হ্যাপি নিউ ইয়ার

প্রকাশ: ১ জানুয়ারি ২০২৫ | ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ | ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 22 বার দেখা হয়েছে

হ্যাপি নিউ ইয়ার

চৈতন্য চরণ দাসের Happy new year এর বঙ্গানুবাদ

আরও একটি নতুন বছর এলো আমাদের প্রত্যেকের জীবনে। সুতরাং আবারও সবার জন্য বলতে হয়, হ্যাপি নিউ ইয়ার’। নতুন বছরের প্রথম দিনই সবাই একে অপরের প্রতি শুভ কামনা জানায়। কিন্তু ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ কি শুধুমাত্র একে অপরের প্রতি উইশিং এ সীমাবদ্ধ? না, এর বাইরেও রয়েছে একটি নিগুঢ় বাস্তবতা। চলুন প্রথমে বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এই ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ অভিবাদনটি বিশ্লেষন করা যাক।

‘সময়’- এটি কি?
‘বছর’ শব্দটির সঙ্গে সবাই পরিচিত। সময়কে পরিমাপের জন্য একটি এককের নাম হল বছর। তবে ‘সময় কি? বৈজ্ঞানিক সঙ্ঘানুসারে সময়কে পরিমাপ করা হয় বিশ্বজগতের সকল বস্তুর পরিবর্তনের মাধ্যমে। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মতে। একটি ‘বছর’ মানে হল, পৃথিবী সূর্যকে একবার ঘুরে আসার সময়। যদি একটি বস্তু ক্রমাগতভাবে একই কক্ষপথে ঘুরতেই থাকে তবে আমাদের বাস্তবিক দৃষ্টিকোন থেকে সেটি কি বিশেষ কিছুবলে বিবেচনা করা যায়? কেননা পৃথিবী এবং সেই কক্ষপথ তো সবসময় পুরাতনই থেকে যায়। পৃথিবী যে যুগে যুগে ঘুরছে কোন পরিবর্তন ছাড়াই তাতে নতুনত্ব বলে তো কিছু নেই। অতএব বৈজ্ঞানিকভাবে বলতে গেলে আসলে কোন নতুন বছরের নতুনত্ব বলতে কিছুই নেই।

কি নতুনত্ব?

আমাদের সবার কোন না কোন নতুন কিছুর উপর আকর্ষন রয়েছে। সবাই চাই পুরাতনকে ছাড়তে। আপনি কি কখনো ভেবেছেন এটি কেন হয়? উত্তরটি কি এটি নয় যে আপনার পুরাতন যা কিছু রয়েছে তার প্রতি যে কোন কারণবশত আপনি অসন্তুষ্ট? পুরাতন লাইফ স্টাইল বা জীবন ধারা, পুরাতন বন্ধন, পুরাতন চাকরি এসব কিছু মাঝে আপনি অসম্পূর্ণতা বা পরিপূর্ণ নয় অনুভব করেন এবং যার ফলে, কোন নতুন ইচ্ছা আপনার মাঝে ঠাঁই পায় এবং যার

মাধ্যমে আপনি চেষ্টা করেন পুরাতন সেই একই গল্পকে পরিবর্তন করতে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ন তথ্য হল। আপনার চারপাশে যা কিছু সচক্ষে দেখছেন সেসবের অভ্যন্তরে রয়েছে কিছু বিশেষ গঠন প্রণালী।

বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘পারমানবিক বা আনবিক গঠণপ্রণালী’।

পৃথিবীর যে কোন বস্তুর (মোবাইল, ফার্নিচার, কোন শরীর ইত্যাদি) মধ্যে এ গঠনপ্রণালী রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি বস্তুর পরমাণুর মধ্যে কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন তাদের কক্ষপথে অবিরামভাবে ঘূর্ণায়মান। এ প্রকার গঠন প্রণালী পরিবর্তনের কারণে আমাদের চারপাশের সকল বস্তু পরিবর্তিত হচ্ছে। যার ফলে বস্তু পুরাতন হয় এবং আমাদের মাঝে অসম্পূর্ণতা ও অপরিপূর্ণতা সৃষ্টি করে। মানুষ তাই নতুনের খোঁজ করে। নতুন পুরুষ /স্ত্রী, (দেহটিতে এসব কাঠামো রয়েছে), নতুন গাড়ি, নতুন বাড়ি, নতুন অনেক কিছু বাসনার জন্ম দেয়। এক্ষেত্রে গড় বস্তুর মধ্যে এসব ঘটনা বা কার্যবলী আপনার আয়ত্তের বাইরে। আপনি তা পরিবর্তন করতে পারেন নাআথচ সবাই জড়বস্তুর মাঝে সুখ খুঁজতে গিয়ে যখন সে বস্তুটি পুরাতন হয়ে যায় তখন সবাই নতুনের খোঁজ শুরু করে। আর যদি কোন নতুন কিছু যেতে অসমর্থ হয় তখন সে দুঃখিত অনভব করে। এক্ষেত্রে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ অভিবাদনটাই তার প্রমাণ। সবাই নতুনকে বরণ করতেই সেলিব্রেট করে। তারা এর মাধ্যমে সুখ খোজার চেষ্টা করে। কিন্তু যে সুখ আমরা মাঝে মাঝে অনুভব করি তারও ব্যাখ্যা দিচ্ছে বিজ্ঞান।

সুখের আপাতবিরোধী সত্যতা আমরা প্রকৃতপক্ষে সুখের অন্বেষনে এসব বিষয়ের উপর হাত বাড়াই। অথচ বিজ্ঞানীরা সুখের ভাষ্য দিচ্ছে অন্যভাবে আমাদের কোন আনন্দ বা ব্যাথা বা দুঃখ হল শরীরের নির্দিষ্ট অংশে নিদিষ্ট কিছু ‘সি’ ফাইবা অথবা ডেলটা ফাইবারের কিছু পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই নয়।

বিজ্ঞানই কি সবকিছু?

উপরে যেসব নিগুঢ় তত্ত্ব প্রদর্শিত হয়েছে তার সঙ্গে বিজ্ঞানের এক ঘনিষ্ট সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। মনে হয় বিজ্ঞানই আমাদের জীবনের সবকিছু। যদি আমাদের চারপাশের সবকিছু এমনকি আমাদের সুখ- দুঃখের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকে তবে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ এই অভিবাদনের কি কোন মূল্যই নেই?
আসলে এক্ষেত্রে এসবের বাইরেও আমাদের মাঝে আরও বিশেষ কিছু শক্তি রয়েছে। বিজ্ঞান কিন্তু প্রকৃত নতুনত্বের অনুসন্ধান সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে পারে না। অপরদিকে বৈদিক শাস্ত্রসমূহ আমাদের জন্য প্রকৃত বা শাশ্বত নতুনত্ব কিভাবে পাওয়া যায় তার ব্যাখ্যা দেয়। শাস্ত্রমতে, সুখ পেতে হলে আমাদেরকে নতুন কিছু করতে হবে। কিন্তু সেই নতুনত্বটি হল পারমার্থিক পুনর্জাগরণ।
পারমার্থিক পুনর্জাগরণ বৈদিক শাস্ত্র ব্যাখ্যা করছে যে, আমাদের সব প্রচেষ্টাই শুধুমাত্র চারটি বিষয়ের জন্য। খাওয়া, ঘুম, যৌন সঙ্গ এবং আত্মরক্ষা। এ চারটি ইন্দ্রিয় তৃপ্তির বিষয় পূরণার্থে মানুষ দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে। এমনকি যে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি তাও এসব বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, পরমানুর অলৈাকিকতা ব্যাবহার করে পারমানবিক বোমা আবিস্কার করা হয় শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য। যেটি এখন অনেক দেশের জন্য আত্মরক্ষার মূল হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত। বিজ্ঞান এভাবে আত্মক্ষার জন্য অনেক কিছু আবিস্কার করছে। অপরদিকে তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বিজ্ঞানের এক উল্লেখযোগ্য অবদান হলেও তার সঙ্গে এ চারটি বিষয়ের পরোক্ষভাবে যোগসাজেস রয়েছে। এক পরিসংখ্যানে Google বলছে পৃথিবীতে সর্বাধিক ভিজিট হয় সেক্স সম্পর্কিত ওয়েবসাইট সমূহ। অর্থাৎ মানুষ এটিকে যৌন ইন্দ্রিয় তৃপ্তিতে ব্যবহার করছে। অতএব, শ্রীমদ্ভাগবত বলছে, পুনঃ পুনস্ চর্বিত চর্বণম “একই জিনিস বার বার চিবানো”। এর মানে হল ঘুরে ফিরে সব প্রচেষ্টা ঐ চারটি বিষয় বারবার চরিতার্থ করার জন্যই। তাই যেহেতু পশুর সমাজে পারমার্থিক প্রচেষ্টা অসম্ভব তাই ভগবান মনুষ্য সমাজের জন্য সেই সক্ষমতা দান করেছেন। তাই এসব বিষয়ের মাঝে অসম্পূর্ণতা এবং প্রকৃত আনন্দ খুজে না পাওয়া কিংবা দুঃখ দুর্দশার দরুন বৈদিক শাস্ত্রের প্রথম নির্দেশ দেয়া হয়েছে ‘অথাতো ব্রহ্ম জিজ্ঞাসা’, অর্থাৎ জীবনের উচ্চতর উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান করা। যেটি অনুসন্ধানের ফলে ভগবানের সঙ্গে প্রীতিময় সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আর তখন আপনি প্রতিমুহুর্তে চিরস্থায়ী আনন্দ ও চিরস্থায়ী সুখ অনুভব করবেন। সে জন্যে মানব সমাজের প্রতি বৈদিক শাস্ত্রের অভিবাদন ও ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ অর্থাৎ এই চিরস্থায়ী সুখ এবং আনন্দ বা চিরস্থায়ী নতুনত্ব লাভের জন্য ভগবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করুন। তখন বছর নয় প্রতিটি মুহুর্তেই চির নতুনত্বের স্বাদ আস্বাদন করবেন।

হরেকৃষ্ণ

চৈতন্য সন্দেশ ডেস্ক:

চৈতন্য চরণ দাস (২৫), শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামী মহারাজের একজন শিষ্য, তিনি ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর ডিগ্রি লাভ করে ভারতের ইসকন পুনেতে ব্রহ্মচারী হিসেবে ভগবানের সেবা করে চলেছেন।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ, জানুয়ারী – ২০১১ ইং

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।