এই পোস্টটি 132 বার দেখা হয়েছে
আমাদের এই ভারতীয় উপমহাদেশ বৈদিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধশীল। বৈদিক যুগে ভগবানের মুখঃনিসৃত বাণী তথা বৈদিক শাস্ত্রসমূহের জ্ঞান সমাজের রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, ব্যবসায় নীতি, ব্যবস্থাপনা সহ সমাজের সকল স্তরে প্রয়োগ করা হত। এ কারণে বৈদিকযুগে উন্নত ব্যবস্থাপনা, সমবন্টন এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় ছিল। কিন্তু এই উপমহাদেশে ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে পাশ্চাত্য ভাবাদর্শ প্রবেশ করে। ফলে ত্রুটিহীন বৈদিক ব্যবস্থাপনার জায়গায় অসংখ্য ত্রুটিযুক্ত পাশ্চাত্য ব্যবস্থাপনা প্রকাশ লাভ করে। ফলে ব্যবসার মূলনীতি হারিয়ে তারা এক অসুস্থ প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। তবে আশার কথা, ভারতের বড় বড় ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ বোধহয় বৈদিক শাস্ত্রনীতির গুরুত্ব আবারো উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আর তাই দিপক চোপড়া, সি.কে. প্রহ্লাদ, অরিন্দম চৌধুরী, মৃত্যুঞ্জয় অথারিয়া এবং শিব খেরার মতো ভারতের নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ীগণ তাদের ব্যবসায়ীক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শ্রীমদৃভগবদগীতা আদি বৈদিক শাস্ত্রের শরণাপন্ন হচ্ছেন। নেতৃস্থানীয় ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হারিশ বিষ্ণুর বলেন, “ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, কোন কর্মের সফলতার সূত্র হচ্ছে “যোগ” এ যুক্ত হওয়া। ঠিক তেমনি কোন একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনের সূত্র হচ্ছে একাগ্রভাবে কর্মযোগে যুক্ত হওয়া। ” সারাবিশ্বের ম্যানেজমেন্ট শুরু নামে পরিচিত ফিলিপ কোটলার, যার ব্যবসায়ীক নীতি অনেকের গবেষণার বিষয়বস্তু, তিনিও বলেছেন যে, তিনি বৈদিক শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ মোতাবেক তার ব্যবসায়িক কৌশল পরিচালিত করেন।
এ সম্পর্কে হারিশ বিজুর বলেন, “ভারতের বিখ্যাত কোম্পানীগুলো তাদের ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণ করে বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্র গ্রন্থ থেকে।” এ ব্যাপারে উদহারণ হিসেবে নীলকণ্ঠ মহাদেবের আখ্যান আলোচিত হয়। দৈত্য বা অসুর বধে সহায়ক মহাদেব বিষ পান করেছিলেন যাতে তার কন্ঠ নীল হয়েছিল, তাই তিনি নীলকণ্ঠ নামে পরিচিত। ঠিক তেমনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিডারদেরও মহাদেবের মত সাহসিকতা, সরলতা, নিয়মানুবর্তীতা, নতুনত্ব, তীব্র ইচ্ছাশক্তি থাকা প্রয়োজন। এমনকী প্রয়োজনে স্বয়ং নিজেকেই কর্মযোগে যুক্ত করতে হবে।”
মৃত্যুঞ্জয় আধারিয়া বলেন, “মহাভারতে যুধিষ্ঠির মহারাজ বলেছেন যে, প্রতিদিন বহু লোক আমাদের চোখের সামনে মৃত্যুবরণ করছে, কিন্তু তা দেখেও আমরা অমর হতে চেষ্টা করছি, এটি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা আশ্চর্যের বিষয়।” ঠিক একইভাবে আমরা বলতে পারি যে, প্রতিদিন বহু ব্যক্তি চাকরী থেকে অবসর নিচ্ছেন, বহু লোক চাকরী হারাচ্ছেন। এক্ষেত্রে আমরা শাস্ত্র থেকে শিক্ষা নিতে পারি যে, একজন ব্যবসায়ীর ব্যবসায়িক নীতি হওয়া উচিত ধর্মকেন্দ্রিক। অর্থাৎ সুসময়ে লাভ এবং দুঃসময়ে অর্থ সাহায্য করা। ফার্মগুলোর উচিত জিনিসপত্রের দাম কমানো, অযাচিত অপচয় রোধ করা এবং কম লাভে সন্তুষ্ট থাকা। এতে কোম্পানী সুদিনে অধিক লাভ করতে পারবে এবং দুর্দিনে সেই অর্থই কোম্পানীর ক্ষতি লাঘব করবে। এছাড়া ম্যানেজমেন্টকে হতে হবে ‘সাত্ত্বিক’ অর্থাৎ সম্পূর্ণ বৈষম্যহীন। বেল, উপনিষদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণে তারা নিয়োজিত হবে। কোম্পানীর লিডাররা তাদের ব্যবসায়িক পার্টনার, কর্মীদের প্রতি সর্বক্ষণ সুনজরে রাখবেন।
উপরোক্ত বক্তব্যগুলোতে জানা গেল যে, ভারতের বড় বড় কোম্পানীর মালিক ও পরিচালনা পার্ষদ কিভাবে বৈদিক জ্ঞান প্রয়োগ করে তাদের কোম্পানী নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। বর্তমানে ভারতের অধিকাংশ বড় কোম্পানীতে কর্মীদের স্নায়ুচাপ লাঘবের জন্য মেডিটেশন, যোগ এবং ভগবানের আরাধনার সুযোগ রাখা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সফটওয়্যার জায়ান্ট খ্যাত উইপরো (Wipro) তে কর্মীদের মানসিকভাবে উদ্দিপ্ত রাখার জন্য বৈদিক শাস্ত্রগ্রন্থ পাঠের আসর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিজুর এ প্রসঙ্গে বলেন যে, “জার্মানী ও ফ্রান্সের মতো উন্নত দেশগুলো যখন বৈদিক শাস্ত্রের জ্ঞান তাদের ব্যবসায়িক কৌশলে ব্যবহার করছে তখন আমাদের পাশ্চাত্য ভাবাদর্শ ব্যবহার করা অত্যন্ত হাস্যকর।”
চৈতন্য সন্দেশ অ্যাপ ডাউনলোড করুন :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.differentcoder.csbtg