এই পোস্টটি 1278 বার দেখা হয়েছে
শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদেব বা শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত অবতারের অবতারী-স্বয়ং ভগবান। তিনি সমস্ত অবতারদের উৎস। ভগবানের অবতারদের চেনা যায় তাঁদের অলৌকিক কার্যকলাপের মাধ্যমে। যেটি সাধারণ জীবের পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। শ্রীমদ্ভাগবতে (১/৩/২৬) বলা হয়েছে যে,
“অবতারাঃ হ্যসংখ্যেয়া হরে” অর্থাৎ ভগবান শ্রীহরির অসংখ্য অবতার আছে।
স্বয়ং ভগবান মহাপ্রভু শ্রীধাম নবদ্বীপে যে আবির্ভূত হবেন তা বিভিন্ন পুরাণদি শাস্ত্রে বলা হয়েছে। এখানে কতিপয় পুরাণাদি শাস্ত্রের প্রমাণ দেওয়া গেল-
শ্রীকৃষ্ণ যামলে বলা হয়েছে-
“পুণ্যক্ষেত্রে নবদ্বীপে
ভবিষ্যামি শচীসূতঃ”
“পুণ্যক্ষেত্রে শ্রীনবদ্বীপ ধামে আমি শচীদেবীর পুত্ররূপে আবির্ভূত হবে।”
শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে-
“কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাহকৃষ্ণাং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্র পার্ষদম্।
যজ্ঞৈঃ সংকীর্তন প্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ॥”
“যাঁর মুখে ‘কৃষ্ণ’ এই দুটি বর্ণ, যার অঙ্গ কান্তি অকৃষ্ণ অর্থাৎ গৌর-অঙ্গ, উপাঙ্গ, অস্ত্র ও পার্ষদগণ পরিবেষ্টিত মহাপুরুষকে সুবুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ সংকীর্তন প্রায় যজ্ঞ দ্বারা ভজনা করে থাকেন।”
শ্রীবামণ পুরাণে
“কলি ঘোর তমন্নান্ সর্বানাচার বর্জ্জিতান।
শচীগর্ভে চ সম্ভুয় তারয়িষ্যামি নারদ॥”
“শ্রীভগবান বলেছেন- হে নারদ! আমি শচী গর্ভে প্রকটিত হয়ে আচারহীন কলিহত জীবকে উদ্ধার করব।”
শ্রীপদ্মপুরাণে বলা হয়েছে-
“কলেঃ প্রথম সন্ধ্যায়াং গৌরাঙ্গহহং মহীতলে।
ভাগীরথী-তটে রম্যে ভবিষ্যামি সনাতন॥
“ভাগীরথী গঙ্গার রমণীয় তীরে কলির প্রারম্ভে শ্রীগৌরাঙ্গরূপে আমি আবির্ভূত হব।”
ভবিষ্যৎ পুরাণে উল্লেখ আছে-
আনন্দাশ্রুকলারোমহর্ষপূর্ণ তপোধন।
সর্বে মামেব দ্রক্ষন্তি কলৌ সন্ন্যাসরিূপীনম্॥
“শ্রীভগবান বলেন- “হে তপোধন! কলিকালে সকলে আমাকে অশ্রু-রোমাঞ্চ-হর্ষাদি ভাবাপন্ন প্রেমানন্দে বিহ্বল সন্ন্যাসী রূপে দেখতে পাবে।”
মৎস্য পুরাণে বলা হয়েছে-
“মুণ্ডৌ গৌরঃ সুদীর্ঘাঙ্গ স্ত্রিস্রোতস্তীর সম্ভবঃ।
দয়ালু কীর্তনগ্রাহী ভবিষ্যামি কলৌযুগে॥”
“শ্রীভগবান বললেন- আমি কলিযুগে গঙ্গাতীরে সুদীর্ঘ বিগ্রহ শ্রীগৌরাঙ্গরূপে প্রকটিত হয়ে জগতের প্রতি করুণা বশতঃ মুণ্ডিত মস্তক সন্ন্যাসী বেশে জীব সকলকে যুগধর্ম হরিনাম কীর্তন করার।”
নৃসিংহপুরাণে বলা হয়েছে-
“গোপালং পরিপালয়ন্ ব্রজপুরে ভারহরণং দ্বাপরে।
গৌরাঙ্গ পিয়কীর্তনঃ কলিযুগে চৈতন্যনামা হরিঃ॥”
“দ্বাপরে শ্রীব্রজপুরে যিনি গোপগণকে প্রতিপালন করেছেন এবং পৃথিবীর ভার হরণ করেছেন, তিনি কলিযুগে গৌরাঙ্গরূপে, শ্রীচৈতন্য নামে মধুর হরিনাম কীর্তন প্রচার করবেন।”
মার্কণ্ডেয়পুরাণে বলা হয়েছে-
গোলোকঞ্চ পরিত্যক্তা লোকানাং ত্রাণকারণাৎ।
কলৌ গৌরাঙ্গ রূপেন লীলা লাবণ্য বিগ্রহঃ॥
“শ্রীভগবান গোলোক পরিত্যাগ পূর্বক জীব উদ্ধারের জন্য কলিযুগে লীলা গৌরাঙ্গ রূপে লীলা মাধুর্য বিগ্রহ রূপ ধারণ করেন।”
শ্রীব্রহ্মযামলে বলা হয়েছে-
ভবিষ্যামি চৈতন্যঃ কলৌ সঙ্কীর্তনাগমে।
হরিনাম প্রদানেন লোকন্নিস্তারয়াম্যহম্॥
“আমি কলিযুগে সঙ্কীর্তনারম্ভে শ্রীচৈতন্য নাম ধারণ করে হরিনাম প্রদান পূর্বক জীবের নিস্তার করব।”
উপপুরাণে বলা হয়েছে-
অহমেব ক্কচিদ্ব্রক্ষণ্ সন্ন্যাসাশ্রমাশ্রিতঃ।
হরিনাম ভক্তিং গ্রহয়ামি কলৌ পাপহতারাণ॥
“হে ব্রাহ্মণ! আমিই কলিযুগে সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করে ভয়ঙ্কর পাপাচার পরায়ণ জীবদের হরিভক্তি প্রদান করব।”
কূর্মপুরাণে বলা হয়েছে-
কলিনা দহ্য মানানামুদ্ধারার্থঃ তমোভূতাম্।
কলেঃ প্রথম সন্ধ্যায়াং ভবিষ্যামি দ্বিজাতিষু॥
“কলি দ্বারা দগ্ধ-পীড়িত তমসাচ্ছন্ন জীবগণের উদ্ধারের জন্য কলিযুগের প্রথমভাগে ব্রাহ্মণ গৃহে জন্ম গ্রহণ করব।”
কপিল তন্ত্রে বলা হয়েছে-
জম্বুদ্বীপে কলৌ ঘোরে মায়াপুরে দ্বিজালয়ে।
জনিত্বা পার্ষদৈঃ সার্দ্ধং কীর্তনং কারয়িষ্যিতি॥
“ঘোর কলিকালে জম্বুদ্বীপান্তর্গত মায়াপুরে ব্রাহ্মণ গৃহে জন্মগ্রহণ করত ভগবানের পার্ষদগণের সহিত কীর্তন করবেন।”
দেবী পার্বতী শিবের নিকটে “অনন্ত-সংহিতায়” উক্ত শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য দেবের সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক হলে শিব বলেছেন-
শ্রীমহাদেব উবাচ
য আদিদেবোহখিল লোকনাথ,
যস্মাদিদং সর্ব্বামভৃৎ পরাত্মা।
লয়ং পুনর্যস্যতি যত্র চান্ত্রে
তং কৃষ্ণচৈতন্যমবেহি কান্তে॥
“মহেশ্বর শিব দেবী পার্বতীকে বললেন- হে প্রিয়ে! যিনি সমস্তের আদিভূত, সমস্ত জগতের অধীশ^র, যা হতে সমস্ত চরাচর উৎপন্ন হয়েছে, যিনি পরমাত্মা স্বরূপ এবং যাতে প্রলয় কালে সবকিছু লয় হয়, তাঁকেই শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বলে জানবে।”
য এব ভগবান্ কৃষ্ণো রাধিকা প্রাণবল্লভঃ।
সৃষ্ট্যাদৌ স জগন্নাথো গৌর আসীন্মহেশ্বরি॥
“হে মহেশ্বরি! যিনি রাধিকার প্রাণবল্লভ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, সেই জগৎ স্বামীই সৃষ্টির আদিকালে শ্রীগৌর রূপে প্রকটিত ছিলেন।”
বিস্তরান্মে নিগদতঃ শ্রুতো যঃ কৃষ্ণ ঈশ্বরঃ।
বিশ্বাদৌ গৌরকান্তিত্বাৎ গৌরাঙ্গং বৈষ্ণবাঃ বিদুঃ॥
“পূর্বে আমার নিকট হতে বিস্তৃতভাবে যে জগদীশ্ব র কৃষ্ণের বিষয় শ্রবণ করেছো, তিনিই বিশ্ব সৃষ্টির আদিতে গৌর-কান্তিরূপে প্রকাশিত থাকায় বৈষ্ণবগণ তাঁকে গৌরাঙ্গ বলে জানেন।”
পরাত্মনে নমস্তস্মৈ সর্বকারণ হেতবে।
আদিদেবায় গৌরায় সচ্চিদানন্দ রূপিণে॥
“সেই সর্বকারণের কারণ, আদি দেবতা, সচ্চিদানন্দ স্বরূপ, শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে প্রণাম করি।”
হরেকৃষ্ণ!