এই পোস্টটি 1040 বার দেখা হয়েছে
যুগাবতার দাস: ক্রীড়াঙ্গনে তার প্রবেশ মূখ্য খেলোয়াড়কে জল সরবরাহের নিমিত্তে, খুব সম্ভবত আপনার কাছে তারু গুরুত্ব ক্ষীণ, কিন্তু ঈশ্বর কী ভাবছেন?
আমিও এই জন-মাতানো খেলা ক্রিকেটের পোক ছিলাম। কৃষ্ণভাবনামৃতের সাথে সম্বন্ধ যুক্ত হবার পর আমি বুঝতে পারি ক্রিকেটের চেয়েও সর্বোত্তম বিকল্প রয়েছে, চিন্ময় জগতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে চিন্ময় ক্রিড়ায় উন্মত্ত হবার মধ্যে।
অন্যদিন, যখন আমি পত্রিকা স্ক্যানিং করছিলাম, ১৯৮৩ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের রজত জয়ন্তী উদ্যাপনের সচিত্র সংবাদ আমার দৃষ্টিগোচর হয়। ইবগত স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে কিছু সময় আমি বিভোগর হয়ে পড়ি। প্রতিবেশীর গৃহে ছোট্ট সাদা-কালো টিভি সেটের সামনে জন-পঞ্চাশেক ভক্ত উৎকন্ঠিত, উৎসাহী ভক্তের আবেগ-উৎফুল্ল ভরা হৈ-হুল্লোড় আর হর্ষধ্বনিতে মুখরিত ছিল সেই দিনটি। বিশ্বকাপের প্রতিটি খেলাই অত্যন্ত উৎসাহের হর্ষধ্বনিতে মাতে। তেমনি আমিও এই জড় খেলা উপভোগে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে আবেগে-উচ্ছাসে হর্ষধ্বনিতে মেতেছিলাম। যেমন করে বিশুদ্ধ চিত্ত ভক্ত পরমেশ্বরের লীলা স্মরণে উদ্বেলিত হয়। আমি উদ্বেলিত হতাম ক্রিকেটের রোমাঞ্চকর ও উৎকন্ঠিত দৃশ্যপটের কথা ভেবে। অতঃপর জড় পত্রিকায় প্রকাশিত ভারতের ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের রজত জয়ন্তী উদ্যাপনের বিবরণে তীব্রভাবে আসক্ত হয়েছিলাম যেমনি বিশুদ্ধ ভক্ত আসক্ত হয় শ্রীমদ্ভাগবতে উদ্ধৃত পরমেশ্বরের লীলা বিবরণে।
আমি ছবিতে সগৌরবে বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে উৎফুল্ল ভারতীয় ক্রিকেট দলকে দেখেছিলাম। হঠাৎ একটি অপরিচিত মুখ আমার দৃষ্টিকে আকর্ষণ করে। সেও বিজয়ী দলেল অংশীদার হিসেবে একপাশে দাঁড়িয়েছিল, গর্ব আর আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি তার মধ্যেও প্রকাশিত হয়েছিল হয়তো সে ভাবছিল আমিও নিমিত্তরূপে এই জয়ের অংশীদার। আমি বিশ্বকাপ জয়ে তার কোনো অবদানের কথা স্মরণ করতে পারছিলাম না। অবশেষে আমার স্মরণ হল ওহ! হ্যাঁ, সে তো দ্বাদশ খেলোয়াড়! তার প্রবেশ ক্রীড়াঙ্গনের মূখ্য খেলোয়াড়ের জল সরবরাহের নিমিত্তে।
একটি পারমার্থিক সাম্যতা:
জল সরবরাহ শব্দটি ভাবতেই আমার মনে প্রসারিত হয় চৈতন্য চরিতামৃতে, চৈতন্য মহাপ্রভুর লীলা বিবরণে, ভগবানের ভক্তরূপের প্রতি। সেখানে এক নারীভক্ত যিনি চৈতন্য মহাপ্রভুর অভিষেকের অনুষ্ঠানের জন্য জ্যেষ্ঠ ভক্তদের প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করতেন। তার নাম ছিল “দুঃখী”। তার এই আকুন্ঠ সেবার জন্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁকে কৃষ্ণপ্রেমরূপ অশেষ কৃপাদানের মাধ্যমে জগতের মূখ্য ব্যক্তিতে পরিণত করেছিলেন। এটিই হচ্ছে নীতি যেটি প্রভুপাদ আমাদের শিখিয়েছেন কখনো সম্মানের বশবর্তী হয়ে দৃশ্যপটে আসার প্রচেষ্টা করো না, শুধুমাত্র কৃষ্ণভাবনামৃত প্রসারে নিবেদিত জ্যেষ্ঠ ভক্তদের সহায়তা করে যাও।
এখানে একজন বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসকের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। কনিষ্ঠ শল্য চিকিৎসক রোগীর অস্ত্রোপাচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করে রাখেন কিন্তু মূখ্য চিকিৎসক কয়েক মিনিটের জন্য অপারেশন থিয়েটার প্রবেশ করে এবং অস্ত্রোপচারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় সম্পন্ন করেই কক্ষ প্রস্থান করেন। যাতে কনিষ্ঠ শল্য চিকিৎসক অবশিষ্ট কার্য যেমন রোগীর চামড়া শেলাই, পথ্য সরবরাহ ইত্যাদি সম্পাদন করেন। এই জগতে বেশীর ভাগ ব্যক্তিই অসুস্থ রোগীর মত তাদের চিন্ময়ত্ব ও আনন্দময় প্রকৃতির কথা ভুলে গিয়েছে। যেহেতু আত্মা জড়-দুর্ভোগ নিপতিত হয়ে যন্ত্রণা ভোগ করছে তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে কনিষ্ঠ শল্যবিদদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাক-কৃত্যগুলো সম্পন্ন করা যাতে করে জ্যেষ্ঠ ভক্তগণ অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদন করার মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করতে পারেন।
শ্রীমহাপ্রভু শিখিয়েছেন দাসানুদাস হতে। তিনি বলেছেন, এই নীতিই হচ্ছে তাঁর কৃপা প্রাপ্তির অন্যতম যোগ্যতা।
পুনরায় আমি পত্রিকার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি। আমি দেখছিলাম দ্বাদশ খেলোয়াড়টিও সগৌরবে বিজয়ী দলের অংশ হিসেবে দীপ্তিমান। কেননা এই বিজয় আনতে সে বিনম্র ও আনুগত্যের সাথে দলের খেলোয়াড়দের সর্বাত্মক সেবা ও সহযোগিতা করে গিয়েছে। আমি ভাবছিলাম “সমগ্র ইস্কনে আমরাও একটি দল। ভারতীয় দল যেভাবে বিশ্বকাপ জিতেছে আমরাও সমগ্র বিশ্বে হরিনাম প্রচারের মাধ্যমে বিজয়ী হতে চাই। শ্রীল প্রভুপাদ হচ্ছেন এই দলের যোগ্য দলনেতা। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কোচ। আমরা জানি কৃষ্ণের এই দলের বিজয় সর্বদাই ঘোষিত হয়। যেমনি মাত্র পাঁচ জন পাণ্ডব জয় লাভ করেছিল শত কৌরবের বিপক্ষে। গ্রাম-গ্রামান্তরে, নগরে হরিনাম প্রচারই আমাদের লক্ষ্য। আমরা অবশ্যই বিজয়ী হব, আমাদের নৈতিক ও পারমার্থিক একাগ্রতা, অহৈতুকি ভক্তি এবং অপ্রাকৃত প্রেমই ঝগড়া, কপটতা, কাম ও স্বার্থপরতা বিস্তারকারী কলিকে প্রতিহত করতে সমর্থ হবে।
চৈতন্য মহাপ্রভু ইতোপূর্বে বিজয়ের ঘোষণা করে দিয়েছেন। তাই আমরা যদি বিজয়ী দলের অংশীদার হতে চাই, তাহলে আসুন জেগে উঠি এবং বিনম্র সেবার মধ্যে সর্বত্র হরিনাম প্রসারে সহায়তা করি জগৎ বিস্তীর্ণ এই ক্রীড়াঙ্গনে। -হরেকৃষ্ণ
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ পত্রিকা জানুয়ারি ২০১৪ সালে প্রকাশিত)