চন্দন যাত্রা মহোৎসব

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২১ | ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৫ মে ২০২১ | ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 304 বার দেখা হয়েছে

চন্দন যাত্রা মহোৎসব

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ করুণাসিন্ধু, অধমজনার বন্ধু। তিনি পতিত জীবদের তাঁর অহৈতুকী করুণা বিতরণ করতে চান। ভগবানের কৃপা প্রাপ্ত হলেই জীবের দুঃখের পরিসমাপ্তি হবে। সেই দুঃখ বিনাশের উৎসব হচ্ছে চন্দন যাত্রা মহোৎসব।
উৎকলখণ্ডে বর্ণিত আছে- শ্রীজগন্নাথদেব মহারাজ ইন্দ্রদুম্নকে এই রূপ বলেছেন-

বৈশাখস্য মিতে পক্ষে তৃতীয়াক্ষয়সংজ্ঞিকা।
তত্র মাং লেপয়েদগন্ধলেপনৈরতিশোভনম।।

অর্থাৎ বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে অক্ষয় তৃতীয়া নাম্নী তিথিতে সুগন্ধি চন্দন দ্বারা আমার অঙ্গ লেপন করবে।
‘অনূলেপন মুখ্যন্ত চন্দনং পরিকীর্তিতম’ অনুলেপন দ্রব্য সমূহের মধ্যে চন্দনই শ্রেষ্ঠ বলে পুরুষোত্তম জগন্নাথ তৎসেকবরাজ শ্রীইন্দ্রদুম্নকে বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে তৃতীয়া-নাম্নী তিথিতে নিজ শ্রীঅঙ্গে সুগন্ধি চন্দন লেপনের আজ্ঞা প্রদান করলেন। সেই অনুসারে অক্ষয় তৃতীয়া হতে আরম্ভ করে জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথি পর্যন্ত এই দীর্ঘ ২১ দিন ধরে প্রতিদিন শ্রীজগন্নাথ বিগ্রহের শ্রীঅঙ্গে চন্দন লেপন করা হয় এবং প্রতিদিন নানান সুশীতল ভোগ নিবেদন করা হয়। এ সময় পুরীধামে শ্রীজগন্নাথদেবের বিজয় বিগ্রহগণ নিয়ে শ্রীনরেন্দ্রসরোবরে নিয়মিত কালবিধি প্রত্যহ নৌবিহার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তখন বিগ্রহগণের গরম পোষাক তথা হালকা এবং পুষ্পমাল্যাদির আধিক্য বৃদ্ধি হয়। দিবাভাগে শ্রীবিগ্রহগণের শ্রীঅঙ্গে যে চন্দন লেপন করা হয়, ইহাকে ‘চন্দন বেশ’ বলা হয়।
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে উল্লেক রয়েছে, এক সময় শ্রীধাম বৃন্দাবনে পরম বৈষ্ণব শ্রীল মাধবেন্দ্র পুরীকে স্বপ্নে তাঁর আরাধ্য শ্রীগোপাল বিগ্রহ বলেন, ‘আমার শরীরের তাপ জুড়াচ্ছে না। তাই মলয় পর্বত থেকে চন্দন নিয়ে এসো এবং তা ঘষে আমার অঙ্গে লেপন করো, তা হলে তাপ জুড়াবে।” তারপর বৃদ্ধ মাধবেন্দ্রপুরী নীলাচলে জগন্নাথ পুরীতে এসে সেবকদের কাছ থেকে মলয়জ চন্দন ও কর্পূর নিয়ে বৃন্দাবনে ফেরার পথে যখন রেমুণাতে শ্রীগোপীনাথ মন্দিরে আসেন, সেই রাত্রে সেখানে শয়ন কালে স্বপ্ন দেখেন গোপালে এসে বলছেন, গোপীনাথ ও আমি অভিন্ন। শ্রীগোপীনাথের অঙ্গে চন্দন লাগালেই আমার অঙ্গ শীতল হবে।” গ্রীষ্ম ঋতুতে শ্রীহরির অঙ্গে কর্পূর চন্দন লেপন করলে ভগবান শ্রীহরি অত্যন্ত প্রীত হন।
শ্রীল মাধবেন্দ্র পুরীপাদ গোপালের শরীরের তাপকে দূর করতে ২১ দিন পর্যন্ত চন্দন লাগিয়েছিলেন। তার ফলে গোপালের তাপ দূর হয়েছিল। যদি আমরা গোপালকে শীতল করতে পারি তাহলে আমরাও শীতল হব। আর যদি শ্রীকৃষ্ণকে শীতল না করি অর্থাৎ সুখী না করি তাহলে আমরা ভবদাবাগ্নিতে পুড়েতেই থাকবো।
চন্দনের মাহাত্ম্য/চন্দনের গুনাগুণ হচ্ছে–
১। শীতলতা প্রদান, ২। শ্রী বা সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং ৩। সুগন্ধ ছড়ায়।
১। শীতল: এ জগতে সবচেয়ে শীতল বস্তুর হচ্ছে কর্পূর। কিন্তু কর্পূরের চেয়েও শীতল বস্তু হচ্ছে চন্দন। সেজন্য ভগবানকে কর্পূরের সাথে চন্দন মিশিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। কিন্তু চন্দনের চেয়ে কোটি গুণ সুশীতল হচ্ছে চন্দ্রের কিরণ। এর ফলে মানুষের মনের সমস্ত তাপ দূর হয়ে যায়।
সাপের যখন অনেক বেশি বিষ জমা হয়ে যায় তখন সে সেই বিষের জ্বালা থেকে শীতল হওয়ার জন্য চন্দন গাছের সাথে জড়িয়ে থাকে। কিন্তু বিষয় বিষ, সাপের বিষ থেকেও কোটিগুণ জ্বালাময়। সেখান থেকে বাচার উপায় হচ্ছে নিজের শরীরে শ্রীভগবানের প্রসাদী চন্দন লেপন। শীতল হৃদয়ে ভগবদ্ভক্তি উদিত হয়।
২। শ্রী বৃদ্ধি: শ্রাবণের জল ভরা মেঘের মত কৃষ্ণের শ্যাম বর্ণে চন্দন লেপনের ফলে তার সৌন্দর্য বর্ধিত হয়। ভগবানের সৌন্দর্য দেখে ভক্তের পারমার্থিক শ্রী বৃদ্ধি পায়। ঠিক যেমন কৃষ্ণের সৌন্দর্য দেখে ব্রজগোপীকাদের শ্রী বৃদ্ধি পেয়েছিল।
৩। সুগন্ধ: চন্দন যেমন নিজের গন্ধ দিয়ে সমস্ত বনকে সুগন্ধিত করে ঠিক তেমনি একজন শুদ্ধ ভক্ত তাঁর ভক্তির প্রভাবে অন্য ব্যক্তিকেও শুদ্ধ ভক্তে পরিণত করে।
শ্রীভগবানের শরীর সচ্চিদানন্দম এবং ত্রিগুণের অতীত। তাতে কোনো তাপাদি থাকতে পারে না। তবে ভগবানের এই ধরনের লীলার উদ্দেশ্য হচ্ছে কোনো ব্যক্তিকে তার সেবা দিয়ে তার সুনাম বৃদ্ধি করা। তাকে কৃতার্থ করা এবং ভগবদ্ধামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। শুদ্ধ ভক্তদের ক্ষেত্রে ভক্তের আনন্দ বিধান করা এবং জগৎবাসীকে সেই কথা শ্রবণ করিয়ে উদ্ধার করা।


শ্রীল মাধবেন্দ্রপুরীর এই লীলাকে স্মরণ করে প্রতিবছর ইসকন নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধা মাধব মন্দির ও শ্রীশ্রী গৌর নিতাই আশ্রমে ২১ দিনব্যাপী চন্দনযাত্রা মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।


 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।