ভোট কাকে দেব?

প্রকাশ: ১ জুলাই ২০২৪ | ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২ জুলাই ২০২৪ | ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 70 বার দেখা হয়েছে

ভোট কাকে দেব?

নির্বাচনে যথার্থ ভোটার হয়ে যথার্থ প্রতিনিধি নির্বাচনের পন্থাগুলো কী কী?
রাঘব কীর্তন দাস


শাসন ব্যবস্থার আধুনিকতম রূপ হচ্ছে গণতন্ত্র। একনায়কতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মীয়শাসনতন্ত্র প্রভৃতি বিবর্তনের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে বিশ্বের ১৯২টি দেশের মধ্যে ১২৩টি দেশই এখন গণতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হচ্ছে জনগণের রায় অর্থাৎ ভোট প্রদানের মাধ্যমে সরকার গঠন করা। আশা করা হয় যে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সাধারণ জনগণ একনায়কতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারিতা, সমাজতন্ত্রের কট্টরতা বা তথাকথিত ধর্মীয় শাসনতন্ত্রের গোঁড়ামি থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু আমরা কি গণতন্ত্রের সেই সুফল পাচ্ছি? প্রত্যেকের সামনে বর্তমানে একটি প্রশ্ন ব্যাপক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর তা হল “কাকে ভোট দিব?” এমতাবস্তায়, প্রচলিত গণতন্ত্রের তথাকথিত ভোট ব্যবস্থাপনা আদৌ কি আমাদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিচ্ছে? চলুন, আমরা বর্তমানে সমগ্রবিশ্বে চলমান গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নমুনা দেখি–

১। ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী রাখার প্রবণতা: একবার ক্ষমতায় যাবার পর প্রত্যেক রাজনৈতিক দল বা
নেতার ইচ্ছা থাকে এ ক্ষমতা যেন চিরস্থায়ী করা যায়। এজন্য বিভিন্ন কলাকৌশল তারা অনুসরণ করে। বিশেষত অবৈধ উপায়ে বিরুদ্ধবাদীদের দমন পীড়ন করা। বৈদিক ইতিহাসেও এর বহু নজির রয়েছে। তন্মধ্যে মহাভারতে উল্লেখিত ধৃতরাষ্ট্র বা দুর্যোধন চরিত্র অন্যতম। দুর্যোধন ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী রাখার জন্য, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ (যেমন: ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচার্য, বিদুর) সত্ত্বেও পিতার ক্ষমতা, শকুনির কুটনীতি এবং কর্ণের রণকৌশল আদিকে আশ্রয় করে ভগবানের মহান ভক্ত যুধিষ্টির, অর্জুনাদি সকল পঞ্চপাণ্ডবদের বিভিন্ন উপায়ে হত্যা করার প্রচেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুর্যোধনের এহেন দুষ্কৃতিমূলক কার্যের জন্য মহারাজ যুধিষ্টির কোন প্রতিশোধের ব্যবস্থা না করে সহ্য করেন। আবার ভগবানের আদেশে মিথ্যাকে পরাজিত করার জন্য যুদ্ধেও লিপ্ত হন। তাই একজন আর্দশ নেতা সর্বদাই ভগবানের ইচ্ছানুসারে, তাঁর শিক্ষানুসারে নিজেকে পরিচালিত করেন। বর্তমান সমাজে দুর্যোধনের মত নেতা সবত্র বিরাজিত কিন্তু আমাদের প্রয়োজন যুধিষ্টিরের মত নেতা।

২ । অবৈধ কার্যকলাপ: ভগবদ্গীতায় (৩/২১) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যেভাবে আচরণ করেন, সাধারণ মানুষেরা তার অনুকরণ করে।” সরকার প্রধান বা রাজনৈতিক নেতারা সমাজে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরূপে স্বীকৃত। কিন্তু এখন তারা বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রম যেমন গণহত্যা, মদ্যপান, অবৈধ স্ত্রীসঙ্গ, জুয়াখেলা, ট্রেন্ডারবাজি, অস্ত্র ব্যবসা প্রভৃতিতে যুক্ত থাকে। কখনো তা প্রকাশিত হয়, কখনো বা পর্দার আড়ালেই থেকে যায়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষেরা বছরে ১৫০০ কোটি ডলার ঘুষ প্রদান করে যা বৈশ্বিক জিডিপি’র ২%। এই অবৈধ অর্থের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সমস্ত অবৈধ কার্যক্রম। কিন্তু এইসব অবৈধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রনে রাখা প্রতিটি দেশের সরকারের কর্তব্য হলেও তাদের পক্ষে তা করা সম্ভব নয় কারণ তারা নিজেরাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই কর্মকাণ্ডে যুক্ত।
১। অর্থ বা সম্পত্তি আত্মসাৎ : ইনডিপেন্ডেন্ট নিউজের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে রাজনৈতিক নেতা এবং সন্ত্রাসীরা প্রতি বছর ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশী অর্থ বিশ্বের এমনকি দরিদ্রতম দেশগুলো থেকেও আত্মসাৎ করে থাকে। এই তথ্যটি শোনার সাথে সাথে সবার মনে হতে পারে এই সমস্যাটি শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই আছে বা দরিদ্র দেশগুলোতে ঘটে থাকে। কিন্তু না! বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোতেও এই সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে যদিও তা সংবাদের পাতায় আসে না বা পরিসংখ্যানে খুঁজে পাওয়া যায় না। বৈদিক ইতিহাসেও দেখা যায়, কংস, জরাসন্ধ, হিরণ্যকশিপু, কার্তবীর্যাজুন, রাবণাদি অত্যাচারী শাসকগণ ব্রাহ্মণ, প্রজা, দেবতাসহ দুর্বল রাজাদের সম্পদ আত্মসাৎ করেছিলেন। কিন্তু অন্যদিকে আমরা মহারাজ শিবির কথা জানি যিনি শরণাগতকে রক্ষার জন্য নিজের দেহের মাংস কেটে ছিলেন। মহারাজ শিবির মত জনদরদী নেতা বা শাসক আমাদের দরকার।

গোঁড়ায় গলদের অনুসন্ধান

ক) যথার্থ প্রশিক্ষণের অভাব: রাজতন্ত্রের অধীনে রাজপুত্রকে শৈশব থেকে যথার্থ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ রাজা হবার যোগ্য করে তোলা হত। শুধুমাত্র রাজার পুত্র হবার ফলেই যে তারা রাজা হত তাই নয়। বরং রাজা বা যথার্থ ক্ষত্রিয়ের গুণাবলী তারা গুরুগৃহে যথার্থ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করত। কিন্তু ক্ষত্রিয়ের বা রাজার কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন? কেবল কিছু ভোট পেলে বা টাকা ছড়ালেই রাজ্যপ্রধান হওয়া যায়? ভগবদ্গীতায় (১৮/৪৩) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “শৌর্য, তেজ, ধৈর্য্য, দক্ষতা, যুদ্ধে অপলায়ন, দান ও শাসন ক্ষমতা এগুলি ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম।”
বর্তমানে রাষ্ট্রপ্রধানদের অনেকের মধ্যে এসব গুণাবলী নেই বললেই চলে। জনগণের প্রকৃত কল্যাণের বদলে শুধুমাত্র নিছক আস্ফালনই এদের কর্ম। এই জন্যই সমাজে শান্তির বদলে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা। তাই আদর্শ নেতা হবেন তিনি যাঁর রয়েছে নেতৃত্ব প্রদানের প্রশিক্ষণ ও মানবিক গুণাবলীর সমন্বয়।

খ) যথার্থ উপদেষ্টার অভাব: উপকূলের দুটি তীরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ফলে নদীর জল সমস্ত জগতের কল্যাণসাধন করতে পারে। কিন্তু সেই জল যদি বন্যা জলের মত অনিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রবাহিত হয় তবে তা জনসাধারণের জন্য কেবল দূর্ভোগই বয়ে আনে। একই ভাবে ক্ষত্রিয় বা রাজাকে নিয়ন্ত্রিত রাখার জন্য রাজসভায় অনেক ব্রাহ্মণ এবং জ্ঞানীগুণী ভগদ্ভক্তরা উপদেষ্টা হিসেবে থাকতেন। রাজা যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে সেই উপদেষ্টামণ্ডলির শরণাগত হতেন। এই সমস্ত উপদেষ্টারা কোনরূপ পারিশ্রমিক ছাড়াই সেবা প্রদান করতেন এবং তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কেবল রাজ্যের মঙ্গল বিধান করা। তাই তাদের দ্বারা পরিশোধিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ফলে রাজ্য হত সমৃদ্ধ।
সেই বৈদিক ধারার অনুকরণে এখনো প্রতিটি সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী রয়েছে। কিন্তু সরকারের অর্থ দ্বারা পরিপুষ্ট বেশিরভাগ উপদেষ্টারা এখন কেবল চাটুকার বৃত্তিতেই যুক্ত থাকেন। তাই রাজনৈতিক নেতারা কোন ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও তারা এর কোন প্রতিবাদ করেন না বরং তোষামোদে ব্যস্ত থাকে। তাই একের পর এক অনিয়ন্ত্রিত এবং খামখেয়ালী সিদ্ধান্তের বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছে বিশ্ববাসী। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হল দুটি বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি, দেশে দেশে বোমা হামলা প্রভৃতি।
গ) প্রকৃত রাজর্ষির অভাব: বৈদিক সমাজে রাজারা শুধু রাষ্ট্রের পরিচালনাকারীই ছিলেন না বরং ঋষির মত নিয়ন্ত্রিত ইন্দ্রিয়সম্পন্ন ছিলেন তাই তাদের রাজর্ষি বলা হত। প্রকৃতপক্ষে তিনিই সারা পৃথিবীতে শাসন করতে পারেন যিনি তার ইন্দ্রিয়ের বেগসমূহকে একজন ঋষির মত নিয়ন্ত্রিত করতে পারেন। উপদেশামৃতে (শ্লোক- ১) শ্রীল রূপ গোস্বামী বলেছেন, “যে সংযমী ব্যক্তি বাক্যের বেগ, ক্রোধের বেগ, জিহ্বার বেগ, মনের বেগ, উদর ও উপস্থের বেগ এই ষড়বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ, তিনি সমগ্র পৃথিবী শাসন করতে পারেন।”
বর্তমানে নেতা বা শাসক হওয়ার ধরণ ভিন্ন। সবাই শুধু অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কিন্তু নিজেকে বা নিজের ইন্দ্রিয় গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। সেই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র একবার বলেছিলেন, “আমরা এখন এমন একটি যুগে বাস করছি যেখানে মিসাইল বা অস্ত্রসমূহ নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু মিসাইল পরিচালনাকারী মানুষগুলো অনিয়ন্ত্রিত।” কোন নেতা যদি তার ইন্দ্রিয়সমূহকে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা গ্রহণ না করেন তবে তিনি অসদগুণাবলীসমূহ বিকশিত করেন, যাঁর ফলাফলস্বরূপ জনগণকে হতে হয় শোষণের শিকার।
ঘ) ভোটারদের অযোগ্যতা: গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে জনগণের সরকার (Government of the people, by the people and for the people) তাই জনগণ যা চাই, সরকারও রাজত্বে থাকার জন্য সেটিই পূরণ করার চেষ্টা করে। বর্তমানে শতকরা ৯৯ ভাগ লোকই ধর্মীয় অনুশাসন পালন করতে চায় না, তাই সরকার ও ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধেই আইন তৈরী করে তাকে বৈধ করছে। ২০০০ সালে প্রথমবারের মত নেদারল্যান্ড, সমলিঙ্গ বিবাহ অনুমোদন করে। এরূপ আরো ২৪টি দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও অন্যান্য দেশে এটি অনুমোদন পায় যা প্রত্যেকটি ধর্মেই নিষিদ্ধ। কিন্তু যেহেতু জনগণ চায় তাই সরকারও তা অনুমোদন করে। এভাবে একে একে মাদক ব্যবসা, বেশ্যাবৃত্তি, জুয়াখেলা, বিবাহ ছাড়াই স্ত্রী- পুরুষ একসাথে থাকা, কসাইখানায় পশুদের নির্মম হত্যা আইনের দ্বারা অনুমোদিত হচ্ছে কারণ বেশীর ভাগ মানুষ সেটি চায়। তাই সাধারণ মানুষেরা যতক্ষণ পর্যন্ত যথার্থ ধর্মীয় অনুশাসনে প্রশিক্ষিত না হচ্ছে ততক্ষণ যথার্থ শাসক আমরা আশা করতে পারি না।
ঙ) ভগবান রামচন্দ্র ব্যতীত রামরাজ্য: ভারতবর্ষে সবার কাছে আদর্শ রাজ্যশাসনের দৃষ্টান্তরূপে রামরাজ্য খুব প্রসিদ্ধ। ভগবান রামচন্দ্রের শাসনামলে পৃথিবীর সর্বত্র সুখ এবং শান্তি বিরাজ করছিল। ঠিকসময়ে বৃষ্টিপাত হত, ঋতু পরিবর্তন হত, ব্যাপক ফসল উৎপাদন হত, দস্যুর ভয় ছিল না, সর্বদিক দিয়ে একটি নিয়ন্ত্রিত এবং সমৃদ্ধ জনপদ বিরাজ করছিল। আধুনিক মানুষ এই ধরনের একটি রাজ্য আশা করে কিন্তু ভগবান রামচন্দ্রকে কেউ চায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ভগবানকে কেন্দ্রে রেখে জীবনধারণ না করছি, ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি লাভের আশা কেবল আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ শ্রীমদ্ভাগবতের (২/৭/২২) তাৎপর্যে বর্ণনা করেন- “প্রতিটি রাষ্ট্র এবং তার শাসক বর্গের শাসন ব্যবস্থা নির্বিশেষে, তা রাজতন্ত্র হোক বা গণতন্ত্র হোক অথবা যৌথ শাসন বা একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র হোক, প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে প্রজাদের ভগবৎ উপলব্ধির পথে পরিচালিত করা। এটি মানুষের পক্ষে অপরিহার্য-পিতা, গুরু এবং চরমে রাষ্ট্রের কর্তব্য হচ্ছে এই উদ্দেশ্য সাধনের পথে পজাদের পরিচালিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করা। সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই, পরম পিতা পরমেশ র ভগবানের বিরুদ্ধাচরণ করে যে সমস্ত জীব অধঃপতিত হয়েছে, তাদের পুনরায় চিৎ-জগতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ – দেওয়ার জন্যই এই জড় জগৎ সৃষ্টি হয়েছে।” ভগবান যেহেতু পূর্ণ, তাই তাঁর সেবা করা হলে তাঁর বিভিন্ন অংশ জীবদেরও সেবা হয়ে যায়। তাই ভগবকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা তথা শাসন ব্যবস্থা প্রচলন করলে সকলের মঙ্গল বিধান হয়।

সিদ্ধান্ত সার:

শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীমদ্ভাগবতের (৪.৯.৬৬) তাৎপর্যে সিদ্ধান্ত প্রকাশ করছেন-
“ধ্রুব মহারাজের মতো বৈষ্ণব রাজা যখন সারা পৃথিবীর নেতৃত্ব দেন, তখন পৃথিবী যে কত সুখী হয়, তা কল্পনা করা যায় না অথবা বর্ণনা করা যায় না। এখনও যদি মানুষ কৃষ্ণভক্তে পরিণত হয়, তাহলে আধুনিক যুগের গণতান্ত্রিক সরকার ঠিক স্বর্গরাজ্যের মতো হয়ে উঠবে। সমস্ত মানুষেরা যদি কৃষ্ণভক্তে পরিণত হয়, তাহলে তারা ধ্রুব মহারাজের মতো ব্যক্তিকে ভোট দেবেন। যদি এই প্রকার বৈষ্ণব নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে আসুরিক সরকারের সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।”
অতীত ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তে কিংবা সমস্ত ধর্মেই যে সমস্ত উত্তম শাসক ছিলেন তারা সকলেই ছিলেন ভগবদ্ভক্ত বা সৃষ্টিকর্তার শরণাগত ও দিব্যগুণাবলীর অধিকারী।
বতর্মান প্রেক্ষাপট অনুসারে ভোট প্রদান করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বৈদিক শাস্ত্র আমাদের কোন্ সরকার বা নেতা নির্বাচন পদ্ধতি যেমন- গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ইত্যাদি নির্দেশ করে না। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে আমরা কি ধরণের নেতা নির্বাচন করব? এই প্রশ্নের উত্তরে বৈদিক শাস্ত্র নির্দেশ দেয়, আমাদের ভগবচেতনাময় দিব্যগুণাবলী সম্পন্ন নেতা নির্বাচন করতে হবে। সেই হোক গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র পরিবারতন্ত্র কিংবা ধর্মীয় শাসনতন্ত্র তাতে কিছু যাই আসে না।
তাহলে প্রশ্ন হতে পারে উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভগবদ্‌চেতনাময় দিব্য গুণাবলী সম্পন্ন নেতা আমরা পাব কোথায়? এটি ঠিক যে এই প্রকারের নেতা হয়তোবা আমাদের নাগালের বাইরে। এমন নেতা হয়তো পাওয়া যাবেই না। তাই আমরা যদি এখন থেকে ভগবদ্ অনুশীলনে যুক্ত হয়ে এই দিব্য গুণাবলীসমূহ বিকশিত করার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা একটি নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর অভূতপূর্ব দিব্য গুণাবলীসম্পন্ন ভবিষ্যত প্রজন্ম লাভ করব, যারা আমাদের আর্দশ নেতার অভাব পূরণ করবে।
লেখক পরিচিতি: রাঘব কীর্তন দাস বি.বি.এ, এম.বি.এ (চ.বি) ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার, প্রিমিয়ার ব্যাংক। তিনি চট্টগ্রাম ইস্‌কন ইয়ুথ ফোরামের সাথে কৃষ্ণভাবামৃত প্রচারের সেবায় যুক্ত। বিশেষত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করছেন।


 

ব্যাক টু গডহেড অক্টোবর – ডিসেম্বর ২০১৮ হতে প্রকাশিত

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।