শেক্সপিয়র কি ঈশ্বরকে জানতেন?

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ | ৫:২১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ | ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 948 বার দেখা হয়েছে

শেক্সপিয়র কি ঈশ্বরকে জানতেন?

সৎ স্বরূপ দাস গোস্বামী: যোসেফ গলার, বান্টিমোরে সেবারত মুক্ত চিন্তার অধিকারি এক পাদ্রি যিনি ‘ Diary of a city priest’ এর লেখক। ১৯৭৯ সালে তার গ্রন্থে তিনি লেখেন, “এক সকালে আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে তাদের ব্যক্তিগত (লোকচক্ষুর আড়ালে) জীবন সম্পর্কে ধর্মোপদেশ দান করেছি।” কিন্তু তাঁদের ধর্মোপদেশ দানের পর এক তরুণী বাইবেল থেকে কিছু উক্তি আবৃত্তি করে জানতে চান “শেক্সপিয়র কি ঈশ্বরকে জানতেন?
ফাদর গলার লিখেন, আমি হঠাৎ উপলদ্ধি করতে পারছি যে, আমি এক সংকীর্ণ মানসিকতার ধার্মিকদের মুখোমুখি হয়েছি যাদের আমি অপছন্দ করি। আমি তাকে বলেছিলাম ক্যাথলিক ঐতিহ্যে ঈশ্বরকে অপরাপর গ্রন্থেরও লেখক হিসেবেও সম্মানিত করা হয়। অতীন্দ্রিয় সৃষ্টি এবং অস্বাভাবিক ঐশ্বরিক উপহার প্রাপ্ত হয়ে যে সমস্ত ব্যক্তি মনে করেন এ সমস্ত কিছুই তার নিজস্ব সৌন্দর্য্য বা নিজস্ব শক্তি, আমি তাদের জন্য সেন্ট এমব্রোস এর বিশ্বাস টুকু উদ্ধত করতে চাই “সত্য যেভাবে বলা হোক তা ১টি পবিত্র শক্তি হতেই প্রকাশিত হয়। আমি ঐ তরুণীর ধারণার পরিবর্তন আনতে পেরেছি কিনা সে বিষযে দ্বিধান্বিত। আমি সেই তরুনি এবং ফাদার গলগার উভয়েরই সহমর্মি। ফাদার গলগার এর উদ্ধৃতির লক্ষ্য ছিল ঈশ্বরের ভক্তদের মহিমা প্রকাশ করা। যেমনটি কৃষ্ণ বলেছেন, “শুদ্ধভক্ত যে আমাকে সর্বত্র দর্শন করে আমি কখনো তার কাছ থেকে কখনো হারায় না।”
শুদ্ধ ভক্ত যে ঈশ্বরকে সর্বত্র দর্শন করে স্বভাবতই সে বিশেষায়িত মানুষদের শক্তির মধ্যে ঈশ্বরকে দর্শন করে। বিশেষায়িত সমস্ত কিছুই ঈশ্বরের বিশেষ ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত। ভগবদ্‌গীতায় দশম অধ্যায়ে জগতের সমস্ত শক্তিকে ঈশ্বরের বিভূতির প্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। একই ভাবে সাহিত্যে অসাধারণ শেক্সপিয়ারকে আমরা ভগবানের বিভূতির প্রকাশ ধরে নিতে পারি। তিনি কৃষ্ণের অতিবিশাল কাব্যিক ও সাহিত্য শক্তির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রকাশ।
ধার্মিকেরা ঈশ্বরকে চার্চ কিংবা মন্দির অথবা নির্দিষ্ট কিছু ধর্মীয় গ্রন্থে সীমাবদ্ধ রাখতে পছন্দ করে। কিন্তু ভক্তিপথে অগ্রজ ভক্তরা তাদের ভক্তি শক্তির মাধ্যমে শুধুমাত্র মন্দির কিংবা চার্চ নয় বরঞ্চ সমস্ত সৃষ্টির হৃদয়ের কৃষ্ণকে দর্শন করেন। কিছু শ্রেণীর খ্রিস্টানরা মনে করেন কৃষ্ণভক্তরা শয়তানের উপাসক কেননা তারা মনে করে বৈদিক ধর্মগ্রন্থে পারমার্থিকতা সম্পর্কে যে নীতিশিক্ষা দেয়া হয়েছে তা খ্রিস্টের শিক্ষা থেকে আপেক্ষিকভাবে নিম্নস্তর। এই ধরনের ব্যক্তিরা সংকীর্ণ ও মানসিকভাবে ভ্রান্ত। ঈশ্বরের সৃষ্টি তা সর্বত্র গ্রহণযোগ্য এবং তা সবসময়  স্রষ্টাকেই মহিমান্বিত করে। শ্রীল প্রভুপাদ এক পাদ্রী সেন্ট জোনকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি ভগবত অধ্যয়ন করেছিলেন কিনা? জোন উত্তর দিয়েছিল না। তখন প্রভুপাদ বলেন, লেখকেরা যেভাবেই লেখুক বা বর্ণনা দিক তার সমস্ত কিছুই বেদ হতে প্রকাশিত।
“শেক্সপিয়র কি ঈশ্বরকে জানতেন? প্রশ্নটি থেকেই যাচ্ছে। আমি তার উত্তর দিতে চাই, হ্যাঁ বা না। অন্ততপক্ষে তিনি ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষভাবে মহিমান্বিত করেননি। যদিও তিনি হাজার হাজার ভাল ভাল রোমাঞ্চকর ও নৈতিক বাক্য উদগীরণ করেছেন। তবে সাহিত্য সৃষ্টিতে একজন লেখকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন অর্থাৎ তিনি কখনোই ঈশ্বরকে বিশেষভাবে মহিমান্বিত করতে পারেননি।

শ্রীল প্রভুপাদ ভাগবতের প্রথম স্কন্ধে তার মন্তব্যে লেখন- “শুধুমাত্র সাধারণ সাহিত্যকরা ঈশ্বরের অপ্রাকৃত মহিমা বর্ণনায় ব্যর্থ হননি সেইসাথে বৈদিক সংস্কৃতি সাহিত্য ও সভ্যতার বড় বড় উন্নত স্তরে ভগবৎভক্তরাও কখনো তাদের ভক্তিপথ থেকে পদস্খলিত হয়েছিলেন। যখন বৈদিক সাহিত্যর উন্নতর ব্রাহ্মণদের রচনায়ও ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করার যে পুর্নতার পদস্খলন ঘটে তখন সাধারণ জড়বাদ লেখকদের কথা আর কি বলা যায়?”
সারাবিশ্বে হাজার হাজার সাহিত্যিক রয়েছে। তারা সাধারণ মানুষদের নিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে সাহিত্য রচনা করছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের এই সাহিত্য কর্ম এই পৃথিবীতে সুখ বা শান্তি আনায়ন করতে পারেনি। কারণ এই বিশাল সাহিত্য সম্ভারের কোনখানে পারমার্থিকতার ছিটেফোটাও নেই। আর এর জন্য বৈদিক সাহিত্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবতম যাতে মুক্তির আকাক্সক্ষা পূরণে অপ্রাকৃত ও অনন্য পন্থা নির্দেশিত হয়েছে। সেই জড় সভ্যতা যা মানুষের শক্তি ও সামর্থ্যে বহুলাংশই অপ্রয়োজনীয় খাতে নিশেষিত করছে।
অনেক সংবেদনশীল ব্যক্তিরা কখনো কখনো ক্ষমতাধর লেখক , শিল্পী এবং অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ মনে করেন যে মনুষ্যজীবন মর্মান্তিক, দুর্বিষহ ও বেদনাপূর্ণ। বেশির ভাগ ব্যক্তিই মৃত্যুর মত আনন্দহীন, মর্মান্তিক ঘটনা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন এবং তারা এই গভীর উপলব্ধিকে কখনো কখনো কবিতা বা লেখার মাধমে প্রকাশিত করেন যেটি পরোক্ষভাবে হলেও পাঠকের ইন্দ্রিয তৃপ্তির তুলনায় সুপ্ত চেতনাকে গভীর বাস্তবতার সম্মুখিন করে তাদের হৃদয়কে জাগ্রত করতে সহায়ক। তখন তারা পরোক্ষভাবে হলেও জড় বিষয়ের নিরর্থকতা উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়। একে আমরা সত্যের জন্য সেবা বলতে পারি। কিন্তু এটিই ঈশ্বর ভাবনার প্রাথমিক পর্যায় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে পারমার্থিক জগৎকে উন্নয়নের পর্যায়ে বা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
যারা কৃষ্ণভাবনার পথ অনুসরণ করেন তারা জগতের সমস্ত ধর্মীয় গ্রন্থ (বাইবেল, কোরান, ত্রিপিটক এবং অন্যান্য) কে ঈশ্বর বিশেষ শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেন যে এগুলো মানুষের চেতনাকে চিন্ময় শুক্তি স্তরে উন্নীত করতে সহায়ক এবং বিশ্বের এই সমস্ত ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যে শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা ও ভাগবতম এক অনন্য স্তরে অধিষ্ঠিত । যেহেতু উক্ত গ্রন্থগুলোর মধ্যেই ঈশ্বর তত্ত্ব বিজ্ঞান পূর্ণ রূপে উপস্থাপিত হয়েছে এবং তাতে সংযোজিত রয়েছে কিভাবে ঈশ্বরের সাথে বিশুদ্ধ ভালবাসা আদান প্রদানের সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়। সেই সাথে যারা কৃষ্ণভাবনা প্রচার করেন তাদের দায়িত্ব শুধু পরমেশ্বর ভগবান সম্বন্ধীয় প্রচার করা নয় বরং সেইসাথে শ্রীকৃষ্ণের মুখনিসৃত বাণী শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা ও ভাগবতম এর মহিমাও প্রচার করা। “জীবনের লুকায়িত সত্য ও আমাদের সেটি সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণের শিক্ষা প্রদান করে। হরে কৃষ্ণ। হরে কৃষ্ণ!

(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ মার্চ ২০১২ সালে প্রকাশিত)

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।