ইসরাইলে শান্তির বার্তা প্রচারে ইসকন

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০১৮ | ১২:২৬ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৬ জুন ২০২০ | ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 3723 বার দেখা হয়েছে

ইসরাইলে শান্তির বার্তা প্রচারে ইসকন

সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বে সর্বাধিক আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাড়িয়েছে ইসরাইল ফিলিস্তিনের যুদ্ধ। প্রায় হাজারো নিরীহ জনগণ ইতোমধ্যেই দু’পক্ষের এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নিহত হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বড় বড় সংস্থাগুলো এখন নড়েচড়ে বসেছে কিভাবে ইসরাইল ফিলিস্তিনের এ যুদ্ধ বদ্ধ করা যায়। যথারীতি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের ক্ষোভ-বিক্ষোভ ঘটেই চলছে। কিন্তু তবুও এই দু’পক্ষের মধ্যে হামলা-প্রতিহামলা ঘটেই চলেছে। আর এ চলমান বিভীষিকাময় যুদ্ধের মধ্যেও ইসরাইলের মত যুদ্ধ বিগ্রহপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সনাতন ধর্মের কৃষ্ণভাবনামৃত সংস্কৃতিটি প্রচারিত হয়ে থাকে তবে পাঠকদের কাছে হাস্যকর রসিকতা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর দেয়া এ কৃষ্ণভাবনামৃতের জ্ঞান এ বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতেও ইসরাইলি জনগণের মাঝে ইস্কন ভক্তরা বিলির করে চলেছেন। ইস্কন ভক্তরা বিলি করে চলেছেন। ইস্‌কন প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য শ্রীল প্রভুপাদ যখন প্রথম তা গুরুদেব ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তখন ব্রিটিশ যুদ্ধকালীন সময়েই শ্রীল প্রভুপাদকে তিনি নির্দেশ দেন-“এখন থেকেই কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার হোক।” তখন শ্রীল প্রভুপাদ এর আপত্তি করে বলেছিলেন যে, বর্তমান এ যুদ্ধের সময়ে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার কিভাবে সম্ভব? কিন্তু ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর বলেছিলেন যে, কৃষ্ণভাবনামৃত কোন সময়, স্থান, পরিস্থিতি মানে না, তা সকল পরিস্থিতিতেই প্রচারযোগ্য। তাই কৃষ্ণভক্তদের জন্য বর্তমান সময়ের ইসরাইলের প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার চালিয়ে যাওয়া কোন আবাকের বিষয় নয়। তবে ইসরাইলে কৃষ্ণভাবনামৃতের প্রচার অনেক আগে থেকেই কিছু বৃহৎ প্রচার কেন্দ্র রয়েছে। প্রথম দিকে ইসরাইলী সরকার এ শহরটিতে ইসরাইলের একটি সুন্দর শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিল কিন্তু পরবর্তীতে সরকার এ বিষয়ে মত পাল্টায় কেননা শহরটি পশ্চিম তীরে নিকটে হওয়ায় যুদ্ধ সংঘর্ষে যে কোন মুহূর্তে শহরটির ক্ষতি হতে পারে। তাই শহরটি তেমন একটি জনবহুল নয়। তাই ভক্তরা নিরিবিলি ঐ স্থান থেকেই সারা ইসরাইলে প্রচার করে থাকে। ইসরাইলীরা ভক্তদের ‘হরে কৃষ্ণ’ নামে ডাকে। ভক্তদের মধ্যে গুণাবতার দাস এবং বার্ষবানবী দেবী দাসী ছাড়া অন্য সব ভক্তই বাইরে অর্থ উপার্জনের জন্য নিজ নিজ কর্মস্থলে নিয়োজিত থাকে। তাদের উপার্জিত অর্থ ও ইসরাইলী বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় এ কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করে চলছেন। গুণাবতার এবং বার্ষভানবী সারা ইসরাইলে ভ্রমনের মাধ্যমে ও বিভিন্ন সেমিনার নামহট্ট কেন্দ্র স্থাপন করে জনসাধারণের মাঝে এ কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করেন। এই কেন্দ্রটির মূল দায়িত্বে রয়েছেন জগদীশ দাস এবং তার স্ত্রী যুগল প্রীত যুগল প্রীতি ১৯৬৬ সালে প্রথম তেল আবিবে ইস্কনের এ কেন্দ্রে যোগাদান করেছিলেন। তাদের দু’জনকে পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছেন গুণাবতার দাস ও বার্ষভানবী দেবী দাসী। তারা ঐ শহরে একটি বড় হলকে মন্দির হিসেবে ব্যবহার করে প্রচার করে চলেছেন। এখানে এখন পর্যন্ত সত্তরেরও বেশি ভক্ত সমাগম হয়ে থাকে। মাত্র কিছুদিন আগেও ইসরাইলে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করা হয়েছিল। উক্ত অনুষ্ঠানে ইসরাইলী জনসাধারণের একাংশ অত্যন্ত উৎসাহ ভরে অংশগ্রহণ করেন। তারা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাড়িয়ে অপ্রাকৃত সুস্বাধু প্রসাদ গ্রহণ করেন। হাফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান স্টাডি ডিপার্টমেন্টের ভারতীয় সংস্কৃতি বিষয়ক অধ্যাপক ইথামার থেওডর এ বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, “ইসরাইলী জনসাধারণের জন্য শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতেই নয় কৃষ্ণভাবনামৃতের এ অতি সুন্দর সংস্কৃতিতে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে।” প্রতি বছর ইসরাইলের নিথথানিম বেলাভূমিতে অনেকটা ভারতের বিখ্যাত কুম্ভ মেলার আঙ্গিকে ‘বুম্বমেলা’ নামে একটি বৃহৎ উৎসবটিতে প্রায় ৩০,০০০ এরও বেশি ইসরাইলী সমাগম হয়েছিল। তারা সাবাই হরেকৃষ্ণ কীর্তনের অপ্রাকৃত তরঙ্গের সাথে নৃত্য মূর্ছনায় আনন্দে গা ভাসিয়েছিলেন যা সমগ্র ইসরাইলের জন্য একটি আলোচিত বিষয় ছিল। কৃষ্ণভাবনামৃতের প্রচারের এ বৃহৎ সাফল্যের উপর ভিত্তি করে প্রতি বছর প্রায় ২৫,০০০ এরও বেশি ইসরাইলী ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থানে দর্শনে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। ইসরাইলের ড্রিউজ ধর্ম ও সনাতন ধর্ম অনেকটা একই হওয়ায় অনেক ড্রিউজ ধর্মানুসারী ইতোমধ্যে এ কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করেছেন। ইসরাইলের এসব ইস্কন কেন্দ্রগুলি ছাড়াও তেল আবিবের গিবাত স্যামুয়েলে সিমতাত রাহেল ১২ বি এ ইসকরেন কেন্দ্র রয়েছে। ধীরে ধীরে এ কৃষ্ণভাবনামৃত সংস্থা (ইস্কন) ইসরাইলী জনসাধারণের মাঝেও বিস্তার লাভ করছে। তারা সবাই অত্যন্ত সানন্দে শ্রীল প্রভুপাদের তৈরি এ কৃষ্ণভাবনামৃতের দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। প্রখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ ডঃ এ. এন ব্যাশাম একটি উক্তি করেছিলেন যে, “শ্রীল প্রভুপাদ তার বলিষ্ঠ পারমার্থিক, দৃষ্টিভঙ্গির সাহয্যে যে গৃহ নির্মাণ করেছেন সেখানে সারা পৃথিবীল মানুষ আশ্রয় পেতে পারে।” তাই ইসরাইলীদের এ কৃষ্ণভাবনামৃতের দূর্গে আশ্রয় গ্রহণ নিতান্তই কোন অবাকের বিষয় নয়। পাঠকদের জন্য বর্তমান সময়ের আলোচিত ইসরাইলীদের আলোচিত ইস্কনের এ প্রচার নিশ্চয়ই একটি আলোচিত বিষয়। হরে কৃষ্ণ ॥

 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।