এই পোস্টটি 343 বার দেখা হয়েছে
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ যুগে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ তিতিক্ষার পর ৩০ বছর পূর্বে উদ্বোধন হয় ডারবানের শ্রীশ্রী রাধা রাধানাথ টেম্পল অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং।
নিকুঞ্জ বিলাসিনী দেবী দাসী
রংধনু কখনো আমার চোখকে আকর্ষণ করেনি এবং আমার মনের মধ্যে দ্যুতিও ছড়ায়নি। এটি চিরন্তন সত্য ও মুক্তির ভাবনায় অনুপ্রাণিত করে এবং এমনকি সেটি এই জগতের উর্ধ্বে আর একটি জগতের ভাবনা। আমি সেই ভিন্ন ভিন্ন বর্ণচ্ছটা জনগণের একটি অংশ, যারা রংধনু জাতিকে গড়ে তুলে, যেটি হল শান্তি ও একতার নিদর্শনস্বরূপ বর্ণবাদ দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পর্যায়। দক্ষিণ আফ্রিকাতে শান্তি ও ঐক্যতা গড়ে তোলার প্রস্তাবটি খুব সীমিত মূল্য বহন করে, যদি তা পারমার্থিক দর্শন না হয়ে জাগতিক দর্শনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধুমাত্র সূর্যই প্রকৃত রংধনু সৃষ্টি করতে পারে এবং ডারবানের দিগন্ত জুড়ে আমি দেখতে পাই সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল শ্রীশ্রী রাধা রাধানাথ টেম্পল অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (Radha-Radhanath temple of understanding) ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে, আর সমস্ত দক্ষিণ আফ্রিকানদের দিকে পারমার্থিক জ্ঞানের দ্যুতি ছড়াচ্ছে। ভগবান ও আমাদের মধ্যে নিত্য সম্পর্কের যে জ্ঞান তা পারমার্থিক মুক্তির পথকে সুগম করে, এই মুক্তি হল জীবাত্মার জাগতিক মোহের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ভগবদ্ধামে নিত্য জীবনের পথে ধাবিত হওয়া। আমাদেরকে মোহিত করার জন্য রংধনুর যে শক্তি তা এর রঙবৈচিত্র্যের মধ্যেই পুরোপুরি নিহিত নয়, কেননা ঐ ছন্দময় সমন্বয়টি ঘটে সূর্যের মাধ্যমেই। চিন্ময় উপলব্ধির সূর্য এই রংধনু জাতির (Rainbow nation) রঙ বৈচিত্র্যের মধ্যে ছন্দ সৃষ্টি করতে পারে এবং তা হতে পারে ভগবদ্ধামের ক্ষেত্রে নানা রকম বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যতার সম্মোহনী প্রদর্শন সৃষ্টির মাধ্যমে।
টেম্পল অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং গত তিরিশ বছর ধরে এর আলোকদ্যুতি ছড়িয়েছে, যেন মনে হয় তা কালের নিয়ন্ত্রণের অধীন নয়। আমার মনে হয় যেন এখানে চোখ ধাঁধানো সরোবরের একটি সুবিশাল স্বর্ণ পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়ে রয়েছে, কিংবা একটি দিব্য বিমান ওপর থেকে অবতরণ করেছে। ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক নকশার সংমিশ্রনে গড়ে তোলা মন্দিরের স্থাপত্য নিদর্শন আমাকে কৌতুহল (intrigue) করে তোলে। ঝকমকে অষ্টভুজ আকৃতির ছাদের ওপর স্বর্ণপত্র খঁচিত গম্বুজ ও তিলক আকৃতি জানালা শোভা পাচ্ছে, যা চোখ ও আত্মাকে পুলকিত করে। অষ্ট্রিয়ান স্থপতি রাজারাম দাস এই নকশাটি পরিকল্পনা করেন, যা বৈদিক শিল্প শাস্ত্রের নীতিসমূহকে অনুসরণ করে। মন্দিরের কাঠামোটির অর্থ হল পারমার্থিক সত্য সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করা এবং মনোবল, দৃঢ়তা ও প্রত্যাশার কাহিনিকে তুলে ধরা।
১৯৭০ সালে মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, যখন দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল আফ্রিকার অন্যান্য স্থানের চেয়েও ব্যতিক্রমভাবে প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ। এর বিকশিত অর্থনীতি, উর্বর প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্য, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্য একটি সূক্ষ্ম প্রতিচ্ছবি অংকন করেছিল। কিন্তু আরেকটু সন্নিকটে তাকালে আমরা দেখতে পাব এই ছবিটি জাতিভেদ ও নৃতাত্ত্বিক বিভক্তিকরণ দ্বারা সমালোচিত। ভিন্ন ভিন্ন জাতি, বর্ণ ও সংস্কৃতির লোকেরা বর্ণবাদের ব্যানারের নিচে বাস করছিল, এটি এমন একটি পলিসি যার মাধ্যমে সাদা ও কালো পৃথকভাবে বাস করার জন্য বাধ্য করা হয় এবং আফ্রিকান, ভারতীয় ও মিশ্র জাতির মধ্যে অবিবেচক ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়। সহিংসতা ও রক্তের দাগ দিয়ে রঙধনুকে রাঙিয়ে দেওয়া হয়।
এই যখন অবস্থা, তখনই শ্রীল প্রভুপাদ ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন)। সারাবিশ্ব পুন: পুন: ভ্রমণ করে তিনি অনেক দেশের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের, জাতির লোকদের এই নীতির ওপর ভিত্তি করে একত্রিত করেছেন যে, ভগবানের চোখে আমরা সবাই এক এবং আমরা সম্মিলিতভাবে তাঁর উদ্দেশ্যে সেবা নিবেদন করতে পারি। শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়ই একটি মন্তব্য করতেন যে, “ইস্কনই হল প্রকৃত জাতিসংঘ।’
শ্রীল প্রভুপাদের গুপ্ত সেবকদের আগমন
বিশ্ব পারমার্থিক ভাতৃত্বের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে শ্রীল প্রভুপাদের পদাঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে ক্ষুধি দাসের নেতৃত্বে তার কিছু শিষ্য ১৯৭২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্থানে সোসাইটির কার্যপ্রক্রিয়া শুরু করেন।
তারা রাজনৈতিক অশান্তি সম্পর্কে সতর্ক ছিলেন, তবে ভীত ছিলেন না। শ্রীল প্রভুপাদ বলতেন যে, তাঁর গুরুদেব শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর তাঁকে বলেছিলেন, কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার ভারতের স্বাধীনতা অর্জনেরও প্রতীক্ষা করার অবকাশ রাখে না। প্রভুপাদের দৃষ্টান্ত তাঁর অনুসারীদের অনুপ্রাণিত করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রচার করতে, কিন্তু তারা জানত না কিভাবে সাদা ব্যতিত অন্যান্য বর্ণের মানুষদের সঙ্গে না মিশে কৃষ্ণভাবনা প্রচার করবে, কেননা তখন নিষেধাজ্ঞা ছিল । তখন অধিকাংশ জনগণই ছিল অন্য বর্ণের।
এই ভক্তগণ অগণিত সংগ্রাম আর চ্যালেঞ্জ সহ্য করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভগবদ্গীতার বাণী প্রচার করেছিল। তাদের কিছু নির্যাতিত হয়েছিল এবং জেলবন্ধী হয়েছিল, অন্যদেরকে বিতারিত করা হয়েছিল। এভাবে এক পর্যায়ে তারা সাধারণ জনগণের কাছে পৌছে তাদের আনুকুল্য অর্জনে সমর্থ হয়। গুজরাট কমিউনিটি তাদের গৃহে ভক্তদের আশ্রয় প্রদান করে অত্যাচারী সরকারের কাছ থেকে ভক্তদেরকে রক্ষা করে। অবশেষে, গোয়েন্দা পুলিশদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভক্তদের পালাতে হয়েছিল এবং শহর থেকে শহরে ভ্রমণ করে ভারতীয় জেলাগুলোতে হল প্রোগ্রাম করতে থাকে। তবুও তাদের একটি ভিত্তি, একটি স্থান প্রয়োজন যেখান থেকে স্বাধীনভাবে প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।
শ্রীল প্রভুপাদ সারা বিশ্বে অনেক মন্দির ও ভক্তিযোগ কেন্দ্র খুলেছিলেন এবং তিনি আশা করেছিলেন যে, একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাতে খোলা যাবে। এমনকি যদিও জোহান্সবার্গের নিকটে জেওবিলে একটি কেন্দ্র তখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদের দুরদর্শন ছিল আরো বৃহৎ। ১৯৭৫ সালে অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিদর্শনকালে, শ্রীল প্রভুপাদ দেশটিকে একটি উর্বর ভূমি হিসেবে দর্শন করেছিলেন, যেখানে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কৃষ্ণভাবনার বীজ রোপন করা যাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রচারের অন্যতম অগ্রদূত পার্থ সারথী দাস গোস্বামী বলেন, “যখন শ্রীল প্রভুপাদ পরিদর্শন করেন, তখন বর্ণ ও জাতির সংমিশ্রণ ঘটেনি।” তাই তাঁর এক প্রবচনে তিনি জোড়ভাবে উল্লেখ করেন যে, আমরা পুরুষ বা নারী, কালো বা সাদা নই আমরা সবাই ভগবানের নিত্য সেবক এবং অতএব আমরা সবাই সমান। তখনকার রাজনৈতিক পরিবেশে, সমভাব বা সমতা বিষয়ে জোড় দিয়ে বলাটা বিতর্কিত ছিল। কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদ নির্ভিকভাবে এটি ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে উল্লেখ করেছিলেন। সেটি ছিল একটি পাবলিক প্রোগ্রাম এবং ডারবান সিটি হলে আয়োজিত হয়েছিল। দুই হাজারেরও বেশি লোক সেখানে উপস্থিত হয়েছিল। ইউনিভার্সিটি অব উইটওয়াটারপ্রান্ডে শিক্ষার্থী ও লেকচারারদের উদ্দেশ্যে তিনি জাতিবিভেদ প্রথা সম্পর্কে বলেন।”
শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্যরা তারই মত নির্ভীকভাবে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করে। পরবর্তীতে ইস্কনে যোগদানকারী প্রথম ভক্ত গোকুলেন্দ্র দাস সহ আরো কতিপয় কিছু ভক্ত প্রিটোরিয়াতে প্রধান নিবন্ধরক্ষক (registarer) এর কাছে যান যাতে দক্ষিণ আফ্রিকাতে ইস্কনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়। কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে দেশের মধ্যে অনুমোদন করা বিষয়ে সরকার বাড়তি সতর্ক ছিল এই ভয়ে যে, তা জাতি-বর্ণে মুক্ত সংমিশ্রন ঘটাতে উৎসাহিত করতে পারে। তাই নিবন্ধরক্ষক এতে অস্বীকৃত জানান; তিনি বলেন, এটি নিবন্ধন করতে হবে এই নামে-“Society for Krishna Consciousness in South Africa” অর্থাৎ আফ্রিকার কৃষ্ণভাবনামৃত সোসাইটি।” গোকুলানন্দ যখন তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হল, তখন তার মনে পড়ল যে, সে কিছু প্রসাদ এনেছে। সেই প্রসাদগুলো ছিল গোলাকৃতির মাখন ও গুঁড়া দুধ দিয়ে তৈরি এক প্রকার মিষ্টি। তিনি তখন নিবন্ধরক্ষকের চা এর থালায় সেই প্রসাদ রাখলেন। যখন সেই উদ্ধৃত কর্মকর্তা চা এর কাপে এক চুমুক দিলেন, তখনই তার চোখ পড়ল সেই মিষ্টিগুলোর দিকে। তিনি একটি নিয়ে কামড় দেয়ার সাথে সাথে অভিভূত হয়ে গেলেন। যখন তিনি সেই সুস্বাদু প্রসাদ আস্বাদনে সম্পূর্ণ নিমগ্ন, এর মধ্যেই অবিশ্বাস্যভাবে তিনি সেক্রেটারিকে বললেন, “তাদের পছন্দের নামটা দিয়ে দাও।” এভাবে কিছুদিনের মধ্যে ক্যাটো রিজে ১২০ একরের ফার্মটি হয়ে উঠে ইস্কনের প্রধান কেন্দ্র বলতে গেলে ভক্তদের জন্য স্বর্গতুল্য। তখন গ্রাম্য এলাকায় বাস করার মাধ্যমে প্রতিকূল অবস্থার অবনতি ঘটে এবং আরো স্বাধীনভাবে সকল বর্ণের মানুষের মাঝে ভক্তরা প্রচার করতে থাকে। পার্থ সারথী দাস গোস্বামী ‘তাবু ক্যাম্পেইন’ শুরু করে। ভক্তরা ভিন্ন ভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে তাবু স্থাপন করে সাধারণ জনগণদের সন্ধ্যার অনুষ্ঠানসূচীতে যেমন, পারমার্থিক আলোচনা, নাটক, কীর্তন ও প্রসাদ আস্বাদনে আমন্ত্রণ জানাতে থাকে এই কর্মসূচীগুলো ভারতীয় কমিউনিটির অনেক লোককে অনুপ্রাণিত করে এবং তারা ভক্তে পরিণত হন। ভক্তদের সেই ফার্ম কমিউনিটি ধীরে ধীরে আরো বেড়ে উঠে, কিন্তু তবুও শহরের সন্নিকটে একটি মন্দির থাকা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে সরকার আবিস্কার করে যে, অনেক বিদেশী ভক্ত প্রায়শই ধর্মপ্রচারের জন্য না গিয়ে কিংবা ট্যুরিস্ট ভিসার সময়সীমাও বৃদ্ধি না করে অবৈধভাবে দেশে থেকে যাচ্ছে। এতে করে ভক্তদের দেশান্তরিত হওয়া ও তাদের জন্য আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেল। ক্যাটো রিজের মন্দির অধ্যক্ষ তুলসী এই অবিচার নিয়ে ভারতীয় সংবাদপত্র ‘লিডার’ এ প্রতিবেদন লিখলেন।১৯৯০ সালে ৭২ বছর বয়সে দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাবাস শেষে মুক্তি পান নেলসন ম্যান্ডেলা। তাঁকে কারাবাসে বাধ্য করেছিলেন তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী স্বৈরাচারী সরকার। কিন্তু তিনি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অত্যাচারী শাসকদের কাছ থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করে নির্যাতিত, শোষিত, বর্ণবৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠির নিকট শান্তির সুবাতাস বয়ে আনেন। তিনি ক্ষমাশীলতা, উদারতা এবং দয়ার ব্যাপ্তী এমনভাবে বিস্তৃত করেছিলেন, যার কারণে তাঁর নেতৃত্বে থাকা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC) সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকায় সকল বর্ণবৈষম্য দূর করে শান্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল। পার্লামেন্ট থেকে খেলার মাঠ, নগরায়ন থেকে ধর্মীয় সম্প্রদায় সর্বদিকে মাদিবার (ম্যান্ডেলার অন্য বিখ্যাত নাম) বিশেষ জাদুকরী ছোঁয়া বিরাজ করছিল।
ইস্কন অত্যন্ত সন্মানিত যে, নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার চাটসওয়ার্থে অবস্থিত ইস্কন মন্দির পরিদর্শন করেছিলেন এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতা সম্পর্কিত বিশদ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, এছাড়া গোবিন্দ রেস্টুরেন্টে কৃষ্ণপ্রসাদ আস্বাদন করেছিলেন। এই ভ্রমণের সময় নেলসন ম্যান্ডেলা অত্যন্ত বিনম্রচিত্তে ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের বিগ্রহের চরণে প্রণাম নিবেদন করেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কীভাবে শ্রীল প্রভুপাদ সমগ্র বিশ্বে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করেছিলেন?” একটি দীর্ঘ আলোচনা পর্বের পর যখন ম্যান্ডেলা জানতে পারেন যে, শ্রীল প্রভুপাদ জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্বের সমস্ত মানবসত্তার জন্য এই অমৃতময় কৃষ্ণভাবনা প্রচার করেছেন, তখন তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত হলেন এবং শ্রীল প্রভুপাদের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। এছাড়াও তিনি শ্রীমদ্ভগবদগীতার শিক্ষার সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছিলেন কেননা ভগবদ্গীতার শিক্ষা সকল মানুষের সমতার কথা বলে, প্রত্যেকে ভগবানের সন্তান হওয়ায় সকলের প্রতি সন্মান প্রদর্শনের কথা বলে ।
১৯৯৪ সালে যখন তিনি গণতান্ত্রিক ধারায় থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন তিনি পুনরায় ইস্কন মন্দির পরিদর্শন করেন। তখন সেটি ছিল প্রায় ১০ হাজার হিন্দু কমিউনিটিতে পরিপূর্ণ জনগোষ্ঠির দীপাবলী উৎসবে। ভগবান রামচন্দ্রের ১৪ বছরের বনবাস শেষে পুনরায় অযোধ্যায় ফিরে আসা উপলক্ষে তখন থেকে এই দীপাবলী উৎসব পালন করা হচ্ছে। ভগবান রামচন্দ্র যেমন দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও সংগ্রাম-যুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছিলেন, তেমনি নেলসন ম্যান্ডেলাও অপরিসীম সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় লাভ করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলা বিশেষভাবে নজর দিয়েছিলেন বিভিন্ন ভাষাভাষি, সংস্কৃতি, বর্ণ ও ধর্মীয় মানুষগণ যেন শান্তিপূর্ণভাবে সহ-অবস্থান করতে পারেন যাকে বলা হয়েছে “রঙধনু দেশ, জাতি”। তিনি নতুন সংবিধানে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ধর্মীয় আচারাদি পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন।
এই অনুপ্রেরণা পেয়ে ১৯৯৭ সালে ইস্কন ফুড ফর লাইফ প্রজেক্ট পরিচালনা করেন, “রঙধনুর দেশে শিশুদের উৎসব (Festival for the Children of the Rainbow Nation)”। এই উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন ম্যান্ডেলা। এই কিংস পার্ক ফুটবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে উপস্থিত হয়েছিল ৫০ হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ। প্রধান অতিথির বক্তৃতার পর তিনি তাঁর সময় বাড়িয়ে ৫ ঘন্টা অবস্থান করেন এবং ভক্তদের ও শিশুদের সাথেঅ নিন্দঘন ক্ষণ অতিবাহিত করেন। তিনি শিশুদের অধিকার আদায়ের জন্য সচেষ্ট হতে বলেন এবং সেই সাথে মনে করিয়ে দেন যে, তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিতে পূর্বতন প্রজন্ম আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন। পরদিন মার্কারী সংবাদপত্রের সাক্ষাৎকারে তিনি এই দিনটিকে তাঁর জীবনের স্মরণীয় দিন হিসেবে ব্যক্ত করেন।
ভক্তদের সঙ্কটাপন্ন অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে লাগল, ফলশ্রুতিতে তা ভারতীয়দের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে। পার্লামেন্টের এক সদস্য মি. রাজবংশী সরকারের কাছে একটি অফিসিয়াল আত্মপক্ষ সমর্থন নামা (plea) জমা দেয়। ……একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ভক্তদের সেখানে অবস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়।
মন্দির নির্মাণে নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা
একসময় কেন্দ্রীয় ভিত্তির প্রয়োজনীয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবশেষে ১৯৮০ সালে, মি. রাজবংশী ডারবানের প্রান্তদেশ, চাটস্ওয়েতে একটি বিশাল জমি খণ্ডের ব্যবস্থা করে। এই স্থানে এমন এক মন্দির গড়ে উঠবে যা ইতোপূর্বে দক্ষিণ গোলার্ধে আর হয়নি। ইস্কনের তৎকালীন জিবিসি ভগবান দাস এ মন্দিরটির মাধ্যমে সরকারকে দেখাতে চেয়েছিলেন যে, ইস্কন এ দেশটিতে একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে। তুলসী দাসের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তিনি ভক্তদের অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ করে তহবিল সংগ্রহ শুরু করতে বলেন। এ বিষয়ে এক ভক্ত রামানুজ দাস বলেন, আমরা লোকেদের মাঝে কৃষ্ণকথা বলতে ও শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থ বিতরণ করতে ভালোবাসতাম। কিন্তু মন্দিরটি তৈরির জন্য আমাদেরকে সেগুলো করতে হয়েছিল এবং কেউ কেউ কিছু তৈলচিত্র বিক্রি শুরু করল। আমাদের চুল বড় করে ভক্ত পোশাকের পরিবর্তে স্মার্ট পশ্চিমা পোশাক পড়তে হয়েছিল। তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে তৈল চিত্রের দোকান স্থাপন করাটা ছিল প্রধান পদ্ধতি। একদল ভক্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া ভ্রমণ করে ডোনেশন সংগ্রহ ও চিত্র বিক্রি করছিল।”
কাটোরিজে প্রথম যোগদানকারী ভারতীয় নারী শ্রীমূর্তি দেবী দাসী বলেন, সেই নতুন মন্দির প্রোজেক্টটি ছিল একটি যুদ্ধ, এটি ভক্তদের আত্মত্যাগে গড়া। দৃষ্টান্তস্বরূপ তার প্রয়াত স্বামী, শ্যামল দাস যখন তহবিল সংগ্রহের জন্য দেশের দূর-দূরান্তে গমন করছিলেন তখন একসময় তার কারটি এক গিরিখাদে পড়ে যায়। অনেকদিন ধরে তখন তার খোঁজ খবর মেলেনি। কিন্তু কৃষ্ণ তাকে যে কোনো ভাবে হোক রক্ষা করেছিলেন।
আজ যখন এ মন্দিরের গম্বুজের জানালায় স্বর্ণবেষ্ঠিত তিলক দর্শন করি, আমি দেখতে পাই ভক্তদের বিশ্বাস ও ভক্তি তার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
মি. ম্যান্ডেলা মানবাধিকার আদায়ে বিজয়ী, দেশের প্রেসিডেন্ট কিংবা একটি নোবেল জয়ী ব্যক্তিই নন, তিনি আফ্রিকার প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিলেন এবং তাদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছিলেন। তিনি একজন নেতা, শিক্ষক এবং সমগ্র বিশ্বের কাছে বলিষ্ট উদাহরণ।
নেলসন ম্যান্ডেলা ও ভগবদ্গীতা
জাতির পিতা এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়মিতভাবে ইস্কন আয়োজিত ভগবান শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবে অংশগ্রহণ করতেন। শ্রীমৎ ভক্তিতীর্থ স্বামী মহারাজের সঙ্গে যখন ম্যান্ডেলার প্রথম সাক্ষাৎ হয় তখন আলোচনা মুহূর্তে মহারাজ একটি গীতার শ্লোক আবৃতি করছিলেন, তিনি শ্লোকের অর্ধেক অংশ বলার পর, ম্যান্ডেলা বাকি অংশ অবলীলায় বলে দিলেন। ভক্তিতীর্থ মহারাজ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কী ভগবদগীতা সম্পর্কে অবগত?” ম্যান্ডেলা তখন বললেন, “আমার পরীক্ষা নিয়ে দেখুন তো” তখন ভক্তিতীর্থ মহারাজ কর্তৃক কথিত সকল শ্লোক সম্পর্কে ম্যান্ডেলা তাঁর জ্ঞান বিধৃত করেন। ভগবদগীতা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকায় স্বাভাবিকভাবেই মহারাজ ম্যান্ডেলাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কীভাবে এটি হল?”।
নেলসন ম্যান্ডেলা ব্যাখ্যা করলেন, রবিনস দ্বীপে যখন তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন তখন তাঁর সাথে আরো কয়েকজন নেতাও কারারুদ্ধ ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ভারতীয় আইনজীবিও ছিলেন। তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকান সরকার তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য তাদের অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করত। তখন তারা বুঝতে পারলেন যে, সকল বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও তাদের মনকে অবশ্যই লক্ষ্য স্থির ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। তাই সেই ভারতীয় আইনজীবি নেলসন ম্যান্ডেলাকে গীতা শিক্ষা প্রদান করেন। নেলসন ম্যান্ডেলা শ্রীমৎ ভক্তিতীর্থ স্বামী মহারাজকে বলেন, শ্রীমদ্ভগবদগীতার শিক্ষা আমাকে প্রকৃতিস্থ থাকতে, পৃথিবী সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের মুক্তি ও উন্নত ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় সহায়তা করেছে।
ম্যান্ডেলার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রার্থনায় ইস্কন
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার প্রয়াণ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় প্রার্থনায় যোগ দিয়েছে। হরে কৃষ্ণ ভক্তরা নেলসন ম্যান্ডেলার বাড়ি জোহান্সবার্গের হাটনে দক্ষিণ আফ্রিকা ঘরানার নৃত্যকীর্তন ও বিনামূল্যে প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে মাদিবার (নেলসন ম্যান্ডেলা) শোক সভা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত প্রার্থনায় যোগ দেন। তাঁর এই প্রয়াণ সত্যিকার অর্থে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বের জনগণের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। কিশোরী রাধে বলেন “সকল ধর্মের প্রতি তাঁর সহমর্মিতা ও তার স্বাভাবিক ভ্রাতৃত্ববোধ, দয়া ও সাম্যতা বিশ্বের সকল মানুষ বহুদিন স্মরণে রাখবেন। এই মূল্যবোধ ইস্কনের সকল অনুসারীগণ হৃদয়ে ধারণ করেন। তাই আমাদের সর্বান্তকরণে এই সারটুকু মাদিবাকে উৎসর্গ করতে চাই ঠিক যেভাবে তিনি তার জাতিকে প্রদান করেছিলেন”।
মৃদঙ্গ, খোল, করতাল ও হরিনাম সংকীর্তনে আমরা মাতিয়ে রেখেছিলাম সমগ্র পরিবেশটিকে, সমগ্র রাস্তাজুড়ে আকর্ষিত ও উৎসুক জনতা ছন্দের তালে তালে মাথা দোলাচ্ছিল। যারা এই প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেছিল হৃদয়ে তার প্রস্থানের বেদনাকে আড়াল করে তারা একটি আনন্দমুখর ও হাসির মাধ্যমে হরে কৃষ্ণ কীর্তনের মধ্য দিয়ে তাঁকে বিদায় জানিয়েছিলেন।
বৈষ্ণবদের দেহে পরিহিত তিলক চিহ্ন ভগবানের সুরক্ষার মাধ্যমে বিজয়সূচক প্রতীক। ভক্তরা কৃষ্ণের সুরক্ষার ওপর আস্থা রেখেছিল এবং জানত যে, তাদের সফলতা তাঁর ওপরই নির্ভর করছে। কিন্তু পরীক্ষা তখনও শেষ হয়নি। তখন অর্থাভাব ও জীবন যাপনে প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়। ভক্তরা তাতেও হাল ছাড়েনি। তারা তাদের নিজস্ব নির্মাণ কোম্পানি গঠন করে এবং তাদের প্রচেষ্টায় মন্দির গড়ে উঠতে শুরু করে।
রামানুজাচার্য দাস বললেন, “ভক্তরা যখন প্রথম দিকে নির্মাণ কার্য শুরু করে তখন খড়া চলছিল”। তিনি বলছিলেন কিভাবে কৃষ্ণ তাদের প্রচেষ্টায় সাড়া দিয়েছিলেন। “কোনো বৃষ্টি না হওয়া মানে নির্মাণকার্য নির্বিঘ্নে অব্যাহত থাকা। আমাদের জলের মিটারটি ভেঙে গিয়েছিল, যার ফলে নির্মাণ কার্যের জন্য ব্যবহৃত টন টন জলের খরচও কমে গেল। এতে কোনো সন্দেহই ছিল না যে, কৃষ্ণ আমাদের সাহায্য করছিলেন।”
ভক্তরা শীঘ্রই ভগবানকে দর্শন করতে যাচ্ছে, যার জন্য তারা কঠিন ত্যাগ স্বীকার করেছিল। ভারতের জয়পুর থেকে ইতোমধ্যেই ৪২ ইঞ্চি মার্বেলের বিগ্রহ শ্রীশ্রী রাধা রাধানাথ দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে পৌঁছেছে। প্রয়াত বিমলা প্রসাদ দাস, তৎকালীন প্রধান পূজারী এর তদারকি করেছিলেন। তিনি বিগ্রহ নিয়ে আসার জন্য নিরাপদ যানবাহনের আয়োজন সহ কাস্টমস ও অন্যান্য জটিলতা নিরসনের জন্য কাজ করেছিলেন।
অভিষেক : অক্টোবর ১৯৮৫
অবশেষে, বিগ্রহ অভিষেকের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত। ১৯৮৫ সালে রংধনু জাতির (Rainbow Nation) জন্য নতুন আশার সঞ্চার ঘটে। দুই দিনের সেই উৎসবে প্রায় দুই হাজার লোক অংশগ্রহণ করে। পরিদর্শকরা বন্যার জলের প্রবাহের মতো একটি সেতু পার হয়ে প্রধান দ্বার দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করে। এর মাধ্যমে তারা জানত না যে, অবচেতন মনে জাগতিক জীবনের সেতু পার হওয়ার মাধ্যমে স্বর্ণযুগ ছেড়ে আসছে এবং অন্য একটি জগতে প্রবেশ করছে। কিন্তু যখন তারা সেখানে প্রবেশ করে, তখন নিজেদের মধ্যে অন্যরকম পরিবর্তন অনুভব করে। চারদিকের বায়ু চিন্ময় উপস্থিতির ঘন আবরণ তৈরি করে। অষ্টভূজ মন্দিরের ছাদটি ক্রিম রঙের মার্বেল দ্বারা আবৃত, শত শত আয়নায় কৃষ্ণের লীলাবিলাসের ছবি শোভিত, তিন মিটার দীর্ঘ কৃষ্ণের একটি অংকিত চিত্রের আটটি প্যানেলের নিচে চোখ ধাঁধানো ঝুলন্ত ঝাড়বাতি এবং হাজার হাজার আলোর ঝলকানিতে আলোকিত পুষ্পশোভিত নকশা ও জটিল চিত্রকর্ম উপস্থিত সবাইকে মোহিত করে তোলে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার মাধবেন্দ্র পুরী দাস সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে এসে এ বিস্ময়কর প্রভাব সৃষ্টি করে।
এরকম চিত্রশৈলী নিদর্শনের মধ্যে দাড়িয়ে ভক্তদের চোখ আকর্ষিত হয় ভগবানের বেদীতে, যেখানে একটি সুবিশাল পদ্ম আকৃতির ভিত্তির ওপর দাড়িয়ে রয়েছেন, অপূর্ব মনোহর শ্রীশ্রী রাধা রাধানাথ ও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। উৎসব নিয়ে ভক্তদের উত্তেজনার মধ্যে আরেকটি সংবাদ সবাইকে আরো উত্তেজনার আনন্দে মাতোয়ারা করে। কেননা তখন ভগবান শ্রী রাধানাথের শরীরে অদ্ভুতভাবে একটি পবিত্র সূত্র প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে এটি নিশ্চিত যে, তিনি ভক্তদের এই আয়োজনে অত্যন্ত প্রসন্ন হয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারাবিশ্ব থেকে বিশিষ্ট অতিথি ও ভক্তরা সমবেত হয় এবং তারা বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ ভক্তদের প্রবচন শ্রবণ করে। প্রবচন প্রদানকারী ভক্তরা শ্রোতাদের এটি নিশ্চিত করে যে, এখন থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন এক নতুন উচ্চতায় উপনীত হবে।
নিকুঞ্জ বিলাসিনী দেবী দাসী, শ্রীমৎ গিরিরাজ স্বামীর একজন শিষ্য। তিনি তার পতিসহ দুই সন্তানকে নিয়ে ডারবানে বাস করেন। তিনি স্থানীয় প্রকাশনা হরে কৃষ্ণ নিউজে লেখালেখি করেন এবং মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য তিনি কিছু গ্রন্থ লিখছেন, যেগুলো শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।
জানুয়ারি-মার্চ ২০১৬ ব্যাক টু গডহেড