এই পোস্টটি 277 বার দেখা হয়েছে
আলফ্রেড ফোর্ডের কৃষ্ণপ্রেম
বিখ্যাত ফোর্ড মোটর কেম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক ধনকুবের হেনরি ফোর্ডের প্রপৌত্র আলফ্রেড ফোর্ড নিজেকে কৃষ্ণভাবনার সঙ্গে যুক্ত করে চিন্ময় জগতে প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। এ যেন জাগতিক জীবনধারাকে কৃষ্ণভাবনামৃত ভাবধারায় রূপান্তরিত করার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ।
“আমি এখন যেরূপ জীবন-যাপন করছি এবং যে বিশ্বাস অবলম্বন করছি তা দেখে আমার প্রপিতামহ হেনরি ফোর্ড বেঁচে থাকলে খুবই খুশি হতেন।”
তিনি ভগবানের একজন সেবক, একজন মন্দির নির্মাতা, যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহিমা প্রচার করে চলেছেন সেই ফোর্ডের সাথে দেখা করেছিলেন মনু সাহা। অম্বরীষ দাস হয়তো ভারতীয় নন, কিন্তু তার আত্মাটি ভারতীয়। দীক্ষিত নাম লাভ করার পূর্বে তার নাম ছিল আলফ্রেড ক্রুশ ফোর্ড। হেনরী ফোর্ডের পুত্র, এডসেল ফোর্ডের কন্যা হলেন তার মাতা। এই কারণে তার মায়ের দিক থেকে তিনি হলে চতুর্থ প্রজন্ম এবং আমেরিকার সবচেয়ে আধুনিক পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তার পিতা ওয়াল্টার বি ফোর্ড ২ যদিও ফোর্ড বংশের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত নন, তবুও কাকতলীয়ভাবে তার নামের শেষ অংশটুকু ফোর্ড বংশের সাথে মিলে যায়।
টিউলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় তিনি ক্যাম্পাসের রেকর্ড স্টোরে জর্জ হ্যারিসনের দ্যা রাধা কৃষ্ণ টেম্পল অ্যালবামটি তার নজরে আসে। অ্যালবামটির ওপরে দুটি সুন্দর ব্যক্তির ছবি ছিল।
রেকর্ডটি প্রথম শুনেই তার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আর এভাবেই আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইস্কনের সংস্পর্শে আসেন।
১৯৭৫ সালে তিনি দীক্ষা প্রাপ্ত হন এবং নাম হয় অম্বরীষ দাস বা ভগবানের দাস।
তিনি একজন বাঙ্গালী নারীকে বিয়ে করেন এবং তখন থেকে তার খ্যাতি ও সম্পদ তিনি হরেকৃষ্ণ আন্দোলনের প্রচার কার্যে নিয়োজিত করেন। তার পত্নীও ছিলেন একজন কৃষ্ণভক্ত। পত্নীকে সঙ্গী করে তিনি সারাবিশ্বে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “এই পারমার্থিক বিজ্ঞান শুধু ভারতীয়দের জন্যে নয়, পক্ষান্তরে সারা বিশ্বের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য।”
হাউস্টনের জন্মাষ্টমী উদযাপনকে ঘিরে আলফ্রেড ফোর্ড সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন। এবং সেখানে Rediff.com এর পক্ষ থেকে মনু সাহাকে দুই পর্বের একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন:
মনু সাহা: আপনি তো আমেরিকার সবচেয়ে ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। আপনি কিভাবে বেড়ে উঠেছেন?
অম্বরীষ দাস: আমি প্রাচুর্যের মধ্যেই বড় হয়েছি। আমাদের পরিবারের সারা দেশে অনেক ঘর-বাড়ি ও ব্যক্তিগত বিমান ছিল, আমরা ইউরোপের অনেক স্থনে ভ্রমণ করতাম। তাই আমি অত্যন্ত সম্ভ্ৰান্তভাবেই বেড়ে উঠেছি।
মনু সাহা: ফোর্ড হওয়ার ব্যাপারটি এবং পরিবারের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার মাধ্যমে বেড়ে উঠা কি সহজ ছিল?
অম্বরীষ দাস: যুবক থাকাকালীন ব্যাপারটি সহজ ছিল, কিন্তু যখন ধীরে ধীরে আরো বড় হয়েছি তখন সমস্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছিল।
মনু সাহা: কেন?
অম্বরীষ দাস: আপনি জানেন সত্যিকারভাবে আপনি কোথায় উপযুক্ত, বিশেষত, যখন ফোর্ড কোম্পানির সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনার আরো পাঁচজন জ্ঞাতিভ্রাতাগণ (Cousin) চেষ্টা করে যাচ্ছিল। এক্ষেত্রে ফোর্ড কন্যার পুত্র হওয়ায় আমি ও আমার ভ্রাতার প্রেক্ষাপটটি বিশেষভাবে ভিন্ন ছিল।
মনু সাহা: যে কোনোভাবেই হোক আপনার তো সবকিছুই ছিল, তবুও আপনি অখুশী ছিলেন কেন?
অম্বরীষ দাস: আমি যে অখুশী ছিলাম তা নয়। কিন্তু আমার চারপাশ অখুশীতে ভরা ছিল এবং লোকেরা এমন কিছু করার জন্য প্রাণপন পরিশ্রম করে যাচ্ছে যা প্রায়ই প্রকৃতপক্ষে সুখ নিয়ে আসত না।
আমার সর্বদা এই ধারণাও ছিল যে, জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী এবং এমনকি যদি আপনি বড় কিছু অর্জনও করেন তবে তা বেশিদিন ধরে রাখতে পারবেন না।
মনু সাহা: এই ভাবনাগুলো সবসময় আপনার মনে বিচরণ করত। এমনকি সেটা আপনার গুরু ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের আচার্য শ্রীল এ.সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের সান্নিধ্যে আসার মাধ্যমে আপনার সমস্ত প্রশ্নের ও সন্দেহের নিরসন হয়।
অম্বরীষ দাস: বেড়ে উঠার সাথে সাথে অনেক প্রশ্ন উত্থিত হত। যখন আমি যুবক ছিলাম, আমি ভেবে অবাক হতাম যে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কত বৃহৎ, আকাশের অন্য প্রান্তে কি রয়েছে, ভগবান কে, তিনি কি রকম দেখতে এই সমস্ত প্রশ্ন উত্থিত হতো।
মনু সাহা: বর্তমানের আপনাকে দেখে আপনার প্রপিতামহ হেনরী ফোর্ড কি খুশি হতেন বলে মনে করেন আপনি ?
অম্বরীষ দাস: আমি তো তাই মনে করি, কেননা তিনি প্রাচ্যের দর্শন ও পারমার্থিক জীবনের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। তিনি পূনর্জন্ম বিশ্বাস করতেন এবং একজন নিরামিশাষী ছিলেন। আমি যে জীবনধারার মধ্যে রয়েছি এবং যে বিশ্বাস আমি ধারণ করি সেটি দেখে তিনি খুবই খুশি হতেন।
মনু সাহা: তাকে নিয়ে লেখা একটি গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একসময় ডেট্রয়টে এক সুফি সাধু এসেছিলেন এবং তাদের মধ্যে পূনর্জন্ম ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ১৯৬০ সালের দিকে আপনি হিপ্পি হয়ে গিয়েছিলেন। জীবনে তখন আপনি কিসের অনুসন্ধান করছিলেন? সেটি কি পেয়েছিলেন?
অম্বরীষ দাস: আমি তখন জীবনের অর্থ অনুসন্ধান করছিলাম এবং যে বিশ্বাসের প্রেক্ষাপটে আমি বড় হয়েছি সেখানে তা খুঁজে পাই নি। হিপ্পি হওয়ার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় পন্থা অধ্যয়নের মাধ্যমে এক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলাম। কিন্তু যখনই আমি শ্রীল প্রভুপাদ তাৎপর্যকৃত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করি। তখন সেটি আমার কাছে ঘণ্টার ধ্বনির মত মনে হয়েছিল। তিনি (প্রভুপাদ) সেখানে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন যা এতদিন আমি অনুসন্ধান করছিলাম ভগবান হলেন একজন ব্যক্তি, ভগবানের সাথে আমাদের নিত্য সম্পর্ক রয়েছে এবং সেই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে আমরা চিন্ময় জগতে প্রত্যাবর্তন করতে পারি।
মনু সাহা: ইস্কনের সাথে আপনার সংশ্লিষ্টতা কিভাবে শুরু হয়?
অম্বরীষ দাস: আমার এক আমেরিকান বন্ধু ছিল, অতুল আনন্দ। সে কৃষ্ণভক্ত হয়েছিল। নিভৃতচারী হিসেবে ওয়াওমিং এর পাথুরে পর্বতে বাস করার সময়, সে আমার এখানে আসত, আমার জন্য গ্রন্থ, জপমালা নিয়ে আসত। আমি তখন থেকে অধ্যয়ন, জপ করা ও নিরামিষ খাদ্য রান্না করা শুরু করেছিলাম। দীক্ষিত হওয়ার পূর্ব থেকেই আমি সম্পূর্ণরূপে এই জীবনধারার সাথে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলাম।
শ্রীল প্রভুপাদের সাথে তৃতীয়বারের সাক্ষাতে আমি দীক্ষা লাভ করি এবং শ্রীল প্রভুপাদ আমার নাম দেন অম্বরীষ দাস এমনকি দীক্ষা গ্রহনের পূর্ব থেকেই আমি জানতাম তিনিই আমার আধ্যাত্মিক গুরু।
মনু সাহা: শ্রীল প্রভুপাদের সাথে প্রথম সাক্ষাৎকারের সেই মুহূর্তগুলো সম্পর্কে বলবেন বলবেন?
অম্বরীষ দাস: প্রভুপাদ যখন ডালাস গুরুকুলে অবস্থান করছিলেন, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। আমি তার গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করতাম। যখন প্রথমবার তার কক্ষে প্রবেশ করি আমি অত্যন্ত অভিভূত হয়ে পড়ি। আমি তখন প্রণতি নিবেদন করলাম। তিনি তার ডেস্কের পেছনে বসেছিলেন এবং আমি সেখান থেকে উঠতে না উঠতেই, তিনি বলে উঠলেন; “তুমি হেনরি ফোর্ডের পৌত্র (নাতি)।”
আমি বললাম ‘হ্যাঁ’ এবং তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন এখন হেনরি ফোর্ড কোথায় ?
এই কথাট আমাকে খুব দ্রুতই পারমার্থিক পথে পরিচালিত করে কেননা আমি উপলব্ধি করি, তিনি যে কোথায় আমি তা জানি না। আরো একটি বিষয় হল, যা কিছু তিনি অর্জন করেছেন অর্থ, খ্যাতি সবকিছুই তাকে ত্যাগ করতে হয়েছিল। কেননা জড়জগতের সবকিছুই হল ক্ষণস্থায়ী।
মনু সাহা: ‘সুখ’ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন?
অম্বরীষ দাস: আপনি ভারতীয়, অপরিসীম সুখ সম্বন্ধে আপনার ধারণা রয়েছে। সুখ মানে এমন কিছু নয় যার শুরু আছে ও শেষ আছে-এটি সীমাহীন। কিছু লোক সুখ উপভোগ করে যদি তারা কেনাকাটা করতে পারে কিংবা ভালো খাবার দাবার খেতে পারে। কিন্তু তাদের সেই সুখ কতক্ষণ স্থায়ী হয়? সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না।
সুখ ইন্দ্রিয় উপভোগের বিষয় থেকে আসতে পারে না। এটি আসে আত্মউপলব্ধি থেকে। এটি এই সমস্ত উপলব্ধি থেকে আগত হয় যে, আমরা কে, আমাদের ধর্ম কি? আমাদের কি করা প্রয়োজন? কাকে সেবা করতে হবে
একবার যদি তা খুঁজে পাই এবং সে অবস্থানে স্বস্তি অনুভব করি, তখন আমরা উপলব্ধি করি যে, সেই অবস্থানটির কোনো পরিসীমা নেই। কেউ তা ছিনিয়ে নিতে পারে না। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়াতে কোনো ভয় নেই। এটিই হলো সুখের সূচনা। কারণ সেই সুখ ক্ষণস্থায়ী নয়।
মনু সাহা: শ্ৰীকৃষ্ণ সম্বন্ধে আপনার ধারণা কি? অম্বরীষ দাস: কৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান। তিনি সবকিছুর আদি ও অন্ত। আমি পারমার্থিক জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই জন্যেই যাতে আমি তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি। এই মুহূর্তে আমি সেবা ভাবে অধিষ্ঠিত, যেখানে সেবা নিবেদনের মাধ্যমে তার প্রতি আমার ভালবাসা ও উৎসর্গতা প্রদর্শন করি। কিন্তু অন্তিমে আমি কৃষ্ণকে আমার সখা হিসেবে লাভ করতে চাই। আমি কৃষ্ণের সাথে গো-চারণ করতে চাই ও কচরী খেতে চাই। (হাসি)
মনু সাহা: আপনি কৃষ্ণ ভক্ত হওয়াতে আপনার পরিবার ও সামাজিক পরিমণ্ডল থেকে কিরকম প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?
অম্বরীষ দাস: এটা একটু ভিন্ন ছিল। ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের কথা। তখন লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন কিছু করার প্রতি মনোনিবেশ করেছিল। তখন ভারতের প্রতিও বেশ আগ্রহ ছিল। আমার পিতা মাতা ভেবেছিল আমার ব্যাপারটি ছিল খামখেয়ালিপনা এবং আমি সহসা এখান থেকে বেরিয়ে আসবো।
(হাসি) আমি কখনো তা করিনি এবং যখন আমি শর্মিলাকে বিবাহ করি তখন সেটা তাদের জন্য একটি মাইলস্টোন ছিল। তারা তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিল। শর্মিলা পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছিল। সে ছিল সুশিক্ষিত ও মার্জিত নারী। আমার সন্তানদেরকেও তারা স্নেহ করতো
১৯৬০ ও ১৯৭০ দিকে হরেকৃষ্ণ আন্দোলনকে এক প্রকার ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মানুষ্ঠান (Cult) হিসেবে বিবেচনা করা হতো। অনেক লোক মনে করতো এই ব্যাপারগুলো নিছক পাগলামি-বৈধ ও কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত নয়। এটি মুনিদের (এক প্রকার গীর্জার লোকেদের সংস্কৃতির) মতো কোনো একটা নতুন ধর্মীয় মতবাদের সঙ্গে তুলনা করা হতো।
লোকেরা এটি উপলব্ধি করতে পারছিল না যে, এই বৈষ্ণব সংস্কৃতি অত্যন্ত সুপ্রাচীন এবং তা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার মতো সুপ্রাচীন বৈদিক শাস্ত্রের ওপর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। আপনাকে তখন ক্রমাগতভাবে লোকেদের বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা করতে হচ্ছিল। এটা এক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছিল-এটি প্রতিষ্ঠিত করা যে, হরেকৃষ্ণ আন্দোলন তখনকার দিনে প্রচলিত অন্যান্য উদ্ভট কার্যকলাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন।
মনু সাহা: ১৯৭০ সালের দিকে আপনি এলিজাবেথ রিউটারকে (ডেট্রয়েট শ্রমিক নেতা ওয়াল্টার পি. রিউটারের কন্যা) নিয়ে ডেট্রয়েটে ১৯২০ সালের একটি ম্যানসনে যে ভক্তিবেদান্ত সেন্টার শুরু করেছিলেন তাতে আপনার পিতা মাতা খুব একটি খুশি ছিলেন না। এমনকি তারা এইজন্যে আপনাকে গৃহচ্যুতও করেন। পরবর্তীতে তাদের পরিবর্তনটা কিভাবে হলো ? অম্বরীষ দাস: কেন্দ্রটির উদ্বোধন নিয়ে পত্র পত্রিকায় বেশ লেখা-লেখি হয় এবং আমার ঠাকুর মা এই বিষয়টিকে খুব সহজভাবে নেন। তিনি তখন আমার মায়ের সাথে কথা বলে তাকে শান্ত করেন। ঠিক কয়েক বছর পরে সবকিছু স্বাভাবিক হলে তারাই আবার মন্দিরে আসে।
মনু সাহা: কিভাবে কেউ জাগতিক ও পারমার্থিক জগতের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারে?
অম্বরীষ দাস: আমি শুধুমাত্র আমার কথাই বলতে পারি। সর্বপ্রথমে আমাকে আমার পারমার্থিক জীবনটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর এটি বজায় রাখতে আমাকে সবকিছুই ঠিক সময়ে করতে হবে। আমি প্রতিদিন ভোরে তিনটা বা চারটার দিকে ঘুম থেকে উঠে প্রাত্যহিক পারমার্থিক অনুশীলন করি। হরিনাম জপ করি এবং ভগবানের প্রতি সেবা নিবেদন করি। তারপর অন্য কার্যক্রমগুলো যথাক্রমে সম্পন্ন হয়।
যদি কোনোদিন আমি মন্দিরে যেতে না পারি তবে ইন্টারনেটে আরতি দর্শন করি। আমি গৃহে বিগ্রহের যত্নগ্রহণ করি, গুরুদেবের প্রতি সেবা নিবেদন করি, শাস্ত্রগ্রন্থ অধ্যয়ন করি, যদি দিনের অগ্রভাগে এসব কিছু ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় তবে দিনের বাকী সময়টুকু এমনিতেই ঠিকভাবে প্রবাহিত হয়ে যায়।
মনু সাহা: সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান মায়াপুরে নির্মানাধীন বৈদিক মন্দির সম্পর্কে কিছু বলুন।
অম্বরীষ দাস: সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মায়াপুরে এ মন্দিরটি নির্মানের জন্য আমি নিজেকে মনোনিবেশ করেছি। এর নির্মাণার্থে প্রারম্ভেই আমি প্রায় পঁচিশ মিলিয়ন (২ কোটি ৫০ লক্ষ) ডলার প্রদান করি। আমি এত বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে আমি কিছুটা বিচলিত ছিলাম কেননা তখন ফোর্ড কোম্পানি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে ব্যাংকক্রাফটের মধ্য দিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ অপ্রাকৃত প্রজেক্ট সম্পাদনের জন্য আমি খুব খুশী এবং এ প্রজেক্টটি পশ্চিমাদের, ইউরোপিয়ানদের, আমেরিকানদের মায়াপুরে এসে হরেকৃষ্ণ সংকীর্তন করতে সাহায্য করবে। মন্দিরটি উদ্বোধনের দিনক্ষন কিছুটা পেছানো হয়েছে এবং আশা রাখি ২০২২ সালে আমরা এটি উদ্বোধন করতে সমর্থ হবো। এটি অত্যন্ত জটিল একটি মন্দির। যেখানে তিনশ পঞ্চাশ ফুট উঁচু একটি সুবিশাল গম্বুজ থাকবে এবং আমরা বেদের বর্ণনানুসারে গম্বুজের অভ্যন্তরে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডসম্বলিত একটি বিশাল মডেল স্থাপন করতে যাচ্ছি। তাই এটি অনেক সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও শ্রমসাধ্য।
মনু সাহা: হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের বাইরে আপনার অন্য কোনো আগ্রহ রয়েছে?
অম্বরীষ দাস: আমার বয়স ৬৫। একসময় আমার প্রচুর অন্যান্য ইচ্ছা বা আগ্রহ ছিল। কিন্তু যখন আপনি বৃদ্ধ হয়ে যাবেন আপনাকে মনোনিবেশ করতে হবে জীবনে প্রকৃতপক্ষে আপনি কি হওয়ার চেষ্টা করেছেন, সে বিষয়ে। হরে কৃষ্ণ আন্দোলনে যোগদানের কারণ হলো পারমার্থিক অগ্রগতি সাধনের জন্য। কৃষ্ণভাবনাময় হওয়ার সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো যখন আপনি দেহত্যাগ করবেন আপনি যেন চিন্ময় শরীর লাভ করতে পারেন, অথবা অন্তত পরবর্তী জন্মে এমন একটি জন্ম লাভ করা যা বর্তমান জন্ম থেকেও উন্নত হবে। মৃত্যু হল অন্তিম পরীক্ষা। তাই ৬৫ বছর বয়সে এসে আমাকে অন্তিম পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
মনু সাহা: শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা থেকে কোন বার্তাটি আপনি চান যেন আজকের বিশ্বে প্রচারিত হোক ?
অম্বরীষ দাস: অনেক বার্তাই রয়েছে। তবে আমি বিশেষভাবে বলব মন্মনা ভব মদ্ভক্ত, যার অর্থ হলো কৃষ্ণের শরণাগত হওয়া। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু। তিনি জানেন, আমাদের জন্য কোনটি সর্বোত্তম। তাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
মনু সাহা: আপনার কাহিনিটি চিত্তাকর্ষক। আমি আশ্চর্য হচ্ছি আপনাকে নিয়ে কোনো গ্রন্থ বা মুভি নেই!
অম্বরীষ দাস: সাক্ষাৎকারের জন্য আমি আনন্দিত। আমি অত্যন্ত অন্তর্মুখী একজন ব্যক্তি। আমার সহধর্মিনী এবং আমি কখনো জনসম্মুখে প্রচার কামনা করি না।