ভগবান শিব

প্রকাশ: ৮ মার্চ ২০২১ | ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৮ মার্চ ২০২১ | ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ

এই পোস্টটি 723 বার দেখা হয়েছে

ভগবান শিব

শ্রীমৎ গিরিরাজ স্বামী মহারাজ

বৈষ্ণবগণ সাধারণত দেবতাদের মন্দিরে যান না। কিন্তু তবুও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যিনি স্বয়ং কৃষ্ণ হয়েও কৃষ্ণভক্তের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তিনি নিয়মিতভাবে বারাণসীতে দেবাদিদেব শিবের মন্দির দর্শন করতে যেতেন। কেন? শ্রীল প্রভুপাদ সেটি ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে যে, বৈষ্ণব সকলকেই প্রাপ্য সম্মান প্রদান করেন, তাই পরমেশ্বর ভগবানের বিশ্বস্ত সেবক দেবতাদের আর কি কথা? শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর দক্ষিণ ভারত ভ্রমণের সময়ও সেখানকার সমস্ত শিব মন্দিরে প্রণতি নিবেদন ও প্রার্থনা করেছেন, যদিও চৈতন্য চরিতামৃতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, সেসমস্ত জায়গার শিবভক্তগণ মহাপ্রভুর প্রভাবে বৈষ্ণবে পরিণত হয়েছিলেন।
ভগবান শিবের অবস্থানটি একটি বিশেষ অবস্থান। শ্রীল প্রভুপাদ বর্ণনা করেছেন, “শিব হচ্ছেন প্রায় বিষ্ণু।” ব্রহ্মসংহিতায় ভগবান বিষ্ণুকে দুধ এবং ভগবান শিবকে দধি’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। দধি/দই হলো প্রায় দুধ, কিন্তু দুধ নয়। দুধ দই হতে পারে কিন্তু দই কখনও দুধ হতে পারে না। ঠিক সেভাবে, যদিও ভগবান বিষ্ণু নিজেকে শিব রূপে রূপান্তরিত করতে পারেন, কিন্তু শিব কখনও বিষ্ণু হতে পারেন না। যে কথা ব্রহ্মসংহিতায় ৫/৪৫ উল্লেখ রয়েছে “দুধ যেমন বিকারবিশেষযোগে দই হয়, তবুও মূল কারণরূপ দুধ থেকে পৃথক তত্ত্ব হয় না। ঠিক তেমনই “যিনি কার্যবশতঃ শম্ভুত্ব প্রাপ্ত হন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।”
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যাঁকে অমলপুরাণ রূপে মহিমা কীর্তন করেছেন সেই শ্রীমদ্ভাগবতের বহু স্থানে ভগবান শিবের কথা আলোচিত হয়েছে। শ্রীল জীব গোস্বামী পরম বৈদিক প্রমাণরূপে শ্রীমদ্ভাগবতকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং শ্রীমদ্ভাগবতে ভগবান শিবের বহু লীলা মহিমান্বিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এরকমই একটি লীলা হলো যখন দেবতা ও অসুরেরা সমুদ্র মন্থন করছিল, তখন সমুদ্র বিষাক্ত হয়ে ওঠে। এই বিষ সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের পক্ষে ভয়ের কারণ হয়ে ওঠে এবং কেউই জানতো না এখন কি করতে হবে। মহানুভব ও অচিন্ত্য শক্তির অধিকারী ভগবান শিব তখন সেই বিষ পান করে তাঁর কণ্ঠে ধারণ করলেন। ফলে তাঁর কণ্ঠ নীলবর্ণ হয়ে ওঠে এবং সেই থেকে এক সুন্দর নীলাভ রেখা সেখানে চিহ্নিত হয়ে থাকে। তাঁর সেই নীলাভ কন্ঠের জন্য ভগবান শিবকে অসাধারণ সুন্দর রূপে বিবেচনা করা হয়ে থাকে আর তাই তিনি নীলকন্ঠ নামে বিখ্যাত।
আর একটি লীলায়, রাজা প্রাচীনবর্হির পুত্রসকল, প্রচেতাগণ ভগবান বিষ্ণুর (কৃষ্ণ) আরাধনার জন্য তাদের তপস্যার পথে শিবের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। কেননা, রাজপুত্রগণ ছিলেন বৈষ্ণব আর শিব তাদেরকে তাঁর কৃপা প্রদর্শন করে বিষ্ণু আরাধনার মন্ত্র নির্দেশ করেছিলেন। প্রচেতাদের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় ভগবান বিষ্ণুর ভক্তদের প্রতি প্রাপ্য শ্রদ্ধার বর্ণনা তিনি করেছিলেন। তিনি তাদের বললেন, “তোমরা সকলেই ভগবানের ভক্ত, এবং তাই আমার কাছে তোমরা স্বয়ং ভগবানের মতো শ্রদ্ধেয়। সেই সূত্রে আমি জানি যে, ভক্তরাও আমাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন এবং আমি তাদের অত্যন্ত প্রিয়। তাই ভক্তদের কাছে আমার মতো প্রিয় আর কেউ নয়।” (ভাগবত ৪/২৪/৩০)
এই শ্লোকটির তাৎপর্যে শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করেছেন-“বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভুঃ” শিব সমস্ত ভক্তদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। অতএব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত ভক্তরা শিবেরও ভক্ত। বৃন্দাবনে গোপেশ্বর শিবের মন্দির রয়েছে। গোপীরা কেবল শিবেরই পূজা করতেন না, তারা কাত্যায়ণী দেবী বা দূর্গাদেবীরও পূজা করতেন। কিন্তু তাঁদের লক্ষ্য ছিল শ্রীকৃষ্ণের কৃপা প্রাপ্ত হওয়া। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরা শিবকে অশ্রদ্ধা করেন না। পক্ষান্তরে; তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্তরূপে তাঁর পূজা করেন। তার ফলে যখনই ভগবদ্ভক্ত শিবের পূজা করেন, তখন তিনি শিবের কাছে প্রার্থনা করেন যাতে তিনি শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ করতে পারেন এবং তিনি কখনও তাঁর কাছ থেকে কোনরকম জড় জাগতিক লাভের আকাঙ্খা করেন না।
গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের কাছে ভগবান শিবের এক বিশেষ তাৎপর্য আছে। যদিও ভাগবতে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে “বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভুঃ”, অর্থাৎ শম্ভু বা শ্রীশিব হলেন আদর্শ বৈষ্ণব কিন্তু তবুও ভাগবতের কোন কোন স্থানে এবং অন্যান্য শাস্ত্রে ঘোষণা করা হয়েছে যে, বৃন্দাবনের অধিবাসীগণ, বিশেষত গোপীগণ শ্রেষ্ঠ ভক্ত। তাহলে কিভাবে আমরা এই দুই ভিন্ন বক্তব্যকে মিলাব? একটি উত্তর হলো এই যে এই জড় জগতের সর্বোত্তম ভক্ত হলেন শিব, কিন্তু চিন্ময় জগতে ব্রজবাসীগণ, বিশেষত গোপীগণ, হচ্ছেন সর্বোচ্চ ভক্ত। পরমেশ্বর ভগবান কৃষ্ণও চিন্ময় জগতের গোপীগণের সেবা করার শিবের আকাঙ্খার ফলে শিব ব্রজে বাস করেছিলেন।
শ্রীশিব ক্ষেত্রপাল রূপে পরিচিত। পবিত্র স্থানের রক্ষক। তাই তিনি ব্রজের কাছেই নন্দগ্রামে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি নন্দীশ্বর মহাদেব নামে পরিচিত। তেমনিভাবে তিনি গোবর্ধনের মানস গঙ্গার কাছেও অবস্থান করেন। সেখানে তিনি চক্রেশ্বর মহাদেব নামে খ্যাত। তিনি কামেশ্বর মহাদেব নামে পরিচিত হয়ে কাম্যবনেও অবস্থান করেছেন এবং বৃন্দাবনেও তিনি অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি গোপীশ্বর মহাদেব নামে খ্যাত।
গোপীশ্বর মহাদেবকে ব্রজের অত্যন্ত কৃপাময় বিগ্রহ রূপে বিবেচনা করা হয়। গোপীশ্বর মহাদেব এবং ব্রজে শিবের অন্যান্য প্রধান বিগ্রহগুলির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণের অন্যতম প্রপৌত্র বজ্রনাভ। অন্যান্য শিব-মন্দিরের মতো গোপীশ্বর মহাদেবের বিগ্রহ বা শিবলিঙ্গকেও নিয়মিতভাবে দিনে আরাধনা করা হলেও সন্ধ্যায় সেই বিগ্রহকে শাড়ি ও বিভিন্ন অলঙ্কার পরিধান করিয়ে ঠিক যেন এক ব্রজ-গোপিকার বেশে সজ্জিত করা হয়।
গুরু শিষ্য পরম্পরক্রমে গোপীশ্বর শিবের যে ইতিহাস পাওয়া যায়, সেটি এরকমÑÑ ভগবানের সকল বিগ্রহের মধ্যে বা রূপের মধ্যে কৃষ্ণ বিগ্রহ বা রূপকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়। কেননা এই রূপের মধ্যেই এমন চারটি অতিরিক্ত গুণাবলী রয়েছে যা নারায়ণ রূপেও নেই। এই গুণাবলীর মধ্যে লীলামাধুর্য ও প্রেম-মাধুর্য অন্যতম। সকল ভক্তগণের মধ্যে গোপীগণকে শ্রেষ্ঠতম বলে বিবেচনা করা হয়। আর ভাগবতের সকল লীলার মধ্যে তাঁর রাসলীলা সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত বলেই গোপীগণের সঙ্গে কৃষ্ণের মহারাসনৃত্যে শিব অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন।
রাস নৃত্যে প্রবেশের জন্য বিশেষ যোগ্যতা ও ভগবানের কৃপা প্রয়োজন বুঝতে পেরে, তিনি (শিব) ব্রজে তপস্যা শুরু করলেন এবং অবশেষে মৃর্তিমান পারমার্থিক শক্তি (যোগমায়া) পৌর্ণমাসীকে তিনি সন্তুষ্ট করলেন। কৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলায় পৌর্ণমাসী একজন বৃদ্ধা ব্রাহ্মণী ও ব্রজ-বাসীগণেরে শিক্ষাগুরু রূপে সেখানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর নির্দেশাধীনে শিব ব্রহ্মকুণ্ডে স্নান করলেন (মতান্তরে মান সরোবর এবং অন্য একটি মতে যমুনা নদীতে)।
যখন শিব পবিত্র জলে ডুব দিয়ে উঠলেন, তখন তিনি এক সুন্দরী গোপীর রূপ ধারণ করলেন। গোপী না হলে কারোরই কৃষ্ণের সঙ্গে রাস নৃত্যে অধিকার থাকে না। তো গোপীরূপী শিব তখন বৃন্দাবনের যমুনার কাছে রাসনৃত্যের স্থানে গমন করলেন। অন্যান্য গোপীগণ যখন তাঁকে নানাবিধ প্রশ্ন করতে লাগলেন; “তোমার নাম কি?” “তোমার স্বামী কে?” “তিনি কি করেন?” “তোমার বাড়ি কোথায়?” গোপীগণ এই ধরণের নানা প্রশ্ন করার পর গোপীরূপী শিব তার উত্তর প্রদান করতে না পারায় অন্যান্য গোপীগণ সিদ্ধান্তে এলেন যে এই তথাকথিত নতুন গোপীটি প্রকৃতপক্ষে তাঁদের নয়। তাঁরা সেই প্রতারকের উপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন এবং তার দু‘গালে চড় মারতে শুরু করলেন।
তখন গোপীরূপী শিব পৌর্ণমাসীর নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন। পৌর্ণমাসী তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত হয়ে গোপীদের নিরস্ত করলেন। তিনি গোপীদের বললেন “ওকে মেরো না। আসলে সে শিব, এক মহান ভক্ত।” পৌর্ণমাসী যেহেতু ছিলেন ছিলেন গোপীদের পারমার্থিক পথ প্রদর্শক, তাই গোপীগণ তাঁর কথা শুনলেন। তখন তখন পৌর্ণমাসী শিবকে বললেন, “প্রকৃতপক্ষে আপনি সরাসরি রাসনৃত্যে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।
কৃষ্ণের সঙ্গে রাসনৃত্যে কেবলমাত্র গোপীদের জন্য। কিন্তু আপনি রাসনৃত্যে স্থানের কাছে অবস্থান করে তা দর্শন করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে এই ক্ষেত্রটিকে অনধিকারীর প্রবেশ থেকে রক্ষা করুন।” পৌর্নমাসী শিবকে এই বর দান করলেন যে শিব ভক্তগণের রাসনৃত্যে প্রবেশের যোগ্যতা প্রদান করতে পারবেন।
যমুনার তীরে বংশীবট নামক বিখ্যাত গাছটির কাছেই বজ্রনাভ প্রতিষ্ঠিত গোপীশ্বর মহাদেব বিগ্রহ অবস্থান করছেন। এই বটগাছের নীচেই কৃষ্ণ তাঁর দিব্য বংশীধ্বনি করে গোপীদের মহা-রাসনৃত্যে যোগদানের জন্য আহ্বান করতেন। সূর্যাস্তের পর প্রতিদিন সন্ধ্যায় গোপীশ্বর মহাদেব মন্দিরের পূজারীগণ শিবলিঙ্গকে গোপীবেশে সজ্জিত করেন।
ভগবান শিব পার্বতীর কাছে এই শিক্ষা বর্ণনা করেছেন যে, বৈষ্ণব আরাধনাই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। শ্রীল প্রভুপাদ বিশ্লেষণ করেছেন যে কৃষ্ণের বিভিন্ন ভক্ত রয়েছেন–দাস্য রস, সখ্য রস, বাৎসল্য রস এবং মাধূর্য রস। সকল রসের মধ্যে মাধুর্য রস সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই মাধুর্য রসের ভক্তগনের সেবা ও আরাধনা সকল ধরনের আরাধনার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। এইসকল পারমার্থিক সত্য হৃদয়ঙ্গম করে ভক্তগণ গোপীশ্বর মহাদেবের কাছে প্রার্থনা করেন যে তিনি যেন তাদের শুদ্ধ প্রেম প্রদান করেন যা তাদের বৃন্দাবনে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের মধুর লীলায় প্রবেশের যোগ্য করে তুলবে। গোপীগণের এই ঐকান্তিক ভক্তের (শিবের) প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর প্রার্থনা করছেন-
“হে বৃন্দাবনের দ্বার রক্ষী! হে সোম,আপনার জয় হোক। যাঁর কপাল চন্দ্রের দ্বারা সুশোভিত, যিনি নারদ, সনন্দন ও সনাতনের মতো খষিদের দ্বারা পূজিত হন, তাঁর জয় হোক। হে গোপীশ্বর, আমাকে ব্রজধামে আনন্দঘন লীলা সম্পাদনকারী শ্রীশ্রীরাধা-মাধব পাদপদ্মে অসীম প্রেম প্রদান করুন,এই আকাঙ্খা করে আমি আপনাকে পুনঃ পুনঃ আমার প্রণতি নিবেদন করছি।”(শ্রীসঙ্কল্প কল্পদ্রুম, ১০৩)
বলা হয়ে থাকে যে, ব্রজের শ্রীল সনাতন গোস্বামী ছিলেন ভগবান শিবের এক বিশেষ অন্তরঙ্গ সখা।
বৃন্দাবনে শ্রীল সনাতন গোস্বামী যমুনার নিকটবর্তী মদন-মোহন মন্দিরে থাকতেন এবং গোবর্ধনে তিনি মানসীগঙ্গার নিকটবর্তী, ঠিক চক্রেশ্বর মহাদেবের বিপরীত দিকে চক্রতীর্থে থাকতেন। তিনি সেখানে মশাদের দ্বারা এতটাই বিব্রত থাকতেন যে তিনি ঠিক করেছিলেন যে ঐ স্থানটি তিনি ত্যাগ করবেন। তিনি তাঁর গ্রস্থ রচনা করতে পারছিলেন না, তাঁর সাধনাও সম্পাদিত হচ্ছিল না। তাই তিনি সেই স্থান ত্যাগের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন।
যখন চক্রেশ্বর মহাদেব দেখলেন যে শ্রীল সনাতন গোস্বামী স্থানটি ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, তিনি নিজেকে এই বিষয়ে বিজড়িত করলেন, কেননা তিনি চাচ্ছিলেন যে, গোস্বামীপাদ সেখানে তাঁর নিকটেই অবস্থান করুন। তাই শিব এক ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন যে, কেন তিনি ঐ স্থান ত্যাগ করছেন? শ্রীল সনাতন গোস্বামী বললেন যে, এখানে মশার উপদ্রবে এতটাই বিব্রত যে তিনি কোন কাজ করতে পারছেন না। তিনি সনাতন গোস্বামীকে অনুরোধ করলেন, “কেবল আর একটি রাত এখানে থাকুন, কালকের মধ্যে আপনার সমস্যার সমাধান হবে।”
সমস্যাটির সমাধান হবে শুনে শ্রীল সনাতন গোস্বামী আশ্বস্ত হলেন। অতঃএব ভগবান শিব কীট-পতঙ্গের দায়িত্বে থাকা দেবতাকে ডেকে পাঠিয়ে নির্দেশ দিলেন “আমার সখার কাছ থেকে তোমার মশাদের সরিয়ে দাও।” তারপর থেকে সেখানে আর কোন মশা আসেনি আর গোস্বামীপাদ জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চক্রতীর্থে এবং সেখানেই সমাধিতে প্রবেশ করেছিলেন। সাধারণ মানুষ জাগতিক বরের জন্য শ্রীশিবের কাছে যায় কিন্তু ভক্তগণ তাঁর কাছে যান কেবলমাত্র শুদ্ধভক্তি লাভের জন্য। যেমন: বৃন্দাবনের যুবতী গোপীগণ কৃষ্ণকে তাদের পতিরূপে সেবা করার সমর্থতা লাভের জন্য শিবের কাছে প্রার্থনা করেন।
শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামী লিখেছেন-“শ্রীকৃষ্ণের আলিঙ্গনরূপ সম্পদসত্ত্ব প্রাপ্ত হবার আকাঙ্খায় উজ্জ্বল ও প্রেমময়ী গোপীবৃন্দ ঐকান্তিকভাবে ও আনন্দেও সঙ্গে যমুনার তীরে শ্রীশিবের আরাধনা করেন। সেই গোপীশ্বর তীর্থকে আমি প্রতিদিন আরাধনা করি যেখানে গোপীগণ তাঁদের অর্চনা সম্পাদন করেছিলেন।” (শ্রীব্রজবিলাসস্তব, ৮৭)
শ্রীল প্রভুপাদ নিশ্চিত করেছেন যে, “গোপীরাও বৃন্দাবনে শিবের পূজা করেছিলেন এবং শিব এখনও সেখানে গোপীশ্বররূপে রয়েছেন। গোপীরা কিন্তু শিবের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন তিনি যেন তাদের আশীর্বাদ করেন, যাতে তারা শ্রীকৃষ্ণকে তাঁদের পতিরূপে লাভ করতে পারেন। দেবতাদের পূজা করতে কোন বাধা নেই, যদি না তার লক্ষ্য হয় ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়া।”

সম্পর্কিত পোস্ট

‘ চৈতন্য সন্দেশ’ হল ইস্‌কন বাংলাদেশের প্রথম ও সর্বাধিক পঠিত সংবাদপত্র। csbtg.org ‘ মাসিক চৈতন্য সন্দেশ’ এর ওয়েবসাইট।
আমাদের উদ্দেশ্য
■ সকল মানুষকে মোহ থেকে বাস্তবতা, জড় থেকে চিন্ময়তা, অনিত্য থেকে নিত্যতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করা।
■ জড়বাদের দোষগুলি উন্মুক্ত করা।
■ বৈদিক পদ্ধতিতে পারমার্থিক পথ নির্দেশ করা
■ বৈদিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।
■ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে ভগবানের পবিত্র নাম কীর্তন করা ।
■ সকল জীবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা স্মরণ করানো ও তাঁর সেবা করতে সহায়তা করা।