লেটার টু গান্ধীজী: একটি সতর্কবার্তা

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২০ | ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ | ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 538 বার দেখা হয়েছে

লেটার টু গান্ধীজী: একটি সতর্কবার্তা

১২ই জুলাই, ১৯৪৭
কনপুর
মাহাত্মা গান্ধীজী
ভাঙ্গি কলোনী, নিউ দিল্লী
প্রিয় বন্ধু গান্ধীজী,
দয়া করে আমার প্রণতি গ্রহণ করবেন। আমি একজন আপনার অপরিচিত বন্ধু কিন্তু আমি পূর্বে বহুবার আপনাকে পত্র লিখেছি, যদিও আপনি সেগুলোর উত্তর দানে যথেষ্ট তৎপর হননি। আমি আপনাকে আমার পত্রিকা “ব্যাক টু গডহেড” পাঠিয়েছিলাম কিন্তু আপনার সেক্রেটারী আমাকে বলেছিলেন যে, আপনি চিঠি পড়ার জন্য অল্প সময় পান এমকি ম্যাগাজিন পড়তে আপনি তেমন সময় পান না। আমি আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনার ব্যস্ত সহকারীগণ এর কোন প্রত্যুত্তর দেয়নি। সে যাই হোক, যেহেতু আমি আপনার পুরোনো বন্ধু, সেহেতু আমি পুনরায় আপনাকে লিখছি যাতে আপনি সঠিক পথে গমন করেন, সেই যোগ্যতা আপনার রয়েছে। একজন সৎ বন্ধু হিসেবে আমার কর্তব্য হল আপনার ভালোর জন্য আপনাকে সঠিক পথ নির্দেশ করা। একজন সৎ বন্ধু হিসেবে বলছি, যদি আপনি শীঘ্র নিদারুণ দুঃখজনক মৃত্যুবরণ করতে না চান তবে শীঘ্রই রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করুন। আপনি ১২৫ বছর বাঁচতে চান, কিন্তু যদি মৃত্যুবরণ করেন, তবে সেই ইচ্ছার কি মূল্য থাকবে? এই বর্তমান জীবনে আপনি যে সম্মান ও খ্যাতি লাভ করেছেন তা অন্য কারো পাওয়া দুস্কর। কিন্তু আপনার অবশ্যই জানা উচিত যে, এই সকল সম্মান, খ্যাতি, প্রতিপত্তির সবই মিথ্যা যেহেতু সেটি ভগবানের এক ম বিভ্রম শক্তি থেকে এসছে যাকে ‘মায়া’ বলা হয়। এই সকলই মিথ্যা বিভ্রম, যদিও আমি বলছি না যে, আপনার বহু বন্ধুরা মিথ্যা আপনার বহু বন্ধুরা মিথ্যা আপনার কাছে, কিংবা আপনি তাদের কাছে, কিংবা আপনি তাদের কাছে মিথ্যা। এই মিথ্যাবিভ্রম বলতে আমি মায়াকে বুঝাচ্ছি। এই বন্ধুত্ব ও সম্মান মূলত মায়ার সৃষ্টি আর তাই এটি সর্বদা অনিত্য। কিন্তু আপনি কিংবা আপনার বন্ধুরা কেউই এই সত্য সম্পর্কে অবগত নন।
বর্তমানে ভগবানের কৃপায় এই মায়অর পর্দা আপনার কাছে উন্মোচিত হবে যেহেতু আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু যেমন আচার্য কৃপালিনী এবং অন্যরা আপনাকে অভিযুক্ত করছে এই মুহূর্তে আপনি তেমন কোন বাস্তবিক কর্মসূচী নিচ্ছেন না। যা আপনি অসহযোগ আন্দোলন এর সময় নিয়েছিলেন। এছাড়া বর্তমান বিরোধী পক্ষের সৃষ্ট রাজনৈতিক জটের কোন সঠিক সমাধান আপনি খুঁজে পাচ্ছেন না। তাই আপনার উচিত আমার মত গুরুত্বহীন বন্ধুর নিকট হতে এই সতর্কবাণী গ্রহণ করা। যদি আপনি শীঘ্র রাজনীতি হতে অবসর গ্রহণ না করেন এবং প্রকৃত মহাত্মার মত নিজেকে ১০০ ভাগ শ্রীমদ্ভগবদগীতার বাণী প্রচারে আত্মনিয়োগ না করেন, তাহলে আপনাকে মুসোলীনি, হিটলার, টজেন, চারচীল অথবা লিয়ড জর্জেস এরম ত ভয়ংকর মৃত্যুবরণ করতে হবে।
আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারছেন, কিভাবে আপনার বন্ধুর পোশাক সজ্জিত রাজনৈতিক শক্ররা প্রতিনিয়ত আপনাকে ঠকাচ্ছে এবং যার জন্য আপনি বহু বছর যাবৎ কঠোর পরিশ্রম করেছে। আর তারা উদ্দেশ্যের অনিষ্ঠ সাধন করে তথাকথিত বন্ধুরা আপনার হৃদয় ভেঙ্গে দিচ্ছে। আপনি সহজেই ভারতে হিন্দু মুসলিম একতা সাধন করতে চেয়েছিল এবং তাঁরা কৌশলে উল্টো কাজ করে ভারত ও পাকিস্তান করেছে। আপনি ভারতের চেয়েছিলেন কিন্তু তারা ভারতে স্থায়ী অধীনতার ব্যাপ্তি ঘটিয়েছে।
আপনি ভাঙ্গীদের জীবনযাত্রাকে উচ্চতর স্তরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা এখনও বিকৃত ভাঙ্গী নামে পরিচিত, যদিও আপনি ভাঙ্গী কলোনীতে বসবাস করছেন। তাই এগুলির সবই মায়া এবং যখন এই সব অবস্থা আপনাকে প্রদর্শন করা হবে। তখন অবশ্যই সবকিছুই ভগবানের নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে বলে মনে করতে হবে। আপনি যে, মায়ার বিভ্রমে রয়েছেন তা প্রদর্শন করে ভগবান প্রকৃতপক্ষে আপনাকে কৃপা করছেন, যেগুলি আপনি সত্য বলে মনে করছেন। আপনার অবশ্যই জানা উচিত যে, আপনি এমন এক বৈশ্বিক পরিবেশে রয়েছেন যা সাধুসন্তরা ‘দ্বৈত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অর্থাৎ এখানে কোনকিছুই প্রকৃত সত্য নয়। অন্ধকার যেমন আলোক অনুসন্ধান করে পুত্র যেমন পিতাকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আপনার “অহিংসার পেছনে সর্বদা হিংসা গমন করেছিলে।” এই পৃথিবীতে কোন কিছুই প্রকৃত সত্য নয়। আপনি কখনো পরম সত্য তথা সঠিক উৎস জানেন নি কিংবা জানতে চান নি। তাই একতা সর্বদা একতাবিহীন অবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে। হিংসা কর্তৃক অহিংসা পরিচালিত হয়েছে।
কিন্তু এখনও সময় শেষ হয়ে যাযনি। তাই এখন আপনাকে পরম সত্য সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি বহু বছর যাবৎ যে সত্যের সন্ধান করেছিলেন তা আপনার সন্নিকটে উপস্থিত। সেই প্রাসাঙ্গিক সত্য হচ্ছে প্রকৃতির ত্রিগুণ তথা দৈবী মায়া। এই মায়া অনতিক্রম্য যা ভগবদ্‌গীতায় (৭/১৪) বর্ণিত হয়েছে। পরম সত্য হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। কঠ উপনিষদে নির্দেশিত হয়েছে যে, একজন মানুষের অব্যশই সদ্‌গুরুর কাছে পৌছতে হবে যিনি সকল শাস্ত্রে পারদর্শী এবং যিনি পরম সত্য জানেন। এছাড়া শ্রীমদ্ভগবদগীতায় নির্দেশিত হয়েছেঃ তদ্‌বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নের সেবয়া……(৪/৩৪)
কিন্তু আমি জানি, আপনি এই অপ্রাকৃত পন্থা গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরম সত্য সন্ধান আপনার উদ্ভাসিত বহু পরীক্ষানিরীক্ষায় কৃচ্ছসাধন না করেন। উপরে উল্লেখিত যোগ্য সদ্‌গুরুকে আপনি হয়তোবা সহজেই পরিত্যাগ করেন। কিন্তু দেবগুণাবলী অর্জনে আপনার যে সৎ প্রচেষ্টা দেখা যায় তা আপনাকে অবশ্যই এক উচ্চতর পর্যায় নিয়ে গেছে যেটি আপনি পরম সত্য সন্ধানে ব্রবহার করতে পারেন। কিন্তু যদি আপনি আপনার এই অস্থায়ী পর্যায়ে সন্তুই হন এবং প্রকৃত সত্য সন্ধানে গমন না করেন তবে আপনি অবশ্যই প্রকৃতির নিয়মে নিম্নতর পর্যায়ে পৌছতে বাধ্য হবেন। যদি বাস্তবিক আপনি পরম সত্যের অনুসন্ধান করতে চান এবং সমগ্র পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মঙ্গল কামনা করেন, যাতে রয়েছে একতা, শান্তি, অনেরাজ্য। তবে শীঘ্রই এই বিভ্রম রাজনীতি পরিহার করুন এবং ভগবদ্‌গীতার ধর্ম ও দর্শন প্রচারে সম্পূর্ণ আত্মনিয়োগ করুন। আমি  “ব্যাক টু গডহেড” পত্রিকায় এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং এখানে কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্যের অবতারণা করেছি।
পরিশেষে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি আপনি শুধুমাত্র একমাত্র রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করুন এবং চলুন আমরা ভগব্্গীতা নিয়ে আলোচনা করি। আমি বিশ্বাস করি, এই ধরনের আলোচনা আপনার জীবনে এক নব আলোর সূচনা করবে যা শুধুমাত্র আপনার মঙ্গলই নয় সমগ্র বিশ্বের মঙ্গল সাধন করবে।
আপনার শীঘ্র প্রতি উত্তরের অপেক্ষায়
 

আপনার শুভাকাঙ্খী
অভয়চরণ দে
শ্রীল প্রভুপাদের লিখিত এই যথার্থ মূল্যায়ণ, গান্ধিজী করেননি। শ্রীল প্রভুপাদ গান্ধীজিকে অনেকটা তার আসন্ন মৃত্যু সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। কিন্তু দেখা গেল, এই চিঠি পাওয়অর ছয়মাস পরেই গান্ধীজেকে আততায়ীর গুলিতে মর্মন্তিকভাবে নিহত হতে হয়েছিল।

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।