এই পোস্টটি 189 বার দেখা হয়েছে
বর্তমানে আমরা কলিযুগে বাস করছি, এই কলিযুগ শুরু হয়েছে প্রায় ৫,০০০ বছর পূর্বে। কলিযুগ চলবে ৪,৩২,০০০ বছর ধরে। এছাড়াও, তার পূর্বে ছিল দ্বাপর যুগ, যার সময়কাল ছিল ৮,৬৪,০০০ বছর। তার পূর্বে ছিল রামায়ণের যুগ, অর্থাৎ ত্রেতা যুগ, যার সময়কাল ছিল ১২,৯৬,০০০ বছর। তেমনি তারও পূর্বে ছিল সত্য যুগ, যার সময়কাল ১৭,২৮,০০০ বছর। ত্রেতা যুগে ভগবান রামচন্দ্র রাজত্ব করেছেন। দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাজত্ব করেছেন। কলিযুগে পরবর্তী প্রজন্ম রাজত্ব করছে। সেহিসেবে, মানুষের অস্তিত্ব মাত্র ৩ বা ৪ হাজার বছর থেকে শুরু হয়নি।
একদিন খবরের কাগজে চোখ পড়ল, ইন্দোনোশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বৈজ্ঞানিকগণ একটি মনুষ্য কঙ্কাল আবিষ্কার করেছেন, যা নাকি ১৮,০০০ বছরের পুরোনো। সেই হিসাবে বর্তমান ঐতিহাসিক এবং বৈজ্ঞানিকদের নিকট তা অত্যন্ত চমকপ্রদ খবর, কেননা তাঁরা মনে করেন না যে, ততদিন পূর্বে কোনো মানুষের অস্তিত্ব আদৌ ছিল। অর্থাৎ, মানুষ সৃষ্টি হয়েছে তার অনেক পরে। তাঁরা মনে করেন যে, বড়জোর ৩০০০-৩৫০০ বছর পূর্বে নাকি মানুষ বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াত, তাদের মধ্যে সভ্যতা ছিল না। কালক্রমে পরীক্ষা করে, ধীরে ধীরে মানুষ সমস্ত কিছু আবিষ্কার করে, একইসাথে উন্নত হয়েছে এবং হচ্ছে। তার আগে সভ্য মানুষ ছিল না। যদি পত্রিকার খবরটি সত্য হয় তবে এই বিজ্ঞানীদের সমস্ত হিসাব নতুনভাবে করতে হবে।
বিজ্ঞানীদের এই ধারণা কিন্তু যথার্থ নয়। আমাদের জড় দৃষ্টিভঙ্গিতে, যেভাবে পৃথিবীটিকে দেখতে বা ভাবতে শিখি, বাস্তবে কিন্তু ব্যাপারটি আরো ব্যাপক। আমরা জানি, বর্তমানে আমরা কলিযুগে বাস করছি, এই কলিযুগ শুরু হয়েছে প্রায় ৫,০০০ বছর পূর্বে। কলিযুগ চলবে ৪,৩২,০০০ বছর ধরে। এছাড়াও, তার পূর্বে ছিল দ্বাপর যুগ, যার সময়কাল ছিল ৮,৬৪,০০০ বছর; তার পূর্বে ছিল রামায়ণের যুগ, অর্থাৎ ত্রেতা যুগ, যার সময়কাল ছিল ১২,৯৬,০০০ বছর; তেমনি তারও পূর্বে ছিল সত্য যুগ, যার সময়কাল ১৭,২৮,০০০ বছর। উল্লেখ্য যে, পূর্ববর্তী যুগসমূহের ঐতিহাসিকতা ও সত্যতা প্রমাণিত। যেমন- ত্রেতাযুগে নির্মিত সমুদ্রের খানিকটা গভীরে ভাসমান রামসেতুর চিত্র নাসার বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে আবিষ্কার করেছেন; ভারতের রামেশ্বর থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত সেতুটির অবয়ব স্যাটেলাইট থেকে নেয়া চিত্রে স্পষ্ট দৃশ্যমান (গুগল আর্থে সার্চ করুন)। এছাড়া, রাবণ যেখানে সীতাকে রেখেছিল সেই অশোক বাটিকা, হনুমানের লেজের অগ্নিতে দগ্ধ লঙ্কাপুরী, সুগ্রীব হা প্রভৃতি নিদর্শন এখনো বিদ্যমান। আবার, দ্বাপরযুগে বিশ্বকর্মা কর্তৃক নির্মিত শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী যা তাঁর অন্তর্ধানের পরই সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়, তাও ইতোমধ্যেই আবিষ্কৃত হয়েছে।
আর মথুরা এবং বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান, গোবর্ধন, নন্দগ্রাম প্রভৃতি স্থান এখনো শ্রীকৃষ্ণের লীলাভূমি হিসেবে পূজিত, কীর্তিত তাঁর গুণগাথা। এমনকি সত্যযুগে আবির্ভূত ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের আবির্ভাব স্থান অহবিলাও এখনো বিদ্যমান। সুতরাং মানুষের অস্তিত্ব যে কবে থেকে, তা সাধারণ মানুষের ধারণার অতীত।
ত্রেতা যুগে ভগবান রামচন্দ্র রাজত্ব করেছেন; দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাজত্ব করেছেন, কলিযুগে পরবর্তী প্রজন্ম রাজত্ব করছে। সে হিসাবে, মানুষের অস্তিত্ব কেবলমাত্র ৩ বা ৪ হাজার বছর থেকে শুরু হয়নি। শুধু তাই নয়, এই সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলিযুগ পর্যায়ক্রমে আসছে এবং যাচ্ছে, ঠিক যেমন ‘বারো মাস সাত বার, আসে যায় বার বার’ তেমনই এটাই যে প্রথম কলিযুগ, তা নয়। এটাই যে প্রথম বার জগতের সৃষ্টি হয়েছে তা নয়। এই সৃষ্টি সাধিত হয়, কিছুকাল থাকে, শেষে লয় প্রাপ্ত হয়। এভাবে সৃষ্টি স্থিতি ও লয় হয়ে চলেছে। আজকের ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিকগণ তাঁদের মনঃকল্পিত ধারণা যেমন, মানুষকেও তেমনই বোঝাতে চান। বাস্তবে কিন্তু জগতের অস্তিত্ব এক সময় থাকে, আবার লয় প্রাপ্ত হয়, এভাবে অনাদিকাল ধরে চলছে। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি তারও পূর্বে কোনো মানুষের অস্তিত্বের প্রমাণ দেনও, বর্তমানের তথাকথিত বিজ্ঞানীদের পক্ষে সেই তথ্য মেনে নেওয়া কঠিন হতে পারে। কারণ, তারা নিজেদের ধারণাটিকেই সবকিছু বলে মনে করেন। এ ব্যাপারে আমাদের অর্থাৎ ইস্কনের বৈজ্ঞানিকগণ গবেষণা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই ‘হিডেন হিস্ট্রি অব ম্যানকাইন্ড’ নামে একখানি বৃহৎ গ্রন্থ আমাদের বিজ্ঞানী সদাপৃত দাস এবং রিচার্ড টমসন প্রকাশ করেছেন, তাতে তাঁরা উদ্ধৃত করেছেন বহুকাল পূর্বের মানুষের অস্তিত্বের বহু প্রমাণ।
সুতরাং মানুষের অস্তিত্ব কেবলই তিন-চার হাজার বছর কেন, তিন বা চার কোটি বছর পূর্বেও ছিল, আছে ও থাকবে। আমরা যে জ্ঞান নিয়ে চলছি অর্থাৎ বেদের জ্ঞান, তা ভগবৎ প্রদত্ত; সেই জ্ঞান প্রলয়কালে ভগবান সংরক্ষিত করেন এবং পরবর্তী সৃষ্টির সময় পুনরায় তা প্রদান করেন। সেক্ষেত্রে জল্পনা-কল্পনা করার কোনো অবকাশ থাকে না। মানুষ চিরকাল ছিল, আছে, থাকবে।