এই পোস্টটি 1050 বার দেখা হয়েছে
![ঐশ্বর্য: ভারতবর্ষ কি বর্তমান ভারত?](http://csbtg.org/wp-content/uploads/2018/08/ahmedabad.jpg)
শ্রীমতি নিতাই সেবিনী দেবী দাসী: ভারতবর্ষ বলতে আমরা অনেকে মনে করি শুধু ইন্ডিয়া বা বর্তমান ভারতই হল ভারতবর্ষ, যার কথা শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই সমগ্র বিশ্বকেই বলা হয় ভারতবর্ষ। এখন সেই ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু একসময় যুধিষ্ঠির মহারাজ হস্তিনাপুর তেকে শুধু বর্তমান ভারতই নয় সমগ্র বিশ্ব শাসন করতেন। ভারত ছিল সমগ্র বিশ্বকে পরিচালনার কেন্দ্র স্বরূপ। বর্তমান ভারত এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে অথচ তখন সেটি অনেক উন্নত দেশ ছিল। আর তাই এই ভারত থেকেই অনেক অনেক সম্পদ অপহৃত হয়েছিল।
![](http://csbtg.org/wp-content/uploads/2018/08/Vishnu_1-300x204.jpg)
![](http://csbtg.org/wp-content/uploads/2018/08/https_2F2Fblogs-images.forbes.com2Fjimdobson2Ffiles2F20162F052FSree_Padmanabhaswamy_Temple-300x203.jpg)
রাশিয়ায় আবিষ্কৃত বিষ্ণু বিগ্রহকেউ যদি ইতিহাসের গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করেন তবে দেখবেন এক সময় সম্পদ অপহরণ কিংবা অন্য কোন স্থান থেকে আক্রমন হয়েছিল কেবল বর্তমান ভারতই। কেন শুধুমাত্র বর্তমান ভারত দখল করার জন্য সবার প্রচেষ্টা ছিল? ভারত ছাড়াও তো পৃথিবীতে অনেক দেশ রয়েছে। এর কারণ হল তখন ভারত ছাড়া অন্য দেশগুলোতে কিছুই ছিল না। আর তাই সম্পদ আহরনের জন্য ভারত দখলের প্রচেষ্টা ছিল।
তৎকালীন সময়ে ভারতের সোমনাথ মন্দির অনেকবার আক্রমন করা হয়েছিল। কারণ সোমনাথ মন্দিরে মূখ্য দ্বারগুলো ছিল বিশুদ্ধ স্বর্ণ দিয়ে তৈরি। তাই যোদ্ধারা এসে আক্রমণ করে এসব স্বর্ণের দ্বারগুলো নিয়ে চলে যেত। একইভাবে অনন্ত পদ্মনাভ স্বামী মন্দির। যার কথা আপনারা শুনে থাকবেন। এই ঐশ্বর্যমণ্ডিত পদ্মনাভ স্বামী মন্দিরটি হল রেখে যাওয়া স্বর্ণের প্রাচুর্য যা তারা যেকোনভাবে হোক নিতে পারে নি। এভাবে কল্পনা করুন যে কি পরিমান ঐশ্বর্য বা সম্পদ বর্তমান ভারতে ছিল। ভারতবর্ষ এত সম্পদশালী ছিল।
![](http://csbtg.org/wp-content/uploads/2018/08/3-delhi-300x150.jpg)
![](http://csbtg.org/wp-content/uploads/2018/08/https_2F2Fblogs-images.forbes.com2Fjimdobson2Ffiles2F20152F112Ftemple-2-300x225.jpg)
আজকাল আমরা বলি বর্তমান ভারতে টেকনোলোজী অনেক উন্নত হয়েছে। বর্তমান যে উড়োজাহাজ বা এয়ার প্লেইন দেখা যায় সেগুলোর ধারণ ক্ষমতা কেমন? সর্বোচ্চ ৯০০ জন কিংবা ৮০০ জন। কিন্তু পুরাকালে কর্দম মুনি তার পত্নী দেবাহুতির জন্য এক ধরনের উড়োজাহাজ তৈরি করেছিলেন যেখানে শপিং মল থেকে শুরু করে সবকিছু সেখানে ছিল। সে সময় প্লাস্টিক সার্জারীর প্রচলনও ছিল। বর্তমানে ভারত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও সে সময় এটি ছিল উন্নত দেশ। সেই উন্নত দেশ থেকে এখন উন্নয়নশীল দেশে পতন হয়েছে। এর অর্থ হল ভারতের সংষ্কৃতির বিনাশ ঘটেছিল। সেখানে এত উন্নত সংস্কৃতি বিদ্যমান ছিল। যুধিষ্ঠির মহারাজ এই সমগ্র বিশ্ব তথা ভারতবর্ষ শাসন করত।
![](http://csbtg.org/wp-content/uploads/2018/08/kardamamunidevahuti-241x300.jpg)
আমরা এখন বলি ‘অষ্ট্রেলিয়া’। অষ্ট্রেলিয়া মানে হল, “অস্ত্রালয়’, যেখানে পাণ্ডবগণ তাদের অস্ত্রসস্ত্র মজুদ রাখতেন। সেই অ‘অস্ত্রালয়’ থেকে এখন আমরা দেশটিকে বলি ‘অস্ট্রেলিয়া’।
একইভাবে ‘মরিশাস’ দেশটি ছিল সেই স্থান যেখানে মারিচি মুনি বাস করতেন। মারচি ছিলেন রাবনের মামা। সেই মারিচির স্থানথেকে বর্তমান এটি পরিচিতি পায় মরিশাস। আফ্রিকার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় এটি একসময় পরিচিত ছিল কুশি নগর হিসেবে। কেননা ভগবান রামচন্দ্রের দুই পুত্র লব ও কুশের মধ্যে কুশ এ স্থানে বাস করত। এজন্যেই আফ্রিকা একসময় ‘কুশি নগর’ নামে পরিচিত ছিল। এরকম অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
হিটলারের কথা আসলে ‘স্বস্তিকা’ প্রতীকের প্রচলের কথা আসে। জার্মানীতে আপনার হিটলারের সেবাবাহিনীর প্রতীক ‘স্বস্তিকা’ চিহ্ন দেখতে পাবেন। এই স্বস্তিকা প্রতীক সেখানে কিভাবে আসল? এক সময় আমাদের বৈদিক সংস্কৃতি সামারা পৃতিবীর লোক অনুসরণ করত। আপনার যদি সংস্কৃত ভাষা দেখেন, এই ভাষা হল সমস্ত ভাষার জননী। আমরা যখন বলি ইংরেজী শব্দ ‘Hand’ এই শব্দটি এসেছে সংস্কৃতি শব্দ ‘হস্ত’ থেকে আমরা যখন বলি ইংরেজী শব্দ ‘Mind, এটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ মন’ থেকে। আমরা বলি ‘সিংহ’ আফ্রিকাতে সিংহকে ডাকা হয় ‘সিংবা’ হিসেবে। ‘মনুষ্য’ শব্দটি থেকে এসেছে ইংরেজী শব্দ ‘Man’।
![](http://csbtg.org/wp-content/uploads/2018/08/6b402895a862936eabd6ae8739a350f7-nazi-propaganda-military-insignia.jpg)
এভাবে একসময় যুধিষ্ঠির মহারাজ সমগ্র বিশ্ব তত্ত্বাবধান করতেন। সমস্ত বিশ্বের মানুষ এভাবে বৈদিক সংস্কৃতি অনুসরন করত। আপনারা যদি মালয়েশিয়া যান সেখানে অনেক অনেক রাম মন্দির দেখবেন। আমি যখন সেখানে যায় তা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। সেখানে আমরা যেখানেই গিয়েছি রাম মন্দির দর্শন করেছি। শুধু তাই নয়, সেখানকার রাজাদের নামগুলোও হলো রাম-১, রাম- ২ ইত্যাদি যেরকম লন্ডনের রাণী এলিজাবেথের ক্ষেত্রে ডাকা হয় সেরকমই।
‘রাশিয়া’ নামটি কেন এসেছে? কেননা একসময় রাশিয়াতে ঋষিদের আবাসস্থলী ছিল। যেহেতু রাশিয়া স্থানটি অত্যন্ত শীতল ছিল তাই সাধারণ জনগন সেখানে যেত না এবং ঋষিদের বিরক্ত করত না। এ জন্যই সমস্ত ঋষিরা সেখানে গিয়ে গভীর তপস্যায় নিমগ্ন হতেন।
রাশিয়ায় আবিষ্কৃত বিষ্ণু বিগ্রহএই কারণে পরবর্তীতে এই স্থানটির নাম হয় রাশিয়া, অর্থাৎ সংস্কৃতে যেটি বলা হয় ঋষি বা ঋষিদের আবাসস্থল। যাহোক এরকম দৃষ্টান্তের তালিকা প্রদান করা হরে তা সুদীর্ঘ হয়ে যাবে। এভাবে আমাদরে বৈদিক ধর্ম শুধুমাত্র ভারতীয়দের জন্যে নয়। এটি সবার জন্য। সবাইকে এটি অনুসরণ করতে হবে। যদি আমরা ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুসরণ করি, তখন আমরা সুন্দর সুন্দদর বৈষ্ণবে পরিণত হতে পারব। হরেকৃষ্ণ!
লেখক পরিচিতি: নিতাই সেবিনী দেবী দাসী শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজের একজন নিষ্ঠাবান শিষ্যা। তিনি কমার্স থেকে গ্র্যাজুয়েশ সম্পন্ন করার পর ম্যানেজমেন্ট অব ভোলান্টারি অরগনাইজেশনে পিজি ডিপ্লোমা সহকারে মাস্ট্রার্স সম্পন্ন করে। অন্ধ্র বিশ্ববিদালয় থেকে পিএসডি সম্পন্ন করেন। তার স্বামী ইস্কন বিশাখাপটনামের সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত। ভারতরে কেরেলাতে তার বহুমুখী কষ্ণভাবনা প্রচারের জন্য শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজ সহ ভক্তমহলের কাছ থেকে বেশ প্রশংসা ও আশীর্বাদ লাভ করেন।
(মাসিক চৈতন্য সন্দেশ আগষ্টে ২০১৮ সালে প্রকাশিত)