এই পোস্টটি 356 বার দেখা হয়েছে

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দৈবী শক্তি ভবসমুদ্রে হাবুডুবু খাঁওয়া পতিত জীবদেরকে প্রকৃতির আইনে দণ্ড প্রদান করে থাকেন।
কৌন্তেয় দাস
উত্তরটি হলো ‘হ্যাঁ’ আবার ‘না’। ব্রহ্মসংহিতা যেটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মা কর্তৃক নিবেদিত প্রার্থনা সমগ্র সেখানে ব্রহ্মা দুর্গাদেবীকে কৃষ্ণের মায়া শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন । শ্রীমদ্ভাগবতে ১১/২/৪৮এ শ্রীল প্রভুপাদ এ প্রসঙ্গে তাৎপর্য করেছেন এভাবে: “ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৪৪) উল্লেখ আছে, সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয়সাধনশক্তিরে
শ্রীল প্রভুপাদও তাঁর শ্রীমদ্ভাগবত ৩/২৩/৫৭ এর তাৎপর্যে দুর্গাদেবীকে মায়া হিসেবে অভিহিত করেছেন:
“প্রকৃতপক্ষে মায়াশক্তি সকলকে প্রতারণা করছে। মানুষ যখন জড়-জাগতিক সুখস্বাচ্ছন্দ্য লাভের জন্য কালী অথবা দুর্গারূপে মায়াশক্তির পূজা করে, তখন তারা বুঝতে পারে না যে, তারা কি করছে। তারা প্রার্থনা করে, “মা আমাকে ধন সম্পদ দাও, ভাল পত্নী দাও, যশ দাও, জয় দাও। কিন্তু মায়া বা দুর্গার এই প্রকার ভক্তরা জানে না যে, তারা দেবী কর্তৃক প্রতারিত হচ্ছে। জড় জাগতিক লাভ প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রকার লাভই নয়, কেননা জড়জাগতিক উপহারগুলির দ্বারা মোহিত হওয়া মাত্রই, তারা আরও বেশি করে জড় জগতের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং তখন আর মুক্তির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।”
যা হোক, ‘দুর্গা’ নামটি দ্বারা জড়জগতের যে মায়া শক্তির দ্বারা আমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি সর্বদা কৃষ্ণের সেই মায়াশক্তিকেই উল্লেখ করে না। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বৃন্দাবনের গোপবালীকারা দুর্গাদেবীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন কৃষ্ণকে পতি হিসেবে লাভের উদ্দেশ্যে। গোপীগণ কৃষ্ণের সবচেয়ে প্রিয় ভক্ত হিসেবে সুপরিচিত। তারা নিশ্চয়ই অজ্ঞানতাবশত অলীক সুখের অনুসন্ধান করে নি।
শ্রীমদ্ভাগবতের (১০/২২/৪) তাৎপর্যে দুর্গা ও মায়া সম্পর্কিত শ্রীল প্রভুপাদের বর্ণনা থেকে আমরা দেখতে পাই, “বিভিন্ন আচার্যগণের মতানুসারে, এই শ্লোকে উল্লিখিত দেবী দুর্গা মায়া নান্নী কৃষ্ণের মায়িক শক্তি নন বরং যোগমায়ারূপে পরিচিত ভগবানের অন্তরঙ্গা শক্তি। ভগবানের অন্তরঙ্গা শক্তি ও বহিরঙ্গা বা মায়িক শক্তির মধ্যে পার্থক্য নারদ-পঞ্চরাত্রে শ্রুতি ও বিদ্যার কথোপকথনে বর্ণিত হয়েছে ।
“দুর্গা নামে পরিচিত ভগবানের নিকৃষ্টা শক্তি তাঁর প্রেমময়ী সেবায় উৎসর্গীকৃত। ভগবানের শক্তি হওয়ার ফলে, এই নিকৃষ্টা শক্তি তাঁর থেকে অভিন্ন। আর একটি উৎকৃষ্টা শক্তি রয়েছে, যাঁর রূপটি স্বয়ং ভগবানের মতো একই চিন্ময় স্তরে অবস্থিত। এই পরম শক্তিকে কেবলমাত্র বিজ্ঞানসম্মতভাবে হৃদয়ঙ্গম করার মাধ্যমে যে-কেউ তৎক্ষণাৎ সকল আত্মার পরম আত্মাস্বরূপ এবং সমস্ত ঈশ্বরের পরম ঈশ্বরস্বরূপ তাঁকে প্রাপ্ত হতে পারেন। আর অন্য কোনোভাবে তাঁকে প্রাপ্ত হওয়া যায় না। ভগবানের এই পরম শক্তি গোকুলেশ্বরী রূপে পরিচিত। তাঁর স্বভাবই হচ্ছে ভগবৎ প্রেমে সম্পূর্ণরূপে মগ্ন থাকা এবং তাঁর মাধ্যমে যে কেউ সহজেই সমস্ত কিছুর অধীশ্বর এবং অনাদি আদি ভগবানকে লাভ করতে পারেন। ভগবানের এই অন্তরঙ্গা শক্তির একটি আবরণাত্মিকা শক্তি রয়েছে, যিনি মহামায়ারূপে পরিচিতা এবং যিনি জড় জগৎকে শাসন করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডকে মোহিত করে রেখেছেন, আর এভাবেই জগৎ মধ্যস্থ সকলেই মিথ্যাভাবে নিজেকে জড় দেহরূপে জ্ঞান করছে।”
অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৫ ব্যাক টু গডহেড