এই পোস্টটি 67 বার দেখা হয়েছে
অসুখ-বিসুখে কষ্ট পায়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিলই বটে! কেননা অসুখ-বিসুখের উপদ্রব যে কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে তা বর্তমানে হাসপাতাল এবং ফার্মেসীর পর ফার্মেসী গড়ে উঠা থেকেই বোঝা যায়। আজ থেকে কিছু বছর আগে ও পরের তফাৎটা তখন স্পষ্ট হয়ে উঠে। তার মানে এই যে, বর্তমানে সবাই কোন না কোন ছোট বড় অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছেই। তবে এমন কিছু শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে যা আপনি নিজে নিজেই চিকিৎসা করতে পারেন। শ্রীল প্রভুপাদের ও ভক্তদের অসুস্থতা নিয়ে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যা সত্যিই অন্যরকম। তাই এবারের ভিন্ন সাধের খবরে সেরকম কিছু তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
ব্রণ সমস্যা: শ্রীল প্রভুপাদের একজন শিষ্য মধুসূদন একটি ঘটনা বলেছিলেন।
মধুসূদন: ১৮ বছর বয়সে আমার ব্রন হয়েছিল, শ্রীল প্রভুপাদ আমায় জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার মুখে কী হয়েছে?” আমি বললাম, “ফুস্কুড়ি হয়েছে, প্রভুপাদ।” তিনি বললেন, “ওগুলোর মাথায় মাথায় একটু করে তিলক মাটি লাগাবে।” তখন এ রকম ফোঁটা ফোঁটা দাগ নিয়ে রাস্তায় বেরোতে আমার ভীষণ লজ্জা বোধ হচ্ছিল। পরের বারে দেখা হলে তিনি আবার ব্রণ দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, আর জানতে চাইলেন, আমি তিলক ব্যবহার করছিনা কেন? ” আমি বললাম,” ঐ অবস্থায় রাস্তায় চলা আমার পক্ষে…” তিনি বললেন, “অল্প একটু অলিভ তেল নেবে আর অল্প পরিমাণে তাতে বোরিক অ্যাসিড মিশিয়ে একটি চামচে করে আগুনে গরম করবে। সেই মলম লাগাবে।” ঠিক তাই, সেটি দেখতে ঠিক অন্যান্য মলমের মতোই হল। এইভাবে তিনি ব্যক্তিগতভাবেও যত্নপরায়ণ ছিলেন।
স্বরভঙ্গ: তমাল কৃষ্ণ মহারাজ (শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্য) এ সমস্যা নিয়ে প্রভুপাদের – সাথে আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।
তমালকৃষ্ণ গোস্বামী: আমরা যখন ঋষিকেশে গিয়েছিলেন, তখন শ্রীল প্রভুপাদ ছিলেন অসুস্থ। আমরা যে বাড়িটায় ছিলাম, তার পাশেই গঙ্গানদী, তাই বাড়ীটির নাম ছিল ‘গঙ্গাদর্শন।’ প্রভুপাদকে নবযোগেন্দ্র স্বামী বুঝিয়েছিল যে, “আপনি ওখানকার গঙ্গাজল পান করলে আপনার শরীর ভাল হয়ে যাবে।” ওখানে পৌঁছেই শ্রীল প্রভুপাদ মালিশ নিলেন, আর বললেন, “গঙ্গাজল নিয়ে এস।” আমি তখন গামছা পড়ে একটা লোটা নিয়ে গিয়ে তিনতলা থেকে গঙ্গায় লাফ দিলাম। সাঁতরে লোটায় জল ভর্তি করলাম। তিনি এক গ্লাস জল পান করে ঢেকুর তুললেন। প্রভুপাদ বললেন, ‘আঃ ভেতরে গেছে,’ বলে, খুশী হয়ে মৃদু হাসলেন। তারপরেই তিনি আদেশ করলেন, “যাও, কিছু কচুরী আর জিলেপী নিয়ে এস।” ঋষিকেশের একটি দোকান কচুরী আর জিলেপীর জন্য খুব বিখ্যাত ছিল। প্রভুপাদ বললেন, “গরম জিলেপী হচ্ছে স্বরভঙ্গের ওষুধ। এখানে ঠান্ডা আছে, তাই আমাদের গরম জিলেপী খাওয়া দরকার।” আমরা সবাই গরম গরম জিলেপী খেলাম, তখন শ্রীল প্রভুপাদ বললেন, “স্বরভঙ্গ হলেই টাটকা, গরম জিলেপী খাবে।”
রক্ত আমাশয়ের ওষুধঃ রক্ত আমাশয় প্রসঙ্গে বলছিলেন তমাল কৃষ্ণ গোস্বামী (প্রভুপাদের শিষ্য)।
তমালকৃষ্ণ গোস্বামীঃ আর একবার শ্রীল প্রভুপাদ আমাকে আমাশয়ের ওষুধ বলেছিলেন, সেটি হচ্ছে, ঘিয়ে ভাজা গরম লুচি নুন দিয়ে খেতে হবে। খুব কার্যকরী, আমার একবার আমাশয় হলে, লবন দিয়ে গরম লুচি খেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে সেরে উঠেছিলাম। যাদুর মতো কাজ করেছিল।
জন্ডিস প্রসঙ্গে: কৌশল্যা (শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্যা)
কৌশল্যা: একবার আমি ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তারপর ভাল হয়ে উঠি, আর কিছুদিন ভ্রমন করার পর কলকাতায় গিয়ে আমার জন্ডিস হয়ে গেল। আয়ুর্বেদিক ওষুধ ব্যবহার করেও সারছিল না। প্রভুপাদ আমাকে বললেন, “তোমার তো রোগ সারছে না। কী চিকিৎসা করছ? আমি বললাম, “আমি আয়ুর্বেদীয় ওষুধ ব্যবহার করছি।” তিনি বললেন, “আয়ুর্বেদীয় ওষুধে কাজ হবে না। আয়ুর্বেদ হচ্ছে প্রতিরোধক ওষুধ। তুমি এখন ভীষণ অসুস্থ। কোন ভাল ডাক্তারকে দেখিয়ে ওষুধ নাও।” তাঁর মতে আয়ুর্বেদীয় ওষুধ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধক, প্রতিকারক নয়। তার কারণ হচ্ছে, সন্ন্যাস গ্রহণ করার পূর্বে তিনি ছিলেন ভেষজ রসায়নবিদ।
ব্যাধি প্রসঙ্গে: হরিসৌরী (শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্য): কলকাতায় পালিকা একবার রান্না করছিল, প্রভুপাদের প্রসাদ আনতে মিনিট দশেক দেরী হয়ে গেছে। প্রভুপাদ ক্রুদ্ধ হয়ে ওকে কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করলেন। আমি উনাকে কখনও উনার কোন শিষ্যকে ঐভাবে ভৎসনা করতে দেখিনি। তিনি ব্যাখ্যা করলেন, “ ক্ষিদে পেলে অবশ্যই খেতে হবে। অন্যথায় ব্যাধি হবে।” আমি যখন উনার সঙ্গে ছিলাম, তখন উনার মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে নিয়েছিলাম, দেড়টা। তাতে মালিশ যখনই শেষ হোক না কেন। দেড়টার সময় উনার প্রসাদ পেতে হবে। তার অর্থ হচ্ছে, খাওয়ার চিন্তা অনুসারে পাকস্থলিতে পাচকরস নিঃসৃত হয়, আর সেই অনুসারে খাবার দিতে হবে। অন্যথায় ব্যাধি হবে। সেটি একটি বিজ্ঞান, আর প্রভুপাদ ছিলেন সে সম্বন্ধে সচেতন।
(সংগৃহীত: ‘স্মরণামৃত’ এবং ‘প্রভুপাদের লীলামৃত’ গ্রন্থ)
হরেকৃষ্ণ।
মাসিক চৈতন্য সন্দেশ , সেপ্টেম্বর – ২০১০ ইং