এই পোস্টটি 222 বার দেখা হয়েছে

ভক্তিবেদান্ত ইনস্টিটিউট (ইউ.এস.এ):
ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকার মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ সম্প্রতি সূর্যকে জানতে একটি স্যাটেলাইট (সোলার প্রোব) প্রেরণ করেছেন বলে দাবি করেছেন। নাসার এই সম্পর্কিত গবেষক টিম এটিকে একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তাদের মতানুসারে এর মাধ্যমে খুব সম্ভবতো সূর্যের রহস্যভেদ করা সক্ষম হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- নাসার দাবী অনুযায়ী তাদের প্রেরিত স্যাটেলাইটটি যদি আমাদের বৈদিক সূর্যদেবতার রথের সাথে তুলনীয় হলে সেটিকে আমরা কীভাবে গ্রহণ করতে পারি? বিষয়টি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানানোর এটি একটি যুক্তিসংগত সময়। বৈদিক শাস্ত্রে বিশেষ করে গীতা, ভাগবত এবং চৈতন্য চরিতামৃত আদি প্রমুখ গ্রন্থে সম্পূর্ণভাবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে এতদ্ সম্পর্কে আলোচনা আছে। যাঁর কোন কিছুই নতুন বা সংযোজিত কিংবা সংশোধিত নয় বরং সব কিছুই প্রায়োগিকভাবে সত্য প্রমাণিত। যদিও উপলদ্ধির আদর্শ মান অনুসারে ভৌতিক মহাজগৎ সম্পর্কে মানুষের (এমনকি বিজ্ঞানীদেরও) খুবই সীমিত জ্ঞান ও উপলদ্ধি রয়েছে। অবশ্যই বৈজ্ঞানিক উপকরণাদি তর্কযোগ্যভাবে সেই সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে প্রসারিত।
ইতিমধ্যে, গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা উপলদ্ধি করেছেন ভৌতিক মহাজগতের যেই অত্যাশ্চর্য বিস্ময়কর উপলদ্ধি আমাদের নিকট মহাবিস্ময়কর বলে প্রতিভাত হয়, সেটি হলো পরমপুরুষ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরই অচিন্ত্য শক্তি। এ সম্পর্কে পরম ভাগবত শ্রীল শুকদেব গোস্বামীও খুবই স্পষ্টভাবে বলেছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বৈষয়িক শক্তির সম্পূর্ণ জটিলতা কেউ বলতে পারে না, এমনকি এ মহাবিমশ্বের প্রধান প্রকৌশলী (যিনি শ্রীকৃষ্ণকতৃর্ক দিব্য ১০০বছরের জন্য নিযুক্ত) ভগবান ব্রহ্মাও সেই অচিন্ত্য বিস্ময় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে জানেন না। সূর্যের সৃষ্টি সর্ম্পকে শুরদেব গোস্বামী বলেন- “এইভাবে সব কিছু যখন অন্ধকারে ছিল, ভগবান তখন নিজেকে এবং যা কিছু তিনি সৃষ্টি করেছিলেন সেই সব কিছু দর্শন করতে ইচ্ছা করেছিলেন। তখন চক্ষু, আলোকের দেবতা সূর্য, দৃষ্টিশক্তি এবং দৃশ্য বস্তুসমূহ সব কিছু প্রকট হয়েছিল।” ভা-২/১০/২১ গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন “সূর্যের যে জ্যোতি এবং চন্দ্র ও অগ্নির যে জ্যোতি সমগ্র জগতকে উদ্ভাসিত করে, তা আমারই তেজ বলে জানবে।” গীতা-১৫/১২ মহর্ষি মৈত্রেয় বলেন- “প্রভাবশালী নক্ষত্র, গ্রহ, জ্যোতিষ্ক এবং পরমাণু সমগ্র বিশ্বে পরমেশ্বর ভগবানের নির্দেশনায় তাঁর প্রতিনিধি শাশ্বত কালের প্রভাবে তাদের স্বীয় কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে। আকাশে সূর্য, বৃহস্পতি, চন্দ্র, নক্ষত্র ও জ্যোতিষ্কের পাঁচটি কক্ষের বিভিন্ন নাম রয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের স্ব-স্ব সংবৎসর রয়েছে।” ভা-৩/১১/১৩-১৪ ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৫২) সেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিপন্ন করে বলা হয়েছে-“আমি আদি পুরুষ পরমেশ্বর ভগবান গোবিন্দের ভজনা করি, যাকে ভগবানের চক্ষু বলে মনে করা হয়, সেই সূর্য পর্যন্ত যাঁর নিয়ন্ত্রণে শাশ্বত কালের নির্দিষ্ট চক্রে আবর্তিত হচ্ছে। সূর্য সমস্ত গ্রহের রাজা এবং তাপ ও আলোক বিতরণে তার শক্তি অসীম।” মৈত্রেয় মুনি আরো (ভা: ৩/১১/১৫) বলেন-“হে বিদুর! সূর্য তাঁর অসীম তাপ এবং আলোকের দ্বারা সমস্ত জীবদের প্রাণবন্ত করেন। তিনি সমস্ত জীবের আয়ু ক্ষয় করেন যাতে তারা মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে এবং তিনি স্বর্গে উন্নীত হওয়ার পথ প্রশস্ত করেন। এভাবে তিনি প্রচণ্ড গতিতে মহাকাশে পরিভ্রমণ করেন এবং তাই সকলের কর্তব্য হচ্ছে প্রতি পাঁচ বছরে একবার পূজার বহুবিধ নৈবেদ্য সহকারে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা।” সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, বিজ্ঞানীদের তথাকথিত উপলদ্ধি হচ্ছে মানসিক জল্পনা-কল্পনা মাত্র। যদিও তারা মূর্খের মতো ‘সম্ভবত এমনটি হতে পারে’ বলে অনুমান করে। এমনকি কিছু বিজ্ঞানী বর্তমান সময়ে ‘সম্ভবত এমনটি হতে পারে’ জেনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারেন। আবার কিছু বিজ্ঞানী ভবিষ্যতে জানতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে বলে ধরে নিয়ে বামন হয়ে যান। সেই আলোকে, ভবিষ্যতে ‘এমনটি হতে পারে’ এর তুলনায় আজকের ‘এমনটি হতে পারে’ নিয়ে গর্ব করার মতো কিছু নেই। কাজেই বর্তমান সময়ের ‘সোলার প্লোব’ থেকে উপকারী জ্ঞান পাওয়ার আশা করা হলেও, আরো কত ‘এমনটি হতে পারে’ তা সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন যে কারোরই ভালো অনুমেয়।