এই পোস্টটি 269 বার দেখা হয়েছে
কিছু কিছু জড় দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে হয়তো আমরা ভক্তের দেহত্যাগের ঘটনা প্রত্যক্ষ করি। হয়তো সেগুলো মর্মান্তিকভাবে বিমান দূর্ঘটনা অথবা অন্য কোনো হৃদয় বিদারক হতে পারে। কিন্তু কি পন্থাতে সেই আত্মা নিপুনতা ও ভালবাসার সাথে কৃষ্ণের কাছে গৃহিত হচ্ছেন সেই পন্থাটি আমরা দেখতে পাই না ।
চৈতন্য চরণ দাস
যখন আমরা সবকিছুই উন্নত ভক্তদের ন্যায় প্রত্যক্ষ করি, তখন প্রতিটি ঘটনাই আমাদের হৃদয়ে সুপ্ত কৃষ্ণভাবনামূলকে গভীরতর করার সুবর্ণ সুযোগ হয়। যেমন গত বছর জুন মাসে ইসকন মুম্বাইয়ের ভক্ত সম্মেলনে আসার প্রাক্কালে চৌপাটি মন্দিরের আটজন ভক্ত মর্মান্তিক বিমান দূর্ঘটনায় দেহত্যাগ করেন। তখন এই ঘটনায় পুরো সম্মেলনটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। আগত ভক্তদের হৃদয়ে বার বার একটি প্রশ্নই কড়া নাড়ছিল “কৃষ্ণ যদি সত্যিই ভক্তদের রক্ষা করেন তাহলে কেন ভক্তরা এই ধরনের দূর্ঘটনার শিকার হবেন?”
এই প্রশ্নটি যতটা না আবেগের তার চেয়ে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। যেটি কৃষ্ণের সাথে তার ভক্তের পারস্পরিক ভাব আদান-প্রদানের চিত্রটিই ফুটিয়ে তোলে। এই ধরনের মর্মান্তিকতা সন্দেহাতীতভাবে হৃদয়কে বিদীর্ণ করে। এমনকি উন্নত স্তরের ভক্তদের হৃদয়কেও যারা জানেন ‘আমরা দেহ নই আত্মা।
ভক্তিপথ : কৃষ্ণভাবনামৃত কখনোই আবেগকে মায়া ভেবে অবদমিত বা প্রত্যাখ্যান করতে নির্দেশ দেয় না বরং কৃষ্ণের সাথে যুক্ত করে সেই আবেগকে উন্নত স্তরে উত্তীর্ণ করার উপদেশ দেয়। চৌপাটি মন্দিরের ভক্ত কমিউনিটির পারমার্থিক আচার্য রাধানাথ স্বামী অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তার হৃদয়কে উন্মুক্ত করে বলেছিলেন, “তোমার প্রতি ফোটা চোখের জল, কৃতজ্ঞতার জলে পরিণত হোক, এসো কৃতজ্ঞতা জানাই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে।”
এমন এক চরম দূর্ঘটনার সম্মুখিন হবার পর আমরা কিভাবে কৃষ্ণের প্রতি কৃতজ্ঞ হব? যখন শুদ্ধভক্তরাও এইরকম দূর্ঘটনার শিকার হন? আমরা ভক্তিযোগ অনুশীলন করি কৃষ্ণের প্রতি আমাদের সুপ্ত প্রেমকে জাগরিত করার জন্য। তাই আমাদের জীবনের যে কোনো ঘটনা কৃষ্ণের প্রতি প্রেমের বৃদ্ধি ঘটানোর সুবর্ণ সুযোগ। এ জন্যই কৃষ্ণের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। এমনকি যদি মর্মান্তিক কূপে আমাদের সামনে প্রকটিত হয় তথাপিও আমরা কৃষ্ণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব, কেননা কৃষ্ণের প্রতি আমাদের যে প্রেম তা অপ্রতিরোধ্য এমনকি মৃত্যুও সেই প্রেমকে প্রতিরোধ করতে পারে না। এখন অপ্রাকৃত প্রেম সম্পর্কে আরো জানা যাক।
ডিজাস্টার মুভির দ্বার উন্মোচন
সবার ক্ষেত্রে আমরা যতটা ভালবাসি ততটা ভালবাসা প্রাপ্ত হই। আমাদের মধ্যে অনেকেই জড় জগতের কাছে প্রেম অন্বেষন করি এবং অলিখিতভাবে ডিজাস্টার একটি চরিত্রে রূপান্তরিত হই।
ডিজাস্টার মুভি সাধারণত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগময় ঘটনার আলোকে নির্মিত যেখানে দেখানো হয় প্রাকৃতিক দূর্ঘটনা সমৃদ্ধ কিছু চরিত্র কিভাবে নায়কোচিতভাবে নিজেদের প্রতিরক্ষা করে। যেখানে অন্যরা মৃত্যুবরণ করে। যদিও ডিজাস্টার মুভি দেখতে সকলে পছন্দ করে, কিন্তু বাস্তবে এর সম্মুখীন হতে কেউই চায় না।
সরল গল্প “অবশেষে তারা সুখী হল” এভাবে শেষ হবে এমন নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারে না। জীবনের ব্যাপারে তো নয়ই। কিন্তু খুব কম ব্যক্তি তার জীবনে আসন্ন দুর্যোগকে উপলব্ধি করতে পারে। সেই সুযোগের নাম মৃত্যু। আজকে এই প্রবন্ধ যে পড়ছেন তার ক্ষেত্রে শতভাগ সত্য যে, একশ বছরের মধ্যে তার মৃত্যু ঘটবে। শতভাগ মৃত্যু নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও আমরা কেউই জীবনকে ডিজাস্টার মুভি মনে করতে রাজি নই। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, জীবন নামক এই মুভি দুর্ভোগগুলো ধীরগতিতে আসে। আমরা মন থেকেও দুর্যোগটিকে ভুলে থাকতে চাই। কিন্তু কেন? কারণ মৃত্যুর বাস্তবতা নিরানন্দময়। এটি আমাদের সকল জাগতিক সফলতার আশা ও মহিমাকে বিনষ্ট করে। ফলে আমরা যতটা সম্ভব এটিকে ভুলে থাকতে চাই। আমরা সেই চলচ্চিত্রে অভিনেতা এবং অবশেষে নায়কের মতো দুর্যোগ হতে মুক্ত হবো না। আমরা যতক্ষণ জড় জগৎকে ভালবাসব ততক্ষণ বিভিন্ন দুর্ভাগ্য বরণ করতে হবেই। ভক্তিই একমাত্র এই চরম দুর্যোগ হতে মুক্তির পথ প্রদর্শন করতে পারে। কিভাবে? আমাদের নিকট প্রেম অর্পণ যোগ্য পাত্রের সাথে যুক্ত করে কে? তিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। এই পন্থা মৃত্যু দুর্যোগকে বন্ধ করে দেয় না বরং সেই দুর্যোগ হতে মুক্তির এক অপ্রাকৃত পথ উন্মোচন করে।
গীতায় (২.১১-৩০) বর্ণিত হয়েছে, চিন্ময় আত্মাকে কেউ স্পর্শ করতে পারে না, ধ্বংস করতে পারে না। এমনকি জড় দেহের মৃত্যুও আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। গীতার (১৮.৬৫-৬৬) শ্লোক আমাদের জ্ঞাত করছে, কিভাবে কৃষ্ণ আমাদের আমন্ত্রণ দিচ্ছে এক অপ্রাকৃত প্রেমের ভুবনে। এমন এক জীবনে যেখানে নেই জড় দুর্ভোগ বা দুর্যোগের ভয়। যেখানে আমরা পূর্ণমাত্রায় তার প্রতি আমাদের প্রেম সমর্পণ করতে পারব। যখন আমরা কৃষ্ণের প্রতি প্রেম নিবেদন শুরু করব তখন কৃষ্ণ ক্রমাগতভাবে সেই প্রেমকে বৃদ্ধি করার সুযোগ দান করতে থাকবেন। পরমেশ্বর কর্তৃক সুযোগ প্রদান করার অর্থ হচ্ছে তার প্রতি সেবানুরাগ বৃদ্ধি করা।
যা হোক এই কথিত জড় আনন্দ আমাদেরকে ক্রমাগত ক্ষোভিত এবং কৃষ্ণের দেয়া সুযোগগুলো গ্রহণ করতে বাধা দিচ্ছে। এটি আমাদের হৃদয়ের উদ্ভুত দ্বন্দের অবসান করে। ঠিক যেমনটা উন্নত ভক্ত জড় জগতে অবস্থান করেও পারমার্থিক অনুশীলন করেন তেমনি আমাদেরকেও জড় এবং অপ্রাকৃত উভয় স্তরে যুগপৎভাবে কার্য সম্পাদন করতে হবে। পারমার্থিক স্তরে আমাদের উচিত মানসিকভাবে ভগবানকে স্মরণ করা এবং কায়িকভাবে তার প্রতি সেবা সম্পাদন করা এবং জাগতিক স্তরে আমাদের উচিত জাগতিক বিষয়গুলোকে পরমার্থ সেবায় ব্যবহার করা অন্যথায় জাগতিক সময় আমাদের বিভ্রান্ত করে পরমার্থ অনুশীলন হতে বিচ্যুত করবে। আমাদের সারা জীবন বিভ্রান্তি ও মায়া হতে প্রতিরক্ষা করার সংগ্রামে ব্যস্ত। কৃষ্ণ আমাদের এই সংগ্রামে সাহায্য করছেন এবং এই সমস্ত দুর্যোগ ও দুর্ভোগগুলোর মাধ্যমে জড় জগতের চরিত্র সম্পর্কে জ্ঞাত করছেন। কৃষ্ণের প্রতি ভক্তি জড়া প্রকৃতিকে পরিবর্তন করতে পারে অথবা নাও করতে পারে কিন্তু এটি অবশ্য জড়া প্রকৃতির প্রভাব হয়ে প্রতিরক্ষা বিধান করবে। তাই যদিও জড়া প্রকৃতি কর্তৃক সংঘটিত জড় দুর্ভোগ সকলের জীবনে আসে। কিন্তু এর প্রভাব ভক্ত ও অভক্তদের ক্ষেত্রে ভিন্ন। এজন্য যে কৃষ্ণকে ভুলে যায় কৃষ্ণ মৃত্যুরূপে তাকে হরণ করেন। কপর্দকশূন্য সেই আত্মার তখন একা ও হতদরিদ্রভাবে পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়, সেসাথে তার পূর্ববর্তী কর্মফলের বোঝাও। অথচ যারা ভক্তি অনুশীলন করেন কৃষ্ণ তাদের কাছেও মৃত্যু রূপে এসে তাদের ভক্তির প্রতিবন্ধকতাগুলো হরণ করেন।
এটিই প্রকৃতপক্ষে সেই ভাব যা ব্যাসদেব যুধিষ্ঠির মহারাজের কাছে ব্যক্ত করেছিলেন। যুধিষ্ঠির মহারাজ তখন যুদ্ধে তার ভ্রাতস্পুত্রের দেহত্যাগের ঘটনায় শোকার্ত ছিলেন। তখন ব্যাসদেব যুধিষ্ঠির মহারাজকে উপদেশ দিচ্ছিলেন, এই অভিমন্যু যেখানে গিয়েছেন সেখানে যে আনন্দ তিনি প্রাপ্ত হচ্ছেন এই জগতে তার সমতুল্য কোনো আনন্দ নেই। হে রাজন তিনি নব দেহ প্রাপ্ত হয়ে দেবতাদের মতো উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করেছেন। আমাদের উচিত নয় তাদের জন্য শোক করা।
এভাবে ভক্তদের দেহত্যাগ মানে ভক্তি প্রতিবন্ধকতা হতে প্রতিরক্ষা প্রাপ্ত হওয়া বা অবশেষে পরমেশ্বরের কাছে ফিরে যাওয়া। কিছু কিছু জড় দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে হয়তো আমরা ভক্তের দেহত্যাগের ঘটনা প্রত্যক্ষ করি। হয়তো সেগুলো মর্মান্তিকভাবে বিমান দূর্ঘটনা অথবা অন্য কোনো হৃদয় বিদারক হতে পারে। কিন্তু কি পন্থাতে সেই আত্মা নিপুনতা ও ভালবাসার সাথে কৃষ্ণের কাছে গৃহিত হচ্ছেন সেই পন্থাটি আমরা দেখতে পাই না। শ্রীল প্রভুপাদ এ বিষয়ে শ্রীমদ্ভাগবতের (৩/১৬/৩৭) শ্লোকে বিস্তারিত বলেছেন।
বিশ্বস্য যঃ স্থিতিলয়োদ্ভবহেতুরাদ্যো
যোগেশ্বরৈরপি দুরত্যয়যোগমায়ঃ
ক্ষেমং বিধাস্যতি স নো ভগবাংস্ত্র্যধীশ-
স্তত্ৰাম্মদীয়বিমৃশেন কিয়ানিহাৰ্থঃ ॥
অনুবাদ : হে প্রিয় পুত্রগণ! ভগবান হচ্ছেন প্রকৃতির তিন গুণের নিয়ন্তা এবং তিনি বিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয়ের কারণ। তাঁর আশ্চর্যজনক সৃজনী শক্তি যোগমায়াকে যোগেশ্বরেরাও সহজে বুঝতে পারেন না। সেই আদি পুরুষ ভগবানই কেবল আমাদের রক্ষা করতে পারেন। এই বিষয়ে চিন্তা করে তাঁর কোন্ উদ্দেশ্য আমরা সাধন করতে পারব?
তাৎপর্য : পরমেশ্বর ভগবান যখন কোনো কিছুর আয়োজন করেন, তখন আমাদের বিচারে তা প্রতিকুল বলে মনে হলেও, সেই সম্বন্ধে কারো বিচলিত হওয়া উচিত নয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় যে, কখনো কখনো আমরা দেখি যে, কোন শক্তিশালী প্রচারক নিহত হন, অথবা তাঁকে নানা রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, ঠিক যেমন হরিদাস ঠাকুরের হয়েছিল। তিনি ছিলেন ভগবানের একজন মহান ভক্ত, যিনি ভগবানের ইচ্ছা অনুসারে ভগবানের মহিমা প্রচার করার জন্য এই জড় জগতে এসেছিলেন। কিন্তু মুসলমান কাজী বাইশ বাজারে বেত্রাঘাত করার মাধ্যমে তাঁকে দণ্ড দিয়েছিল। তেমনই, যীশুখ্রিস্ট ক্রুশ বিদ্ধ হয়েছিলেন, এবং প্রহ্লাদ মহারাজকে নানা রকম দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় সখা পাণ্ডবদের রাজ্য হারাতে হয়েছিল, তাঁদের পত্নীকে অপমান করা হয়েছিল, এবং তাঁদের নানা রকম কঠোর দুঃখ দুর্দশা ভোগ করতে হয়েছিল। এই সকল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে দেখে, ভক্তদের বিচলিত হওয়া উচিত নয়, পক্ষান্তরে বুঝতে হবে যে, সেই সমস্ত ঘটনার পিছনে নিশ্চয়ই পরমেশ্বর ভগবানের কোন পরিকল্পনা রয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবতের সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে, এই প্রকার প্রতিকূলতার দ্বারা ভগবদ্ভক্ত কখনও বিচলিত হন না। ভগবদ্ভক্ত এমনকি প্রতিকূল অবস্থাকেও ভগবানের কৃপা বলে মনে করেন। প্রতিকূল অবস্থাতেও যিনি ভগবানের সেবা করতে থাকেন।
স্বভাবতই কোনো ভক্তের দেহত্যাগ সংঘের জন্য আত্মিক ক্ষতি এবং ভক্তের বিরহ প্রাপ্ত হওয়া স্বাভাবিক। একই সাথে কৃষ্ণের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত এমন এক ভক্তির খনি আমাদের প্রদান করার জন্য যিনি প্রকটাবস্থায় ভক্তদের ভক্তিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাই এই ধরনের দেহত্যাগ অন্য ভক্তদের একই সাথে বিরহের ও কৃষ্ণের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার মতো ঘটনা। বিরহ এই কারণে যেহেতু দেহত্যাগের ফলে সেই সকল ভক্তের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং কৃষ্ণ এই কারণে যে কৃষ্ণ আমাদের এই সকল ভক্তের সান্নিধ্য প্রাপ্তির সুযোগ এবং সেই সকল ভক্তের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একই পরিবার ভুক্ত হতে পেরে। যেহেতু আমরা জানি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সব শেষ হয়ে যায় না।
লেখক পরিচিতি : চৈতন্যচরণ দাস শ্রীমৎ রাধানাথ স্বামী মহারাজের একজন শিষ্য। তিনি ইলেক্ট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন এবং পুনে মন্দিরে ব্রহ্মচারীরূপে শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি এ পর্যন্ত আটটি গ্রন্থ লিখেছেন।
এপ্রিল-জুন ২০১৫ ব্যাক টু গডহেড