এই পোস্টটি 361 বার দেখা হয়েছে
যে বক্রহাসি সবকিছুকে সহজ করে দেয়
তোষন নিমাই দাস
আজকাল ই-মেইল কিংবা ম্যাসেঞ্জারে বন্ধুদের সাথে বার্তা প্রেরণের সময় নিজেকে বেশ সাবধানী অনুভব করি। এর কারণ এই নয় যে, প্রাইভেসি বা নিরাপত্তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। আসলে কারণটি হল ভুল অনুবাদের বিপদ। মাঝে মাঝে কারো সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে যথেচ্ছা শব্দ ব্যবহার বা অবিবেচক ভাবনার উপস্থাপনার জন্য। কারো সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিরকম শব্দ লিখা হচ্ছে এটি বড় ব্যাপার। এ শব্দগুলো তখন সংরক্ষিত হয়ে যায়। কিন্তু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যেহেতু এটি কারো দৈহিক ভাষার সহকারি রুপের প্রকাশের অভাব রয়েছে। ছোট্ট কোনো ব্যাকরণগত বা বানান ভুল বাক্যের অর্থের পুরোটাই পরিবর্তন ঘটাতে পারে এবং সেক্ষেত্রে সেই লিখিত শব্দের পুনঃশোধনের জন্য তখন হয়তো কেউ অনুরোধ করবে না বা তৎক্ষণাৎ সুযোগও থাকবে না।
ইন্টারনেটে কয়েকটি প্রধান মাধ্যমে মনের অনুভূতি বা ভাব প্রকাশ সম্ভব হয় স্মাইলি (smiley) ও অন্যান্য ইন্টারনেটে কয়েকটি প্রধান মাধ্যমে মনের অনুভূতি বা ভাব প্রকাশ সম্ভব হয় স্মাইলি (smiley) ও অন্যান্য আবেগ প্রকাশের আইকনসমূহ ব্যবহারের মাধ্যমে। এ সমস্ত আইকনসমূহ অনেক বেশি জনপ্রিয়। একটি স্মাইলি (মৃদু হাসির আইকন) ব্যবহার করা হয় কোনো নির্দেশনার ক্ষেত্রে হালকা কোনো মন্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে তা না হলে প্রণোদনা, শত্রুতা বা উদ্বিগ্নতার অনুভূতিকে ঝুকিপূর্ণ করতে পারে। কেউ একজন যথার্থই বলেছিল “একটি মৃদু হাসি একটি ভ্রুকুঞ্চিকে বিভ্রান্ত করতে পারে।” আপনি হয়তো চান কেউ আপনার সাথে সঠিক আচরণ করুক কিন্তু এক্ষেত্রে তার ওপর জোড় খাটাতে চান না। কাউকে কোনো কিছু বলতে চাইলে তার যথার্থতা সম্পর্কে হয়তো আপনি অনিশ্চিত থাকতে পারেন, কিংবা আপনি হয়তো হালকা সুরে কোনো গম্ভীর (serious) কথা বলতে চান এ সব ক্ষেত্রেই শুধু একটি স্মাইলি বা মৃদু হাসি যোগ করে দিলেই হলো, তখন সব কিছুই ঠিকঠাক থাকে। বিশিষ্ট কৌতুক অভিনেতা ফিলিস্ ডিলার একবার বলেছিলেন, “একটি মৃদু হাসি হল একটি বক্র রূপ যা সবকিছুকে সোজা বা সহজ করে দেয়।”
যখন আমরা কাউকে সন্তুষ্ট করি তখন ব্যক্তিটি প্রীতিবিনিময়ের নিদর্শনস্বরূপ মৃদুভাবে হাসি। একটি মৃদু হাসি আকর্ষণীয় হয়। যখন কেউ আপনার কোনো ফটো তুলে, তখন বলে “হাসুন তো!” এর কারণ হল যখন আপনি হাসেন আপনাকে সুন্দর দেখায় এবং তাতে সবাই আকর্ষিত হয়। রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রেটিরা যখন কোনো অনুষ্ঠানে আসেন তারা মৃদু হাসেন, আর তখন সবাই ভাবে, “ও! সে খুব সুন্দর দেখ কত সুন্দর করে সে হাসছে” যখন একজন নারী একজন পুরুষকে আকৃষ্ট করতে চান তখন নারীটি মৃদু হাসে এবং তখন পুরুষটি ভাবে “ও! সে আমাকে পছন্দ করে”।
আমরা যখন সন্তুষ্ট হই তখন আমাদের মধ্যে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল হাসা, কেননা কৃষ্ণ যখন সন্তুষ্ট হন কৃষ্ণের মৃদুভাবে হাসার প্রকৃতি রয়েছে। অনেক বৈদিক শাস্ত্র কৃষ্ণভক্তদের দ্বারা রচিত গীতে কৃষ্ণের মনোহর হাসি নিয়ে গুণকীর্তন করা হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণের হাসির বৈশিষ্ট্য
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃদু হাসির কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার প্রয়াসের জন্য ইংরেজি SMILE (হাসি) শব্দটিকে আদ্যক্ষর সমষ্টি হিসেবে ব্যবহার করব।
S: S দিয়ে শব্দ হল satisfying যার বঙ্গানুবাদ দ্বারা সন্তুষ্টি বিধান করা। কেননা স্বভাবতই আমরা হলাম চিন্ময়। আর এ জন্যে জড় জগতের কোনো কিছুই আমাদের হৃদয়কে সন্তুষ্ট করতে পারে না। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় (১৭/১৬) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মনের সন্তুষ্টি বিধানকে সত্ত্বগুণের অন্যতম তপস্যা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। এ জড় জগতের বিষয়ের মাধ্যমে সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা যত বেশি প্রচেষ্টা করব, আমাদের মন তত বেশি অসন্তুষ্টিতে ভুগবে এবং আরো আরো লাভের জন্য প্রচেষ্টা করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা যেইমাত্র ভক্তিপূর্ণ সেবা মনোভাবের সহিত কৃষ্ণের দিকে মুখ ফেরাব তখন আমরা পরম সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব। এ বিষয়ে শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছেন, “ভগবান শ্রীবিষ্ণুর হাস্যের অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, তিনি যখন হাসেন, তখন কুন্দকলির মতো তাঁর ক্ষুদ্র দত্তরাজি তাঁর রক্তি অধরৌষ্ঠের দ্যুতি প্রতিবিম্বিত করে, তৎক্ষণাৎ আরক্তিম হয়ে ওঠে। যোগী যদি ভগবানের সুন্দর মুখমণ্ডল তাঁর হৃদয়ের অন্তঃস্থলে স্থাপন করতে পারেন, তা হলে তিনি সম্পূর্ণরূপে তৃপ্ত হবেন। (৩/২৮/৩৩)
M: M দিয়ে গঠিত শব্দ হল Mystical S Motherly affection যার বঙ্গানুবাদ দাড়ায়, নিগূঢ় ও মাতৃসুলভ স্নেহ। শ্রীমদ্ভাগবতে (১/৮/৪৪) সূত গোস্বামী রাণী কুন্তীর প্রার্থনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সারা প্রদানকে এভাবে বর্ণনা করেন :
পৃথয়েথং কলপদৈঃ পরিণূতাখিলোদয়ঃ।
মন্দং জহাস বৈকুণ্ঠো মোহয়ন্নিব মায়য়া ॥
অনুবাদ : শ্রীসূত গোস্বামী বললেন, পরমেশ্বর ভগবান তাঁর মহিমা কীর্তনের উদ্দেশ্যে সুনির্বাচিত শব্দমালার দ্বারা রচিত কুন্তীদেবীর প্রার্থনা এভাবে শ্রবণ করে মৃদু হাসলেন। সেই হাসি তাঁর যোগশক্তির মতোই ছিল মনোমুগ্ধকর।
কৃষ্ণ যোগেশ্বর নামেও সুপরিচিত অর্থাৎ সমস্ত শক্তির পরম প্রভু। তাঁর নিগূঢ় বা অতিন্দ্রিয় শক্তির মাধ্যমে অনন্ত চিন্ময় বৈকুণ্ঠলোকে তিনি অবস্থান করেন। তিনি অনন্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেন আবার ধ্বংস করেন। তিনি অনন্ত চিন্ময়রূপে নিজেকে বিস্তার করে যুগপৎভাবে প্রতিটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে অবস্থান করেন। শ্রীকৃষ্ণের অতীন্দ্রিয় শক্তির কোনো সীমা নেই। শ্রীমদ্ভাগবতে (২/১/৩১) ভগবানের বিশ্বরূপের হাসিকে বলা হয়েছে, “অত্যন্ত আকর্ষণীয় মায়াশক্তি” হিসেবে। চিন্ময় জগতে শ্রীকৃষ্ণের হাসি হল সবচেয়ে আকর্ষণীয় চিন্ময় শক্তি। যখন সেটি এই জগতে বিকৃতভাবে প্রতিফলিত হয় তখন সেটি জড় শক্তি রূপ গ্রহণ করে যা জীবদের ধরে রাখে, যারা জড়া প্রকৃতির ওপর প্রভুত্ব করার প্রচেষ্টা করে এবং কাম দ্বারা তাদের বন্ধী করে রাখে।
এ জড় জগতের বিষয়ের মাধ্যমে সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা যত বেশি প্রচেষ্টা করব, আমাদের মন তত বেশি অসন্তুষ্টিতে ভুগবে এবং আরো আরো লাভের জন্য প্রচেষ্টা করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা যেইমাত্র ভক্তিপূর্ণ সেবা মনোভাবের সহিত কৃষ্ণের দিকে মুখ ফেরাব তখন আমরা পরম সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব।
যখন জীব শ্রীকৃষ্ণকে সেবা করতে চান, উপরোক্ত শ্লোকে উল্লেখিত ‘মায়য়া’ শব্দটি দ্বারা উল্লেখ করা যেতে পারে ভগবান তাঁর অতিন্দ্রিয় শক্তি দ্বারা অভক্তদের মোহিত করে রাখে, যার অর্থ তাদের স্নেহ প্রদান করে। শ্রীল প্রভুপাদ এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছেন যে, কৃষ্ণ তাঁর ভক্তদের জন্য স্নেহবশত হাসেন, যেরকম একজন মাতা তার শিশু সন্তানের জন্য স্নেহবশত হাসেন। আর কৃষ্ণের হাসি ভক্তদের খুশি করে ও সন্তুষ্টি প্রদান করে।
I : I দিয়ে গঠিত শব্দ হল Infectous যার অর্থ হল ‘সংক্রামক’, ভগবানের হাসি সংক্রমকভাবে তাঁর ভক্তদের হাসায় এমনকি এটি জীবনের যে কোনো পরিস্থিতিতে । শ্রীমদ্ভাগবতে (৩/২৮/৩২) এ ভগবান কপিল বলেন,
হাসং হরেরবনতাখিললোকতীব্র
শোকাশ্রুসাগরবিশোষণমত্যুদারম্ ।
সম্মোহনায় রচিতং নিজমায়য়াস্য
ভূমণ্ডলং মুনিকৃতে মকরধ্বজস্য ॥
যোগীর এভাবে ভগবান শ্রীহরির অত্যন্ত মনোরম হাস্যের ধ্যান করা উচিত, যা তাঁর শরণাগতের গভীর শোক থেকে উৎপন্ন অশ্রুর সমুদ্র শোষণ করে। যোগীর ভগবানের বঙ্কিম ভ্রুযুগলেরও ধ্যান করা উচিত, যা সাধুদের উপকারার্থে কামদেবকে মোহিত করার জন্য তিনি তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তি থেকে প্রকট করেছেন।
আমাদের জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতি, অনিশ্চয়তা ও উত্থান পতন রয়েছে যা আমাদের আশাহীন বা হতাশাপীড়িত করে তুলতে পারে। ঐরকম অবস্থায় যখন এমনকি আত্মীয় স্বজন ও আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারে, এভাবে পুরো পরিস্থিতিটা বিমর্ষ করে তুলতে পারে- ঠিক তখন আমাদের প্রয়োজন আশা ও উদ্ধারপ্রাপ্তির জন্য ভগবানের মৃদু হাসিমাখা বদনটি দর্শন করা, তাঁর হাসি কখনো ম্লান হয় না। আমাদের প্রত্যেকের জন্যেই তাঁর বিশেষ একটি পরিকল্পনা রয়েছে।
ভগবদ্গীতায় অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে দাড়িয়ে দেখে তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা তাঁরই বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। হৃদয়ে দুর্বলতা অনুভব করে, তিনি তাঁর ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন। কিন্তু ঐরকম বিষণ্নময় অবস্থায় তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তার গুরুদেব রূপে গ্রহণ করলেন এবং তাঁর শরণাগত হলেন। ভগবান যখন তাকে উপদেশ দেওয়ার জন্য সম্মত হলেন তখন তিনি অর্জুনের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করতে মৃদুভাবে হাসলেন, যার মাধ্যমে তিনি প্রদর্শন করলেন যে, যে কোনো সমস্যা সমাধান করা কোনো বড় কিছু নয়।
এরকম দৃষ্টান্তসমূহ ধ্যান করার মাধ্যমে ভক্তদের প্রতি ভগবানের প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করতে আমাদের সাহায্য করে এবং সে সাথে যে কোনো দূর্যোগময় পরিস্থিতিতে তার সন্নিকটে সবাইকে নিয়ে আসার অচিন্ত্য পরিকল্পনা রয়েছে।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় আমরা পতিতা পিঞ্জলার ইতিহাস দেখতে পাই যে, তার হৃদয়ে হতাশা থেকে নিরাসক্তিতার উদয় হয়েছিল। ভগবানের কৃপা গ্রহণের মাধ্যমে তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সুখী ছিলেন এবং ভগবানকে উদ্দেশ্য করে অপূর্ব সব প্রার্থনা রচনা করেছিলেন।
কৃষ্ণভাবনার সংক্রমণজাত প্রকৃতির মাধ্যমে, ভগবানের ভক্তদের হাসি অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠে। এ বিষয়ে শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, শুধু হাসির মাধ্যমে তার অনেক শিষ্য, প্রণয়ী (admirers) ও অনুসারীদের জয় করেছিলেন।
L: L দিয়ে গঠিত শব্দ হল Lasting Forever অর্থাৎ চিরতরের জন্য স্থায়ী হওয়া। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সর্ব মনোহর হাসির মাধ্যমে তাঁর ভক্তদের সাথে প্রীতিবিনিময় করতে সদা প্রস্তুত। ব্যক্তিগত অভিষ্ঠ সিদ্ধির জন্য জড় জগতের প্লাস্টিক হাসি চিরদিন স্থায়ী হয় না। কৃষ্ণ যখন তাঁর ভক্তদের সেবার মাধ্যমে সন্তুষ্ট হন তখন তিনি তাদের কাছে ঋণী হয়ে যান। এর ফলে প্রীতিবিনিময়স্বরূপ তিনি মৃদুভাবে হাসেন। শ্রীল প্রভুপাদ এ বিষয়ে লিখেছেন,
ভগবদ্ভক্ত তাঁর সেবার বিনিময়ে ভগবানের কাছ থেকে কোনো কিছুই চান না, এমনকি ভগবান যদি পরম কাম্য মুক্তিও প্রদান করেন, তাও ভগবদ্ভক্ত প্রত্যাখ্যান করেন। তার ফলে ভগবান ভক্তদের কাছে ঋণী থাকেন এবং তিনি কেবল তাঁর চির মনোহর হাসির দ্বারা তাঁদের সেই ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করতে পারেন। ভক্তেরা ভগবানের হাস্যোজ্জ্বল মুখমণ্ডল দর্শন করেই চিরকাল তৃপ্ত থাকেন এবং হরষিত হন। ভক্তদের এভাবে আনন্দিত হতে দেখে ভগবানও তৃপ্ত হন, এভাবে ভগবান ও তাঁর ভক্তদের মধ্যে সেবা এবং সেই সেবার স্বীকৃতি বিনিময়ের অপ্রাকৃত প্রতিযোগিতা চলতেই থাকে।
বিগ্রহরূপে ভগবানকে যেই দর্শন করতে আসুক না প্রত্যেককে উদ্দেশ্য করে তিনি তাঁর মৃদু হাসি প্রদর্শন করেন এবং যখন তিনি আমাদের সেবা ও শরণাগতির মাধ্যমে প্রসন্ন হন। আমাদের সর্বস্ব উৎসর্গ করে তাঁকে প্রসন্ন করার ইচ্ছার মাধ্যমে তখন তাঁর মৃদু হাসি আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং আমাদেরকে তা সম্পূর্ণরূপে প্রসন্ন করে।
E: E দ্বারা গঠিত শব্দ হল Enchanting অর্থাৎ মোহনীয়। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে (মধ্য ২১/১৩৮) ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সনাতন গোস্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, (অনুবাদ)। ভগবানের পরম আকর্ষণীয় মৃদু হাসি শুধু ভক্তদেরকেই নয় অভক্তদেরও মোহিত করে।
শ্রীকৃষ্ণের মৃদু হাসি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে যখনই আমি কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছি মন্দিরে ভগবানের সম্মুখে তাঁর কাছে অভিযোগ কিংবা এর একটি ব্যাখ্যা দাবির জন্য যেতাম। কিন্তু পরক্ষণেই মধুর মৃদু হাসির মাধ্যমে আমি পরাস্ত হয়ে যেতাম। যে সমস্যাটি আমার কাছে সহ্য করা কঠিন মনে হতো তাঁর সেই হাসি সেটিকে তুচ্ছ করে সহজেই অতিক্রম্য করে দিত। এর মাধ্যমে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, তিনি সবকিছুই অবগত রয়েছেন এবং আমাকে তাঁর সন্নিকটে নিয়ে আসার জন্য ব্যবস্থাপনা করছেন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মুকুন্দ নামেও পরিচিত। যার একটি অর্থ হল, “যার মুখমণ্ডল চির-হাস্যোজ্জ্বল কুন্ত নামক পুষ্পের মতোই সুন্দর।” ভগবানের মুখমণ্ডলের ওপর কোমল, অপূর্ব মৃদু হাসি ভক্তদের হৃদয়কে আকর্ষণ করে এবং সে সাথে সেই হাসি তাদের সব উদ্বিগ্নতা ও অহংকারকে বধ করে পূর্ণরূপে তাঁর শরণাগত করে তোলে।
কঠিন সময়গুলোতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মৃদু হাসি দর্শনের মাধ্যমে, আমি সর্বদাই একটি নতুন আশার আলোক লাভ করি। এটি আমার এই উপলব্ধিকে দৃঢ় করে যে, ভগবান হলেন নিত্য, আমিও নিত্য, আমাদের মধ্যে সম্পর্ক তাই নিত্য এবং এই বাস্তবতাগুলোর ঊর্ধ্বে জগতে আর কোনো কিছুই নেই। এই দৃঢ়বিশ্বাস আমাকে সহায়তা করেছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ভগবানের সাথে আমার সম্পর্ক লালন-পালন করতে ও পুনঃপুন আবিস্কারে বজায় রাখতে।
তোষন নিমাই দাস, শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামীর একজন শিষ্য। ২০০৭ সালে তিনি ইসকনে যোগ দেন। তথ্য প্রযুক্তির ওপর ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পর এবং কয়েক বছর মাল্টিন্যাশনাল আইটি কোম্পানিগুলোতে কাজ করার পর ইসকন পুনেতে ব্রহ্মচারী হিসেবে যোগ দেন। তিনি মন্দিরের তথ্য বিভাগে সেবা করেন এবং বিভিন্ন কলেজে কৃষ্ণভাবনা শিক্ষা প্রদান করে থাকেন।
অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৫ ব্যাক টু গডহেড