সূর্যের নিজস্ব কোন আলো নেই

প্রকাশ: ৪ জুন ২০২৪ | ৪:১৪ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৪ জুন ২০২৪ | ৪:১৪ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 122 বার দেখা হয়েছে

সূর্যের নিজস্ব কোন আলো নেই
শিরোনামটি চমকে উঠার মত। শুনেছি  চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সেও  সূর্যের নিকট থেকে আরো ধার করে – আলো ছড়ায়। অথচ সেই সূর্যেরই নিজস্ব কোন আলো নেই? ব্যাপারটা আসলেই  বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন দাড় করাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ এটা কিন্তু ভুলে যাবেন না পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু আছে যা আপনার ধারণারও অতীত। আবার যেগুলো আপনার সীমিত চিন্তাভাবনার মধ্যেই আসে না সেগুলো। আবার বিজ্ঞানীদের উন্নত মস্তিস্কের চিন্তাভাবনায় অবলীলায় চলে আসে। আবার বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রেও এমন অনেক কিছু আছে যা তাদের চিন্তাভাবনারও অতীত। যেটিকে অচিন্ত্য  শক্তি বলা হয় । তেমনি সূর্যের যে নিজস্ব  আলো নেই সেটা প্রমাণও জীবদের পক্ষে তেমনি সম্ভব নয়।   কেননা তারাতো শুধুমাত্র সূর্যের রশ্মির মধ্যে সীমাবদ্ধ। সূর্যকে নিয়ে গবেষণা করবে কি?  যাইহোক কিন্তু বৈদিক  শাস্ত্র বলছে  সূর্য যে আলো আমাদের সরবরাহ করে তার প্রকৃতপক্ষে তার নিজস্ব কোন আলো নয়। চিন্ময় জগত থেকে যে ব্রহ্মজ্যোতি সূর্যের উপর পতিত হয় সূর্য সে জ্যোতি প্রতিফলন করে থাকে। সূর্য চিন্ময় জ্যোতির প্রতিফলন করে : 
যদ্ ভ্রাজমানং স্বরূচৈব সর্বতো লোকস্ত্রয়া হ্যনু বিভ্রাজন্ত এতে।
যন্নাব্রজঞ্জনত্তষু যেহননুগ্রহা ব্রজন্তি ভদ্রাণি চরন্তি যেহনিশম্ ॥ (ভাগবত ৪/১২/৩৬)
বৈকুন্ঠলোক স্বীয় জ্যোতির দ্বারা উদ্ভাসিত। এই জড় জগতের উজ্জল লোকসমূহ সেই জ্যোতির প্রতিফলন করার ফলেই উজ্জ্বলহয়। যারা অন্যান্য  জীবের প্রতি কৃপাপরবশ নয়, তারা কখনও সেই লোকে যেতে পারে না। যারা নিরন্তন জীবের কল্যাণ কার্যকলাপে যুক্ত, তাঁরাই সেই  বৈকুন্ঠলোকে প্রবেশ করতে পারেন।এ এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে বৈকুন্ঠলোক বা  চিন্ময় জগত ব্রহ্মজ্যোতির দ্বারা আলোকিত। – সেই জ্যোতির অংশ এই জড় ব্রহ্মাণ্ডের উজ্জল গ্রহ অর্থাৎ সূর্যের উপর পতিত হয়। সূর্য একে প্রতিফলিত করে আলো ও তাপ দান করে। ব্রহ্মজ্যোতি সূর্যলোকের উৎসহিরন্ময়ে পরে কোশে বিরজং ব্রহ্ম নিষ্কলম্।

তক্ষুভ্রং জ্যোতিষাং জ্যোতিস্তদ্‌ যদাত্মবিদো বিদুঃ।

                                         ন তত্র সূর্যো ভাতি ন চন্দ্রতারকং নেমা বিদ্যুতো, ভান্তি কুতোহয়মগ্নিঃ।
                                                তমেব ভান্তমনুভাতি সর্বং তস্য ভাসা সর্ব সর্বমিদং বিভ্রাতি ॥
                                                ব্রহ্মৈবেদমমৃতং পুরস্তাদ্র হ্ম পশ্চাদ্বহ্ম দক্ষিণতশ্চোত্তরেণ।অধশ্চোধ্বং চ প্রসূতং ব্রহ্মৈ বেদং বিশ্বমিদং বরিষ্ঠম্ ॥ (মুণ্ডক উপনিষদ ২/২/১০১২) অনুবাদ: জড় আবরণের উর্ধ্বে চিজ্জগতে অন্তহীন ব্রহ্মজ্যোতি রয়েছে, যা সব রকমের জড় কলুষ থেকে মুক্ত। সেই শুভ্র জ্যোতিকে আত্মজ্ঞানী পুরুষেরা সমস্ত জ্যোতির জ্যোতি বলে জানেন। সেই চিন্ময় লোককে উদ্ভাসিত করার জন্য সূর্যরশ্মি, চন্দ্রকিরণ, অগ্নি অথবা বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। জড় জগতে যে আলোক দেখা যায়, তা সেই পরম জ্যোতির -প্রতিবিম্ব মাত্র। সেই ব্রহ্ম সম্মুখে এবং পশ্চাতে, উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে পশ্চিমে এবং উপরে ও নীচে সর্বত্রই পরিব্যাপ্ত অর্থাৎ সেই ব্রহ্মজ্যোতি জড় এবং চেতন আকাশের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত।

এই শ্লোকে ব্রহ্মজ্যোতির বিস্তার সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। আমরা যে জগতে বাস করি এই জগতের নাম জড় জগত। এই জগৎ আলোকিত করার জন্য সূর্য, চন্দ্র, বিদ্যুৎ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। ভাগবতে বলা হয়েছে এই জড় জগৎ ছাড়া আর একটি জগৎ আছে, তার নাম চিন্ময়জগৎ। সেই জগৎ আলোকিত করার জন্য সূর্য, চন্দ্র বা বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। তা ব্রহ্মজ্যোতি দ্বারা আলোকিত।এই শ্লোকে আরো বর্ণনা করা হয়েছে আমরা জড় জগতে যে আলো পাই সেই আলো ব্রহ্মজ্যোতির প্রতিফলন বা প্রতিবিম্ব মাত্র।সূর্য ব্রহ্মজ্যোতির দ্বারা আলোকিত

যদাদিত্যতং তেজো জগদ্‌ ভাসয়তোহখিলম্।

যচ্চন্দ্রমসি যচ্চাগ্নৌ তত্তেজো বিদ্ধি মামকম্ ॥

(গীতা – ১৫/১২) অনুবাদ : সূর্যের যে জ্যোতি সমগ্র জগৎ উদ্ভাসিত করে, তা আমারই তেজ এবং চন্দ্র ও অগ্নির যে জ্যোতি তাও আমারই।অনন্ত কোটি সূর্য ব্রহ্মজ্যোতির দ্বারা আলোকিত
যস্য প্রভা প্রভবতো জগদণ্ডকোটি। কোটিষড়গশেষবসুধাদিবিভূতিভিন্নম্
তদ্‌ ব্রহ্ম নিষ্কলমনন্তম শেষভূতং গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ॥ (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪০)

বিভিন্ন বিভূতি সম্পন্ন বৈচিত্র্যময় অসংখ্য গ্রহমণ্ডল রয়েছে। আর এই সব ব্রহ্মাণ্ডগুলি ব্রহ্মজ্যোতির দ্বারা সূর্যের মাধ্যমে আলোকিত এই ব্রহ্মজ্যোতি হচ্ছে আমার পুরুষোত্তম ভগবানের অপ্রাকৃত দেহ নিঃসৃত দিব্য রশ্মি। এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে, অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডে অনন্তকোটি সূর্য অবস্থান করিতেছে। প্রতিটি সূর্য ব্রহ্মজ্যোতি থেকে আলো প্রাপ্ত হয়ে ব্রহ্মাণ্ডকে আলোক দান করে।  ভগবান ব্রহ্মজ্যোতি দ্বারা আবৃত

হিরন্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম্।

তৎ ত্বং পূষন্নপাবৃণু সত্যধর্মায়দৃষ্টয়ে ॥

  শ্রীঈশোপনিষদ মন্ত্র-১৫)

অনুবাদ 🙁 হে ভগবান! হে সর্বজীব পালক।আপনার ব্রহ্মজ্যোতির্ময় আলোক আপনার মুখারবিন্দকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। কৃপা করে এই আচ্ছাদন দূর করুন এবং আপনার শুদ্ধ ভক্তকে আপনার সত্য স্বরূপ দর্শন করান। এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ভগবান ব্রহ্মজ্যোতির দ্বারা আচ্ছাদিত। এই জ্যোতির কারণে ভগবানকে দেখা সম্ভব নয়। এজন্য ভক্ত  ভগবানের কাছে বিনীত প্রার্থনা করেছেন, এ ভগবান আপনি দয়া করে আপনার আচ্ছাদিত ব্রহ্মজ্যোতিকে অপসারণ করুন। তাহলে আমি আপনাকে দর্শন করতে পারব।)ব্রহ্মজ্যোতি প্রসঙ্গে গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-

ব্রহ্মণো হি প্রতিষ্ঠাহমমৃতস্যাব্যয়স্য চ।

তার শাশ্বতস্য চ ধর্মস্য সুখস্যৈকান্তিকস্য চ।।

(গীতা ১৪/২৭)

অনুবাদ : অর্থাৎ “অমর অবিনাশী সনাতনীব অন্তিম সুখের আশ্রয়স্থল ও নির্বিশেষ ব্রহ্মেরাগ আশ্রয় আমিই (কৃষ্ণ)

এই শ্লোকে ব্রহ্মজ্যোতির ধর্ম বর্ণনা করা হয়েছে এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মজ্যোতির উৎস সেই বিষয়টি প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও ভগবান একই পরম সত্যের তিনভাবে প্রকাশ। আধ্যাত্মিক জীবনে সর্বপ্রথম ব্রহ্ম উপলব্ধি করা যায়। আধ্যাত্মিক জীবনে আরে উন্নতি হইলে পরমাত্মাকে অনুভব করা যায় আর ভগবান অনুভূতি হচ্ছে পরম তত্ত্ব উপলব্ধির অন্তিম ও পূর্ণ দর্শন। এই আলোচনা থেকে উপলব্ধি করা যায়, চিন্ময় জগত থেকে ব্রহ্মজ্যোতি নামক অপ্রাকৃত পর্দায় সূর্য গোলকের উপর পতিত হয়। সূর্য গোলকের একটি বিশেষ গুণ রয়েছে যার এটি অপ্রাকৃত বা চিন্ময় শক্তিকে পরিবর্তিত করে জড় পদার্থ বা প্রাকৃত আলো ও তাপে পরিণত করে। অর্থাৎ বলা যায় সূর্য এর বিশেষ ক্ষমতা বলে পদার্থের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সূর্যের মধ্যে হাইড্রোজেন নামক পদার্থ পরিবর্তন হয়ে আলো ও তাপে পরিণত হয়। সুতরাং বলা যায় বিজ্ঞানীদের  হাইড্রোজেন ধারণা ভাগবতের কাছাকাছি। হরে কৃষ্ণ।

সূত্র: বামন-৫২৪ গৌরাব্দ, আষাঢ়-শ্রাবণ ১৪১৭,জুলাই২০১০ইং মাসিক চৈতন্য সন্দেশ।
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।