সাফল্যের সূত্রঃ PARTHA

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ | ৭:১০ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ | ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 431 বার দেখা হয়েছে

সাফল্যের সূত্রঃ PARTHA

সাফল্যের সূত্র আলোচনার পূর্বে আমরা আলোচনা করব সাফল্য কি? একটি শিশু চিন্তা করে আমি যদি একটা খেলনা পাই, সেটাই সাফল্য। তারপর বিদ্যালয়ে প্রথম হওয়াই হল তার সাফল্য, এস এস সি ও এইচ এস সিতে Golden A+ পাওয়াটাই সাফল্য, স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারাটাই তার জন্য সাফল্য। তারপর সরকারি চাকরি পাওয়াকে সে সাফল্য মনে করে, ফ্ল্যাট কিনতে পারা ও সুন্দর নারীকে বিয়ে করতে পারা সেটা তার কাছে সাফল্য, বিবাহের পর ছেলে মেয়েদের লন্ডনে পড়ানোর জন্য পাঠাতে পারাটাই সাফল্য, অতঃপর ছেলে-মেয়েদের সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে দিতে পারাটাই সাফল্য। কিন্তু সে দেখে জীবনের শেষ পর্যায়ে বা বৃদ্ধ বয়সে সে যেগুলোকে সাফল্য বলে মনে করে এসেছে সেগুলো সব ছেড়ে তাকে পরপারে চলে যেতে হয়। তাই এর একটিও সাফল্য নয়।

আমরা যদি সফল হতে চাই তাহলে আমাদের ABC বাদ দিতে হবে। A-Accusing (অভিযোগ তোলা), B-Blaming (দোষারোপ), C-Criticism (সমালোচনা) সাফল্য একদিনে আসবে না এর জন্য সারাজীবন ধরে প্রচেষ্টা করতে হবে।

ঠিক তেমনভাবে আমরা সবাই জীবনে সফল হতে চাই অথবা সাফল্য পেতে চাই কিন্তু আমরা জানি-ই না আসলে সাফল্য কি? ডাক্তারি ভাষায় একটা কথা আছে যে, ‘অপারেশন সফল হয়েছে কিন্তু রোগী মারা গেছে’। এখন প্রশ্ন হল অপারেশন যদি সফল হয় তাহলে রোগী কেন মারা গেল? তাহলে কিভাবে অপারেশন সফল হল? আসল সাফলতা মানে অপারেশনও সফল হবে এবং রোগীকেও বাঁচতে হবে।

জয়ী হওয়াটাই সাফল্য নয়

কেউ মনে করে যে আমি জয়ী হয়েছি কিন্তু জয়ী হওয়াটা সবসময় সাফল্য নয়। যেমন: বৈদিক শাস্ত্রে বর্ণিত কিছু দৃষ্টান্ত নিম্নে তুলে ধরা হল:

১. দূর্যোধন পাশা খেলায় জয়ী হয়েছিল পাণ্ডবদের সাথে কিন্তু ভগবানের চোখে সে হেরে গেছে, ইতিহাসে তার নামটা খারাপ লোকদের খাতায় লেখা হয়ে গেছে।

২.ভীষ্মদেব কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে হেরে গেছেন কিন্তু কৃষ্ণ ও যুধিষ্ঠির সহ পঞ্চপাণ্ডব তাঁর কাছে গিয়েছেন উপদেশ নেয়ার জন্য। যদিও তিনি হেরে গেছেন তবুও তিনি জীবন যুদ্ধে জয়ী।

৩. অভিমন্যুকে কর্ণ এবং সপ্তরথীরা অন্যায়ভাবে হত্যা করে জয়ী হয়েছিলেন কিন্তু মানবতার ইতিহাসে তারা কাপুরুষ হিসেবে রয়ে গেল। তারা যদিও জয়ী হয়েছিল কিন্তু এটাকে সাফল্য বলা যায় না।

৪. রাবণের সাথে যুদ্ধ করেছিল জটায়ু সীতা মাতাকে উদ্ধার করার জন্য। জটায়ু রাবণের সাথে যুদ্ধে হেরে গেছে কিন্তু জটায়ু চিরকাল বেঁচে রইল ভক্তদের হৃদয়ে।

এভাবে আমরা দেখি যে, শুধুমাত্র জয়ী হওয়াটা সাফল্য নয়। সে জন্য কুন্তী মাতা বলছেন যে কৃষ্ণ আমরা যখন দুঃখ-কষ্টে ছিলাম তুমি আমাদের সাথে ছিলে কিন্তু এখন আমরা সুখে আছি কিন্তু তুমি আমাদের ছেঁড়ে চলে যাচ্ছ, তাহলে এই সাফল্যের কি মূল্য? তাই আমরা যে সাফল্য আলোচনা করছি তা কোন জাগতিক সাফল্য নয় তা আধ্যাত্মিক সাফল্য। এই প্রতিবেদনের আলোচনা হলো সাফল্যের সূত্র: PARTHA (শ্রীকৃষ্ণের সখা অর্জুনের নাম) এটির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা হল:

P=Positive Thinking (ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা)

A=Aim (লক্ষ্য)

R=Restraint (সংযম)

T=Training (প্রশিক্ষণ)

H= Hard work (কঠোর পরিশ্রম)

A=Abiding Interest (আগ্রহ বজায় থাকা)

 

P-Positive Thinking (ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা)

(জগতে প্রতিটি মানুষ ৪ ধরনের চিন্তা করে)

১. ইতিবাচক চিন্তা- (স্নেহ, প্রেম, বিনয়, সত্যবাদিতা ও বিনম্রতা ইত্যাদি) অন্যদের মধ্যে কল্যাণকর ভাবের উদয় করা।

২. নেতিবাচক চিন্তা- (ঘৃণা, দ্বেষ, হিংসা, নৃশংসতা ও স্বার্থপরতা ইত্যাদি) “নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করা।

৩. প্রয়োজনীয় চিন্তা- যে চিন্তাগুলো আমাদের না করলেই নয় যেমন: অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদি।

৪. অপচয়কারী চিন্তাভাবনা- অতীত ও ভবিষ্যতের চিন্তা করা ও শোক করা।

বলা হচ্ছে যে, ‘অতীত’ হলো ‘ইতিহাস’ সেটা ভেবে কোন লাভ নেই কারণ সেটা পরিবর্তন করতে পারবো না। আর ‘’ভবিষ্যৎ’ হলো ‘রহস্যময়’। আমরা জানি না ভবিষ্যতে কি হবে? তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা জানেন ‘বর্তমান’ হল ‘উপহার’। আমাদের জীবনে এই চার ধরনের চিন্তার মধ্যে দুই ধরনের চিন্তা করা উচিত ইতিবাচক ও প্রয়োজনীয় চিন্তা।

চিন্তার শক্তি

একজন ব্যক্তি যে ধরনের চিন্তা করে তা তার কথার মাধ্যমে প্রকাশ হয়। সে যেরকম কথা বলে সে কথাটা পরবর্তীতে কাজে রূপান্তরিত হয়। সে যে ধরনের কাজ করে তা তার অভ্যাসে পরিণত হয় এবং সে যেভাবে অভ্যাস করে তা তার চরিত্রে পরিণত হয় এবং একজন ব্যক্তির চরিত্র তার সংস্কৃতি গঠন করেন। সবকিছু শুরু হয় চিন্তা থেকে; তাই বলা হচ্ছে যে কেউ যদি তার চিন্তাকে পরিবর্তন করতে পারে তাহলে সব পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। আমাদের কুচিন্তা বা খারাপ কর্ম ভগবান দেখছেন তাঁর দিব্যচক্ষুর মাধ্যমে। শ্রীমদ্ভাগবতে (৬/১/৪২) উল্লেখ আছে – সূর্য, অগ্নি, আকাশ, বায়ু, দেবতা, চন্দ্র, সন্ধ্যা, দিন, রাত্রি, দিক, জল, পৃথিবী এবং পরমাত্মা স্বয়ং জীবের সমস্ত কর্মের সাক্ষী। যমরাজের দূত চিত্রগুপ্ত। ‘চিত্রগুপ্ত’ শব্দের অর্থ হল ‘চিত্র’ শব্দের অর্থ ‘ছবি’ এবং ‘গুপ্ত’ শব্দের অর্থ ‘লুকানো’। চিত্রগুপ্ত লুকিয়ে থেকে আমাদের সকল কর্ম রেকর্ড করছে এবং এই কর্ম অনুসারে মৃত্যুর পর আমরা উপযুক্ত শাস্তি বা ফল আমরা প্রাপ্ত হব। চিন্তা এতই প্রবল ও গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যে ধরণের ভাবি অথবা চিন্তা করি তা অন্যদের মাঝেও সঞ্চারিত হয়। ডাক্তারী বিদ্যাতে একটি শাখা আছে “সাইকোমেট্রি” এ বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ ডাক্তার তারা কোনো ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস দেখে বুঝতে পারে ঐ ব্যক্তির কি রোগ রয়েছে।

কিভাবে আমরা ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে পারি?

ভবসাগর রূপ এ জড় জগতে আমরা মানব দেহ পেয়েছি। এই মানব দেহ হলো জাহাজের মতো এবং এই সাগর আমরা পাড়ি দিচ্ছি, কিন্তু এই জড় জগৎ হল “দুঃখালয়ম অশাশ্বতম্‌”। এই জড় জগতে দুঃখ থাকবেই যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা ভগবানের চিন্তায় থাকতে পারি, ইতিবাচক চিন্তায় থাকতে পারি এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ভেঙ্গে পড়ব না ততক্ষণ পর্যন্ত এই জড় জগতের দুঃখগুলো আমাদের প্রভাবিত করতে পারবে না। সেকারনে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা জানেন, ব্ল্যাক বোর্ড যত কালো হবে লেখা তত সুন্দর হবে, রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে। সে কারণে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা রাতের অন্ধকার দেখে প্রভাবিত হয় না।

একটি গ্লাসে অর্ধেক জল থাকলে কেউ বলতে পারে গ্লাসটি অর্ধেক শূণ্য বা খালি, আবার কেউ বলতে পারে গ্লাসটি অর্ধেক পূর্ণ। একই গ্লাস কেউ খালি দেখছে আবার কেউ পূর্ণ দেখছে। এটি হচ্ছে যার যার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে।     

ড্রাইভারের কাছে যদি সঠিক ম্যাপ না থাকে তাহলে তিনি সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। তাই আমাদের জীবনের ম্যাপটির অর্থ হচ্ছে যেটি আমাদের গন্তব্যকে নির্ধারণ করে, আর আমাদের এই ম্যাপটি হচ্ছে আমাদের চরিত্র। তাই একটি কথা আছে,“কারও যদি টাকা বা আর্থিক ক্ষতি হয় তাহলে সেটা কোনো ক্ষতি-ই নয়, কারও যদি স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় তাহলে কিছুটা ক্ষতি হয় কিন্তু কারও যদি চরিত্র নষ্ট হয় তাহলে এটার চেয়ে বড় আর কোন ক্ষতি নেই।” কেউ যদি শুধুমাত্র ইতিবাচক ভাবে চিন্তা করতে চায় তাহলে শুধু ইতিবাচক চিন্তাটাই সাফল্য আনতে পারে না। আমাদের সাফল্য তখনই আসবে যখন আমাদের জীবনের ম্যাপটা সঠিক হবে আর এই ম্যাপটি হল চরিত্র। সে কারণে চরিত্রকে আগে সংশোধন ও গঠন করতে হবে।

A-Aim (লক্ষ্য)

একজন ব্যক্তি দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে, পাশে থাকা তার বন্ধু তাকে জিজ্ঞাসা করছে, “তুমি এত দ্রুত গাড়ি চালিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছ? ঐ ব্যক্তি বলল, তুমি আমাকে বিরক্ত করোনা। আমি জানি না কোথায় যাব।” দ্রুত যাচ্ছে কিন্তু সে জানেই না যে, কোথায় যাবে। তাহলে সেই দ্রুত গাড়ি চালানোর ফলে সে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। লক্ষ্যহীন এবং ব্যস্ত থাকাটাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়।

জীবনের উদ্দেশ্য না জেনে শুধু গাধার মত পরিশ্রম করাটাই জীবনের লক্ষ্য নয়। একদল লোক ফুটবল খেলছে। তারা যখন বল নিয়ে গোলের উদ্দেশ্যে গেল দেখল গোলবার নেই। তাহলে খেলার ফলাফল নেই কি হবে? ঠিক তেমনি আমাদের জীবন খেলায় যদি কোন গোল বা লক্ষ্য না থাকে তাহলে এ খেলার কোন ফলাফল থাকবে না। কেউ ক্যামেরা ব্যবহার করছে কিন্তু সে যদি ফোকাস না করে তাহলে ঐ ক্যামেরা ব্যবহারে কোন লাভ নেই। সে কারণে পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা ফোকাসটা কি? লক্ষ্যটা কি? জানে না। তারা বিভিন্ন কাজে শুধু ঘূর্ণিপাক খাচ্ছে । কৃষ্ণ তাদের সম্পর্কে গীতায় বলছে, ‘বহুশাখা হ্যনন্তাশ্চ বুদ্ধয়োহব্যবসায়িনাম্’

এ বিষয়ে মহাভারতের কাহিনিটি উল্লেখযোগ্য একবার দ্রোণাচার্য একটি কাঠের পাখি বানিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রেখে। কৌরবদের পর পাণ্ডবদের অবশেষে ডাকলেন অর্জুনকে, তুমি কী দেখতে পাচ্ছ? অর্জুন বললেন ‘আমি শুধুমাত্র পাখিটার চোখ দেখতে পাচ্ছি। দ্রোণাচার্য বললেন ‘হ্যাঁ এবার তুমি তীর নিক্ষেপ কর’ অর্জুন তীর নিক্ষেপ করল এবং তীরটি পাখিটির চোখে বিদ্ধ হল, পাখিটি গাছ থেকে পড়ে গেল। অর্জুন যেমন লক্ষ্য ঠিক রেখে তীর নিক্ষেপ করেছিলেন তেমনি আমাদেরও লক্ষ্য স্থির রেখে কাজ করা উচিত। তাহলেই আমরা জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে পারব। তা না হলে আমরা ৬টি ইন্দ্রিয়ের (চক্ষু, কর্ণ, ত্বক, নাসিকা, জিহ্বা ও মন) মাধ্যমে প্রকৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শুধু জীবন যুদ্ধ সংগ্রাম করে যাব। কিন্তু জয়ী হতে পারব না।

এ জগতের বেশিরভাগ মানুষের চেতনা উন্নত নয়। মানুষের ৫ ধরনের চেতনা রয়েছে। যথা: ক) অন্নময়, খ)  প্রাণময়, গ) মনোময়, ঘ) বিজ্ঞানময় ও ঙ) আনন্দময়

দুইটি কেন্দ্র রয়েছে: যথা ১. আমি ২. ভগবান

যখন আমি কেন্দ্র থাকবো, পৃথিবীর সকল মানুষ নিজেকে কেন্দ্র করবে তখন একে অন্যের সাথে স্বার্থপরতা দেখাবে এবং পৃথিবীতে কলহ, যুদ্ধ ও সংগ্রামের সৃষ্টি হবে। একটা বিন্দুকে কেন্দ্র করে যদি অনেক বৃত্ত আঁকা হয় তাহলে বৃত্তগুলো একটি অন্যটিকে অতিক্রম করে না কিন্তু অনেকগুলো বিন্দুকে কেন্দ্র করে যদি অনেকগুলো বৃত্ত আঁকা হয় তাহলে একটি অন্যটিকে অতিক্রম করে। ঠিক তেমনি আমরা যদি নিজেকে কেন্দ্র বানাই তাহলে একে অপরের সাথে সংঘর্ষ হবে কিন্তু আমরা যদি ভগবানকে কেন্দ্র বানাই তাহলে সকলে একই সাথে চলতে পারে, কেউ কারও সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে না। তাই পুরো পৃথিবী যদি ভগবানকে কেন্দ্র বানায় তাহলে পৃথিবীতে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। পৃথিবীতে দুইটি জিনিস আছে একটি হল ‘স্বার্থপরতা’ অন্যটি হল ‘স্বার্থহীনতা’। আমি এবং আমার এটা হল স্বার্থপরতা এবং সবকিছু ভগবানের এটা হল স্বার্থহীনতা। স্বার্থপরতা আবার দুই প্রকার ১) সংকুচিত স্বার্থপরতা, ২) প্রসারিত স্বার্থপরতা।

দেহগত সুখ লাভের জন্য যে লক্ষ্য সেটি আসল লক্ষ্য নয়। আসল লক্ষ্য শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টি বিধান করা; এটা হল আত্মাগত লক্ষ্য। তত্ত্বদ্রষ্টা ব্যক্তিরা তাদের লক্ষ্যকে দেখতে পারেন তারা ভবিষ্যতে কোথায় যাবেন, কি করবেন ইত্যাদি।

শ্রীল প্রভুপাদ একদিন একটি পার্কে বসাকালীন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,

মি রুবেন: স্বামীজি আপনি কেন এখানে এসেছেন এবং আপনার লক্ষ্য কী?

শ্রীল প্রভুপাদ: আমি বিদেশে এসেছি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী প্রচার করার জন্য। আমার হাজার হাজার শিষ্য আছে, শত শত মন্দির আছে কিন্তু সময় আমাকে সেখান থেকে আলাদা করে রেখেছে।

শ্রীল প্রভুপাদের তখন কোন শিষ্য ও মন্দির ছিল না। কিন্তু তিনি জানতেন তাঁর হাজার হাজার শিষ্য হবে, শত শত মন্দির হবে। তিনি তার মানস চক্ষে সব দেখতে পেয়েছিলেন।

R-Restraint (সংযম)

মা তার মেয়ের হাতে একটা লাঠি দিয়ে বারান্দায় ধানগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য বলে বাড়ির কাজ করতে চলে গেছেন। হঠাৎ মা ফিরে এসে দেখছেন পাখিরা এসে ধান খেয়ে যাচ্ছে আর মেয়ে তাকিয়ে আছে। মা বললেন, লাঠি দিয়ে তাড়াও এদের। মা মেয়েকে বকা দিলে মেয়ে বলল, তুমি তো আমাকে মারতে বলনি তাই মারি নি। আসলে আত্মসংযম বলতে, শুধু দেখে থাকা নয়, ধানগুলোকে রক্ষা করা। আমাদের জীবনেও অনেক বাধা আসবে আমাদের সেগুলো দেখতে হবে ও নিজেকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের শত্রু কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এরা এসে আমাদের ধানগুলো খেয়ে যাবে। আমাদের চরিত্র নষ্ট করে যাবে এগুলো আমাদের দেখতে হবে, এগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। সে কারণে আমরা যদি আত্মসংযম করতে চাই তাহলে আমাদের একটা সংকল্প করতে হবে: এ কাজটা আমরা করবই। সংকল্প করাটাই হল তপস্যা। ব্রহ্মাজী সৃষ্টির পূর্বে শক্তি লাভ করার জন্য  ও ভগবানের সন্তুষ্টি বিধান করার জন্য ১ হাজার দিব্যযুগ তপস্যা করেছিলেন। সংকল্প করলেই ঐ ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি পায়। যে যত বেশি আত্মসংযত তার মধ্যে তত বেশি ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। আমরা জানি যে স্বাভাবিকভাবে পানির গতি নিম্নমুখী কিন্তু মোটরের সাহায্যে পানির গতি ঊর্ধ্বমুখী করে পানি মাটির নিচ থেকে ছাদের ওপরেও নিয়ে আসা যায় এটা হল সংযম করার সুবিধা। পানি যেমন সংযত করার মাধ্যমে নিম্নমুখী না হয়ে ঊর্ধ্বমুখী করা যায় ঠিক তেমনি আমরা আত্মসংযমের মাধ্যমে আমাদের চরিত্র নিম্নমুখী না করে ঊর্ধ্বমুখী করতে পারি।

গ্যাসের যদি রেগুলেটর না থাকতো তাহলে রান্নার কত সমস্যা হত। ফ্যান এ যদি রেগুলেটর না থাকে অনেক সমস্যা হতো। তাই ফ্যান বা গ্যাসের মতো আমাদের জীবনেও রেগুলেটর প্রয়োজন কারণ সবকিছুর একটা রেগুলেশন/নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। সে কারণে শ্রীল প্রভুপাদ ইস্‌কনে আমাদেরকে চারটি বিধিনিষেধ দিয়েছেন। আমিষ আহার, নেশা, জুয়া খেলা, অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ করা এগুলো হল অধর্মের বা পাপের স্তম্ভ। তাই এগুলো বর্জনের মাধ্যমে আমরা নিয়ন্ত্রিত হব। এগুলো হল রেগুলেটর এর মতো।

এই চারটি জিনিস হল লক্ষণ রেখার মতো, লক্ষ্মণ যখন রামের খোঁজে বের হন তখন তিনি সীতা দেবীকে একটা লক্ষণ রেখা এঁকে দিয়েছিলেন। যতক্ষণ সীতাদেবী এ লক্ষণরেখার ভিতর ছিলো ততক্ষণ তিনি ছিলেন সুরক্ষিত। আমাদের জীবনেও ঐ চারটি জিনিস হল লক্ষণ রেখার মতো। আমরা যতক্ষণ লক্ষণরেখার মত সাধুসঙ্গের ও হরিনামের গণ্ডিতে থাকব ততক্ষণ সুরক্ষিত। কিন্তু যেই মাত্র আমরা এই গণ্ডি পার হব তখনই বিপদের সম্মুখীন হব।

একটা ঘুড়ি আকাশে যত উপরেই উড়ুক না কেন তার নাটাই কারও না কারও হাতে থাকে। নাটাই কোন ব্যক্তির হাতে থাকলে ঘুড়ি অনেক উপরে উঠতে পারে। কিন্তু ঘুড়ি যদি মনে করে আমি আর নাটাই এর সাথে থাকবো না, তাহলে সে বেশিক্ষণ উড়তে পারে না। তাকে ঠিক নিম্নগামী পতিত হতে হয়। ঠিক তেমনি আমাদের জীবনের নাটাইও কারও না কারও হাতে দিতে হয়। আর তিনি হলেন গুরুদেব বা কর্তৃপক্ষ।

T-Training (প্রশিক্ষণ)

আমরা যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবো তা এ জড় জগতের প্রশিক্ষণ নয়। সে প্রশিক্ষণ হল এ জড় জগতের চক্র থেকে বের হওয়ার প্রশিক্ষণ। তাই প্রশিক্ষণের জন্য পাঁচটি ধাপ রয়েছে।

১- দক্ষতার সাথে কাজ

আমাদের দক্ষতার সাথে কাজ করতে হবে। আবার দক্ষতার সাথে কাজ করার জন্য আমাদের ৩টি জিনিস লাগবে ১) সচেতনতা ২) অভিনিবেশ ও ৩) মনোযোগ। কাজ করার সময় সচেতন হতে হবে। কী করছি, কেন করছি তা জানতে হবে। আমরা যখন কাজটা করব তখন সেটার উপর আমাদের মগ্ন হতে হবে ও মজে যেতে হবে। কাজের উপর মগ্নতা আসাটাই হল অভিনিবেশ। কাজ করার সময় আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় কিন্তু ঐ বিক্ষিপ্ত মনকে আমাদের আবার ঐ কাজে নিবদ্ধ করতে হবে। তিনটা জিনিস যখন আমরা কোনো কাজের উপর দিতে পারব তখন ঐ কাজটা দক্ষতার সাথে করা হবে।

২- বর্তমান নিয়ে ভাবুন

বর্তমানে থাকুন ও ভাবুন এবং বর্তমান নিয়ে কাজ করুন। অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববেন না। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বলেছেন, ”কেউ যদি সফল হতে চায় তাহলে তার অতীত ও ভবিষ্যতের ডানা কেটে দিতে হবে।” সে কারনে বর্তমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩- সমস্ত কাজে ভগবানের সাথে সম্পর্ক দেখা

আমরা যে কাজ করি তার সাথে ভগবানের সম্পর্ক দেখতে হবে। আমাদেরকে দেখতে হবে আমরা যে কাজ করছি তা নিজেদের শুদ্ধ করার জন্য, ইন্দ্রিয়তৃপ্তি করার জন্য নয়। বিষ্ণুর প্রীতি বিধান করার জন্য যে কাজ সেটাই হচ্ছে যজ্ঞ এবং এই যজ্ঞের ফলে নিজেদের আত্মা শুদ্ধ হয়। আমাদের দেখতে হবে  কাজটি ভগবানকেন্দ্রিক কিনা। তাহলেই আমরা যথার্থ সুখী হতে পারব।

৪- ভাল অভ্যাস তৈরী করুন

ভাল অভ্যাস তৈরী করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এ জগতে দেখি যে ভাল অভ্যাস তৈরী করা খুব কঠিন। কিন্তু খারাপ অভ্যাস তৈরী করা খুব সহজ। খারাপ অভ্যাস একটা তীরের মতো। কারও বুকে তীর বিদ্ধ হওয়া খুব সহজ, কিন্তু তীরটি বের করা অত্যন্ত কঠিন। একটা ১০০ তলা বিল্ডিংয়ের উপরে উঠা খুব কঠিন কিন্তু নামা খুব সহজ। মানুষের মন ভূতের মতো। সে আপনাকে খারাপ কাজ করতে বলবে যদি আপনি তার কথা শুনেন তাহলে আপনার অধঃপতন নিশ্চিত। তাই মনের কথায় কখনো হ্যাঁ বলা যাবে না, শুধু না বলুন।

৫- সবকিছুর কৃতিত্ব ভগবানকে অর্পণ

আমরা সবাই মনে করি আমিই আমার কর্মের কর্তা,কিন্তু আমরা কেউ কর্তা নই। আমরা হচ্ছি দাস। যারা কর্তা, তারা মনে করে আমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। এটা হচ্ছে আসুরিক মনোভাব। যেমন দূযোর্ধনের ও এই মনোভাব ছিল। তার মাথার উপর যদি কেউ ছাতা রাখতো দূর্যোধন বলতো, আমার মাথার উপর ছাতাও থাকতে পারবে না। আর দৈবী মনোভাব হল দাস মানসিকতা। যেটা ছিল হনুমানের। হনুমান লক্ষণকে বাঁচানোর জন্য পর্বত তুলে এনেছেন। তবুও তিনি মনে করছেন আমি ভগবানের দাস। শ্রীকৃষ্ণ গীতায় (২/৪৭) বলেছেন যে, তুমি কর্ম কর আর আমাকে ফল নিবেদন কর, তুমি কর্তা নও, কর্তা হচ্ছি আমি। কৃষক জমিতে ফসল উৎপাদন করে কিন্তু বীজটা কৃষক বানাতে পারে না। কিন্তু কৃষক যদি মনে করে আমি কর্তা তাহলে সেটা ভুল কারণ মাটি, পানি, বীজ, বাতাস, আলো সব কৃষ্ণের। তাই সবকিছুর কর্তাও কৃষ্ণ। তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা নিজেদের কর্তা মনে না করে ভগবানকে সবকিছুর অধীশ্বর বলে জানেন।

H-Hardwork (কঠোর পরিশ্রম)

একটা প্রবাদ আছে ”পরিশ্রম ধন আনে, পুণ্য আনে সুখ, আলস্য দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে দুঃখ।” ধন উপার্জন করতে চাইলে পরিশ্রম লাগবেই। যে কোন কিছুর জন্যই পরিশ্রম প্রয়োজন কিন্তু আমাদের জানতে হবে আমরা কি ধরনের পরিশ্রম করব।

অনেক সময় আমরা অফিসের কাজে এতই ব্যস্ত হয়ে যাই যে, পরিবারের কথা ভুলে যাই। যার কারণে সম্পর্কে ফাটল ধরে। শুধু পেশায় সফল হলে হবে না, আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নেও সফল হতে হবে। এ জগতে কেউ স্বাধীন নয় সবাই পরস্পরনির্ভরশীল। অনেক সময় আমরা পেশায় সফল নাও হতে পারি কিন্তু আমাদের সম্পর্ক ঠিক থাকলে দুঃখে থাকলেও মনে প্রশান্তি অনুভব করা যায়।

আমরা জড়জগতে কেউ স্বাধীন নই। কেউ আবার পূর্ণরূপে অধীনও নই। এখানে তিনটা বিষয় আছে ১) নির্ভরশীল ২) স্বাধীন ৩) পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। আমরা সকলে পরস্পর নির্ভরশীল। যেমন কেউ বাজার করে, কেউ বাজার বাসায় আনে কেউ সবজি বানায়, কেউ রান্না করে, কেউ পরিবেশন করে আর কেউ খায়। এভাবে অন্যের উপর পরস্পর নির্ভরশীলতাই হল আসল সাফল্যতা।

আর আমরা যদি সফল হতে চাই তাহলে আমাদের ABC বাদ দিতে হবে। A-Accusing (অভিযোগ তোলা), B-Blaming (দোষারোপ), C-Criticism (সমালোচনা) সাফল্য একদিনে আসবে না এর জন্য সারাজীবন ধরে প্রচেষ্টা করতে হবে। এবার আমরা সর্বশেষ বিষয়টি আলোচনা করব।

A-Abiding Interest (আগ্রহ ধরে রাখা)

আগ্রহ ধরে রাখার জন্য তিনটি জিনিস প্রয়োজন। সেগুলো হল:

১. ‘আপনি যে কাজটা ভালবাসেন তা করুন’ আর ‘আপনি যা করছেন তাকে ভালবাসুন।’ কিন্তু আমাদের বিপরীতটাই হয়। তাই আমরা কাজে বিরক্ত হয়ে যাই।

২. ”সৃজনশীলতা”- কোন প্রোগ্রামে গায়ক শ্রেুাতাদের অনেকক্ষণ ধরে গান রাখার জন্য বিভিন্ন সুরে বিভিন্ন লয়ে বিভিন্ন তালে গান গাইলে শ্রোতারা তার প্রতি আকর্ষিত হবে। আর এরকম সৃজনশীলতা ব্যবহার করেই আগ্রহ ধরে রাখা যায়।

৩. ”আমরা ছোট ছোট কাজ করব এবং নিয়মিত করব।” খরগোশ শুরু থেকেই দ্রুত গিয়ে মাঝ পথে গিয়ে থেমে গিয়েছে। আর কচ্ছপ আস্তে আস্তে গিয়েছে এবং সফলতা পেয়েছে। আমাদের ও আস্তে আস্তে যেতে হবে। একজন অতিরিক্ত ধূমপায়ী ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলছেন কিভাবে আমি ধূমপান ছাড়তে পারি?

ডাক্তার: প্রতিদিন কয়টি সিগারেট খান?

লোকটি বলল: ১০ টি।

ডাক্তার: তাহলে আপনি আজকে থেকে ৫ টি খাবেন।

পরবর্তীতে ৩ টি, পরে ১ টি। এভাবে ডাক্তার ঐ ব্যক্তিকে সিগারেট খাওয়া ছাড়িয়েছেন। আর আমাদের সবসময় কৃষ্ণকেন্দ্রিক কাজ করতে হবে আমরা যদি কৃষ্ণকেন্দ্রিক কাজ করি তাহলে আমাদের আগ্রহ সবসময় থাকবে কারণ কৃষ্ণ হল ”আনন্দাম্বুদিবর্ধনম্” অর্থ্যাৎ ভগবান হচ্ছেন আনন্দময়।

আসলে মূল সাফল্য হল কৃষ্ণকে লাভ করা। আর এই সাফল্য লাভের জন্য আমাদের কৃষ্ণকেন্দ্রিক কাজ করতে হবে। আমরা সফল হব  তখনই যখন আমরা কৃষ্ণকে লাভ করব। সে জন্য আমাদের আচার্যরা বলেছেন “জনম সফল তার, কৃষ্ণ দর্শন যার, ভাগ্যে হইয়াছে একবার।” তাই সকলের প্রতি আহ্বান রইল সবাই কৃষ্ণকেন্দ্রিক কর্ম করুন এবং জীবনে সফল্য লাভ করুন।

লেখক পরিচিতি: রাধেশ্যাম দাস, শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামী মহারাজের শিষ্য। ভয়েস(VOICE) এর পরিচালক, আই.আই.টি(IIT) মুম্বাই থেকে এম.টেক(M.Tech) ডিগ্রী অর্জন করেন। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, সময় ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ের উপর বিভিন্ন কোম্পানী ও কলেজে সেমিনার প্রদান করেন। যুব উপদেশক এবং পেশাজীবি পরামর্শক। তিনি যুব প্রচারে তাঁর মূল্যবান অবদানের জন্য ইস্‌কন তাঁকে ২০০৪ সালে গ্লোবাল এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।

জানুয়ারি-মার্চ ২০১৯ সালে প্রকাশিত ।। ৭ম বর্ষ ।। সংখ্যা ১।।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।