এই পোস্টটি 211 বার দেখা হয়েছে
করুণাশক্তি দেবী দাসী
সম্প্রতি ‘হরেকৃষ্ণ কমিউনিটি রেডিও স্টেশন’ এর এক বৎসর পূর্ণ হয়। এটির কর্ণধার শ্রীমতি সুধর্মা দেবী দাসী বর্ষ পূর্তিতে তাঁর দুঃসাহসী ও যুগোপযুগী পারমার্থিক উদ্যোগটি সম্পর্কে তিনি যে অভিমত প্রদান করেন তার আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হল- তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই রেডিও প্রকল্প প্রচার করার ধারণাটি কোভিড-১৯ শুরুর আগে থেকেই ছিল। বিশেষ করে আমি আরো বেশি অনলাইন ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা চালু করার জন্য আগ্রহান্বিত ছিলাম। অনেক কিছু থাকলেও রেডিওতে ভক্তিমূলক প্রচার ছিল না। রেডিওতে কীর্তন, ভজন, প্রবচন, টক-শো ইত্যাদি প্রচার করা হলে ভক্তরা এমনকি যে কেউ কর্মক্ষেত্রে, গৃহস্থালি সেবা কর্মে, হাঁটতে হাঁটতে, যানবাহনে কোথাও চলতে চলতে, গাড়ি চালাতে চালাতে প্রভৃতি ক্ষেত্রে শ্রবণ করতে পারেন। এতে করে শ্রোতার এই সকল দুর্লভ বৈদিক জ্ঞান অনুচর্চার মাধ্যমে অনায়াসেই যে কেউ পারমার্থিক উন্নতি করতে সক্ষম হবেন। অথবা একটি নৈতিকতাসম্পন্ন সভ্য সমাজ বিনির্মাণ হবে। এমনকি কেউ অলস সময় অতিবাহিত করলেও এটি শ্রবণের মাধ্যমে সুন্দর সময় কাঁটাতে পারেন।’ বাস্তবিক অর্থে, রেডিও বিনোদনের এমন একটি মাধ্যম, যেটি যে কোন মানুষকে খুব সহজে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত করতে পারে। সাধারণত লোকজন উগ্র, নিরস ও নৈতিকতা বর্জিত বাজে কিছু শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ, ভক্তরা ঐ সব শ্রবণই করেন না, ফলে এটি সকলের কাছে খুবই উপযোগী হবে। ঠিক যেমন ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এন.পি.আর) মানুষের আগ্রহের বৈচিত্রময় প্রোগ্রাম প্রচার করে, যেখানে বিশ্ব সংবাদ থেকে শুরু করে ভ্রমণ, একজন ব্যক্তির সংগ্রামের গল্প, সামাজিক টক-শো প্রভৃতি সম্প্রচার করে। ঠিক তেমনভাবে ‘এইচ.কে.সি.আর’ (হরেকৃষ্ণ কমিউনিটি রেডিও)-কে গড়ে তোলা যাতে করে একজন ভক্তের ভক্তিময় জীবন থেকে শুরু করে তাঁর কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের গল্পসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অসঙ্গতিগুলো তোলে ধরার মাধ্যমে একটি সুসভ্য সমাজ গড়ে তোলার নিরীখে প্রচার করা।
তিনি বলেন, “আমি একটি বৈচিত্র্যময় সহজলভ্য রেডিও প্যাটফর্মের মাধ্যমে ভক্তিমূলক জীবনের সমস্ত মাত্রা, ব্যক্তিত্ব ও উষ্ণতা প্রদর্শন করতে চায়। সুতরাং, দৃষ্টিভঙ্গি শেষ পর্যন্ত সঙ্গীতের সাথে একটি ভক্তিমূলক ‘এন.পি.আর’ তৈরি করা।”
তিনি আরো বলেন, “এন.পি.আর প্রোগ্রাম হলো এমন একটি প্রোগ্রামিং যা ভক্তি বোধের সম্পূর্ণ গভীরতা ও বৈচিত্র্যকে এমনভাবে প্রতিফলিত করে যাতে একটি বিস্তৃত অনুসন্ধিৎসু শ্রোতাদের কাছে আবেদন করতে সক্ষম হয়। মূলত ভক্তিমূলক জীবনের গভীরতার এমন একটি বোঝা পড়া, যার মধ্যে রয়েছে একাডেমিক ও বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা, শারীরিক ধারণার বাইরের জীবন, বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদান সরবরাহ যা বিশ্বের ইতিহাসকে সংযুক্ত করে, সুর ও অসুর মনোভাব, আত্মতত্ত্ব, প্রতিটি সৃষ্টিতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দেখা, ব্যক্তিগতভাবে এবং বৈজ্ঞানিকভাবে আমাদের চারপাশের বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি খুলে দেওয়া। এছাড়া আমরা লাইফস্টাইল ও রান্নার অনুষ্ঠান প্রচার করছি।”
এটি তৈরি করার জন্য বিভিন্ন শিল্পী, উপস্থাপক, টক-শো হোস্ট, ব্যক্তি এবং সংগঠনের অনুমতি ও সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, “যেমন প্রথম যখন প্রকল্পটি নিয়ে চিন্তা শুরু করি তখন একজন ভক্ত আমাকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করেন। এছাড়াও তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাকে অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ জ্ঞান প্রদান করেন। যার ফলে প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে আমি সক্ষম হই। মায়াপুরের একজন ভক্ত শ্রীপাদ বিশ্বম্ভর দাস আমাকে প্রথম রেকর্ডার উপহার দিয়েছিলেন, যেটি দিয়ে আমি রেডিও প্রকল্পটি শুরু করি। তিনি এবং শ্রীমতি বৃন্দাদেবী দাসী তাদের মিডিয়া লাইব্রেরীতে প্রবেশ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। আর তাঁরাই প্রথম ব্যক্তি যাঁরা রেডিওতে কথা বলেন। এছাড়াও আমি যখন প্রকল্পটি এগিয়ে চলতে শুরু করি তখন অনেক ভক্ত সমর্থন, ধারণা ও আর্থিকভাবে সাহায্য করেন। আর ৪০ জনেরও বেশি ভক্ত আমাদের গীতা জয়ন্তীতে সাহায্য করেছিলেন। মধুমতি ও রাঙ্গাবতী যখন নারদ মুনির গল্প, অঘাসুর বধ, এমন অনেক সুন্দর সুন্দর শ্রীকৃষ্ণের লীলাভিত্তিক গল্প বলতে শুরু করেন তখন ভক্তসহ অনেকে তাদের সাইটে এটিকে সংযোজন করতে শুরু করেছেন। এখানে ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদের বিভিন্ন শিষ্য ও শিষ্যাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে কথোপকথগুলো প্রচার করতে শুরু করা হলে অসংখ্য ভক্তদের সমর্থন পেতে শুরু করি।
সর্বোপরি, আলাচুয়া মন্দির কর্তৃপক্ষের নিকট আমি ঋণী যাঁরা আমাকে প্রকল্পটি সাফল্যমণ্ডিত করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।
এখানে মানুষের আগ্রহের গল্পগুলোকে উপস্থাপন করা হয়। মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে দৃষ্টান্তমূলক আলোচনা করা হয়। পরিবেশ সম্পর্কে আলোচনাসহ আন্তঃধর্মীয় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিভাবান ভক্ত শিল্পীদের দ্বারা সুন্দরভাবে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, নাটক ও বিনোদনসহ সবকিছু কৃষ্ণভাবনাময় উদ্ভাবনীভাবে সম্মানের সাথে ও প্রাসঙ্গিকভাবে সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমাদের অনেক উপায় রয়েছে এবং আশা করছি আমরা এমন একটি রেডিও শো তৈরি করতে পারব, যা বিশ্বকে একটি সুসভ্য, সৃজনশীল ও ভক্তিমূলক চিন্তাভাবনা প্রদান করতে পারবে।”