শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর আবির্ভাব

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 295 বার দেখা হয়েছে

শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর আবির্ভাব

কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য : আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্‌কন)
১৯৭৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভুবনেশ্বরে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর আবির্ভাব তিথি উপলক্ষ্যে প্রদত্ত প্রবচনের বঙ্গানুবাদ


নিত্যানন্দ প্রভু হলেন বলদেব, অর্থাৎ বলদেব-তত্ত্ব

ব্রজেন্দ্রনন্দন যেই, শচীসুত হইল সেই,
বলরাম হইল নিতাই ।

তিনি হলেন নন্দ মহারাজের পুত্র, তিনি শচীদেবীর পুত্ররূপে আবির্ভূত হন। চৈতন্য মহাপ্রভুর মাতার নাম ছিল শচীদেবী। তাই কৃষ্ণ হলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং বলরাম হলেন শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু ।
বৈদিক সাহিত্যে বলা হয়েছে যে, বল’ই হল শক্তি। কোন কোন সময় মূর্খ দার্শনিকরা বল এর অর্থ বলতে বোঝেন দৈহিক শক্তি। তারা এই দর্শনে বিশ্বাসী যে, “আপনি যতক্ষণ না পর্যন্ত শারীরিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছেন ততক্ষণ আপনি আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করতে পারেন না। তাই আপনাকে শক্তিশালী হতে গেলে মাংস খেতে হবে এবং লড়তে হবে। তবেই আপনি আধ্যাত্মিক জন্ম লাভ করবেন।” না, এই শক্তি আলাদা। এটি হলো আধ্যাত্মিক শক্তি। আমরা আধ্যাত্মিক শক্তির বলেই ঘুরে বেড়াচ্ছি, কিন্তু জানি না যে সেই শক্তির জোরেই আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি। লোকেরা জড় শক্তির কথা ভাবছে।

অহংকারে মত্ত হৈঞা, নিতাই-পদ পাসরিয়া অসত্যেরে সত্য করি মানি।

এটা হয় অহঙ্কারের ফলে। অহংকার বিমূঢ়াত্মা কর্তাহমিতি মন্যতে (গীতা ৩/২৭) যারা বিমূঢ় মহামূর্খ। বি হল বিশেষ, মূঢ় মানে মূর্খ । বিশেষরূপে মহামূর্খ। নরোত্তম দাস ঠাকুরও বলেছেন, অহংকারীরা ভাবে যে, “আমরা হলাম স্বাধীন। আমরা সব সমস্যার সমাধান করতে পারবো। জড় জাগতিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে।” তাই সেটাই হলো আমাদের জড় জাগতিক চাহিদা বা অসুখ। তারা আসলে পথভ্রষ্ট। অহংকার বিমূঢ়াত্মা। তারা বোঝে না যে প্রকৃত শক্তি হলো আধ্যাত্মিক শক্তি। একজন অত্যন্ত ক্ষমতাবান মানুষ, তিনি হয়তো বিজ্ঞানী। তাহলে তার সেই শক্তি কোথায়? শক্তি হলো আত্মা ।
যখন আমাদের শরীর থেকে আত্মা চলে যায় সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাকে মৃত বলি। তা সে মানুষটি যতই বুদ্ধিমান, ক্ষমতাবান হোক না কেন একজন জীবিত এবং মৃত মানুষের মধ্যে পার্থক্য আছে। একজন জীবিত মানুষ অত্যন্ত শক্তিশালী, তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত। ঠিক যে মুহূর্তে- তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে লুটিয়ে পড়লেন ভূমিতে, তারপর আপনি যদি তাঁকে আঘাতও করেন তবুও সে প্রতিবাদ করার শক্তি পাবে না। তাহলে সেই শক্তি কোথায়? সেই শক্তি চলে গেছে। এটিকেই বলে আধ্যাত্মিক শক্তি। এই আধ্যাত্মিক শক্তিই হলো বলরাম। সেই শক্তির জোরেই আমাদের শরীর নড়ে। ধরা যাক আপনি মার্সিডিজ অথবা রোলস রয়েস নতুন গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু যখন পেট্রোল থাকে না তখন সেই ভালো গাড়িও চলে না। একইভাবে প্রকৃত শক্তি হলো বলরাম। ‘বল’ শব্দের অর্থ ‘শক্তি’। আমাদের আশ্রয় নিতে হবে প্রভু বলরামের চরণকমলে । বলরাম শব্দের অর্থ গুরুতত্ত্ব। ভগবান বলরাম হলেন গুরুর প্রতিনিধি। যস্য প্রসাদাদ্ ভগবৎপ্রসাদঃ। আমরা যদি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে, শ্রীকৃষ্ণকে জানতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই আশ্রয় নিতে হবে বলরামের কাছে। বৈদিক শাস্ত্রে আছে, প্রভু বলরামের কৃপা ছাড়া কোনও মানুষই তার আধ্যাত্মিক পরিচয় বুঝতে পারে না। নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ। তাই আমাদের উচিত বলরামের আশ্রয়ে থাকা। আমরা যদি নিত্যানন্দ প্রভুর আশ্রয়ে থাকি তাহলে আমরা শান্তিতে থাকবো। ঠিক যেমন দিনের বেলা গ্রীষ্মকালে আমরা ঘর্মাক্ত হয়ে পড়ি। আবার যখন রাতে চন্দ্র ওঠে তখন আমরা তৃপ্ত হই। একটি মাত্র চন্দ্রোদয় আমাদের অনেক আনন্দ দেয়। তাই, আমরা যদি প্রকৃত শান্তি খুঁজি তবে নিত্যানন্দ প্রভুর চরণে আশ্রয় নিতেই হবে। নিতাইপদকমল কোটি চন্দ্ৰ সুশীতল। নিত্যানন্দ প্রভু হলেন আধ্যাত্মিক শক্তি। আর সেই আধ্যাত্মিক শক্তি ছাড়া আমরা কোনওভাবেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পেতে পারি না।
আপনি যদি ভালো বক্তা হন তার মানেই যে আপনি নিজেকে বুঝবেন তা কিন্তু নয়। নায়মাত্মা প্রবচনেন। খুব উন্নত মস্তিষ্ক হলেও না। ন মেধয়া, আপনি মেধাবী হলেই যে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বুঝবেন তা নয় । ন বহুনা শ্রুতেন।

নিতাইপদকমল, কোটিচন্দ্র সুশীতল যে ছায়ায় জগৎ জুড়ায় ।
হেন নিতাই বিনে ভাই, রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই দৃঢ় করি ধরো নিতাইয়ের পায় ।।

জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো কিভাবে আমাদের আদি বাড়ি অর্থাৎ গোলোক বৃন্দাবনে ফিরে যাব এবং কিভাবে রাধা-কৃষ্ণের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক স্থাপন করব। যতক্ষণ না আমরা রাধা কৃষ্ণের কাছে যাব ততক্ষণ প্রকৃত আনন্দ লাভ করতে পারব না। কিন্তু আপনি যদি নৃত্য করতে চান এবং আনন্দ পেতে চান তবে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সামনে নৃত্য করুন। তবেই আপনি অপরিসীম আনন্দ পাবেন। শ্রীকৃষ্ণকে ছাড়া নৃত্য আমাদের মন্দিরে চলে না। জড় জগতের মতো আমরাও খাই । খাওয়া শেষে যা অবশিষ্ট থাকে তাই-ই। আমরা শুধুমাত্র শুকনো দার্শনিক নই।

কৃষ্ণ বড় দয়াময় করিবারে জিহ্বা জয় স্ব-প্রসাদান্ন দিলা ভাই ।

আমরা খাচ্ছি কৃষ্ণপ্রসাদ। বাস্তবে দেখতে গেলে আমাদের উল্লেখযোগ্য কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আমাদের বহু অর্থ লাগে বিভিন্ন দেশে মন্দির নির্মাণ করতে, রক্ষনাবেক্ষণ করতে। একটি পরিবারে বিভিন্ন সদস্য থাকে। তারা সকলেই উৎকণ্ঠা এবং দুশ্চিন্তায় থাকেন। আর আমরা কয়েক হাজার মানুষের পরিবার চালাচ্ছি। তবু আমাদের উল্লেখযোগ্য কোনো দুশ্চিন্তা নেই । কারণ আমরা প্রভু বলরাম এবং প্রভু নিত্যানন্দের আশ্রয়ে আছি। জড় জগৎ মানেই দুশ্চিন্তার পাহাড় ।
প্রহ্লাদ মহারাজের পিতা তাকে প্রশ্ন করলেন, “প্রিয় পুত্র-তুমি কি শিখলে শিক্ষকদের থেকে?” পুত্র বলল, “সমগ্র মানব সমাজ একটি মাত্র অসুখে ভুগছে-তা হলো উৎকণ্ঠা । সমুদ্বিগ্নধিয়ামসদগ্রহাৎ (ভাগবত-৭/৫/৫) যে কোনও মানুষকে প্রশ্ন করুন। এটি ছোট্ট পিঁপড়ে হাতিকে বা অথবা প্রধানমন্ত্রী বা ভিখারিকে প্রশ্ন করুন, “আপনি কি উৎকণ্ঠিত?” সবাই বলবে “হ্যাঁ”। এটি হলো বাস্তব। তাহলে তারা কেন উৎকণ্ঠিত?


এই উদ্বেগপূর্ণ জড় জগতে শরীর যতক্ষণ আছে আপনি ততক্ষণ উদ্বেগে আছেন। তাই প্রহ্লাদ মহারাজ বলেছেন, “এই সমস্যার প্রকৃত সমাধান হলো জড় জগৎ থেকে বেরিয়ে যাওয়া। এটাই হলো শ্রেষ্ঠ পন্থা” ব; আরণ্যক উপনিষদ ১/৩/২৮ বলা হয়েছে, অসতো মা সদ্‌গময়। “এই জড় জগতে না থেকে প্রকৃত অস্তিত্বের দিকে যাও।”

এই উদ্বেগপূর্ণ জড় জগতে শরীর যতক্ষণ আছে আপনি ততক্ষণ উদ্বেগে আছেন। তাই প্রহ্লাদ মহারাজ বলেছেন, “এই সমস্যার প্রকৃত সমাধান হলো জড় জগৎ থেকে বেরিয়ে যাওয়া। এটাই হলো শ্রেষ্ঠ পন্থা” বৃ: আরণ্যক উপনিষদ ১/৩/২৮ বলা হয়েছে, অসতো মা সদ্‌গময়। “এই জড় জগতে না থেকে প্রকৃত অস্তিত্বের দিকে যাও।” প্রকৃত অস্তিত্ব হলো আধ্যাত্মিক জীবন। তাই আমরা বলি প্রকৃতপক্ষেই জীবন চাই, আশীর্বাদী জীবন, তবে আমাদের এই জড় জাগতিক অস্তিত্ব থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। এটিই প্রহ্লাদ মহারাজের নির্দেশ। তাছাড়া আপনি যদি এই জাগতিক অস্তিত্বে বাস করেন তাহলে আপনাকে উৎকণ্ঠা ভোগ করতেই হবে।
তাই প্রহ্লাদ মহারাজ পরামর্শ দিলেন, আপনি প্রকৃত সমস্যা অর্থাৎ উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি পাবেন না যতক্ষণ না এই জড় জগৎ থেকে বের হচ্ছেন না। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই জীবন থেকে জড়ত্বকে বাদ দিতে হবে। এই জড় জাগতিক সভ্যতা প্রকৃতপক্ষেই আত্মঘাতী। তাই তাদের কাছে আত্মার কোনও খবর নেই। সবাই শান্তিতে থাকার চেষ্টা করলেও তারা জানে না এটি কিভাবে সম্ভব? জড় জাগতিক নানা রকম সুখ দিয়ে শান্তিতে থাকার বৃথা চেষ্টা করছে সবাই। তারা মনে করছে আকাশছোঁয়া অট্টালিকা, ন্যানো টেকনোলজি, ড্রাইভারহীন উন্নত বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করেই বুঝি সভ্যতার অগ্রগতি। সে আসলে উৎকণ্ঠাকেই বাড়িয়ে তোলা। সেই উৎকণ্ঠা থেকে সমাধানের পথ এখনও অজানা। আগেকার দিনে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল কুঁড়েঘরে । ব্যাসদেব শ্রীমদ্ভাগবত এবং অন্যান্য পুরাণ রচনা করেন। কে ব্যাসদেবের মতো এমন শাস্ত্রগ্রস্থ লিখেছেন? যে কোনও দৃষ্টিভঙ্গিতেই সাহিত্যের দৃষ্টিতে, দার্শনিক দৃষ্টিতে–সব দিক দিয়েই তা হলো যথাযথ সাহিত্য। বেদব্যাস মহাভারত, পুরাণ এবং বেদান্ত দিয়েছেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে, ব্রাহ্মণ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি প্রয়োজন । শমো দমোস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ। জ্ঞান বিজ্ঞানমাস্তিক্যং । সেই শিক্ষা কোথায়? এখন শিক্ষা হল যান্ত্রিক শিক্ষা। সেটাকে আপনি কিভাবে হাতুড়ির ঘা মারবেন? আমরা যদি সত্যিই শান্তি চাই তাহলে প্রভু নিত্যানন্দের চরণে আশ্রয় নিতে হবে। তাহলে আমরা আনন্দ লাভ করবো। তার পাশাপাশি আমরা চন্দ্রোদয় দেখতে পাব এবং আমাদের সব ক্লান্তি দূর হবে। ভৃত্যের সঙ্গে যদি প্রভু নিত্যানন্দের কোনও সম্পর্ক না থাকে তাহলে আপনি আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন। নিত্য মানে সর্বদা আর আনন্দ মানে প্রফুল্লতা। আপনার সঙ্গে যদি নিত্যানন্দ প্রভুর সাথে কোন সম্পর্ক না থাকে তাহলে আপনি বেকার সময় নষ্ট করছেন।
নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন-

সেই সম্বন্ধ নাহি যার বৃথা জন্ম গেল তার সেই পশু বড় দুরাচার।।

“যাঁর সাথে প্রভু নিত্যানন্দের সম্পর্ক নেই সে পশু। একটি পশু কিভাবে আনন্দ লাভ করতে পারে? সেটা অসম্ভব। একটি কুকুর তার শিশু অবস্থাতেই খাদ্যের সন্ধান করে। অনেক সময় সে খাবার পায়ও না। যতক্ষণ না একটি কুকুর ভালো প্রভু পাচ্ছে ততক্ষণ সে রাস্তার কুকুর। তাই সর্বদা সে দুঃখে থাকে। তাহলে প্ৰভু নিত্যানন্দের কুকুর হওয়াই ভালো। তাহলে সে আনন্দে থাকবে। অন্যান্য মানুষের পোষা কুকুর না হয়ে তাঁরই কুকুর হওয়া উচিত। প্রত্যেকেই হলো কুকুর। প্রত্যেকেই তার প্রভুর সন্ধান করছে। তার সেবা করতে চাইছে। কিন্তু কেউই সেবা করে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। কারণ তারা সকলেই নকল প্ৰভু । আপনাকে সত্যিকারের প্রভু নির্বাচন করতে হবে। তবেই আপনি আনন্দ লাভ করতে পারবেন। মানুষ জানে না আনন্দ কোথায়? আমি কি একটি কুকুর হবো? শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বলেছেন—

বৈষ্ণব ঠাকুর তোমার কুকুর
বলিয়া জানহ মোরে ।

“আমার প্রিয় বৈষ্ণব ঠাকুর, আপনি আমাকে কুকুর হিসেবে গ্রহণ করুন। আমি কুকুর হয়েই আছি। কিন্তু আমি হলাম মায়ার কুকুর। আমি বৈষ্ণব কুকুর নই। তাই আমাকে প্রভু দয়া করে গ্রহণ করুন।” আপনি যদি বৈষ্ণব কুকুর হন অর্থাৎ নিত্যানন্দ প্রভুর কুকুর হন তাহলে আনন্দের কোনও অভাব থাকবে না।
যার সঙ্গে নিত্যানন্দ প্রভুর কোনও যোগাযোগ নেই সে বলে না “জয় নিতাই। জয় গৌর।” তিনি ভাবেন সমাজের কথা, পরিবারের কথা।

নিতাই না বলিল মুখে, মজিল সংসার সুখে
বিদ্যাকুলে কি করিবে তার।।

এগুলি জাগতিক মানুষের কথা। তারা এই সংসারে কোনও সুখ পায় না। তবু তারা সেই দিকেই ধাবিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং উচ্চ বংশে জন্মগ্রহণ কোনও উপকারে আসবে না। এইসব ভ্রান্ত জিনিসগুলির ফলেই আমাদের মনে অহংকার জন্মায়। সেটাকেই আমরা বাস্তব বলে ধরে নিই। কিন্তু আমরা যদি প্ৰভু নিত্যানন্দের চরণকমলে আশ্রয় নিই তাহলে আমরা চেতনা পাবো। আলো পাবো।
অহংকারে মত্ত হঞা, নিতাইপদ পাসরিয়া অসত্যেরে সত্য করি মানি। নিতাইয়ের করুণা হবে, ব্রজে রাধাকৃষ্ণ পাবে ধর নিতাইয়ের চরণ দুখানি ॥ তাই নরোত্তম দাস ঠাকুর পরামর্শ দিচ্ছেন,

নিতাইয়ের চরণ সত্য, তাঁহার সেবক নিত্য নিতাইপদ সদা কর আশ ।

নিত্যানন্দ প্রভুর শুভ আবির্ভাব দিবসে স্মরণ করা উচিত তাঁর চরণকমল। বাস্তব হল নিতাই চরণ। আর যারা নিত্যানন্দ প্রভুর দাস তারা নিত্য তাঁর সেবা করেন। জড় জগতের মানুষ মায়াবদ্ধ। আমরা এক দেহ থেকে অন্য দেহে বিচরণ করি। তথা দেহান্তর (গীতা ২/১৩) সেটা ঠিক করি না কি রকমের দেহ। সেখানে কোনও বিজ্ঞান নেই। কোনও জ্ঞান নেই দেহান্তের। ভগবদ্‌গীতায় তা বলা আছে । আমরা এমনই মূর্খ যে আমাদের শিক্ষার দম্ভে ভুগি। তাই আমাদের সর্বদাই উচিত প্রভু নিত্যানন্দের চরণকমলে আশ্রয় নেওয়া। নরোত্তম দাস ঠাকুর ছিলেন আচার্য। তিনি নিজেকে দুঃখী বলে মনে করেছেন। আসলে তিনি দুঃখী নয়। তিনি তো আচার্য। তারা কখনও দুঃখী হন না। কিন্তু সাধারণ মানুষের অবস্থায় তিনি আবির্ভূত হওয়ায় তিনি নিজেকে দুঃখী বলছেন। অন্যভাবে বলতে গেলে, নরোত্তম দাস ঠাকুর হলেন মানবশ্রেষ্ঠ। তাই এই জড় জগতে একজন হতেই পারেন মানবশ্রেষ্ঠ । তবুও এখানে সবাই-ই দুঃখী। তাই তিনি নিজেকে দুঃখী বলেছেন।

নরোত্তম বড় দুঃখী নিতাই মোরে কর সুখী, রাখ রাঙা চরণের পাশ ॥

একমাত্র প্রভু নিত্যানন্দই তাঁকে সুখী করতে পারবেন। তা ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা সর্বদা নিত্যানন্দ প্রভুর কাছে প্রার্থনা করবো, “আমাদেরকে আপনার চরণকমলে আশ্রয় দিন। আমরা বড় দুঃখী। আপনার চরণকমলে স্থান পেলে আমরা সুখী হবো।” আর সেটাই হবে প্রকৃত আনন্দ ।


 

জানুয়ারী-মার্চ  ২০১৮ ব্যাক টু গডহেড
সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।