক নাসিকা তাতে আসক্ত হবেই। যদিও এক- একটি ফর্দে এখানে বহু প্রকার উপাদানের নাম করা হয়েছে, তবে তা থেকে কোন উপাদান বাদ গেলেও কোন ক্ষতি নেই। এই প্রসঙ্গে আরেকটি কথা বলেই এই প্রবন্ধ সমাপ্ত করছি। চা থেকে সরকারও একটা মোটা অংকের কর লাভ করেন। তাই সরকার Tea Board স্থাপন করছেন যাতে চায়ের বিক্রি আরও বেশি হয়। শুনেছি তামাকের জন্যও বোর্ড হচ্ছে, যাতে তামাকের বিক্রি বাড়ানো যায়। কর আদায় করাই সরকারের লক্ষ্য, জনগণের কল্যাণ নয়। স্বাধীন দেশের স্বাধীন বুদ্ধিজীবীরা অবশ্যই তার প্রতিবাদ করবেন। অবশ্য বুদ্ধি যদি এখনও অবশিষ্ট থাকে।

হরে কৃষ্ণ।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।