এই পোস্টটি 88 বার দেখা হয়েছে
“শ্রীপাদ জয়ানন্দ প্রভু মূলত রথযাত্রার সেবায় নিজেকে পূর্ণরূপে নিযুক্ত রাখতেন এবং তিনি সর্বপ্রকার বৈষ্ণব অপরাধ বর্জন করে চলতেন। যদি কেউ প্রজল্প করত, তিনি তৎক্ষণাৎ সেই স্থান পরিত্যাগ করে চলে যেতেন। তাতে নিজে যুক্ত হতেন না। পাশ্চাত্যে যেমনটি বলা হয় ‘নিজের নাক পরিষ্কার রাখা।’ তিনি সর্বদা ভগবদ্ভক্তিমূলক সেবায় নিমগ্ন থাকতেন। সমস্ত ভক্তেরা তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। বিশেষভাবে তিনি সর্বদা চিন্তিত থাকতেন কীভাবে রথযাত্রা উৎসবের আরও প্রগতি সাধন করা যায়। তিনিই প্রথম টেলিস্কোপিক রথ নির্মাণের ধারণা উদ্ভাবন করেন এবং আমেরিকায় বৃহৎ রথ নির্মাণের জন্য এই ডিজাইনটি দরকারি ছিল। অবশ্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের কাছ থেকে কৃষ্ণ তাঁকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চলে যান, লিউকেমিয়া বা এরকম কোন রোগ সংক্রমণে। যদিও তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ ছিলেন এবং এই দেহে তাঁর অবস্থান অতি অল্প সময়ের জন্য বাকি ছিল, তিনি কখনোই নিরাশ বা বিরক্ত হননি, বরং জীবনের শেষ পর্যন্ত সর্বক্ষণই রথযাত্রার পরিকল্পনা এবং আয়োজন করা নিয়ে আলোচনা করতেন। প্রকৃতপক্ষে শেষের দিকে তারা তাঁকে হুইল চেয়ারে করে রথযাত্রায় নিয়ে যায়, তিনি রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করে সেই আয়োজনে সহায়তা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। রথযাত্রার পর তিনি দেহত্যাগ করেন। প্রকৃতপক্ষে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করছিলেন। এভাবে দেখা যায়, নিরন্তর সেবায় যুক্ত থাকার কারণে তিনি কখনোই বিমোহিত হননি। তিনি খুবই সরল ছিলেন, এমন নয় যে খুবই বুদ্ধিদীপ্ত কেউ ছিলেন। তিনি কৃষ্ণভাবনামৃতে তাঁর সংকল্পে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। কৃষ্ণভাবনামৃত অনুশীলনে সহায়ক বিষয় সম্পর্কে তিনি ভালোভাবে অবগত ছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, তাঁর আত্মনিবেদনপূর্ণ সেবা, কৃষ্ণভাবনামৃতে পূর্ণ ও দৃঢ় প্রত্যয় এবং তাঁর মহিমামণ্ডিত প্রয়াণ প্রদর্শন করে যে, তিনি ভগবদ্ধামে ফিরে গিয়েছেন।
আজকের দিনে আমরা তাঁকে স্মরণ করি। যেহেতু তিনি এখন চিন্ময় জগতে রয়েছেন, যেমনভাবে তিনি আমার মস্তক মুণ্ডনের মাধ্যমে আমাকে মায়ামুক্ত রেখেছেন ঠিক তেমনভাবেই তিনি আমাকে আবারও আশীর্বাদ করবেন এবং তিনি শ্রীল প্রভুপাদের সেবায় যেভাবে আত্মনিবেদন করেছেন আমরাও যেন তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেবায় আত্মনিবেদন করতে পারি এবং জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কৃষ্ণভাবনামৃতে স্থিত থাকতে পারি। তিনি ভগবদ্ভক্তিতে অত্যন্ত ঐকান্তিক ও সেবায় দৃঢ় সংকল্পযুক্ত ছিলেন।”
~ শ্রীল জয়পতাকা স্বামী
২রা মে, ১৯৮৫
নব তালবন, মিসিসিপি, যুক্তরাষ্ট্র