বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯

৮১-৮৩ বছর বয়সী দম্পতির অবিশ্বাস্যকর অধ্যয়ণ নিষ্ঠা

প্রকাশ: ৭ নভেম্বর ২০২১ | ৬:১১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৭ নভেম্বর ২০২১ | ৬:১১ পূর্বাহ্ণ
৮১-৮৩ বছর বয়সী দম্পতির অবিশ্বাস্যকর অধ্যয়ণ নিষ্ঠা

অমরেন্দ্র দাস

“কৃষ্ণতত্ত্ব, ভক্তিতত্ত্ব,
রসতত্ত্ব-প্রান্ত।
সব শিখাইল প্রভু-
ভাগবত সিদ্ধান্ত ॥ ”
(চৈ.চ মধ্য ১৯/১১৫)
“শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শ্রীল রূপ গোস্বামীকে কৃষ্ণতত্ত্ব, ভক্তিতত্ত্ব, রসতত্ত্বের সীমা, রাধাকৃষ্ণের মাধুর্যপ্রেম পর্যন্ত ভাগবতের সমস্ত সিদ্ধান্ত শিক্ষা দান করেছিলেন।” ভাগবতকে খুব সুন্দর মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে শ্রীচৈতন্য-চরিতামৃতে। তাই এটি আপনাদের প্রতি আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল হতে বিনীত প্রার্থনা প্রতিদিনই শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যয়ন করুন। চলুন, আপনাদের একটি চিত্তাকর্ষক বাস্তব কাহিনী বলি। কোয়েম্বারে এক দম্পতি থাকতো (সম্পর্কে আমার মামা হয়)। সেখানে তাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তাদের মধ্যে যিনি প্রভুজী, তার নাম মি. মূর্তি, তাঁর বয়স ৮২-৮৩ হবে, তাঁর পত্নীর বয়স ৮০-৮১ হবে। তাঁরা কোয়েম্বারে একটি পুরাতন বাড়িতে থাকতেন। অনেক লোকেই সেখানে বাস করতেন, অনেক বৃদ্ধ প্রাজ্ঞ ব্যক্তিও ছিলেন; এটি ছিলো খুবই আরামদায়ক পুরাতন বাড়ি যাতে অনন্য আশ্রয় বলে খুবই সুন্দরভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। যখন আমি সেখানে ভ্রমনে গিয়েছিলাম তখন আমি ছিলাম অল্পবয়সী। দক্ষিন ভারতীয় মামা তাকিয়ে ছিলো এবং জিজ্ঞাসা করেছিলো কেন আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তখন আমি বলেছিলাম যে আমি ভ্রমনের উদ্দেশ্যে সেখানে এসেছি। এ শুনে তিনি খুশি হয়েছিলেন সেখানে আমি সে দুই দম্পতির সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম যাদের বয়স আশি ঊর্ধ্বো। তাদের দৈনন্দিন জীবন প্রণালি সম্পর্কে বলতে গেলে যা বলতে হয়- তাঁরা খুব ভোরে অর্থাৎ ৫টার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়তেন। তারা তাদের প্রাতঃবন্দনাদি নিত্যকর্ম সম্পাদন করতেন। তাঁরা ৮ টার মধ্যে প্রাতঃভোজ সম্পাদন করে ৮টা হতে দুপুর ১টা অবধি অর্থাৎ টানা ৫ঘন্টা তারা একস্থানে বসেই শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যয়ন করতেন। এভাবে তারা ৫০০ বারেরও বেশি শ্রীমদ্ভাগবত অধ্যয়ন সম্পন্ন করেছিল। অর্থাৎ তাঁরা উভয়ই সমস্ত ১৮ হাজার‘১ শ্লোকই যে কোন প্রকার মাদক সেবন ও দ্যূতক্রীড়াকে নিষিদ্ধ কর্ম বলে এগুলো হতে বিরত থাকত কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর মানুষ যাতে পারমার্থিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে আত্মতত্ত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় তার জন্য সর্বদা সচেষ্ট হয়ে উচ্চতর লোক তথা ভগবদ্ধামে গমনের জন্য উপদেশ প্রদান করা হয়েছে।
যারা এই পৃথিবীতে সাময়িক বিলাসিতা চায়, তাদের নিকট প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য-জমি, শস্য, ফল, গুগ্ধজাত পণ্য, স্বর্ণ এসব খুবই চমকপ্রদ বলে মনে হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো এগুলো ছেড়ে আমাদের চলে যেতে হয়। অর্থাৎ, যে দেহ এসব বস্তুর ভোগের জন্য লালায়িত সেটি অনিত্য। যেহেতু আমাদের এই জড় দেহ অনিত্য, তাহলে ঐ সব জড় ঐশ্বর্যের মূল্য কি? কিন্তু এই জড় দেহ যাকে আশ্রয় করে উপভোগ করছে সেই আত্ম হলো নিত্য।
গীতায় ভগবান ২/১৬ শ্লোকে বলেছেন, “যাঁরা তত্ত্বদ্রষ্টা তাঁরা সিদ্ধান্ত করেছেন যে অনিত্য জড় বস্তুর স্থায়িত্ব নেই এবং নিত্য বস্তু আত্মার কখনো বিনাশ হয় না।” প্রকৃতপক্ষে, আমরা যদি আত্মতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারি তাহলে অচিরেই জড় বন্ধন ছিন্ন করে গোলক ধামে প্রবেশ করতে সক্ষম হবো। আত্মার আসল উদ্দেশ্যই হলো পরমাত্মার সান্নিধ্য লাভ। এই পরমাত্মার (ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) প্রতি ঐকান্তিকভাবে শরণাগত হলেই জীবের জড় বন্ধন হতে মুক্তি লাভ সম্ভব।

 

চৈতন্য সন্দেশ নভেম্বর-২০২১ প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

About csbtg