একটি ট্রেন ভ্রমণ

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২২ | ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২২ | ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 140 বার দেখা হয়েছে

একটি ট্রেন ভ্রমণ

ললিতা সেবিতা দেবী দাসী:
একটি ট্রেন যাত্রায় তিনজন ব্যক্তি একত্রে বসলেন, তাদের কেউই কারো পূর্বপরিচিত নন। ট্রেনের সিটে বসার পর তিনজনই তিন জনের সাথে পরিচিত হয়ে গল্প-গুজবে মেতে উঠলেন, ট্রেনের ভেতরেই কিছু খাবার কিনলেন, তিনজনই তা ভাগাভাগি করে খেলেন, কয়েকঘণ্টায় তাদের মধ্যে এক চমৎকার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা যাওয়ার পর একজন বন্ধু নেমে পড়ার সময় আসলো। বাকি দু‘জনকে রেখে যেতে উনার মন মানছে না, তবুও তো নামতে হবে, আর বাকি দুজন যেন খুব কষ্ট পাচ্ছেন যাদের সাথে এত অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো কাটানো হলো তাদের সাথে জীবনে আর দেখা হবে কিনা!  সে এখন একেবারের জন্যই চলে যাবে। এভাবে প্রথমজন গন্তব্যে পৌঁছানোর পর উনার দুই বন্ধুকে রেখে অনেক কষ্টের ট্রেন থেকে নামলেন। আরো প্রায় ২ ঘন্টা যাওয়ার পর ভগ্ন হৃদয় নিয়ে তৃতীয় বন্ধুকে রেখে দ্বিতীয় বন্ধু নামলেন। আর দ্বিতীয় বন্ধুটি তখন সম্পূর্ন একা হয়ে গেলেন। আরো প্রায় একঘণ্টা যাওয়ার পর সেই তৃতীয় বন্ধুটি তার গন্তব্যে পৌঁছে ছিলেন। এভাবে তাদের তিনজনের ট্রেনের মধ্যেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক সীমাবদ্ধ ছিল পরে কখনও তাদের মধ্যে কোন যোগাযোগ বা দেখা হয়নি। এভাবে আমরা দেখতে পাই এ জগতে মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস করে গভীর আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। এই বন্ধন বা বাঁধা দড়ি দিয়ে কোন কিছুকে বেঁধে রেখে আগলে রাখার মতোই। যদিও এই বন্ধন বা বাঁধা দেখা যায় না তবুও তা হৃদয়ে হৃদয়ে আকর্ষণ করে। যেন হৃদয়ে হৃদয়ে একে অপরকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার মতন। যেমন একটি গরু বা ছাগলকে যদি কোন খুটির মধ্যে লম্বা দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় তাহলে সেই গরু-ছাগলকে দড়ি দিয়ে টেনে আকর্ষণ করা হয় বা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে হলে টেনে টেনে রাস্তা থেকে বাড়ির দিকে আকর্ষন করা হয়। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতাতে হৃদয়ে হৃদয়ে যে বন্ধন রয়েছে, সেই দড়ি বাহির থেকে যদিও দেখা যায় না তবুও তা ভেতরে রয়েছে, যা পরস্পরকে আকর্ষণ করে। ট্রেনযাত্রীর মতো আমরা একত্রে ক্ষণিকের জন্য বাস করলেও কার আগে যে কার ডাক আসবে মৃত্যুর জন্য তা কেউই জানে না। আর মৃত্যুর সাথে সাথেই প্রেমময় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাবে। কোন আত্মীয় যে কোন নরক কুন্ডে গিয়ে পড়বে কেউ তা বলতে পারবে না। তারা ভাবে আরে আমরা তো কোনো পাপ করিনি আমরা কেন নরকে যাব, আমরা মিথ্যা কথা বলিনি,কারো ক্ষতি করিনি, চুরি করিনি যতটুকু পারি ধর্ম করেছি, কিন্তু ভাগবতে, বলা হয়েছে “পৃথিবীতে ধর্ম নামে যাহা-কিছু চলে, ভাগবত কহে তাহা পরিপূর্ণ ছলে” অর্থাৎ মনগড়া বিভিন্ন ধরনের ধর্মাচরণ করে থাকে এ জগতের অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন অনেক মানুষেরা। এজন্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই কলিযুগে যুগধর্ম স্থাপন করেছেন জীবের প্রকৃত ধর্ম কি তা হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন, অবশ্যই নিজেকে ধার্মিক বলে মনে করতে হলে শ্রীকৃষ্ণের আদেশ পালন করতে হলে এই কলিযুগে ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্র জপ কীর্তন করতে হবে।শ্রীকৃষ্ণ ভগবতগীতা ১৫/১০ বলেছেন, “মৃঢ় লোকেরা দেখতে পায়না কিভাবে জীব দেহ ত্যাগ করে অথবা প্রকৃতির গুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিভাবে তার পরবর্তী শরীর সে উপভোগ করে।’’ শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, কত প্ল্যান করে তারা ভালো থাকিবারে। প্রকৃতি ভাঙ্গিয়া দেয় সব বারে বারে॥ “ভালো থাকার জন্য মানুষেরা কতই না পরিকল্পনা করে থাকে। কিন্তু প্রকৃতিদেবী সমস্ত পরিকল্পনা বারংবার ভেঙ্গে দেয়। জীব জন্ম-মৃত্যুর চক্রে বারবার আবর্তিত হয়। এভাবে বিমোহিত হয়ে সে ভগবানের সেবা করার নিত্য আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় এবং নিজ ইন্দ্রিয়তোষণে ব্যস্ত থাকে। যদিও মৃত্যুর কঠিন নিগড়ে তাকে জীবন দিতেই হয় তবুও সে অজ্ঞতায় মশগুল থাকে এবং তার মায়া ভাঙ্গে না” ইস্‌কন গুরুবর্গের অন্যতম শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী গুরু মহারাজ একবার ঢাকার সূত্রাপুরে এক প্রবচনে বলেছিলেন, “একটা শিশু জন্মের পর জানে না কে তার মা, বাবা। আস্তে আস্তে সে তার মাকে চিনতে শুরু করে, পরে বাবাকে চিনতে শুরু করে, আরো পরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের চিনতে শুরু করে। একটা মেয়ের যখন বিয়ে হয় বিয়ের আগে স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক থাকে না, বিয়ের পর স্বামীর সাথে সম্পর্ক তৈরি হয়। সন্তান-সন্ততি হয়, তাদের সাথে সম্পর্ক হয়। যখন মহিলাটি মৃত্যুবরণ করে সাথে সাথে সবকিছু ভুুলে যায় তখন আর বলতে পারেনা অমুক আমার মা বাবা, অমুক আমার স্বামী।” তাই আমাদের পারিবারিক সম্পর্কটা খুবই ক্ষণিকের জন্য। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তিকেই ক্ষণিকের এই পারিবারিক সম্পর্কের অনিত্যতাকে উপলব্ধি করে, নিত্য-শাশ্বত ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্র জপ করা, শ্রীকৃষ্ণের আদেশ-নির্দেশ অনুসারে জীবন যাপন করা উচিত।
শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর কবিতায় আরও বলেছেন-

কৃষ্ণ যেই ভজে সেই হয়ত’ চতুর।
মায়া যেই ভজে সেই হয়ত’ ফতুর॥

আপনি যদি আপনার মূল্যবান মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্য না জেনে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা না করে, ক্ষণিকের সম্পর্ক আত্মীয়-স্বজনের ভালোবাসায় মোহিত হয়ে জীবন কাটান, তাহলে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আপনার জীবনের সমস্ত কিছুর পরিসমাপ্তির মাধ্যমে আপনি সম্পূর্ণ রূপে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। তাই আর মূল্যবান সময় নষ্ট না করে এখনই কৃষ্ণানুশীলনে ব্রতী হোন।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ জুন ২০২২ হতে প্রকাশিত

 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।