হলিউডে হরে কৃষ্ণ

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 41 বার দেখা হয়েছে

হলিউডে হরে কৃষ্ণ

এ আন্দোলনের কথা ইতোপূর্বে কেউ শোনেনি। আন্দোলনের নাম ‘কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন’। কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন কি সেটা জানতে ১৯ শতকে আমেরিকানদের বেশি সময় লাগেনি। কেননা ১৯৬৬ সালে শ্রীল প্রভুপাদ ইস্কন প্রতিষ্ঠার পর তা তড়িৎ গতিতে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত হিপ্পি থেকে রীতিমত হ্যাপি কৃষ্ণভক্তে রূপ নেয়ার বিষয়টি আমেরিকাকে বেশি নাড়া দেয়। কেননা খোদ আমেরিকান সরকারই এদের পরিবর্তনে ব্যর্থ ছিল। সেক্ষেত্রে এই বৃদ্ধ লোকটি (শ্রীল প্রভুপাদ) কী এমন অমৃত দিল যা কিনা তাদেরকে এতটাই পরিবর্তন করল। এরপরের ঘটনা সবারই জানা যে, কিভাবে এই কৃষ্ণভাবনামৃত পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে এ কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন আলোড়ন সৃষ্টি করার অনেকগুলো সেক্টরের মধ্যে হলিউড জগত হল অন্যতম। হলিউড তখন এ আলোচিত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ফিল্ম তৈরি করতে উৎসাহী হয়। হলিউডের বিভিন্ন মুভিতে কৃষ্ণ বিষয়ক বা ইসকন বিষয়ক বিভিন্ন ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আবার তা নিয়ে পুরো মুভিও তৈরী করা হয়। বর্তমানেও এ বিষয়ের উপর অনেক ফিল্ম নির্মিত হচ্ছে।

নিচে তার একটি বিস্তৃত বিবরণী তুলে ধরা হল।

ছবির নাম The Policeman Laughin ১৯৭৩ সালে তৈরি হলিউডের এ মুভিটিতে একটি বিশেষ দৃশ্যে একদল হরেকৃষ্ণ ভক্ত নেচে গেয়ে কীর্তন করতে করতে ছবির অন্যতম চরিত্র ম্যাথুয়ের দিকে আসতে থাকে এবং পরবর্তীতে তার সাথে কিছু কথা হয় ওদের সাথে।

জন ওয়াটার পরিচালিত কমেডি ফিল্ম Female Trouble (১৯৭৪) ছবিটির এক পর্যায়ে কাহিনীর অন্যতম চরিত্র ট্যাফি (Mink Stole) বাসায় ফিরে ঘোষনা করে সে হরেকৃষ্ণ (ইস্কন) লোকদের সঙ্গে যোগ দিতে যাচ্ছে। তখন ছবির আরেকটি চরিত্র ডন (Divine) তাকে সতর্ক করে যে যদি সে সেখানে যোগ দেয় তবে সে ট্যাফিকে হত্যা করবে। ডন তার মেয়ে ট্যাফিকে তখন বিভিন্ন উপায়ে অপদস্ত করে। সে চেয়ার দিয়ে আহত করে অচেতন করে এবং হরে কৃষ্ণভক্ত হওয়ার কারণে তাকে মেরে ফেলে।

১৯৭৯ সালে রোলার বুগি নামক মুভিতে একটি চরিত্র তার ডিসকো মিউজিক এবং রোলার স্টেটিং ভোলার জন্য হরে কৃষ্ণ ভক্ত হয়ে যান।

১৯৮১ সালে তৈরি তিনটি মুভি Striper, Time Bandits, The devil and Max delvin -এ হরেকৃষ্ণ কীর্তন, হরেকৃষ্ণ ভক্তদের দেখা যায় বিশেষত জর্জ হ্যারিসন কর্তৃক নির্মিত Time Bandits এ ভগবান জগন্নাথকে দেখানো হয়।

একইভাবে ১৯৮২ সালে নির্মিত Blade Runner এ হরে কৃষ্ণ ভক্তরা রাস্তায় কীর্তন করে। একইভাবে They call me bruce এ হরেকৃষ্ণ ইস্কন ভক্তদের দেখানো হয়।

১৯৮৪ সালে Karaate kid এ ড্যানিয়েলকে (ছবির চরিত্র) দু’হাতে তালি দিয়ে ‘হরেকৃষ্ণ’ গাইতে দেখা যায়।

১৯৮৬তে Hannah and her sister মুভিতে ‘উডি এলেন’ চরিত্র ঈশ্বরের সন্ধানে হরে কৃষ্ণ (ইসকন) দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৯০ এ Miami Blues মুভিতে প্রধান চরিত্র এলেক বাল্ডউইন একজন হরেকৃষ্ণ ভক্তের আঙ্গুল ভেঙ্গে দিলে একপর্যায়ে সে মারা যায় যার ফলে পুলিশ তার খোঁজে অভিযান চালায়। এ নিয়েই কাহিনী।

১৯৯৩ সালে গান ভ্যান ম্যান্ট পরিচালিত Even cowgirls get the blues মুভিতে বোনাজা জেলীবিন মিমি বলছিলেন, “রাখাল বালিকারা (Cowgirl) অনেক শতাব্দী ধরে পূর্বে ছিল। প্রাচীন ভারতে গোপীদের হাতেই গাভীদের সুরক্ষার ভার ছিল। প্রতিটি গোপী সুদর্শন যুবক ঈশ্বর কৃষ্ণের প্রেমে মজে থাকত। কৃষ্ণ বাঁশি বাজাত। যখন পূর্ণিমা হত তখন নদীর তীরে বংশীধ্বনিতে গোপীদের ডেকে আনত। তখন তিনি নিজেকে ১৬ হাজার কৃষ্ণতে রূপান্তর করে প্রতিটি গোপীর বাসনা পূরণ করতেন। অথচ তিনি একজনই।”

National Lampoon’s senor trip (১৯৯৫) এ অন্যতম চরিত্র ছবিটি জোনস্ বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে হরে কৃষ্ণ ভক্ত হয়ে যায়।

জেমস ম্যানগোল্ড এর Girl, Interrupted (১৯৯৯) মুভিতে হরে কৃষ্ণ আন্দোলন সম্পর্কে পরিস্কার বিশ্লেষণ করা হয়। ছবিতে রাইডার চরিত্রকে গ্র্যাজুয়েশনের পর তার পরিকল্পনা কি জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দেন, “আমি কৃষ্ণ দলে যোগ দিতে যাচ্ছি”। তার সহপাঠি উত্তর দেয় “হরেকৃষ্ণ? আসলেই এটি মজার।”

২০০৩ এ নির্মিত Dickie Roverts: Former child star নামক ফিল্মের একটি চরিত্র শেষের দিকে হরেকৃষ্ণ আন্দোলনে যোগ দিতে দেখা যায়। সেখানে শ্রীল প্রভুপাদের ভিডিও ফুটেজ ব্যবহৃত হয় এবং ঐ চরিত্রকে সেখানে তীর চিহ্নের সাহায্যে চিহ্নিত করা হয়।

২০০৫ সালে নির্মিত Bee season হলিউডে বেশ সাড়া মেলে। ছবিটি অনেক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। সেখানে ছবির একটি চরিত্র আরন নউমান একটি পার্কে চালি নামে একটি মেয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ইহুদি ছেড়ে হরে কৃষ্ণ দলে যোগ দেন।

একইভাবে Cheech and chong movie up in Smoke (1978), hippie themed Hair (1967), Dawn of the dead (1978), The kentucky fried Movie (1977), First of the final destination trilogy (2000), osmosis jones (2001), Jersey girl (2004), Children of Men (2006), Across the univers (2007), Religulaous (2008) সহ আরও বিভিন্ন ফিল্মে হরেকৃষ্ণ বা ইস্কনের কার্যক্রম কিংবা কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনকে তুলে ধরা হয়। ২০০৮ এর Religulous মুভিতে একবারে শুরুর দিকেই হরেকৃষ্ণ ভক্তদের পরিস্কারভাবে বিভিন্ন দৃশ্য তুলে ধরা হয়।

এভাবে শ্রীল প্রভুপাদের হরেকৃষ্ণ আন্দোলন তথা ইস্কন সারাবিশ্বে খুব আলোড়ন সৃষ্টি করে। যার প্রতিফলন ঘটে হলিউডে। উল্লেখ্য শুরুর দিকে ইস্কন ভক্তদের জনসাধারণ ‘হরেকৃষ্ণ’ নামে ডাকত।

হরে কৃষ্ণ।


মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , নভেম্বর – ২০১০ ইং 

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।