এই পোস্টটি 167 বার দেখা হয়েছে
ভগবদ্গীতায় অনেক যোগ প্রণালী ব্যাখ্যা করা হলেও ভক্তিযোগ বা ভগবদ্ভজনই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়েছে। অবশেষে সকল যোগই ভক্তিতে পরিসমাপ্তি হয়। জ্ঞানযোগ ও হঠযোগের অন্তিম সিদ্ধান্ত হচ্ছে ভক্তিযোগ। ভগবদ্গীতায় ষষ্ঠ অধ্যায়ে হঠযোগের ধ্যান পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কিন্তু অর্জুন পারমার্থিক রাজ্যে সর্বোন্নত স্তরে অধিষ্ঠিত হলেও বলেন যে, তিনি এইভাবে মনকে কেন্দ্রীভূত করতে সক্ষম নন। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে পারমার্থিক স্তরে সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থিত কৃষ্ণসখার পক্ষে হঠযোগে সাধন এত কঠিন হলে আজ এই যোগ অনুশীলন কিভাবে সম্ভব? অর্জুন সরল এবং স্পষ্টভাবেই বলেছিলেন যে, হঠযোগ সাধন একেবারেই সম্ভব নয়, কারণ বায়ুর মতো মনকে বশীভূত করা অত্যন্ত কঠিন। দেহে অতিশয় আসক্ত ব্যক্তিদের জন্যই মূলত এই হঠযোগ। নয়তো সাংখ্য বা ভক্তিযোগই অভীপ্সিত। যখন অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বলেন যে, হঠযোগ অনুশীলন তাঁর পক্ষে দুঃসাধ্য, তখন ভগবান শ্রীহরি তাঁকে এই বলে সান্ত্বনা দেন যে, “যিনি শ্রদ্ধা সহকারে মদ্্গত চিত্তে আমার ভজনা করেন, তিনিই সবচেয়ে অন্তরঙ্গভাবে আমার সঙ্গে যুক্ত এবং তিনিই সমস্ত যোগীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। সেটিই আমার অভিমত।” (গীতা ৬/৪৭) তিনি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যোগবিৎ। অর্জুন ছিলেন কৃষ্ণগত-প্রাণ, কৃষ্ণ ছাড়া তিনি কিছুই জানতেন না, তাই কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে তাঁর পাশর্^বর্তী হতে অনুরোধ করেন। অর্জুনের সঙ্গে দুর্যোধন শ্রীকৃষ্ণের কাছে গিয়ে তার পক্ষ অবলম্বনের অনুরোধ করলে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “আমার আঠারটি সেনাবাহিনী এক পক্ষ অবলম্বন করবে আর আমি স্বয়ং অপর পক্ষ অবলম্বন করব। কিন্তু এই যুদ্ধে আমি অস্ত্র গ্রহণ করব না।” প্রথমে অর্জুন ভেবেছিলেন যে, অসংখ্য হাতি ঘোড়া সমন্বিত আঠারটি সেনাবাহিনী গ্রহণ করাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক, কিন্তু তারপর তিনি বিবেচনা করে দেখেন, শুধু শ্রীকৃষ্ণ তাঁর পক্ষ অবলম্বন করলেই যথেষ্ট হবে। সাধারণ সৈন্যবাহিনীতে তাঁর প্রয়োজন নেই। পক্ষান্তরে, দুর্যোধন নারায়ণীসেনা
গ্রহণেই মনস্থ করে। এইভাবে অর্জুন অষ্টাঙ্গযোগ অনুশীলনে অক্ষম হলেও, সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করলেন। যিনি সতত কৃষ্ণমনা, তিনি শ্রেষ্ঠ যোগী। অন্তর্যামীরূপে শ্রীকৃষ্ণ যে আমাদের মধ্যে আছেন, সেই কথা স্মরণ করে নিরন্তর কৃষ্ণচিন্তা করা উচিত। এই হলো প্রকৃত ধ্যানের অনুশীলন। সব সময় ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ কীর্তন করে আমরা নিত্য কৃষ্ণ স্মরণ করতে পারি এবং অচিরেই আমাদের হৃদয়ে চিন্ময়