রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান কোথায়?

প্রকাশ: ৫ নভেম্বর ২০২২ | ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২২ | ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 144 বার দেখা হয়েছে

রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান কোথায়?

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্‌কন) প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১৯৭১ সালের ১৮ আগষ্ট লন্ডনে সেন্ট জেমস্ পার্কে প্রাতঃভ্রমণের সময় ও তাঁর কয়েকজন শিষ্যদের মধ্যেকার কথোপকথনের অংশবিশেষ।


প্রদ্যুম্ন: আপনি একটি তাৎপর্যে লিখেছেন, “মানব সভ্যতার নিম্ন স্তরে সব সময়েই জড় জগৎকে ভোগ করার তীব্র বাসনা থাকে এবং তাঁর ফলে নিরন্তর ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য পরস্পরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।”
প্রভুপাদ: হ্যাঁ, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাস্তবিকই লক্ষ্য করা যায়। এই যে সাম্রাজ্যের উপনিবেশ স্থাপনার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেটা ইউরোপের দেশগুলির বিশেষ লক্ষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ভারতবর্ষে সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদের হয়েছে। আমেরিকাতেও মানুষের সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল, কানাডায়। হল্যান্ডবাসী, ফরাসী, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ আর বৃটিশদের মধ্যেও নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে ছিল কিভাবে দেশ দখল করা যায়। বিগত দু’শ বছর যাবৎ প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলেছে। তবে বৈদিক সভ্যতা অনুসারে, কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকার কথা নয়। তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা তোমার জন্য যেটুকু বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতেই তোমাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। অন্যের সম্পদ-সম্পত্তি দখল করতে যেও না – মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ ধনম্। সেটাই হল বৈদিক সভ্যতা। প্রত্যেকে যাতে সন্তুষ্ট থাকে।
১৯৪২ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, মানুষের কুকীর্তির ফলে দুর্ভিক্ষ, আর তাতে ভারতবর্ষে কত মানুষ বাস্তবিকই অনাহারে মারা গিয়েছিল। না খেয়ে মরেনি, খেয়েই মরেছিল। খাদ্যের অভাব হয়েছিল, কিন্তু জনগণ যখন তাদের খাদ্য বিতরণ করতে শুরু করল, তখন তারা লোভে পড়ে এত বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলেছিল যে, তারা রোগে পড়ে এবং মারা যায়, অনেক মানুষ। অভুক্ত থেকে মারা যায়নি, অনাহারে উপবাসে কেউ মরে না, মরে অতি ভোজনে। তার হিসাব রয়েছে। আমেরিকায় তাই হচ্ছে না? সেদিন কে যেন আমাকে বললেন, ওদেশে সর্বোচ্চ মৃত্যর হার হল-
শ্যামসুন্দর: হৃদরোগ থেকে। প্রভুপাদ: হৃদপিণ্ডের গোলমাল। আর তারপরই সর্বোচ্চ মৃত্যহার হল অতিভোজনে। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে না। শ্রীকৃষ্ণ, পরম পুরুষোত্তম—‘নিত্য নিত্যানাম্’। আমরা সবাই হলাম পুরুষ । ঠিক যেমন তোমরা আমাকে মনে করো আমি তোমাদের সংঘের প্রধান, তেমনি আরও কত প্রধান রয়েছেন। ব্রহ্মা একজন প্রধান। অনেক ব্ৰহ্মা আছেন। তার পরে, তাঁদের ওপরে রয়েছেন মহাবিষ্ণু, প্রধান। এইভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখতে থাকো, তখন পৌঁছে যাবে শ্রীকৃষ্ণে, ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ পরম পুরুষোত্তম কৃষ্ণ। তিনিই প্রত্যেকের আহার জুটিয়ে দিয়ে থাকেন। তাতে কোনও সমস্যাই নেই । এমন কথা মেনে নেওয়া নিতান্তই বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয় যে, “পৃথিবীতে জনসংখ্যার চাপেই খাদ্যসমস্যা জেগেছে।” এই যে এখন আমরা সেন্ট জেমস্ পার্কে বেড়াচ্ছি, দেখছি এখানে হাঁসেরা ডজনে ডজনে বাচ্চা পাড়ছে এক সাথে। আর সেটা এক-এক বছরে দ্বিগুণ তিনগুণ হয়ে যাচ্ছে। তাতে তাদের সমস্যা তো নেই। কোথায় তাদের জনসংখ্যা বিস্ফোরণের সমস্যা? ওরা তো অনাহারে নেই। তোমরা গিয়ে ওদের ধরে ধরে যদি নাই মার, তা হলে তো ওরা অকারণে মরে না। তোমরা পশু-পাখিদের মধ্যে থেকে লক্ষ্য করো-কেউ না খেয়ে মরে না। একো বহূনাং বিদধাতি কামান্। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রয়েছেন। তিনি প্রত্যকের আহার জোগাচ্ছেন। তা হলে কোথায়…?
কোথাও অনাহারের কোনই প্রশ্ন নেই। তবে কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা? প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানে হল “আমি আরও বেশি করে ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তি উপভোগ করতে চাই।” সেটাই হল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তা না হলে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনই প্রশ্ন ওঠে না। সব কিছুই রয়েছে। পরিপূর্ণভাবেই রয়েছে। ‘ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।’ ভগবানের সৃষ্টি নির্ভুল, স্বয়ং সম্পূর্ণ। তার মধ্যে কোনই অপূর্ণতা থাকতে পারে না। এমন কি অতিরিক্ত জনসংখ্যা যদিও হয়, তো ভগবানই আহার জোগাবেন। ব্যস্ত হইও না।
কিন্তু যেহেতু ভগবানে আমাদের বিশ্বাস নেই, আমরা ভগবানকে ভুলে গিয়েছি, আমরা জানি না ভগবানের স্বরূপ কি, তাই তো আমরা অর্থনৈতিক তথা বৈষয়িক সমস্যা সৃষ্টি করেছি। নইলে কোনও সমস্যাই নেই । দেখতেই পাচ্ছ, ওরা (হাসেরা) কত আনন্দে রয়েছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই প্রকৃতিকে অনুধাবণ করে আমাদের শিখতে হবে। বৈদিক জ্ঞান অর্জনের পথে যদি না আমরা যাই, তবু আমরা দেখতে পাব, “নিম্ন স্তরের প্রাণীদের মধ্যে সমস্যাটা কোথায়? কোনও সমস্যা নেই। ও কত ভরসা নিয়ে চলেছে। নিম্ন স্তরের প্রাণীদের জীবনযাপন করে তো কোনই সমস্যা ওদের নেই। তাই ভাগবতে ১/৫/১৮ বলা হচ্ছে, তস্যৈব হেতোঃ প্রয়তেত কোবিদো ন লভ্যতে যন্ত্রমতামুপর্যধঃ। জীবন চক্রের এই প্রকার বিভিন্ন প্রজাতির মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন গ্রহলোকে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তাই অর্থনৈতিক তথা বৈষয়িক সমস্যার সমাধান প্রচেষ্টায় কত নেতারা এলেন গেলেন, সমস্যা যেখানে ছিল সেইখানেই রয়ে গেল। ওঁরা কেবল আসছেন আর যাচ্ছেন, নামেই যত নেতারা আসছেন আর যাচ্ছেন কিন্তু যেহেতু সমাজে কোন ঈশ্বরভাবনা নেই, সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। আমাদের দেশে গান্ধী এবং অনেকের মতো বড় বড় নেতারা এলেন গেলেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, “ব্রিটিশরা যদি চলে যায় তো আমাদের সমস্যাদি সমাধান হয়ে যাবে।” কিন্তু বাস্তবিকই তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি রয়েগেছে পাকিস্তান সমস্যা, সেই সমস্যা হরেক সমস্যা। তাই এইভাবে নেতাদের দ্বারা আমাদের সমস্যাদির সমাধান হবে না। সমস্যাদির সমাধান হবে যদি আমরা আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত বিকশিত করে তুলতে পারি তখন সমস্যাগুলির সমাধান হয়ে যাবে।


 

এপ্রিল-জুন ২০১৮ ব্যাক টু গডহেড

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।