এই পোস্টটি 173 বার দেখা হয়েছে
পরশুরাম দাস: জগতের নাথ জগন্নাথের কৃপা বারি সর্ব স্তরের মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়াই কলিযুগের পতিত-পাবন অবতার শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর একান্ত ইচ্ছা। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছিলেন,
“পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম।
সর্বত্র প্রচার হইবে মোর এই নাম॥”
ঠিক ৫০০ বছর পরে এসে মহাপ্রভুর সেই ভবিষ্যৎবাণী প্রতিফলিত হচ্ছে। আজ সমগ্র বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) এর আনুকূল্যে জগৎ পতি জগন্নাথের মহা আড়ম্বরে রাজপথে তাঁর পতিত জীবাত্মাদের উদ্ধার করার জন্য বের হচ্ছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ওয়াটফোর্টে ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদের পিতা শ্রী গৌরমোহন দে এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেখানকার ভক্ত গোষ্ঠী শিশুদের নিয়ে পার্কে এক চমৎকার রথযাত্রা উৎসবের আয়োজন করে। এতে শিশুরাই কীর্তনের এর নেতৃত্ব দেয় এবং তারাই একটি অসাধারণ নাটক ‘মৃগারি’ পরিবেশন করেন। পরিশেষে একটি মহাভোজের আয়োজন করে। মহাভোজের আয়োজন করে। “শ্রীকৃষ্ণ এই শিশুদের আমাদের দিয়েছেন, তারা বৈষ্ণব এবং তাদের রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই খুব সতর্ক থাকতে হবে। এরা কোন সাধারণ শিশু নয়, এরা বৈকুণ্ঠ শিশু আমরা তাদেরকে কৃষ্ণভাবনায় অগ্রসর হতে আরও অধিকতর সুযোগ দিতে পারি। এটা খুবই বড় দায়িত্ব, এটাকে অবহেলা করবে না বা বিভ্রান্ত হবে না। তোমার দায়িত্ব খুবই স্পষ্ট।” শ্রীল প্রভুপাদ এর চিঠি, ৩০ শে জুলাই, ১৯৭২
শ্রীল প্রভুপাদ যখন খুব ছোট ছিলেন, তখন তিনি (অভয় দে) তাঁর পিতার নিকট একটি রথ চেয়েছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল ঐ রথে করে জগন্নাথ, বলদেব, সুভদ্রা মহারানীকে চড়িয়ে তারা সবাই মিলে মহানন্দে রথযাত্রা উদ্যাপন করবে। কিন্তু যখন শ্রীল প্রভুপাদ এর পিতা পুত্রকে সাথে নিয়ে কাঠমিস্ত্রিদের নিকট গমন করেন, তখন তিনি দেখেন যে, এত ব্যয়বহুল রথ তৈরি করা তার সামর্থ্যরে মধ্যে নেই। অন্যদিকে শিশু বায়না ধরে যে, সে রথযাত্রা মহোৎসব উদযাপন করবেন। আর কি শুধু বায়না ধরে ক্ষান্ত তিনি! না। ভীষণ কান্নাকাটি শুরু করেছিলেন। যদিও তাঁর পিতা তাঁকে অনেকভাবে সান্ত্বনা দিতে চেয়েছিলেন। অবশেষে একজন বাঙালি মহিলা শিশু অভয়কে এভাবে কান্নাকাটি করতে দেখে খুবই দয়ার্দ্র, চিত্তে তাঁকে সান্তনা দিতে এগিয়ে আসে এবং ওই মহিলাটি যখন জানতে পারেন সে একটি রথের জন্য এমন অকাতরে ক্রন্দন করছেন, তখন তিনি পিতা পুত্রকে তার গৃহে নিয়ে গেলেন এবং তার রথটি দেখালেন। রথটি অভয় এর দারুণ পছন্দ হয়েছিল। তখন গৌরমোহন দে শিশু অভয়কে রথযাত্রা উৎসব করতে ঐ রমণী থেকে রথটি কিনে দিয়েছিলেন ।
রথটি যদিও পুরনো ছিল, তবুও অনেক মজবুত ছিল এবং এটি ছিল প্রায় তিন ফুট উঁচু। বাবা-ছেলে মিলে ১৬টি বড় বড় স্তম্ভ তৈরি করেছিলেন এবং উপরে একটি সুন্দর ছাউনি স্থাপন করেছিলেন। তখন অভয়ের পিতা রং ও ফুল কিনেছিলেন আর শিশু অভয় সেই রথটিকে রাঙিয়ে ছিলেন এবং ফুল দিয়ে সাজিয়ে ছিলেন একেবারে পুরীর রথকে অনুকরণ করে। শিশু অভয়ের উৎসাহ ছিল খুবই প্রবল এবং রথযাত্রা উদ্যাপনের দিন অভয় রথের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এটিই হচ্ছে মহাত্মাদের লক্ষণ, যাদের কোনো শিশু-কিশোর বা অন্য কোন বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যাবে না। তারা আসেন এই জগৎকে শিক্ষা দিতে।