মানবের ভুল

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২১ | ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২১ জুন ২০২১ | ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 259 বার দেখা হয়েছে

মানবের ভুল
(১৭ জুলাই, ২০১৪, মালয়েশিয়ার একটি বিমান আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাওয়ার পথে ইউক্রেনে বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৯৫ যাত্রী ও ১৫ জন ক্রুর সবাই নিহত হয়েছে। তথ্য মতে ভয়ংকর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার তালিকায় এটি অষ্টম স্থানে রয়েছে।
১৯৯৫ সালের দিকে বিশ্বে এরকম একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল এবং বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাক টু গড়হেডে একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়। এখানে সমসাময়িক বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে বিচার বিশ্লেষনের জন্য সেই প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনটির বঙ্গানুবাদ তুলে ধরা হল।)

কালাকান্ত দাস

সাম্প্রতিক এক বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন ‘মানবের ভুল’ হল এর সম্ভাব্য কারণ। এক্ষেত্রে তারা বনমানব ছিল না যারা এর ডিজাইন, তৈরি, উড্ডয়ন থেকে শুরু করে যাবতীয় সেবা সম্পাদন করেছিল। এর অর্থ এটি সুস্পষ্ট যে, মানুষের মাধ্যমেই এ বিপর্যয়টি সম্পাদিত হয়। তবে কারা এর জন্য দায়ী এবং তারা কিই বা ভুল করল?
সংবাদ পত্রগুলোতে এই বিমান দুর্ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে এরকম কিছু মর্মান্তিক ঘটনা তুলে ধরে- এক কনিষ্ঠ মাতা ও তার ছোট ছোট সন্তানরা তাদের পিতার জন্য প্রতীক্ষা করেছিল। সেই পিতা বিমান বন্দরে তাদের সঙ্গে দেখা করতে উদগ্রীব…. এক কিশোরী কিছু পোষ্য প্রাণীসহ তার পিতা মাতাদের বিষন্ন রেখে প্রথম বিমান ভ্রমণে গিয়েছে……., এক সুখি পরিবার ছুটি কাটিয়ে ঐ বিমানে করে আসছিলেন.. স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়টি শেষপর্যন্ত মর্গে রূপ নিল।
কর্মকর্তারা এ নিয়ে তদন্ত করল এবং আশাবাদ ব্যক্ত করল দুর্ঘটনা থেকে ভবিষ্যতে নতুন কোনো দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য শিক্ষা লাভ করেছে। এর মাধ্যমে বলা যায় মৃত ব্যক্তি প্রযুক্তির মাধ্যমে শহীদ হলো। কিন্তু তবুও অনেক শোকাতুর ব্যক্তি এই অমানবীয় ভুলের জন্য ভগবানকে দায়ী করতে পারে। যদি একজন সর্বশক্তিমান, সর্ব মঙ্গলময় ভগবান থেকে থাকে, তবে কিভাবে এ ধরনের দুঃখদুর্দশা ঘটতে পারে?
একজন জনপ্রিয় ধর্মতত্ত্ববিদ ব্যাখ্যা করেছিলেন, যখন ভাল মানুষের জন্য অশুভ কোনো কিছু ঘটে তবে সেটি ভগবানের অভিপ্রায় নয়, এটি ভগবানের ভুলে ঘটেছে। এজন্য একজন প্রকৃত বিশ্বাসী ভগবানকে তার এই সামান্য ভুলের (lapse) জন্য ক্ষমা করে দেয়। ভুল করা স্বর্গীয়, ক্ষমা করা হল মানবীয় ।
এক্ষেত্রে একজন কৃষ্ণভক্ত অবগত যে, ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ সমস্ত ভ্রান্তি, অপূর্ণতা, কলুষতা ও কপটতার উর্ধ্বে। একজন ভক্ত জানেন যে, এখানে মানুষ কোনো ভাল নেই এবং কারোরই মন্দ কিছু ঘটে না, কেন?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন যে, সমস্ত জীব কলুষতার মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কামনা বাসনা ও ঘৃণার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে। তিনি (ভগবান) এই জন্ম মৃত্যুর জগতে কারোরই দুঃখ দুর্দশার কারণ নয়। এমনকি তিনি দুঃখ দুদশার জন্যেও এই জড়জগৎ সৃষ্টি করেননি। এ জড়জগৎ সৃষ্টি হয়েছে ভগবানের অবিচ্ছেদ্য জীবদের কৃষ্ণবিহীন জীবন উপভোগের জন্য এবং এর পরিসমাপ্তি ঘটে আমাদের নিজেদেরই কর্ম থেকে উত্থিত দুঃখ দুর্দশার মাধ্যমে।
মানবের ভুল হল, সে কৃষ্ণকে ভুলে গেছে এবং মানবের চরম দুঃখ দুর্দশা হল তারা ভগবদ্ধামের বিমান মিস্ করছে।
তাঁর অপরিসীম করুণায়, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়ার সুযোগটি সুলভ করে দিয়েছেন। এজন্যে আমাদের সবার প্রয়োজন তাঁর পবিত্র নাম জপ করা। যদি আমরা হরিনাম জপ অনুশীলন করি তবে মৃত্যুর সময় আমরা কৃষ্ণকে স্মরণ করতে পারব। তখন আমরা নিজ আত্মারা জন্ম মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে তাঁর কাছে ফিরে যেতে পারব। ধরুন, আপনি সেই বিমানে ছিলেন। ওপরে বিমানটি যখন উড়ছিল আপনি বসে বসে সবকিছু উপভোগ করছিলেন, আপনি নিজেকে সিটের নিরাপদ বেল্টে আটকে রাখলেন। কোনো ধূমপান নেই, আপনার মালপত্রগুলো বেশ নিরাপদেই রাখা আছে। তারপর একটি প্রকাণ্ড শব্দ বিমানের কিছু একটা ভেঙ্গে গেছে।
বিমানটি তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল । বিমানের পরিচারকরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল। আপনার বেঁচে থাকার সময়কাল আর মাত্র ৩০ সেকেন্ড ।
আপনি বুঝতে পারলেন এই ৩০ সেকেন্ড খুব বেশি না, কিন্তু এটুকু সময়ই অনেক, যেটি অনেকে পায় না।
আপনার তখনই মনে পড়ে গেল মহারাজ পরীক্ষিতের কথা, যিনি সাত দিন ধরে ভাগবত কথা শ্রবণ করেছিলেন, আর তৎক্ষণাৎ সবকিছু ছেড়ে আপনি এখন জানেন যে, আর মাত্র ১৫ সেকেন্ড বাকি। আপনার চারপাশের যাত্রীরা হাউমাউ করে চিৎকার করছে, তারা নিজেরাই জানেনা তারা কি করছে। এভাবে আপনি যদি কৃষ্ণভাবনাময় হোন তবে এরকম বিপদের জন্য ন সর্বদা প্রস্তুত থাকবেন। তবে আপনি প্রস্তুত আছেন কি?


 

ত্রৈমাসিক ব্যাক টু গডহেড, অক্টোবর – ডিসেম্বর ২০১৪

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।