একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস এবং তারপর

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২২ | ১২:২১ অপরাহ্ণ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ | ১২:২১ অপরাহ্ণ

এই পোস্টটি 110 বার দেখা হয়েছে

একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস এবং তারপর
হাসপাতালের বেডের একটি চেয়ারে বসে আছেন মাতা যশোদা। চোখ বন্ধ করে এবং মাথা দুলিয়ে মুখ থেকে একটি শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি করছেন। মাঝে মাঝে একবার দু’বার করে দীর্ঘঃনিশ্বাস তুলছেন। এ দীর্ঘনিঃশ্বাস নেয়ার সময় তাকে মনে হচ্ছিল যেন তিনি কারো প্রতি অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা ও প্রার্থনা নিবেদন করছেন। তার হাতে তখন শোভা পাচ্ছিল একটি কাপড়ের থলে। প্রকৃতপক্ষে মাতা যশোদা তার গুরুমহারাজের দেয়া দীক্ষিত নাম। এ মুহূর্তে তিনি তার মুখ দিয়ে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের অপ্রাকৃত শব্দ তরঙ্গ জপে চলছেন। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ॥  হঠাৎ বেডের উপর শুয়ে থাকা ৮৫ বছর বয়স্ক যশোদার বাবা হঠাৎ চিৎকার করে উঠল। “দেখ! ৫টি বড় বড় মুখ বিশিষ্ট একটি অদ্ভুদ লোক, দেখতে অনেকটা সিংহের মত । তিনি আমার ওয়ার্ডের দিকেই আসছে। এটা কে? তখন তার চোখ বন্ধ ছিল। ঘুমের ঘোরে হঠাৎ এই বৃদ্ধ লোকটির (যশোদার বাবা) চিৎকার শুনে মাতা যশোদা ও তার একমাত্র মেয়ে ভয় পেয়ে গেল। যশোদার বাবা গত দু’মাস আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কতিপয় দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি এখন মৃত্যুপথযাত্রী। যশোদা বেডের পেছন দিকে একটি টেপ রেকর্ডার রেখেছিলেন আর তাতে প্রায় সময় ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের বিভিন্ন সুর ছেড়ে দিত। যদিও এ শব্দগুলোর সম্পর্কে তার বৃদ্ধ বাবার কোন ধারণাই ছিল না। তিনি এটিকে এক ধরনের গান হিসেবেই ভেবে নিত। যখন এটি বাজত তখন তার হাতের আঙ্গুলে পরিহিত আংটির সাহায্যে কোন একটি জিনিসে ছন্দ তুলত। অনেক সময় মাথা নেড়ে গাওয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু বার্ধক্যজনিত কারণে গাওয়া তো দূরের কথা রীতিমত হাতটুকু পর্যন্ত ভালো করে নাড়তে পাড়ত না। তবে যশোদা এটুকু নিশ্চিত ছিল যে, এ অপরিচিত শব্দসমষ্টি তার বাবার কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছে। মায়াপুর থেকে শ্রী নৃসিংহদেবের বিগ্রহ সম্বলিত একটি ছবি নিয়ে এসে তার ঘরের দেয়ালে ঝুলে রেখেছিলেন যশোদা প্রতিক্ষণেই নৃসিংহদেবের কাছে প্রার্থনা করত “হে প্রভু আপনি আমার বাবাকে কৃপা করুন যেন তিনি তার এ দেহ ত্যাগ করার পর পরবর্তী জীবনে একজন কৃষ্ণ ভক্ত হতে পারেন।” আগেই বলা হয়েছিল. যে, তিনি কৃষ্ণভাবনার ভাবধারার সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত। কিন্তু তবুও তার বাবার ঐ সময়কার আচরণ দেখে যশোদার অবাক হওয়ারই কথা। যথারীতি তার বাবা বলেই চললেন ‘ওহ! হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে সবাই তাকে দেখতে পারে না। কিন্তু তিনি সত্যিই এখানে এখন অবস্থান করছেন, তার নামটা যেন কি……” তখন বাবার মুখ থেকে সিংহ ও ৫ নখের কথা শুনে অনেকটা যশোদা ও তার মেয়ে সমস্বরে বলে উঠল ‘নৃসিংহদেব’ তার বাবা বলে উঠল কী দেব? আমি তাকে চিনি না, কিন্তু তিনি আমাকে দেখে হাসছেন এবং বার বার বলছেন যে তুমি যে জপটি করছ ঐটি আমি যেন করি, কিন্তু তুমি কি জপ করছ?” যশোদা বলল “এটি ভগবানের পবিত্র নাম, যশোদা পুরো মন্ত্রটি বার বার উচ্চস্বরে বাবার কানের কাছে এসে বলতে লাগল, পরবর্তীতে অনেকক্ষণ চেষ্টার পর তার বাবা খুব সুন্দরভাবে এ মহামন্ত্র জপ করা শুরু করল। পরের দিন তার বাবা দেহ ত্যাগ করলেন। মৃত্যুর পরবর্তী সময়েও তার চেহারাটি খুব শান্তিপূর্ণ মনে হচ্ছিল। তার চিবুকগুলি সামান্য গোলাপীরঙের দেখাচ্ছিল এবং তার শরীর নরম ছিল। যশোদা তার গুরুমহারাজের নির্দেশ মত বাবার মৃত্যুপরবর্তী সব ক্রিয়া সম্পন্ন করল। এরপর শব দাহ করার জন্য নেয়া হলে, দাহ করার পর শশ্মান যাত্রীরা শবদাহের গায়ের রঙ এত সাদা হতে পারে দেখে অনেকটা আশ্চর্যই হয়েছিলেন। এদিকে যশোদা তার বাবার জন্য শ্রীকৃষ্ণের জন্য কাছে প্রার্থনা চালিয়ে যেতে লাগলেন তার সুন্দর জপ কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নিবেদনের মাধ্যমে। কিন্তু মনের মধ্যে একটি প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরপাক খাচ্ছিল। তার বাবাতো ভক্ত ছিল না, কিন্তু একজন অভক্ত হয়েও কিভাবে শ্রী নৃসিংহদেবের এ অপার কৃপা লাভ করলেন তাকে দর্শনের মাধ্যমে । পরক্ষণেই প্রশ্নটির উত্তর পেয়ে গেল কেননা তিনি বহুদিন আগে বৈষ্ণবদের কাছ থেকে শুনেছিলেন যে “শাস্ত্র মতে যে ভগবৎ ভজন করবে শুধু সেই ভগবানের কৃপা পাবে নয় বরঞ্চ তার মাধ্যমে তার পরিবার তথা পুরো বংশের উপর কৃপা বর্ষিত হতে পারে”। এটা ভেবে যশোদা আবারও একটি লম্বা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল। তবে এবারের দীর্ঘনিঃশ্বাসটি হাসপাতালের বেডের দীর্ঘনিঃশ্বাসগুলোর চেয়ে একটু ছিল। কেননা এ দীর্ঘনিঃশ্বাস শ্রীনৃসিংহদেবের গভীর এক অবলা ভক্তির নিদর্শন। জয় নৃসিংহদেব কী জয় । হরে কৃষ্ণ ॥

মাসিক চৈতন্য সন্দেশ এপ্রিল ২০০৯ হতে প্রকাশিত
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।